গৌরী লঙ্কেশকে মনে রেখে ‘যদি না আমরা গর্জে উঠি’


  • September 7, 2020
  • (0 Comments)
  • 886 Views

ফ্যাসিস্ট, হিন্দুত্ববাদী, দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সমর্থকদের হাতে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ খুন হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর আর শুধুই শিক্ষক দিবসের উদ্‌যাপনে আটকে নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইকে আরও শানিত করার জন্য দেশ জুড়ে ৫ সেপ্টেম্বর পালিত হল একটি প্রচারাভিযান, যার নাম ইংরাজিতে #IfWeDoNotRise, হিন্দিতে #আগরহামউঠঠেনেহিতো আর বাংলায় #যদিনাআমরাগর্জেউঠি। এরাজ্যের ২১টি সংগঠন এই প্রচারাভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। সুদর্শনা চক্রবর্তীর রিপোর্ট। 

 

ফ্যাসিস্ট, হিন্দুত্ববাদী, দক্ষিণপন্থী রাজনীতির সমর্থকদের হাতে ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ খুন হওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর আর শুধুই শিক্ষক দিবসের উদ্‌যাপনে আটকে নেই। স্বাধীন, নির্ভীক, বাক্‌স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে বিশ্বাসী, মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় আগ্রহী ভারতের নাগরিকদের কাছে ২০১৭-এর পর থেকে ৫ সেপ্টেম্বর তারিখটি নতুন করে রাষ্ট্রের শোষনের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেওয়ার দিন।

 

২০২০ সালটি কোভিড সংক্রমণ, মহামারী পরিস্থিতি, লকডাউন – সব মিলিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্র এরকম একটি বিপদকালীন সময়েও এই দেশে এই সমস্ত কিছুকে ব্যবহার করছে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের অবস্থানকে আরও প্রান্তিক, আরও কোণঠাসা করে তোলার জন্য। রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে তাঁদের শোষন লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে। মৌলিক অধিকার খর্ব হওয়া তো বটেই, সেইসঙ্গে মহামারী পরিস্থিতি নাগরিক স্বার্থরক্ষাকারী ন্যূনতম কাজ করতে ব্যর্থ রাষ্ট্র, এদিকে পুরোদমে চলছে যাবতীয় সরকারী পরিষেবা বেসরকারীকরণের পালা।

 

এই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থাতেও ‘যদি না আমরা গর্জে উঠি’, তবে আর কবে তা পারব? হ্যাঁ, ভারতের বর্তমান কেন্দ্র সরকারের ন্যক্কারজনক ভূমিকা ও দেশের নাগরিকবিরোধী যাবতীয় পদক্ষেপের বিরূদ্ধে দেশ জুড়ে ৫ সেপ্টেম্বর পালিত হল একটি প্রচারাভিযান, যার নাম ইংরাজিতে #IfWeDoNotRise, হিন্দিতে #আগরহামউঠঠেনেহিতো আর বাংলায় #যদিনাআমরাগর্জেউঠি। সারা দেশের প্রায় ৫০০টি গণ সংগঠন, মহিলা সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন, ক্যুয়ার সংগঠন ও ব্যক্তি মানুষ একজোট হয়ে এই ক্যাম্পেনের ডাক দিয়েছিল। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও রাষ্ট্রীয় শোষন, নাগরিক অধিকার, সমস্ত  বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যাওয়া মানুষেরা এই প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। একদিকে যেমন ছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাম্পেন তেমনি কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত করেও বক্তব্যে, গানে, কবিতায়, নাটকে মানুষ এই প্রচারাভিযানের নানা দাবি নিয়ে সচেততনামূলক প্রচার চালান।

 

দেশের ফ্যাসিস্ট সরকারের যাবতীয় অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরূদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াইকে আরও শানিত করার জন্যই এরাজ্যের ২১টি সংগঠন এই প্রচারাভিযানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল।

 

যে দাবীগুলি এদিন মূলত তুলে ধরা হয় —

 

১) সংবিধান স্বীকৃত মতপ্রকাশের অধিকার দিতে হবে

 

২) বিরূদ্ধ মত প্রকাশ করলে কালা আইন দিয়ে জেলে ভরা, পুলিস দিয়ে ভয় দেখানো চলবে না

 

৩) সংবিধান স্বীকৃতভাবে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে

 

৪) সংবিধানস্বীকৃতভাবে দেশের নারী-পুরুষ-রূপান্তরকামী সমস্ত শ্রেণী-বর্ণ-জাত-ধর্মের মানুষের সমান নাগরিক অধিকারকে খাটো করা চলবে না

 

৫) দেশের আইনব্যবস্থার চোখে সব মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আইনব্যবস্থার স্বাধীনতা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে

 

৬) দেশের বৈচিত্র্য অনুযায়ী তৈরি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙার বিরূদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে

 

৭) সিএএ-এনআরসি-এনপিআর-এর মতো বিভাজনের রাজনীতি সৃষ্টিকারী চক্রান্তের বিরূদ্ধে জোরদার প্রতিবাদ করতে হবে

 

৮) সব মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকার অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে

 

৯) মুনাফাখোর অর্থনীতির স্বার্থে দেশের জল-জঙ্গল-জমি-পরিবেশ-কৃষিজ পণ্যকে বিকিয়ে দেওয়ার বিরূদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হবে

 

১০) কোভিড লকডাউন পরিস্থিতিতে অগণতান্ত্রিকভাবে শ্রমজীবি মানুষের স্বার্থবিরোধীভাবে একের পর এক আইন বদলে দেওয়ার বিরূদ্ধে সোচ্চার হতে হবে

 

১১) গত ৪৫ বছরে দেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ। পিএসইউগুলিকে বেসরকারীকরণ করা চলবে না।

 

Share this
Leave a Comment