চা বাগানে পাট্টা প্রদান, ভোটের বাজারে ঐতিহাসিক পদক্ষেপের জলাঞ্জলি!


  • April 1, 2025
  • (0 Comments)
  • 660 Views

মমতা ব্যানার্জী বাজারে নিয়ে এলেন চা বাগানের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তু পাট্টার অধিকার। তবে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই শুধু মাত্র ভোটের বাজার গরম করতে গিয়ে পাট্টার বিষয়টি বাগানে এমন দাড়িয়েছে তাতে শ্রমিকরা মনে করছে আগের অবস্থাতেই যেন আমরা ভাল ছিলাম। আর পাশ থেকে হাসছে মালিক সংগঠনগুলো। ফলত পাট্টা নিয়ে সরকার, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সমস্ত বিতর্ক নিয়েই রুপম দেবের বিশ্লেষন।

 

Groundxero | April 1, 2025

 

ডুয়ার্সের সাইলি টি গার্ডেনের অমল কেরকেট্টা, স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার। তার এক ছেলে জরাজীর্ন কোয়ার্টারের পাশেই একটি ছোট্ট ঘর বানায়। তাই ম্যানেজার অমলের কাজ বন্ধ করে হাতে চার্জশীট ধরিয়ে দেয়। সাইলির পাশের বাগানে গুরজুং ঝোরা টি গার্ডেনের বাসিন্দা শান্তি ওঁরাও ও সুনিতা ওঁরাও স্থায়ী কর্মী। তার নিজের জমিতেই ঘর বানানোর অপরাধে ম্যানেজার দুজনকে বরখাস্ত করে। তরাইয়ের নক্সালবাড়ির পাহারগুমিয়া বাগানের শ্রমিক কেলমেন্ট টোপ্পো কে নিজের পুঞ্জীকৃত চাষের জমি থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় ম্যানেজার। এখানেই শেষ নয়, কালিম্পং জেলার লোয়ার ফাগু চা বাগানের হেমান্তি এক্কা কে বাগান ছাড়ার আদেশ দেয় ম্যানেজমেন্ট ঘর বানানোর অপরাধে। যাদের বসবাস ১৫০ বছর ধরে তারাই নাকি দখলদার। ইংরেজিতে বাবুরা নোটিশে লেখেন Encroacher।

 

এবার ফিরে যাই  ১৮৯৩ সালে মালবাজারের রাঙামাটি বাগানে। ম্যানেজার জর্জ ম্যারের বিরুদ্ধে দুই শ্রমিক মুকুন্দ ও গোবিন্দ অভিযোগ করেন জেলা ম্যাজিষ্ট্রটের কাছে, তাতে জানা যায় জর্জ ম্যারে অন্যায় ভাবে বাগানের তারকাটা ঘেরা অংশে শ্রমিকদের রেখে দিত। প্রতিবাদ করলে জায়গা হত ১০ ফুট বাই ১০ ফুট ঘরে। অন্যায় ভাবে স্বাধীন চলাচলের বাধাদানের জন্য ম্যারের জরিমানা হয় ৫০০ টাকা, জেল হয় এক মাসের। চা বাগান শ্রমিক আন্দোলনের পথিকৃৎ মুকুন্দ ও গোবিন্দ হয়ত ভাবেনি ১৫০ বছর পরেও তাদের ছেলে মেয়েদের গোলামির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও চা শ্রমিকরা গোলাম রয়ে গিয়েছে কারণ তাদের নেই আজো জমির অধিকার। মালিকেরা জানে স্বল্প মুজুরিতে কাজ করাতে হলে তাদের জমির অধিকার দেওয়া যাবে না। কারণ এখন কোন শ্রমিক রিটায়ার হওয়ার পর ম্যানেজারের পক্ষ থেকে নোটিশ চলে আসে পরিবার থেকে শ্রমিক পাঠাও নাহলে আমাদের জায়গা ছাড়ো। আর তাই মুজুরির সাথে সাথে জমির অধিকার ছিল বাগানের মানুষের কাছে প্রাথমিক দাবি। তবে প্রান্তিক শ্রমিকদের অধিকার ছিনিয়ে নিতে সিদ্ধ হস্ত শাসকে আসীন থাকা বাংলার মার্ক্সবাদীরা সর্বহারাদের জমি থাকে না তত্ত্ব আওড়ে চলল বহু যুগ। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের উল্লেখযোগ্য আন্দোলনে আবার ভেসে উঠল জমি অধিকারের কথা। তারপর শাসক বদলের সাথে সাথে মিশে যাওয়া আদিবাসী নেতারা জমির লড়াই ভুলে গেলেও বাগানের নতুন প্রজন্ম আবার চেচিয়ে উঠল জমির অধিকারের দাবি নিয়ে। সাথে এল শ্রমিক সংগঠন গুলো। ভোটের বাজারে মমতা ব্যানার্জী বাজারে নিয়ে এলেন চা বাগানের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তু পাট্টার অধিকার। তবে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই শুধু মাত্র ভোটের বাজার গরম করতে গিয়ে পাট্টার বিষয়টি বাগানে এমন দাড়িয়েছে তাতে শ্রমিকরা মনে করছে আগের অবস্থাতেই যেন আমরা ভাল ছিলাম। আর পাশ থেকে হাসছে মালিক সংগঠনগুলো। ফলত পাট্টা নিয়ে সরকার, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সমস্ত বিতর্ক নিয়েই আজকের বিশ্লেষন।

 

২০২৩ সালের জানুয়ারি ১৯ তারিখ ডুয়ার্সের হাসিমারা তে একটি সরকারি সভায় চা বাগানে শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়ার কথা বলেন মমতা ব্যানার্জী। এই বছরের ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ ৯ টি বাগানের মোট ৫৮৪.১৯৩ একর জমি WBEA Act ১৯৫৩ সেকশন ৬(৩) মোতাবেক সরকার লিসের জমি নিজের দখলে নেয় এবং ১৯৫৫ আইনের ৪৯ (১A) ধারা অনুসারে উক্ত বাগানের বহু শ্রমিককে ৫ ডেসিমেল করে জমি দেওয়া হয়। জমির এই পাট্টা শ্রমিকদের বসত বাড়ি তেই দেওয়া হয়েছে নাকি অন্য জায়গায় তা নিয়ে চলে ধোঁয়াশা। সরকার এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে পাট্টা বিতরণেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

চা বাগানের শ্রমিক লাইন

 

আবার ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সালে বিধানসভা তে জমি নিয়ে একটি আলাদা বিল পাশ হয়। নতুন সংশোধনীতে বলা হয় কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান শিল্পতালুক, ফিনান্সিয়াল হাব, ফুড হাব, বায়োটেক পার্ক, লজিস্টিক পার্ক কিংবা টাউনশিপ গড়তে চাইলে রাজ্য সরকার বা কোনও অধীনস্থ সংস্থার মালিকানাধীন সিলিং বহির্ভূত খাস জমি নির্ধারিত ফি পুরো মালিকানায় নিতে পারবে। যা আগে শুধু লিজ দেওয়ার নিয়ম ছিল। জমি নিয়ে পর পর দুটো সংশোধনের ফলে চা শ্রমিকেরা ভীত হয়ে উঠে। বলা হয় এই নিয়মের ফলে বাগান কেও ফ্রী হল্ড করা হবে এবং এই কারণেই সরকার চা শ্রমিকদের পুরো জমির অধিকার না দিয়ে শুধু মাত্র ৫ ডেসিমেল জমি দিতে চাইছে। চা বাগান জুড়ে ব্যাপক আন্দোলনের সম্মখীন হয় শাসক দল। ৫ই এপ্রিল ২০২৩ সালে শিলিগুড়ি সাক্ষী থাকে আদিবাসী শ্রমিকদের এক মহামিছিলে। মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের শিলিগুড়িতে জানান চা বাগান কে ফ্রী হল্ড ল্যান্ড করা হচ্ছে না। নতুন আইনে তা নেই। জুন ৮ তারিখ যা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হয়। এই একই সময়ে পাট্টা প্রদান কে কেন্দ্র করে সার্ভে করতে আসা ভূমি দপ্তরের আধিকারিকদের বিক্ষোভের সম্মক্ষীন হতে হয় বিভিন্ন বাগানে। তারপর হঠাৎ ২০২৩ সালের ১লা আগস্ট ভূমি দপ্তর থেকে বলা হয় চা বাগিচার অব্যবহৃত জমিতে শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়া হবে, এর ফলে জোরালো হয় চা বাগানের মানুষের আন্দোলন। চাপে পড়ে আলিপুরদুয়ারের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বলেন বসত জমিতেই পাট্টা দেওয়া হবে। পরে মুখ্যমন্ত্রী একই কথা ঘোষনা করেন। এবং পাহাড়ে পাট্টা প্রদান ও সমীক্ষা বন্ধ থাকলেও ডুয়ার্সে আবার পাট্টা বিলি শুরু হয়। তবে পরবর্তী কোন নোটিশ আমরা চোখে দেখি নি। ফলত অনেকেই বর্তমান পাট্টা প্রদানের সঠিক ম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়েছে। প্রশাসন বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমির সার্ভে করে পাট্টা প্রদান করলেও বাগানের মানুষ কিন্তু সন্দিহান। তাছাড়া পাট্টা দেওয়ার পর অনলাইন খতিয়ানে নাম এখনও বহু বাগানে ওঠানো হয় নি। ফলত কোন শ্রমিক তার বাড়ির দাগ নম্বর দিয়ে জমি সার্চ করলে জমির মালিক কোম্পানির নামেই দেখাচ্ছে।

 

৫ ডিসিমেল ও রিফিউজি পাট্টা বিতর্ক 

 

এবার আসি ৫ ডেসিমেলের কথায়। সিপিএম সরকারের সময় বাস্তু পাট্টার উর্দ্ধসীমা ছিল ৮ ডেসিমেল। প্রকল্পের নাম ছিল ”চাষ ও বসবাসের জন্য ভূমিদান প্রকল্প”। পরবর্তীতে নাম বদলে ২০১১ তে মমতা ব্যনার্জীর সরকার “নিজ ভূমি নিজ গৃহ প্রকল্প”নিয়ে আসে। জমির উর্দ্ধ সীমা বেধে দেয় ৫ ডেসিমেল। মূলত ভূমিহীন যারা, যারা রেলের জমিতে বসবাসরত, নদী ভাঙ্গনে জমি চলে যাওয়া, উদবাস্ত, মাছ চাষী, হস্ত শিল্পী ও শরনার্থীরাও এই প্রকল্পে জমি পেয়ে থাকে। বর্তমানে এই প্রকল্পের ভিত্তিতেই চা বাগানে পাট্টা প্রদান চলছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গুলোর এক্ষত্রে দুটো বক্তব্য। শ্রমিকেরা ৫ ডেসিমেলের বেশী জমিতে বসবাসরত ফলত কম জমি দিয়ে বাকি জমি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। দ্বিতীয়ত, বিজেপি একে রিফিয়জি পাট্টা অ্যাখা দিয়ে প্রচার করছে বাকি জমিতে রোহিঙ্গা দের রাখা হবে। এই বক্তব্য হাস্যকর হলেও সরকারের তারাহুরো নীতির ফলে বিরোধী দল শ্রমিকদের মধ্যে ভয় প্রবেশ করাতে যথেষ্ট সক্ষম হয়েছে। এও বলা হচ্ছে যেহেতু দপ্তরের নাম ভূমি ও ভূমি সংস্কার এবং উদবাস্ত ত্রাণ ও পুর্নবাসন দপ্তর তাই এটি রিফিউজি জমি। যা চা বাগানের শ্রমিকদের অপমান। উল্লেখ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার আর উদবাস্ত ত্রান দপ্তর আগে আলাদা দপ্তর ছিল, উদবাস্ত দপ্তরের কাজ বর্তমানে কম থাকায় এই দুটো দপ্তর কে একত্রিত করা হয়েছে। তবে পাশাপাশি টি টুরিজম আইন সরকার এনেছে বলে শ্রমিকরা স্বাভাবিক ভাবেই চিন্তিত তাদের বাকি জমির কি হবে? এক্ষেত্রে সরকারের প্রথম ভুল কোন রকম সমীক্ষা না করে ৫ ডেসিমিল জমি দেওয়ার আদেশ জারি করা। চা বাগানের শ্রমিকদের জমির কোন রেকর্ড নেই। চা বাগানের শ্রমিকদের কে অন্যান্য জমিহীনদের সাথে গুলিয়ে ফেললেও চলবে না। প্রায় ১৫০ বছর ধরে বসবাসরত শ্রমিকদের জন্য আলাদা বাস্তুনীতি বানানো খুব কঠিন কাজ ছিল না। যাদের ১০- ১২ডেসিমেল জমি আছে তাদের বাকি অংশটা কৃষি পাট্টা হিসেবেও সরকার দিতে পারত। একজন পরিবার ১ একর অব্দি কৃষি পাট্টা পেতে পারে। ফলত এক্ষত্রে কোন অসুবিধা ছিল না। এই মস্ত বড় ভুল শোধরানোর তাগিদ বুঝে অনেক বাগানে সরকার বাড়ির দুজনের নামে ৫ ডেসিমেল করে জমি দিয়েছে।

 

 

ঋন ও বিক্রয়যোগ্য নয় তাই এই পাট্টা অর্থহীন?

 

এই জমির কাগজ ব্যাংকে জমা দিলে লোন পাওয়া যায় না বলা হচ্ছে তবে একথাও পুরোপুরি সত্য নয়। ৪৯ক ধারা তে জমি শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে জমি বিক্রয়যোগ্য নয়। ফলত লোন শোধ না করতে পারলেও ব্যাংক জমি নিতে পারে না। তাই প্রাইভেট ব্যাংক এক্ষত্রে লোন দিতে পারবে না। তবে সরকারি ও সমবায় ব্যাংক থেকে ঋন নিতে অসুবিধা নেই। রাজ্য সরকারের উচিত ছিল সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে শ্রমিকরা ঋন পায় তা উদ্যোগ নেওয়া যাতে শ্রমিকদের পাট্টার কাগজের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা আসে। তবে এসব কিছুই হয় নি।

 

এবার আসি দ্বিতীয় কথায়। অনেকেই বলছে জমি বিক্রয় যোগ্য নয়। তাই এই জমির পাট্টার গুরুত্ব নেই। বলে রাখা ভাল আমাদের দেশে বেশ কিছু জমির ক্ষেত্রে নানান শর্ত আছে যা বহু মানুষের সংঘর্ষের ফল। আদিবাসী জমি আজো আইন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অ-আদিবাসীদের কাছে হস্তান্তর হচ্ছে। চা বাগানের মামুলি মুজুরি তে কাজ করা শ্রমিকরা নিরুপায় হয়েই অ-আদিবাসীদের হাতে জমি বিক্রি না করে তাই ৪৯ (১A) তে জমি বিক্রয়যোগ্য নয় বলা হয়েছে। যেহেতু বাগানে কম সংখ্যায় হলেও এক মধ্যবিত্ত শ্রেনী তৈরী হয়েছে যাদের কর্মজীবন বাইরে এবং তারাই বাগানের জমি বিক্রি করার পক্ষে। পাহাড়ে এই প্রবণতা আরো বেশী। তবে অনেক আদিবাসী ও সামাজিক সংগঠন এই মতামতের বিপক্ষে বক্তব্য রেখেছে।

 

মালিকের চিঠি

 

এত কিছু হই হট্টগোলের মধ্যে চা মালিক সংগঠনের কোন প্রেস বিবৃতি দেখা যায় নি। তবে ১৪ই মার্চ ২০২৩ সালে মালিক পক্ষের সর্ববৃহৎ মঞ্চ CCPA ভূমি দপ্তরের সেক্রেটারি ও ল্যান্ড কমিশনার কে একটি চিঠি লেখে এই পাট্টা বিতরনের বিষয়ে। তারা মূলত বলতে চায় এই পাট্টা বিতরন টি প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টের বিরোধী। যেহেতু প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্টে বলা আছে লিজ জমিতে শ্রমিকদের জন্য কোয়ার্টারের ব্যবস্থা করবে মালিক এবং প্ল্যান্টেশন রুলসে নির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে কোন শ্রমিক মারা গেলে বা তার বাড়ির কেউ কাজ না করলে কতদিন পর ঘর ছাড়তে হবে, ফলত এই পাট্টা কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধী। সহজ ভাবে বলতে গেলে ধরুন শ্রমিকের বাবার নামে জমির পাট্টা রয়েছে। ছেলে বাগানে কাজ করে কিন্তু বাবা ছেলে কে জমি থেকে বেদখল করেছে। তখন ছেলে যদি ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বলে প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট অনুসারে আমাকে ঘর দিন তাহলে ম্যানেজমেন্টের কি করনীয়? কারণ কোয়ার্টার ছেলে পেলেও জমি বাবা বা মা-র নামে। এছাড়া মালিকপক্ষ চিঠিতে বলে চা বাগানের রাস্তা ও জলাশয় ম্যানেজমেন্টের অধীনে কিন্তু এই পাট্টা বিতরণ এর বাধাস্বরুপ। পুরো চিঠি পড়লে বোঝা যায়, মালিক পক্ষ বোঝাতে চাইছে এই জমির অধিকার পেলে শ্রমিকরা তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। অর্থাৎ আমরা যাকে বলছি দাসত্ব থেকে মুক্তি। ৯ই ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে রাজ্যসভাতে সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট কিভাবে পাট্টা বিতরনে অন্তরায় তা তুলে ধরলেও বিষয়টি তিনি স্পষ্ট ভাবে বলতে পারেন নি। অর্ধেক কথা বলে তিনি মমতা ব্যানার্জীর বন্দনা শুরু করে দিলেন। তৃণমূল চাইলে কেন্দ্র সরকার কে এই বিষয় ঘিরতে পারতেন। শ্রমিকদের বলতে পারতেন রাজ্য নয় কেন্দ্রীয় আইন তাদের দাসত্বের কারণ। মালিকদের এই চিঠি কে কেন্দ্র করেও শাসক দল শ্রমিকদের কাছে যেতে পারত এবং বলতে পারত এই পদক্ষেপ শ্রমিকদের দাসত্ব ঘোচাবে। উল্টে মালিকরা যাতে প্ল্যান্টেশন লেবার অ্যাক্ট কে দেখিয়ে কোর্টে যেতে না পারেন তাই জমি রিসিউম করার আগে মালিকদের থেকে রাজ্য সরকার NOC চাইলেন। যেখানে পেলেন না সেখানে পাট্টা না দিয়ে সরকার চুপ করে বসে থাকল। অথচ মালিকরাও জানে ব্যাপারটা এত সহজ নয়। কারণ মালিকরা কোর্টে গেলে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক এতদিন কটা ঘর আর কতগুলো রাস্তা প্ল্যান্টেশন অ্যাক্ট অনুসারে ম্যানেজমেন্ট শ্রমিকদের বানিয়ে দিয়েছে। ফলত মালিকের হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী।

 

পুরো পাট্টার প্রকল্প ঘিরে তৃণমূল সরকার ও তার দলের দিশাহীনতা বুঝিয়েছে শুধুমাত্র ভোট বাক্সে লাভের আশাতেই তাদের এই পাট্টা বিতরণ। তারাহুড়ো করে যদিও দলের লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী হয়েছে। পাট্টা প্রদানের পর বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে যে প্রকল্প থেকে শ্রমিকেরা বঞ্চিত ছিল তা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। পাট্টার সাথে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার গল্প আসলে বাংলা আবাস যোজনার প্রকল্পই ছিল যা পরে প্রত্যেকে পেয়েছে। বিরোধী দল গঠনমূলক সমালোচনা না করে একে শুধু সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়েছে। যদিও এর একটি বড় কারণ হতে পারে বাংলায় শ্রমিকেরা পাট্টা পেলে আসামের শ্রমিকরাও পথে  নামবে যা বিজেপির জন্য শুভ নয়। তবে সামাজিক সংগঠনগুলোর উচিত সরকার কে প্রাথমিক ভাবে সমীক্ষা করতে দেওয়া। পুরো জমির রেকর্ড থাকলে সম্পূর্ন জমির অধিকারের লড়াইও বেচে থাকবে। সরকারের প্রাথমিক কাজ হল পাট্টা নিয়ে যে যে ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে তার সমাধান করা। যে দল জমি আন্দোলন থেকে উঠে এসেছে তাদের জমি নীতি নিয়ে এই দিশাহীনতা নিজেদের রাজ্যপাট হারানোর দিকেই আগামীতে নিয়ে যাবে বলে মনে হয়। বাংলার ইতিহাস কিন্তু তাই বলে।

 

 

Also Read :  হিমালয়-লাগোয়া উত্তরবঙ্গে জমি লুটের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য প্রতিরোধ আন্দোলনের অভিমুখে

 

 

Share this
Leave a Comment