স্ট্যানের জন্য কয়েকলাইন


  • July 7, 2021
  • (3 Comments)
  • 1508 Views

তারপর প্রথম দেবদূত তার শিঙ্গা বাজালো, এবং রক্তমেশা শিলাবৃষ্টি আর আগুন ঝরে পড়তে লাগল পৃথিবীর ওপর। পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ পুড়ে গেল, আর ঝলসে গেল তার মধ্যেকার যত গাছ আর সবুজ ঘাস।  — উন্মোচন, ৮:৭

 

শেষপর্যন্ত ওরা আপনাকে মেরেই ফেলল। মেরে ফেলতেই যে চেয়েছিল, তা আমরা আগেই টের পেয়েছিলাম, যদিও কিছু করে উঠতে পারিনি। কিই বা আমরা করতে পারি আজকাল, মাঝে মাঝে ক্যামেরার সামনে বসে ভার্চুয়াল আদালতে ভার্চুয়াল সওয়াল ছাড়া? এই কোভিড পরিস্থিতিতে রাস্তায় নামলে ডিএম অ্যাক্টে কেস খাওয়ার ভয় তো আছেই, তাছাড়া অত লোকের ছোঁওয়া-ছানির মধ্যে গিয়ে ভাইরাসের হাতে বেঘোরে প্রাণটা দেব নাকি? ওরা কিন্তু গোড়া থেকেই ছক কষে এগোচ্ছিল। নইলে মারণরোগ এড়াতে যখন গ্যালন গ্যালন জল খেতে বলা হচ্ছে সবাইকে, তখন আপনি পার্কিনসনে কাঁপা হাতে গ্লাস বা বোতল ধরে জল খেতে পারেন না জেনেও সামান্য একটা সিপার বা স্ট্র দিতে এত টালবাহানা কেন? ডিহাইড্রেশন হয়ে যাতে তাড়াতাড়ি মরতে পারেন, তার জন্যে না তো কী?

 

সময়ের আগেই তাদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হল, আর তাদের পায়ের তলার মাটি বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হল। — যোব, ২২:১৬

 

একেক জনকে মারার জন্যে একেক রকম ফন্দি। আপনাকে জল না খেতে দিয়ে, সাইবাবাকে পঙ্গু জেনেও জেলে ফেলে রেখে, গ্যাডলিং-এর হার্টের চিকিৎসায় গাফিলতি করে, মহেশ রাউতের বায়োপসি রিপোর্ট না দিয়ে, হাঁটুতে আর্থারাইটিস আক্রান্ত সোমা সেনের মেয়েকে কমোড চেয়ার কিনে নিয়ে আসার পরও তিনবার ফিরিয়ে দিয়ে, ডায়াবেটিস আর ব্লাড প্রেশারের রোগী, টিবিতে ভুগে ওঠা সুধাকে কোভিড ছড়িয়ে পড়া কারাগারে আটকে রেখে, আর আপনারই মত বৃদ্ধ কবি ভারাভারাকে রোগে জীর্ণ হতে দিয়ে তাছাড়া আর কিই বা করা হয়েছে? আসলে, এদের সবারই মৃত্যুর পরোয়ানা লেখা হয়ে গেছে।

 

আমার মাপকাঠি হবে ন্যায়বিচার আর সদাচার। শিলাবৃষ্টি তোমাদের মিথ্যার আশ্রয়কে ভাসিয়ে দেবে, আর বন্যায় ডুবে যাবে তোমাদের লুকোনোর জায়গাগুলো। — ইশা, ২৮:১৭

 

আগে শুনতাম, জজসাহেব বা সাহেব জজরা নাকি আসামির মৃত্যুদণ্ডের হুকুমনামা লিখে কলমের নিবটা ভেঙে ফেলতেন। এখন সে কলমও নেই, সেই নিবও নেই। রায় বোধহয় কম্পিউটারেই লেখা হয়। কম্পিউটার তো আর ভেঙে ফেলা যায় না। তাই ওসব ভ্যানতাড়াও নেই। তবে কম্পিউটার এক মজার যন্ত্র। তাতে কি না করা যায়। এমনকি, তাতে আপনি যা লিখেছেন, তা আপনার লেখা নাও হতে পারে। রোনা উইলসন আর সুরেন্দ্র গ্যাডলিং-এর কম্পিউটার থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে যেসব ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী দস্তাবেজ পাওয়া গেছে, তা বাইরে থেকে ই-মেল করে ম্যালওয়্যার পাঠিয়ে তাদের অগোচরে তাদের কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এখনও এই বিশেষজ্ঞদের মত আদালতে গ্রাহ্য হয়নি অবশ্য। সুতরাং তাঁরা জেলে পচতেই পারেন। সেকথা বলছি না। যা দেখা যাচ্ছে, এখন আর বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ারই কোনও দরকার নেই। সিরিয়াসলি অসুস্থ, বা আপাত-সুস্থ বন্দিদের জামিনের আবেদন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কোনও না কোনও ‘এজেন্সি’র রিপোর্টের ভিত্তিতে নাকচ করে গেলেই হল। এভাবে তাদের মন থেকে আশাটাকে তো আগে টিপে মারা যাক, শরীরটা আপনা-আপনিই একদিন মরে যাবে। এদের এইভাবে মেরে ফেলাই দরকার।

 

কারণ তুমি ছিলে গরিবের শক্তি, অসহায়ের সহায়, ঝড়ের সময় আশ্রয়, দাবদাহে ছায়া…  — ইশা ২৫:৪

 

মুশকিল হল, সবার ক্ষেত্রে হিসেবটা মেলে না। শরীরটা চলে গেলেও আশা বেঁচে থাকে। সেই অবিনাশী আশা আবার ভীষণ সংক্রামক। তার কোনও ভ্যাকসিন তৈরি করা বিভীষিকা বিজ্ঞানের সাধ্যের অতীত। অনেক কাজ যে বাকি রয়ে গেল। ফাদার স্ট্যান, আপনি আর আপনার ‘বাগাইচা’র সাথীরা ঝাড়খণ্ডের জেলগুলোতে অসংখ্য নিরপরাধ গরিব আদিবাসী বন্দিদের তালিকা তৈরি করে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার যে কঠিন কাজ শুরু করেছিলেন, তার কী হবে? তাদের একমাত্র যৌথ সহায়-সম্পদ যে জমি আর জঙ্গল, তার দিকে হাত বাড়ানো বানিয়া লুঠেরাদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার জন্য যে শিলালিপিগুলি বসানো হয়েছিল, তাকে সুরক্ষিত রাখবে কে?

 

দেখো, ঈশ্বর অসীম শক্তির অধিকারী। শিলাবৃষ্টি অথবা ভীষণ ঝঞ্ঝার মতো, মুষলধারে বর্ষণ বা প্রবল বন্যার মতো, তিনি রাজমুকুট মাটিতে মিশিয়ে দেবেন। — ইশা, ২৮:২

 

ফাদার স্ট্যান, আপনার ঈশ্বর বহুদিন হল আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। শহিদ স্ট্যান, আপনিই আমাদের শক্তি দিন।

 

(লেখক নীলাঞ্জন দত্ত মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী। )

 

Share this
Recent Comments
3
Leave a Comment