পাঞ্জাবের বেচিরাগের ঘটনা ভূমি অধিকারের জন্য দলিতদের নিরন্তর সংগ্রামের এক তীব্র প্রতিচ্ছবি।
দেবাশিস মিথিয়া
Groundxero | June 06, 2025
২০২৫ সালের ২০শে মে, দলিতদের বঞ্চনার এক মর্মান্তিক অধ্যায় নতুন করে রচিত হলো। ওই দিন পাঞ্জাবের সাঙ্গরুর জেলার ‘বীর এশওয়ান’ (বেচিরাগ) গ্রামে ‘জমিন প্রাপ্তি সংঘর্ষ কমিটি’ বা ‘জেডপিএসসি’, একটি জমি দখল কর্মসূচির ডাক দেয়। মূল দাবি ছিল সরকারের অধীনে থাকা ৯২৭ একর খাস জমি (যে জমিগুলো একসময় জিন্দ রাজপরিবারের অধীনে ছিল, বর্তমানে সেগুলোর কোনো দাবিদার নেই) তা ভূমিহীন দলিতদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হোক। জেডপিএসসি সরকার ও প্রশাসনের কাছে দলিতদের মধ্যে এই জমি বন্টনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিল কিন্তু তারা তাতে কোন কান দেয়নি। ২৮শে ফেব্রুয়ারী জেডপিএসসি- এর নেতৃত্বে হাজার হাজার দলিত এই জমিতে মিছিল করে এবং জমিতে ‘চিরাগ’ জ্বালিয়েছিল। যখন সরকার সাড়া দিতে ব্যর্থ হয়, তখন জেডপিএসসি-এর নেতৃত্বে দলিতরা ২০ মে এই জমি দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু দু’দিন আগে থেকেই, ১৮ ও ১৯শে মে, পাঞ্জাব পুলিশ ‘জেডপিএসসি’-এর নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হয়রানি করছিল। ২০শে মে পুলিশ জোর করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে। প্রায় ৮৫০ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে সঙ্গরুর, ভাটিন্ডা, পাতিয়ালা এবং মানসা জেলার বিভিন্ন জেলে পাঠানো হয়। পুলিশ যাদের গ্রেপ্তার করেছিলেন তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন মহিলা ছিলেন। বয়স্করাও গ্রেফতারি এড়াতে পারেননি। যদিও প্রশাসনের দাবি, তারা ‘জেডপিএসসি’ -এর সাথে আলোচনা করতে আগ্রহী ছিল, বাস্তবে কিন্তু কোনো আলোচনার চেষ্টাই হয়নি।
বেচিরাগ ঘটনায় জনহস্তক্ষেপ-এর পর্যবেক্ষণ
ঘটনার এক সপ্তাহ পর, ২৭মে, মানবাধিকার সংগঠন ‘জনহস্তক্ষেপ’-এর একটি তিন সদস্যের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই দলে ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ বিকাশ বাজপেয়ী, বরিষ্ঠ সাংবাদিক শ্রী অনিল দুবে এবং সাংবাদিক শ্রী আফজাল ইমাম। তাঁরা সাঙ্গরুর জেলার বীর এশওয়ান গ্রাম ও তার আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন। এই গ্রামটি ‘বেচিরাগ’ নামেও পরিচিত, যার আক্ষরিক অর্থ ‘আলোহীন’। জিন্দ রাজার ৯২৭ একর উত্তরাধিকারবিহীন জমি থাকার কারণে এখানে কোনো নিয়মিত জনবসতি নেই এবং চাষাবাদও হয় না। তাই গ্রামটিকে প্রতীকীভাবে বেচিরাগ বলা হয়। দলটি নির্যাতিত দলিত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের ওপর ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অত্যাচারের বিবরণ শোনেন।
জনহস্তক্ষেপের মতে, দলিতদের কৃষি জমিতে অধিকারের এই সংগ্রাম পাঞ্জাবে নতুন নয়। ২০১৬ সালে ‘ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’-তে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও এই বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস স্পষ্ট। তবে, এইবারের ঘটনায় আম আদমি পার্টি (আপ) সরকারের ভূমিকা বিশেষভাবে হতাশাজনক। জনহস্তক্ষেপ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, পাঞ্জাবের ‘আপ’ সরকার জমিন প্রাপ্তি সংঘর্ষ কমিটি-এর বিরুদ্ধে ভয়াবহ দমন-পীড়ন চালিয়েছে। ‘জেডপিএসসি’ নেতা মুকেশ মালৌদ, বিক্কার সিং হাথোয়া, গুরুমুখ সিং মান, ধর্মবীর, জাগতার সিং, গুরবিন্দর এবং অন্যান্য নেতা-কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। পুলিশ গ্রামগুলিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এবং আইপিসি-র ৭১ ধারার মতো পুরোনো ধারা প্রয়োগ করে মানুষকে নির্বিচারে হয়রানি করছে।
জনহস্তক্ষেপের রিপোর্টে দেখা গেছে, পাঞ্জাবের ভগবন্ত মান পরিচালিত আপ সরকার সমাজের নিপীড়িত অংশের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে উল্টোটাই করে চলেছে। তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, আপ-এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানরা রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, গ্রেপ্তার হওয়া দলিতদের মধ্যে কে মুক্তি পাবে। এর মাধ্যমে আপ সরকার কেবল দলিতদের ভূমি সংগ্রামকেই দমন করতে চাইছে না, বরং নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য তাঁদেরকে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করছে। জেল থেকে মুক্তি পাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁদেরকে সংগ্রাম থেকে সরে আসার জন্য ভয় দেখানো হয়েছে এবং অপমান করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেককে জোর করে একটি ঘোষণাপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়েছে, যেখানে লেখা ছিল যে, তাঁরা ভবিষ্যতে ‘জেডপিএসসি’-র কোনো কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন না। এই ঘটনাগুলো রাজ্যের নিপীড়িত সম্প্রদায়ের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির অন্তঃসারশূন্যতাকেই প্রকাশ করে।
প্রতিনিধি দলের কাছে ‘জেডপিএসসি’ অভিযোগ করেছে, এই পুলিশি দমন-পীড়ন শুধু ‘আপ’ সরকারের একক সিদ্ধান্ত নয়, এর পেছনে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং পাঞ্জাবের কিছু প্রভাবশালী জমিদারদেরও হাত রয়েছে। উচ্চ বর্ণের এই প্রভাবশালীরা বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। অবৈধ এই দখলকৃত জমিগুলো জনসমক্ষে চলে আসবে সেই আশঙ্কায় প্রভাবশালীরা ‘জেড পি এস সি’-এর আন্দোলনকে ভয় পাচ্ছেন তাই তাতে বাধা দিচ্ছেন।
প্রশাসন আদালতের নির্দেশের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে বলেও ‘জেডপিএসসি’ জানিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হলো, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট শুধুমাত্র ৪৮ একর জমির উপর ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যা জিন্দ রাজপরিবারের এক প্রাক্তন কর্মচারীর (দিল্লিবাসী) বংশধরের দখলে রয়েছে। এই নির্দিষ্ট অংশটুকুর মালিকানা নিয়েই আদালতে মামলা চলছে। বাকি বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত জমির উপর কোনো স্থগিতাদেশ নেই, অর্থাৎ সেগুলোতে কোনো আইনি জটিলতা নেই। বর্তমানে, প্রশাসনের এই মিথ্যা প্রচারের উদ্দেশ্য হলো, দলিতদের ন্যায্য দাবিকে চাপা দেওয়া এবং প্রভাবশালীদের অবৈধ জমি দখলকে আড়াল করা।
‘জনহস্তক্ষেপ’ মনে করে, এই দমন-পীড়ন ‘আপ’-এর গণআন্দোলন দমনের নতুন কৌশল। দিল্লিতে নির্বাচনে পরাজয়ের পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। ১৯শে মার্চ কৃষক নেতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলি তারই প্রমাণ। জনহস্তক্ষেপের অভিযোগ, ‘আপ’ সরকার এখন আরএসএস-বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্পোরেটদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি পাঞ্জাবের সংগ্রামী শক্তিগুলোকে দমন করতে চাইছে। বেচিরাগে এই ঘটনাটি ‘আপ’ সরকারের দলিত আন্দোলন দমনের মানসিকতাকে আরও স্পষ্ট করে দিলো।
এই পরিস্থিতিতে জনহস্তক্ষেপ ‘আপ’ সরকারের কাছে নিম্নলিখিত জরুরি দাবিগুলো উত্থাপন করেছে:
১. ২০শে মে, ২০২৫-এর মিছিলের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারকৃত সকল ব্যক্তিকে অবিলম্বে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে।
২. আন্দোলনকারীদের উপর চাপানো ভিত্তিহীন ধারা ৭১ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. ভগবন্ত মান নেতৃত্বাধীন ‘আপ’ সরকারকে অবিলম্বে প্রাক্তন জিন্দ রাজপরিবারের দখলকৃত জমি দলিতদের মধ্যে বিতরণ করার পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে তারা এই জমিতে ‘বেগমপুরা’ (যেখানে কোনো দুঃখ নেই) গ্রাম প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
৪. পাঞ্জাব সরকারকে রাজ্য জুড়ে ভূমি সিলিং সীমার অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত জমির পরিমাণ এবং সেগুলির দখলকারীদের নাম ঘোষণা করতে হবে।
তবে, ‘জনহস্তক্ষেপ’-এর এই দাবিগুলো গভীরভাবে বোঝার জন্য জমিন প্রাপ্তি সংঘর্ষ কমিটি বা ‘জেডপিএসসি’ কী এবং কোন প্রেক্ষাপটে তারা আন্দোলন করছে, তা জানা জরুরি।
‘জেডপিএসসি’ -এর আন্দোলন ও পাঞ্জাবের ভূমি আইন
‘জেডপিএসসি’ ভূমিহীন দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছে। মালওয়া অঞ্চল থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়, পরে পাঞ্জাবের অন্যান্য অঞ্চলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তবে ‘বদলি কালান’ গ্রামে উচ্চবর্ণের জাট জমিদাররা দলিতদের ওপর নির্মম আক্রমণ চালানোর পর থেকে ‘জেডপিএসসি’-এর আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও তীব্র হয়। তাদের আন্দোলনের বর্তমান দাবি – ১৯৬১ সালের পাঞ্জাব ভিলেজ কমন ল্যান্ডস রেগুলেশান অ্যাক্ট অনুযায়ী গ্রামের সাধারণ কৃষি জমির এক-তৃতীয়াংশ দলিতদের জন্য সংরক্ষিত করা এবং ১৯৭২ সালের পাঞ্জাব ভূমি আইন মোতাবেক উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন দলিত, তফসিলি উপজাতি ও কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করা হোক। কিন্ত, ‘জেডপিএসসি’-এর লাগাতার আন্দোলন থেকে একটা জিনিস স্পষ্ট, পাঞ্জাবে ভূমি আইনের প্রয়োগে ব্যাপক ত্রুটি ও দুর্নীতি হয়েছে, ফলে বহু ভূমিহীন দলিত মানুষ আজও তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, পাঞ্জাবের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩২% থেকে ৩৪% দলিত হলেও, ব্যক্তিগত কৃষি জমির মাত্র ২.৩% থেকে ৩.৫% মালিক তাঁরা। দলিতদের ভূমিহীনতার একটি কারণ ব্রিটিশ আমলের আইন যেখানে দলিতদের জমি কেনার অধিকার ছিল না। অন্য কারণ অবশ্যই ১৯৭২ সালের ভূমি সিলিং আইন ও ১৯৬১ সালের পাঞ্জাব ভিলেজ কমন ল্যান্ডস রেগুলেশান অ্যাক্ট কার্যকর না হওয়া। এমনকি, ১৯৬১ সালের আইন অনুযায়ী গ্রামের সাধারণ কৃষি জমির এক-তৃতীয়াংশ দলিতদের জন্য সংরক্ষিত থাকার কথা থাকলেও, প্রভাবশালী জাট শিখ জমিদাররা প্রায়শই ভুয়া নিলাম বা অন্যান্য কারসাজির মাধ্যমে এই জমিগুলো দখল করে নেয়। ‘জেডপিএসসি’ এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার। তাছাড়া দলিতদের জন্য সংরক্ষিত পঞ্চায়েত জমি ও ‘নাজুল’ জমির (সরকারি মালিকানাধীন জমি যা সাধারণত জনস্বার্থে ব্যবহৃত হয়) অধিকার নিশ্চিত করতেও বদ্ধপরিকর।
‘জেডপিএসসি’-এর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ কৌশল
‘জেডপিএসসি’ বিশ্বাস করে যে, বিজেপি, কংগ্রেস বা আপ-এর মতো রাজনৈতিক দলগুলি ভূমিহীন দলিতদের সমস্যা সমাধানে সত্যিই আগ্রহী নয়। ‘জেডপিএসসি’-এর জোনাল সেক্রেটারি পরমজিৎ কৌর লংগোয়াল পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন – বিজেপি শাসনে শ্রমিক, ক্ষুদ্র কৃষক এবং শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রার মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বিজেপির ‘বিকশিত ভারত’-এর স্লোগান ‘ফাঁকা বুলি’ ছাড়া কিছুই নয়। মোদী সরকারের শ্রম নীতিতে শ্রমিকদের প্রতি শ্রমিক-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যাচ্ছে। নতুন ফৌজদারি আইন ও প্রস্তাবিত শ্রম বিধিগুলি শ্রমিকদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। বিজেপি শাসনে জাতিগত বৈষম্য ও সহিংসতা ক্রমাগত বাড়ছে সে কথাও কৌর উল্লেখ করেন। পাঞ্জাবে ভূমি সিলিং আইন বাস্তবায়নের দাবিতে শান্তিপূর্ণ ‘রেল রোকো’ আন্দোলনকে পুলিশ নিষ্ঠুর অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে পরমজিৎ কৌর বলেছিলেন, “যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, বিজেপি, কংগ্রেস বা আপ, তারা শ্রমিক কৃষক বিরোধী নীতি গ্রহণ করবে। ‘মনুস্মৃতি’-ই’ (নির্দিষ্ট সামাজিক বিধান ও বর্ণাশ্রম প্রথা) অনুসরণ করবে।”
গণ আন্দোলনের দুর্বলতা এবং সামাজিক বিভেদের কারণে নির্বাচনের সময় জনগণের প্রকৃত সমস্যাগুলো প্রতিফলিত হয় না। মূলধারার মিডিয়াও সরকারের প্রচারে ব্যস্ত থাকায় গণআন্দোলনের খবরে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না – জমিন প্রাপ্তি সংঘর্ষ কমিটির জোনাল সেক্রেটারি পরমজিৎ কৌর লংগোয়ালের এই কথাগুলি একদিকে যেমন নিরাশার, তেমনই তিনি আশার আলোও দেখিয়েছেন, জানিয়েছেন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। তবে ‘জেডপিএসসি’ মনে করে, দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে শাসকশ্রেণীর জনবিরোধী নীতি এবং দলিতদের জন্য তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
নিরন্তর সংগ্রাম ও ‘বেগমপুরার’ স্বপ্ন
পাঞ্জাবের বেচিরাগের ঘটনা ভূমি অধিকারের জন্য দলিতদের নিরন্তর সংগ্রামের এক তীব্র প্রতিচ্ছবি। দলিতদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামা সত্ত্বেও ‘জেডপিএসসি’-এর নেতা-কর্মীদের উপর রাষ্ট্রের কঠোর দমন-পীড়ন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং হয়রানিমূলক ধারার প্রয়োগ সমাজের দুর্বলতম অংশের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতিহিংসা মূলক মনোভাবের প্রকাশ, পাশাপাশি শাসকশ্রেণীর প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবও স্পষ্ট হয়।
আলোচনায় পরিষ্কার, পাঞ্জাবের ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, তারা ‘মনুস্মৃতি’ ভিত্তিক নীতি অনুসরণ করে চলবে। শ্রমিক-কৃষক, দলিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে না। এই পরিস্থিতি কেবল ভূমিহীনতার সমস্যাকেই বাড়াচ্ছে না, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রতিষ্ঠার মৌলিক ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ করছে। ‘জেডপিএসসি’-এর ‘বেগমপুরা’ (এমন একটি গ্রাম যেখানে কোনো শোষণ বা বঞ্চনা থাকবে না) গড়ার স্বপ্নকে প্রবলভাবে দমন করছে। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য, এক সম্মিলিত ও ধারাবাহিক সংগ্রাম অপরিহার্য।
________________
লেখক : শিক্ষক ও কৃষি অর্থনীতির গবেষক
(*শেষ খবর অনুযায়ী পাঞ্জাব সরকার জমিন প্রাপ্তি সংঘর্ষ কমিটি-এর সাথে আলোচনা শুরু করেছে। গ্রেফতারকৃত সকলকে ৪ জুনের মধ্যে মুক্তি দেওয়া হবে। তদন্তের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করা হবে। এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে জেডপিএসসি-এর ২রা জুনের বড় বিক্ষোভ স্থগিত করা হয়েছে।)