লোকসভা নির্বাচনের আগে এনআরসি-আধার নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছ আসাম সরকার: ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি


  • February 20, 2024
  • (0 Comments)
  • 460 Views

Groundxero|20 February, 2024

 

সম্প্রতি বিধানসভায় আসাম সরকারের পক্ষে মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, ২৭ লক্ষ লোকের আধার ইস‍্যু করতে হলে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি লাগবে।  মুখ‍্যমন্ত্রীর মুখেও আবার একই রকমের বিভ্রান্তিকর কথা শোনা গেল। গত ৫ বছর ধরে আধার আটকে রেখে এখন নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার বল সুপ্রিম কোর্টে ঠেলে দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে চাইছে। অসম সরকারের এই বক্তব্যে ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে।

 

ফোরাম মনে করে রাজ‍্য সরকার চাইলেই মুহুর্তের মধ্যে ২৭ লক্ষের অর্ধেকের বেশি লোকের যাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে তাঁদের আধার ইস‍্যু করাতে পারে। এনআরসি হিয়ারিং-এর সময় প্রায় ২৭ লক্ষের বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করেছিল রাজ‍্য সরকার। চূড়ান্ত খসড়া এনআরসি প্রকাশের পর দাবি আপত্তি পর্যায়ের জন‍্য তৈরি এসওপিতে প‍্যারা নং ৯ যোগ করা হয়, যার মাধ্যমে রাজ‍্য সরকার আধার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করবে বলে উল্লেখ করা হয়। সঙ্গে এটাও বলা হয় যে যাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তাঁদের আধার ইস‍্যু করা হবে। এছাড়া অন‍্য কোথাও এমনকি সুপ্রিম কোর্টের কোনও আদেশেই এনআরসি সংক্রান্তে বায়োমেট্রিক তথ‍্য সংগ্রহ করে আধার আটকে রাখার কোনও উল্লেখই নেই। এরকম কোনও আইনের বিধানও নেই। এর মানে দাঁড়ায় এই যে রাজ‍্য সরকার বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করে আধার আটকেছে, যাঁদের নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের আধার ইস‍্যু করবে রাজ‍্য সরকারই। বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কিছুদিন পরেই ৩১ অগষ্ট ২০১৯-এ প্রকাশিত সাপ্লিমেন্টারি তালিকা মারফত ২৭ লক্ষের অধিকাংশ নাম এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। তাদেরকে আধার ইস‍্যু করতে রাজ‍্য সরকার যদিও বাধ‍্য কিন্তু তা না করে রাজ‍্য সরকার বল সুপ্রিম কোর্টের দিকে ঠেলে দিয়ে লোককে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।

 

যে ১৯ লক্ষ লোকের নাম প্রকাশিত চূড়ান্ত এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এনআরসির নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিদেশি আদালতে আপিল করার কথা। সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে ডবল ইঞ্জিন রাজ‍্য ও কেন্দ্র সরকার। আপিল প্রক্রিয়ার জন্য গঠিত ২০০ অতিরিক্ত বিদেশি ট্রাইবুন্যাল আপিল প্রক্রিয়া আরম্ভ না করেই বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সরকারের কোনও কোনও প্রবক্তা আরও এককদম এগিয়ে প্রকাশিত চূড়ান্ত এনআরসিকে পুনরায় ভেরিফিকেশনের নামে জনগণকে আরেক দফা হেনস্থা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন ধারাবাহিক ভাবে। অথচ রিভেরিফিকেশনের কোনও আইনি প্রবিধান নেই, এমনকি এ বিষয়ে সরকারের তরফে সুপ্রিম কোর্টে কোনও আবেদন পর্যন্ত নেই।

 

ফোরাম মনে করে বর্তমানে এনআরসি বা আধার ইস‍্যু প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের কোনও প্রত‍্যক্ষ ভূমিকা নেই। চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্ট আর আগের মতো প্রত‍্যক্ষ মনিটরিং করছে না। এনআরসির বাকি প্রক্রিয়া, আপিল, আধার, জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদান, সবই সরকারের ইচ্ছাধীন এবং সরকারেরই দায়িত্বের মধ‍্যে পড়ে। অন্তর্ভুক্তির সাপ্লিমেন্টারি তালিকা এনএসকে ছাড়াও সার্কেল এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপলব্ধ আছে। চূড়ান্ত এনআরসির সম্পূর্ণ তালিকা অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে ও উপলব্ধ আছে। আরজিআই মোট ৯ বার আসাম এনআরসি প্রস্তুতির জন‍্য গেজেট নোটিফিকেশন প্রকাশ করেছে। সেই অনুযায়ী এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এবং তত্ত্বাবধানে অসমে এনআরসি তৈরি করা হয়েছে। ৩১ অগষ্ট ২০১৯ আরজিআই-এর প্রতিনিধি, সুপ্রিম কোর্টের নোডাল অফিসার তথা রাজ‍্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা চূড়ান্ত এনআরসি প্রকাশ করেন। আরজিআই-এর আর কোনও করণীয় কাজ বাকি নেই। কোথাও এরকম কোনও প্রবিধান বা নির্দেশ নেই। এই ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর প্রচার উদ্দেশ‍্যপ্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে।

 

যাঁদের বায়োমেট্রিক দিয়েও আধার ইস‍্যু করা বাকি আছে, তাঁদের যে আধার এনরোলমেন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটাকে অন‍্য কোনও পরিচয়পত্রের সঙ্গে আধারের বিকল্প হিসেবে ব‍্যবহার করা যাবে বলে আধার কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে অনেক আগেই (11-08-2022)। এনআরসি হিয়ারিং-এর সময়ে বায়োমেট্রিক দেওয়ার পর তাঁদেরকে অ্যাকনলেজমেন্ট হিসেবে যে কাগজ দিয়েছে সেটাতে আধার এনরোলমেন্ট আইডি আছে। সেটাও মানা হচ্ছে না। ফলে, নাগরিকরা নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং বিড়ম্বনার শিকার হয়ে চলেছেন গত প্রায় ৫ বছর যাবৎ।

 

এনআরসি থেকে নাম বাদ পড়া প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের আপিলের সুযোগ না দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, এমনকি যাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাঁদের নাম আবার বাতিল করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সরকার পক্ষের নেতারা আধার সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন না এবং সুপ্রিম কোর্টের নামে মিথ্যা অজুহাত খাড়া করে জনগনকে বিভ্রান্ত করছেন। এই এনআরসি-আধার সংক্রান্ত জনগণের বাস্তব সমস্যা সমাধানে জনগণকে সচেতন হওয়ার এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে ফোরাম। সদিচ্ছা থাকলে কোনও অজুহাত না দেখিয়ে আসন্ন নির্বাচনের আগে আধার সমস‍্যার সমাধান করুক সরকার এবং এনআরসি আপিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাগরিকত্বের সমস্যার সমাধান হোক।

 

উল্লেখ্য যে ফোরাম ফর সোস‍্যাল হারমনি নাগরিকত্বের প্রশ্নে ২০১৪ সালে আসামে প্রকাশিত সচিত্র ভোটার তালিকায় নাম থাকা সকলকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে আসছে। ২০১৪- এর ক্রমউন্নিত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪-এ, সেই তালিকায় নাম থাকা সকলেই ভারতীয় নাগরিক। আসামে সন্দেহ যুক্ত নাগরিকদের ডি-ভোটার বানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে বিদেশি আদালতে। ফলে সাধারণ যুক্তিতে ভোটারদের থেকে ডি-ভোটার বাদ দিলে যাঁরা থাকেন তারা সন্দেহাতীত ভাবে ভারতীয় নাগরিক। সকল ভোটারদের নাম চূড়ান্ত এনআরসিতে অবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করা হোক এবং সকলকে আধার কার্ড ইস‍্যু করা হোক। এই দাবিতে ফোরাম এখনও অবিচল রয়েছে।

 

ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমোনির পক্ষে শিশির দে

 

Share this
Leave a Comment