বাংলার নির্বাচনে বিজেপির ভোটকে ‘চোট’ দেওয়ার ডাক আন্দোলনরত কৃষক নেতৃত্বের


  • March 13, 2021
  • (0 Comments)
  • 1299 Views

দিল্লি থেকে কৃষক নেতারা কলকাতায় এসে বাংলার নির্বাচনে বিজেপিকে ‘চোট’ দেবার ডাক দিলেন। লিখেছেন সৌরব চক্রবর্ত্তী

 

৮ দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলি তাঁদের ভোট প্রচার শুরু করে দিয়েছে, প্রার্থী বাছাই পর্বও প্রায় শেষের পথে। খেয়াল করে দেখলে সারা বাংলা জুড়ে ভোট প্রচারের উৎসব শুরু হয়ে গেছে। হাজার হাজার প্রতিশ্রুতির প্রতিজ্ঞা উঠে আসছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এর মাঝেই দিল্লির সিঙ্ঘু বর্ডার থেকে বাংলায় এসে পৌঁছেছেন ১০৫ দিন ধরে বিজেপি সরকারের মাথাব্যথার মূল কারণ কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব। ১২ মার্চ কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তারা তাঁদের আগামী কর্মসূচি ও কাজের রূপরেখার জানান দেন। তাঁদের মূল দাবি হচ্ছে ভোটে বিজেপিকে ‘চোট’ দিন। অন্য যেকোনো দলকে ভোট দিন, কিন্তু বিজেপিকে নয়।

 

দিল্লির আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনগুলির সমন্বয় মঞ্চ সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার নেতারা তাঁদের প্রেসবার্তায় বার বার বলেছেন, দেশের কৃষক বাংলার কৃষককে বার্তা পাঠাচ্ছে ভোটে বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য। যাতে করে মোদী সরকারের ‘দর্পচূর্ণ’ হয়। তাঁরা আরও বলেন কৃষক সম্প্রদায়ের লোকেদের সাথে সামান্য কথাবার্তা না বলে যেভাবে কৃষি আইনটি কৃষকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র কৃষক নয় সাধারণ মানুষও বিপদে পড়বেন।

 

 

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথমেই আলোচনা করেন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল। তিনি বলেন, “ ১০০ দিনের উপরে হয়েছে দিল্লির সিঙ্ঘু বর্ডারে কৃষকরা তাঁদের হকের জন্য লড়াই করছে। তার আগে ক্রমাগত আন্দোলন চলেছে পাঞ্জাবে। যতদিন পর্যন্ত না এই আইন সম্পূর্ণ ভাবে বাতিল হবে ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা, সরকার প্রচুর মিথ্যা কথা বলে। আমরা এখানে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করতে আসিনি। আমরা এখানে একটি প্রধান দাবি নিয়ে এসেছি তা হলো বিজেপিকে ভোট দেবেন না। সারা দেশে যেরকমভাবে বেসরকারিকরণ হচ্ছে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে। দেশের যেখানে যেখানে ভোট হবে আমরা সেখানে সেখানে পৌঁছে যাব আমাদের এই আবেদন নিয়ে যে, বিজেপিকে ভোট নয়।”

 

 

বর্তমান কৃষক আন্দোলনের অন্যতম  নেতা যোগেন্দ্র যাদব বাংলার কৃষকদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি পাঠ করে শোনান। পাশাপাশি তিনি বলেন, “আজ এক ঐতিহাসিক দিন। আপনাদের ডাকে বাংলায় আসতে পেরে আমরা খুবই আপ্লুত। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার মোট ২৯৪টি কেন্দ্রেই এই চিঠি আমরা বিলি করব। কৃষকদের মধ্যে। যাতে করে তাঁরা এই ভোটের সময়ে আরও বেশি সচেতন হতে পারেন।”

 

 

এআইকেএস নেতা এবং চলমান কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ হান্নান মোল্লা বলেন, “স্বাধীনতার পরে সারা ভারতে এই প্রথম এত বড় কৃষক আন্দোলন সারা ভারতবর্ষ দেখছে। প্রায় ৫০০ টি সংগঠন এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আন্দোলনের ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও আমাদের আন্দোলনে কোনো মতভেদ নেই। আরএসএস-বিজেপি আমাদের সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে প্রতিদিন। এর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই আমাদের গড়ে তুলতে হবে প্রতিনিয়ত। কৃষক আন্দোলনে আমরা সারা দেশের নানান মানুষের সমর্থন পেয়েছি প্রতিনিয়ত যা আমাদের আন্দোলনকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করেছে। স্বাধীনতার পর দেশে এই প্রথম একটি চূড়ান্ত মিথ্যেবাদী সরকার গঠিত হয়েছে। কৃষক আন্দোলনে ৩০০ জনের উপরে কৃষকের মৃত্যু হলেও সরকার নির্বিকার, সুতরাং তাঁদের সবদিক দিয়ে আটকাতে হবে।”

 

 

১১ মার্চ রাতে কৃষক আন্দোলনের নেতারা রাজ্যে এসেছেন। ১২ মার্চ সাংবাদিক বৈঠকের পরে দু’দিনের কর্মসূচির সূচনা হয়। এর পর বাংলার কৃষকদের হাতে দেশের কৃষকদের তরফে চিঠি তুলে দেন তাঁরা। সেদিনই প্রথমে ট্রাক্টর নিয়ে মিছিলের পর দুপুর ৩টে থেকে রামলীলা পার্কে কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেন তাঁরা। ১৩ মার্চ, অর্থাৎ ১৪ মার্চ ‘নন্দীগ্রাম দিবস’-এর ঠিক আগের দিন কৃষক-মজুর মহাপঞ্চায়েত হবে নন্দীগ্রাম-২-এ।

 

 

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা গুরনাম সিং চাডুনি বলেন, “কৃষকদের লোকসান ছাড়া আর কিছুই নেই এই আইনে। আমাদের একটাই দাবি আইন বাতিল করো। আইন বাতিল করে নিলেই আমরা আমাদের নিজেদের জায়গায় ফিরে যাব।”

 

গণআন্দোলনের কর্মী মেধা পাটেকর তীব্র ভাষায় মোদী সরকারকে আক্রমণ করে, “চা বিক্রি করতে করতে এখন দেশ বিক্রি করতে শুরু করে দিয়েছেন। দেশ বিক্রি করে পুনরায় কোম্পানি রাজ কায়েম করতে চাইছে মোদী সরকার। তিন কালো আইন বাতিল না করলে আগামী দিনে মানুষের বাড়িতে রেশন পৌঁছবে না। বাংলা সুভাষচন্দ্র বোসের রাজ্য, রবীন্দ্রনাথের রাজ্য। এখানে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করা আটকাতে হবে। বিজেপিকে আটকাতে হবে। সুতরাং, আপনারা যারা এখানে ভোট দেবেন তাঁরা মাথায় রাখবেন, আর যাই হোক বিজেপিকে আপনারা ভোট দেবেন না।”

 

 

এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রাজারাম সিং, সত্যবান, হিমাংশু তিওয়ারীর মতো নেতারা। সাংবাদিক সম্মেলন পরিচালনা করেন অভীক সাহা। সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে শোভাযাত্রা করে নেতারা মৌলালির রামলীলা ময়দানে পৌঁছন।

 

 

আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে যখন কুকথা, অসৌজন্যের রাজনীতি, ঘোড়া কেনাবেচার দলবদলুর রাজনীতি প্রবল আকার নিয়েছে তখন এই দিল্লির আন্দোলনরত কৃষক নেতৃত্বের রাজ্যে আসা এবং বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আবেদন তাৎপর্যপূর্ণ। এই আবেদন কতোটা সাফল্য পাবে তা জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে কৃষকদের কাছে এই মুহূর্তে কে আসল শত্রু তা নির্বাচনমুখী পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের বোঝাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা।

 

Share this
Leave a Comment