অত সহজে বইমেলায় আমরা জায়গা ছাড়ছি না


  • January 30, 2024
  • (13 Comments)
  • 6640 Views

আজ সজোরে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কাদের বইমেলা। মিলিত কণ্ঠে উত্তর দিতে হবে, আমাদের বইমেলা। প্রতিটি মুহূর্তে— নিজেদের লেখা, ছবি থেকে শুরু করে মিছিল-স্লোগানের মধ্য দিয়ে ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে, অত সহজে ওদের আমরা জায়গা ছাড়ছি না। লিখলেন নন্দিনী ধর

 

১.

এই কলকাতা শহরের কয়েকটি বাচ্চা বইমেলায় গিয়েছিলগত ২৮শে জানুয়ারি। ওরা কোনো মধ্যবিত্ত বাড়ির সন্তান নয়, ওদের মা-বাবা, আত্মীয়-পরিজনরা সম্ভবত কেউই লেখালেখি, শিল্পচর্চা ও মধ্যবিত্ত রাজনৈতিক আলোচনার সঙ্গে যুক্ত নন।ওরা যাকে বলে “বস্তিবাড়ির” ছেলেমেয়ে।

 

যদিও, এইবারই যে ওরা প্রথমবার বইমেলায় এসেছে, এমনটি নয়। ওরা এসেছিল বইমেলায়। গতবারও। ২০২৩ সালে। ওরা যাদবপুর কমিউন পরিচালিত আশু-তিমির স্কুলের ছাত্রছাত্রী, প্রীতিলতা পাঠশালার ছাত্রছাত্রী, ভগৎ সিং পাঠশালার ছাত্রছাত্রী। ওরা এসেছিল ওদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাত ধরে।যাঁরা নিজেরাও তরুণ, অনেকেরই  ছাত্রজীবন এখনো শেষ হয়নি। ওরা একটি পত্রিকা প্রকাশ করে, তার নাম “চরকি”। আগেআগেরবাররও মেলাতে এনেছিল “চরকি”-র প্রথম  সংখ্যাটি। মেলায় ঘুরে ঘুরে হক করেছিল, খুব ভালো লেগেছিল ওদের বইমেলা। তাই, ওরা এসেছিল এইবারও। মেলাতে বিক্রি করবে বলেই, বিশেষভাবে বার করেছিল “চরকি”-র নতুন সংখ্যা।


তো, ওদের বলা হলো, এসবের অধিকার  ওদের নেই। কারণ, ওরা ‘বস্তির বাচ্চা’। পয়সা দিয়ে স্টল বা টেবিল বুক করার সাধ্য ওদের নেই। বলা হল, এই মেলায় ওরা ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’। বলল ইসকন, শপিজেন বাংলা, গিল্ড কর্তৃপক্ষ। পুলিশ এল, আক্রমণ নামল ওদের ওপর, আটক করা হল ওদের বেশ কয়েকজনকে, ওদের তরুণ শিক্ষকদেরও অনেককে মারধর করে বের করে দেওয়া হলো মেলা থেকে। অবশ্য, দারিদ্রই যে ওদের একমাত্র “দোষ” তা তো নয়। ওরা পোস্টারে পোস্টারে লিখে এনেছিল ফিলিস্তিনের ওপর নামা ইজরায়েলি আক্রমণের কথা, লিখে এনেছিল গাজার শিশুদের ওপর নেমে আসা অত্যাচারের কথা। ওদেরই এক শিক্ষকের ভাষায়:

 

আজ প্রীতিলতার পাঠশালা, আশু তিমিরের পাঠশালা, ভগৎ সিং এর পাঠশালার পক্ষ থেকে আমরা কিছু পড়ুয়া ও শিক্ষক শিক্ষিকারা মিলে জড়ো হয়েছিলাম বইমেলায় লিটিল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের সামনে ‘চরকি’ নিয়ে। চরকি গত বছরই বেরিয়েছে। চারু মার্কেটের প্রাইভেট গলি, বেঙ্গল ল্যাম্প ও যাদবপুর স্টেশন সংলগ্ন বস্তি এবং হকারদের বাচ্চাদের নিজেদের কথা, নিজেদের কলমে। আজ সেই চরকির সঙ্গে আমাদের ছিল বাচ্চাদের হাতে আঁকা কিছু পোস্টার। গত সপ্তাহেই আমরা পাঠশালায় একসাথে বসে ফিলিস্তিনের বাচ্চাদের নিয়ে কিছু ছোট ছবি দেখেছিলাম, দেখেছিলাম এখনকার ভারতের কিছু ছবি, এবং এখন গাজার বাচ্চাদের উপর চলা আগ্রাসনের কিছু ভিডিও, গাজার বাচ্চাদের প্রেস কনফারেন্স। সেই সূত্রেই বাচ্চাদের আঁকা কিছু পোস্টার ছিল। ফিলিস্তিনের মুক্তির কথা বলে, সেখানকার শিশুদের উপর আক্রমণ বন্ধ করার দাবিতে। গিল্ডের থেকে স্টল কেনার বা লিটল ম্যাগাজিনের টেবিল নেওয়ার সামর্থ্য নেই বলেই মেলার এক কোণায় কাগজ পেতে বসা হয়েছিল। যেরকম আর পাঁচটা লোক বইমেলায় বসে প্রতিবার। প্রথমে গিল্ড অফিস থেকে লোক এসে জানাল ইসকনের স্টল থেকে কমপ্লেইন করেছে। উঠে যেতে বলল। স্টলের অনুমতি নেই, বসার জন্য পয়সা দেওয়া হয়নি বলে উঠে যেতে বলা হল। তারপর এক দল পুলিশ এসে ঘিরে ধরল। আমরা জানালাম আমরা আর আধ ঘণ্টায় উঠে যাব। পড়ুয়াদের এমনিও ফেরার সময় হয়ে আসছিল। এরপর অন্য পাশের স্টল ‘শপিজেন বাংলা’ থেকে কিছু জন এসে চেঁচাতে লাগলেন আমরা বাচ্চাদের ব্যবহার করছি, ওদের নিয়ে ব্যবসা করছি বলে। বাচ্চাদের হাত থেকে চরকি কেড়ে নিলেন। বড়দের হুমকিতে ঘাবড়ে না গিয়েও পড়ুয়ারা ঠান্ডা মাথায় জানায় তাদের কেউ কিছু শিখিয়ে দেয়নি। তারা নিজেদের লেখা বই, নিজেরা বিক্রি করছে। এরপর আরো হুমকি বাড়তে থাকে। পড়ুয়ারা প্রতিরোধে গান শুরু করে, ‘আমরা সবাই রাজা’, ‘নবাব হুজুর খাঞ্জা খান’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’। এরপর একজন এগিয়ে এসে ওদের হাতে আঁকা পোস্টার পায়ে মাড়িয়ে দেয়। আর হিংস্র ভাবে ঠেলতে থাকে। ততক্ষণে পথ চলতি মানুষও জড়ো হতে শুরু করেছে। অনেকেই জানায় তাদের কোনো অসুবিধে হয়নি বাচ্চাদের জন্য। আমরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ, বইমেলা কর্তৃপক্ষ এসে আমাদের কিছুজনকে টেনে হেঁচড়ে বাইরে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যান। বাচ্চারা ঘাবড়ে আছে, ওরা কিছু খায়নি, ওরা হারিয়ে গেলে গিল্ড দায়িত্ব নেবে কি না প্রশ্ন করলে আমাদের মধ্যে একজনকে যেতে দেওয়া হয় বাচ্চাদের বের করে আনতে। বাকিদের তখনও আটক রাখা হয়েছিল।

 

এই বছর ওদের জীবনে দ্বিতীয়বার বইমেলা যাওয়া। গত বার এসে শুধু একটা বইয়েরই মেলা যেখানে গান হয়, আঁকা হয়, নানান রকমের বই, নানান মানুষ পুরোটা দেখে এ বছর ওদের শুরু থেকেই উত্তেজনা ছিল। কিন্তু আজ তারা এই নিয়েই বাড়ি ফিরল যে বইমেলা সবার জন্য নয়। সেখানে এক-এক জনের জন্য এক-এক রকম নিয়ম। সেখানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে পোস্টার নিয়ে বসলে বের করে দেওয়া হয়। সেখানে টাকা না থাকলে নিজের কথা বলে বই বিক্রি করা যায় না। সেখানে টাকা থাকলে মানুষ শ্রেণি ঘৃণা উগরে বলতে পারে বাচ্চাদের ‘ব্যবহার করা হচ্ছে’। যে গল্পগুলো বস্তির অন্ধগলিতেই থেকে যায়, আজ যেই ইতিহাস বাবুদের কফি টেবিল বইতে জায়গা পায় না, সেই ইতিহাস, সেই গল্প কবিতা, সেই কল্পনা নিজেরা লিখে, নিজেরা বিক্রি করলে তা অপরাধ হয়ে যায়।

 

যাদবপুর, চারু মার্কেট, বেঙ্গল ল্যাম্প থেকে ফিলিস্তিন খুব দূরের দেশ হলেও, ম্যাপে ফিলিস্তিন কোথায় খুঁজতে হোঁচট খেলেও, যে বাচ্চারা ছোট থেকে উচ্ছেদের ভয় বড় হয়েছে, যাদের বরাবর এই শহরের ‘উন্নয়ন’ বাতিল করেছে, তাদের ফিলিস্তিনের শিশুদের ঘর উজাড় হওয়ার যন্ত্রণা বোঝাতে খুব কসরত করতে হয়নি আমাদের।

 

যাদের প্রতিদিনের সময় এক বেলা কলতলায় জল আসার সঙ্গে বাঁধা, জলের লাইন কের দেওয়ার আগ্রাসন তাদের বোঝাতে হয়নি বিশেষ। যাদের পড়াশুনো, স্কুলে যাওয়া, স্কুল ছুট হওয়ার সরু সুতোয় হাঁটার মতো অনিশ্চিত, তাদের স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস করা যে কত বড় অপরাধ তা অনুভব করতে অসুবিধে হয়নি। নিজের পাল্টাতে থাকা চারপাশ দেখেই তারা গাজার ছোটদের প্রেস কনফারেন্সের আর্তি অনুধাবন করেছে। তাই পোস্টার এঁকেছে, তাই আজ বড়দের চোখ রাঙানিতেও সেই পোস্টার আঁকড়ে গেয়েছে—

 

“…গুলির মুখে দাঁড়ায় রুখে
অকাতরে হারায় প্রাণ,
রক্ত রাঙা মাটির পরে
ওড়ে ওদের জয় নিশান…”

ঝিলম রায়

 

অবশ্য, এইবার বইমেলায় এই ঘটনাটি ব্যতিক্রম নয়। ওই একই দিনে রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি বিষয়ে কথা বলা, স্লোগান তোলা ও মিছিল করার জন্য আটক করা হয় আরএসএফ ছাত্র সংগঠনটির কয়েকজন কর্মীকে। গত কয়েকদিন আগে, শনিবার, মনফকিরার স্টলের দেওয়ালের শিল্পকর্মটি উপলক্ষে স্টলে এসে হুজ্জতি করে অজ্ঞাতপরিচয় কিছু পুরুষ ও মহিলা। দেওয়ালের ছবিটিতে স্পষ্ট করে লেখা ছিল “Pray for Gaza”, “Free Palestine” জাতীয় বার্তা।

কাজেই, গোটা দেশজুড়ে অন্যান্য আরও বহু ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা বইমেলার ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে, গাজা তথা ফিলিস্তিনের মানুষের পাশে সর্বসমক্ষে দাঁড়াতে হলে, আজ ধরে নিতে হবে যে নিজের ওপর আক্রমণ নামবে। কোনো না কোনো ভাবে।

 

যদিও, ভারতবর্ষের ইতিহাস ঘাঁটলে বেরোয় অন্যরকম কিছু বাস্তব, কিছু তথ্য। যেমন, ১৯৪৮ সালে ইউএন জেনারেল আসেম্বলিতে ফিলিস্তিন ভাগের বিরুদ্ধে ভোট দেয় ভারত। ১৯৭৪ সালে ভারতই হল একমাত্র অ-আরব দেশ, যেটি কিনা পিএলও (প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশান )-কে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক কণ্ঠস্বরের আইনানুগ অভিব্যাক্তি বলে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৮ সালে ভারত ছিল সেইসব গুটিকয়েক দেশগুলির একটি, যারা ফিলিস্তিনীয় রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। কাজেই, ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নিরিখে, আজ ভারতীয় হিসেবে ফিলিস্তিনের মানুষের লড়াইয়ের  পাশে দাঁড়ানোর ভিতরে আর যাই হোক কোনো রাষ্ট্রদ্রোহিতাও নেই, অভিনবত্বও নেই।

 

কিন্তু, বর্তমান ভারতবর্ষে, যেখানে আইন, ইতিহাস, তথ্য, আদালত ও সংবিধান সবই প্রহসনে পরিণত হয়েছে— যেমনটি হয় প্রায় যে কোনো স্বৈরতন্ত্রে, যেমনটি হয় ফ্যাসিবাদী শাসনের বাতাবরণে— সেখানে এইসব জটিল ঐতিহাসিক যুক্তির কোনো জায়গা নেই। অনেক অনেক বেশি প্রকট সেখানে ফিলিস্তিনের মানুষের মুক্তির আইনানুগ চাহিদাকে সামনে রেখে জাতীয় জঙ্গি মুসলিম-বিরোধিতার রাজনীতি, ইজরাইলের সাথে শতসহস্র  চুক্তি, বিনিয়োগ, অস্ত্র ব্যবসা— যে সব নিয়ে  বিশদে লেখার কোনো সুযোগ নেই এই প্রতিবেদনে। কিন্তু, প্রশ্ন ওঠে, তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গে ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি সংহতি জানালেই কেন আক্রমণের মুখোমুখি হতে হয় স্কুলপড়ুয়াদের, স্বাধীন প্রকাশকদের?

 

কেন বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের সবার সামনে যে একটি জ্বলন্ত ইস্যু—ইউপিএ-সহ আরও একাধিক অগণতান্ত্রিক আইন ব্যবহার করে বিরূদ্ধ কণ্ঠস্বরের সরকারি অবদমন ও দীর্ঘায়িত বিচারহীন কারাবাস—তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে গেলে ছাত্রদের আটক করা হবে? তাও কিনা খোদ বইমেলার ভিতর থেকে তুলে এনে? বই, লেখালেখি, জ্ঞানচর্চা, তত্ত্ব ও তথ্যখোঁজের সাথে কি থাকতে নেই বাস্তবের যোগাযোগ? সমাজের যোগাযোগ, রাজনীতির যোগাযোগ?

 

২.

গত কয়েকদিনের বইমেলার ভিতরকার ঘটনাবলি কতগুলো বিষয়ের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দাবি করে। এই সব কটি বিষয়কেই ঘিরে আছে এক ধরনের প্রগাঢ় স্থানিক রাজনীতি। কে বা কারা দাবি করতে পারে বইমেলার চত্ত্বর নিজেদের বলে? কে বা কারা বেচতে পারে নিজেদের বই, পত্রিকা ও অন্যান্য প্রকাশনাজাত সামগ্রী? কী ভাবে এবং কাদের কাছে বেচা যেতে পারে সেইসব? তো, যাদবপুর কমিউন পরিচালিত পাঠশালাগুলির পড়ুয়াদের বিতাড়িত করার মধ্য দিয়ে একাধিক ষ্টল কর্তৃপক্ষ, গিল্ড কর্তারা ও পুলিশ বাহিনী যে বার্তাটি সর্বসমক্ষে সজোরে হাজির করলেন, তা হল, বইমেলা তারই, যার আছে ক্রয়ক্ষমতা। বইমেলা তারই যার আছে পয়সা দিয়ে স্টল-টেবিল নেওয়ার অর্থনৈতিক ক্ষমতা। এর ভিতর দিয়ে তৈরি করা হল একধরনের শ্রেণি একচেটিয়াত্বের রাজনীতি, এক ধরনের সাংস্কৃতিক একচেটিয়াত্বের রাজনীতি। যে একচেটিয়াত্বের রাজনীতি আজ অনুভব করা যায় বইমেলার প্রতিটি কোণে কোণে।

 

একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে বদলেছে বইমেলার স্থানিক বিন্যাস। এই ক্রমশ পরিবর্তিত বিন্যাসের মধ্য দিয়ে ক্রমশ মুছে গেছে অনেক কিছুই, যা আমাদের অনেকেরই তারুণ্যের বইমেলার স্মৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। মাঠজুড়ে আড্ডা, ছাত্র-তরুণদের জায়গায় জায়গায় জড়ো হয়ে সমবেত গান-আবৃত্তি-বক্তব্য, বিভিন্ন ধরনের ছোট পত্রিকা ও বই হক করে বেড়ানো লেখক-শিল্পী বা রাজনৈতিক কর্মী বৃন্দ, লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের ঠিক বাইরেই ছবি আঁকা বা কাটুম-কুটুম বেচা তরুণ শিল্পীদল। এসব মুছে গেছে মানে সযত্নে, সুপরিকল্পিত ভাবে মুছে দেওয়া হয়েছে। সুপরিকল্পিতভাবেই আজকের বইমেলায় এক ইঞ্চিও প্রায় খোলা জায়গা নেই— মানে রাখা হয়নি। খোলা জায়গা নেই তাই দল বেঁধে বসার কোনো ব্যাপারও নেই। দল বেঁধে বসার জায়গা নেই, তাই আড্ডা বা মিলিত কণ্ঠের গানও নেই।

 

আর, এখনো যে কিছু কিছু এই জাতীয় প্রয়াস ভাঙাচোরাভাবে করে থাকেন আজকের তরুণ প্রজন্ম, সেগুলি এই স্থানিক বিন্যাসের কারণেই ঠিক যেন দানা বাঁধে না। কারণ, স্থানিক বিন্যাস তো শুধু বিমূর্ত স্থান নয়, স্থানিক বিন্যাস তৈরি করে দেয় জনপ্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানসিকতাও। তাই, আমরাও আজকে ক্রমাগত অভ্যস্ত করে নিয়েছি এই নতুন বইমেলায়। এইখানেই আমরা বই কিনি, ছোট পত্রিকা বেচি, পুলিশের চোখ-রাঙানি মেনে নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধ সারি বেঁধে সুরসুর করে চোখ নামিয়ে ভেতরে ঢুকি। আর, যখন প্রতিবাদ হয়, তখন প্রতিবাদকারীদের ওপর বিরক্ত হই।

 

আর স্টল বা টেবিল না নিয়ে পত্রিকা হক করতে গেলে কী হয়? বিশেষত সেইসব পত্রিকায় যদি থাকে রাজনৈতিক বা সামাজিক বিরুদ্ধস্বর, তার প্রমাণ ওই উপরোক্ত ঘটনাবলি। এবং, এতটা তীব্র না হলেও, আমাদের বন্ধু, পরিচিত অনেককেই বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের পুলিশ-গিল্ড মিলিত আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বা বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ নামানো হয়েছে যে কোনো ধরনের অধিকারের স্বপক্ষে সজোরে দাঁড়ানো জমায়েতের ওপর। যেমন ধরুন, এর আগেও এনআরসি-বিরোধী মিছিলের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। পুলিশি আক্রমণ নেমেছে হিন্দুত্ববাদীদের বিরূদ্ধে আওয়াজ তোলা ছাত্র-যুবদের ওপর। তাদের চরম লাঞ্চনা করেছে। মারধর, ছাত্রীদের প্রতি অশ্লীল শব্দপ্রয়োগ, মায় থানায় নিয়ে যাওয়া।

 

কাজেই, আজকের কলকাতা বইমেলা একটি গভীরভাবে নিয়ন্ত্রিত ক্ষেত্র, একটি গভীরভাবে নিয়ন্ত্রিত স্থান। আজকের ছোটরা আর আমাদের অনেকের মতোই বইমেলার কার্ণিভালজাত চরিত্রের স্মৃতি নিয়ে বড় হবে না। একদিন হঠাৎ বইমেলায় গিয়ে কোনো এক মফস্বলি কিশোর বা কিশোরী হঠাৎ করে পড়ে ফেলবে না বিনামূল্যে বিলোনো রাজনৈতিক ইশতেহার। বা শিখবে না নতুন স্লোগানের ছন্দময়তা। যে সম্ভাবনাগুলি তৈরি হত এইসব ছোট ছোট আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে, প্রথম পরিচয় বা দেখার মধ্য দিয়ে,যেভাবে বহু তরুণ-তরুণী ভাবতে শুরু করত, হয়তো বা একটু অন্যপথে, অন্য রূপে, তারও আর কোনো সম্ভাবনা থাকবে না।

 

পরিবর্তে, আজকের শিশুরা বইমেলাকে চিনবে একটি বাণিজ্যক্ষেত্র বলে। এবং, কেবলিমাত্র একটি বাণিজ্যক্ষেত্র বলে। যেখানে জ্ঞান বেচাকেনা হয়, শিল্পসাহিত্য বেচাকেনা হয়। এবং, বেচাকেনা হয় অগ্নিমূল্যে। সেখানে পদার্পণ করতে গেলে পকেটে পয়সা লাগে। নিজেদের কথা মানুষকে শোনাতে গেলেও, পড়াতে গেলেও, তারা জানবে, পকেটে পয়সা লাগে। যেমন জানলো আশু-তিমির বা প্রীতিলতা পাঠশালার পড়ুয়ারা।

 

আর তাদের নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে, গতকাল, অর্থাৎ, ২৯ জানুয়ারি যখন ছোট পত্রিকা প্যাভিলিয়নের সামনে আবারও জমায়েত করা হল, যখন ঠিক করা হল সেই জমায়েত মিছিল করে গিল্ড অফিসে ডেপুটেশন দিতে যাবে, তখন দশ মিটার যেতে না যেতেই সেই মিছিলের পথ আটকালো পুলিশ বাহিনী। বলা হল, বইমেলায় মিছিলের অনুমতি নেই। বলা হল, এখানে, অর্থাৎ, বইমেলায় আছে ১৪৪ ধারা। সেই ১৪৪ ধারা ভেঙে নাকি মিছিল করা যাবে না। টেনেহিঁচড়ে মেলা প্রাঙ্গন থেকে বিধাননগর নর্থ থানায় আটক করে রাখা হলো চোদ্দ জন বিভিন্ন বয়সী বিক্ষোভকারীদের। রাত বারোটার পর বারো জনের মুক্তি মিললেও, দুই ছাত্র কর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। আজ, অর্থাৎ, তিরিশে জানুয়ারি তাঁদের আদালতে পেশ করা হলে, দুদিনের জেল কাস্টডি দেওয়া হয়।

 

কোনো একটি মেলায় ১৪৪ ধারা জারি? এইভাবেই কি যুক্তির প্রহসন সাজায় ক্ষমতা? অন্যদিকে, পৃথিবীতে কোথাও তো প্রতিবাদজনিত মিছিল আর যাই হোক কর্তৃপক্ষের “অনুমতি” নিয়ে হয় না! কাজেই, এটা বুঝতে বাকি থাকে না বোধহয় যে আজ এক ধরনের সার্বিক জো-হুজুরি, সার্বিক অবদমনের পরিবেশেই আজ আমরা বাঁচি। বাঁচে আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎ, সাহিত্য জগৎ, আমাদের জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রগুলি। গত কয়েক বছরে বইমেলার ভেতরে সার্বিকভাবে জমি ছেড়ে দিয়েছি আমরা অনেক। তাতে অবশ্য ব্যতিক্রমী কিছু নেই। বইমেলার ভিতরে জমি ছেড়ে দেওয়া তো আসলে বাকি বৃহত্তর সমাজে রাজনৈতিক-সামাজিক স্থান সংকোচনেরই প্রতীক।

 

সেই সংকোচনের বৃহত্তর প্রতীক হয়েই হাজির হয় বারবার পুলিশ অফিসারদের মুখে একটি কথা— “বইমেলা ডেমনস্ট্রেশনের জায়গা নয়।” তাই, কপালে তিলক কাটা আইপিএস অফিসার যখন বলেন, “কলকাতা বইমেলা ইন্টারন্যাশনাল প্রচার পায়। সেখানে ডেমনস্ট্রেশন করে আপনারা ইমেজ খারাপ করছেন,” তখন তাকে পাল্টা জিজ্ঞাসা করা হয়, “এই যে বাচ্চাগুলো এসেছিল, তারা যে বইমেলা সম্পর্কে অতন্ত্য খারাপ ইমেজ নিয়ে ফিরল তার বেলা ?” অফিসার মহোদয় অবুঝ মুখ করে তাকিয়ে থাকেন। এই জাতীয় যুক্তিজাল তার মননের বাইরে। যে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ভেতর দিয়ে তিনি পুলিশ অফিসার হয়েছেন, শিখেছেন রাষ্ট্র ও ক্ষমতার সেবা—থুড়ি, পদলেহন করতে— সেখানে এই যুক্তিজালের কোনো স্থান নেই। কিন্তু, এই যে ছোট্ট বাকবিতণ্ডা, বিতর্ক— যা দিয়েই আসলে তৈরি হয় মিছিল ও তৎসান্নিধ্য পুলিশি সংঘর্ষের অন্তরীণ জীবন— খুলে দিল একটি বিপুল তত্ত্ববিশ্ব।

 

সেই তত্ত্ববিশ্ব জানাল আমাদের যে, বইমেলা আসলে একটি স্পেক্টাকেল। পুঁজির স্পেক্টাকেল, ক্ষমতার স্পেক্টাকেল। সেই স্পেক্টাকেলে বিদ্রোহের জায়গা নেই। এবং, পুঁজির সুচারু স্পেক্টাকেলে যে বিদ্রোহের জায়গা থাকে না, থাকে কেবলি ঝাঁ-চকচকে, জ্বলজ্বলে অন্ধকার, তা তো আমাদের অজানা নয়। কিন্তু, আমরা জানলাম এইবার, কলকাতা বইমেলা ২০২৪ -এর মেলা প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে, যে এই স্পেকটাকেলে সহমর্মিতারও কোনো জায়গা নেই। তাই, মনফকিরার স্টলের দেওয়ালে গাজার কথা থাকলে, তা হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীদের আক্রমণের জায়গা হয়। জায়গা নেই বহুত্ববাদী, নানা ধরনের সৃজনশীলতারও। নেই বলেই গরিব পরিবারের শিশুরা তাদের নিজেদের লেখা, নিজেদের আঁকা নিয়ে নিজেদের পত্রিকা নিয়ে মেলায় বিক্রি করতে এলে, সরাসরি তাদের পথ দেখানো হয়। আর যখন তাদের পথ দেখায় ইস্কন বা শপিজেন বাংলার দোকানিরা, গিল্ডের কর্তৃপক্ষ সেই শিশুদের সুরক্ষায় পাশে দাঁড়ান না, তাদের স্বপক্ষে কথা বলেন না। বরং, পুলিশের সঙ্গে একযোগে তাদের ও তাদের শিক্ষকদের আটক করে রাখেন।

 

অবশ্য পয়সা দিয়ে স্টল নিয়েও গিল্ড কর্তৃক্ষের সুরক্ষা বা আশ্রয় যে মনফকিরার বন্ধুদের জুটেছে এমন নয়। কাজেই, এই যে পুঁজির স্পেকটাকেল, তারও আছে একটি সুনির্দিষ্ট রং, সুনির্দিষ্ট গন্ধ। সেই রং বা গন্ধ বলে, মেলাপ্রাঙ্গণে হিন্দুত্ববাদী প্রচার চলতে পারে, চলতে পারে ধর্মীয় পুস্তিকা ও লিফলেট বিলি। কিন্তু গাজার মানুষের পাশে সেখানে দাঁড়ানো যাবে না। দাঁড়ানো যাবে না এদেশের রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির স্বপক্ষেও।

 

আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ধর্মীয় উন্মাদনা, ভ্রান্ত ঐতিহাসিকতাবোধ ও এদেশের সংখ্যাগুরুর ধমনী দিয়ে বয়ে চলা মুসলিম-বিরোধিতার উন্মুক্ত অভিব্যক্তির প্রকাশের সুযোগ দিয়ে রামমন্দির তো আসলে কোটি কোটি টাকার একটি বিনিয়োগ প্রকল্প। যেখানে মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস বা ‘ফেইথ’ হয়ে ওঠে সবচাইতে বড় ভোগ্যপণ্য। এই ভোগ্যপণ্যের সর্বগ্রাসিতার খেলায় যদি পুলিশের বুটজুতোর তলায় চাপা পড়ে কয়েকটি গরিব শিশুর ড্রয়িংখাতা বা লেখা গল্প, কি-ই বা যায় আসে তাতে? কিংবা যদি জেলে পচে মরে কয়েকটা বেহায়া, বাচাল নিন্দুক, তাতেই বা কী আসে যায়?

 

কাজেই, গত দু-সপ্তাহের বইমেলার ভিতরকার ঘটনা প্রমাণ করে যে আমাদের সমাজজীবনে এক গভীর রাজনৈতিক সংঘর্ষের সূচনা হয়ে গেছে। লড়াই জারি হয়ে গেছে। একদিকে ক্রমাগত মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রের পরিবর্ধনের আস্ফালন ও আত্মবিশ্বাস। যে আত্মবিশ্বাস দেখা গেল গত দু’দিনের মাঠজোড়া পুলিশের অশ্লীল পা-দাপানোতে। অন্যদিকে, আমরা যারা একটি ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকা সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বোধের ক্ষেত্রের বাসিন্দা, তাদের কাছে এটি একটি নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রাণপণ লড়াই। প্রাণপণ লড়াই নিজেদের সৃষ্টিশীলতার ধারণাকে টিকিয়ে রাখার, পরিপুষ্ট করার। এই লড়াইয়ে বহুত্ববাদ আছে, কিন্তু নিরপেক্ষতার কোনো স্থান নেই। এই লড়াইয়ে বহুপন্থা আছে, কিন্তু মধ্যবর্তীতার কোনো স্থান নেই।

 

কাজেই, আজ সজোরে জিজ্ঞাসা করতে হবে, কাদের বইমেলা। মিলিত কণ্ঠে উত্তর দিতে হবে, আমাদের বইমেলা। প্রতিটি মুহূর্তে— নিজেদের লেখা, ছবি থেকে শুরু করে মিছিলের মধ্য দিয়ে ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে, অত সহজে ওদের আমরা জায়গা ছাড়ছি না।

 

(লেখিকা আয়নানগর পত্রিকার সম্পাদিকা।)

 

Share this
Recent Comments
13
  • comments
    By: Samit Carr on January 30, 2024

    Nandini Dharer লেখা অত সহজে বই মেলায় আমরা জায়গা ছারছিনা’ লেখা টা ফেসবুকে ১০১ জনকে ট্যগ করে পোস্ট করলাম কিন্তু ফেসবুক বোলছে এই লেখায় নাকি Spam রয়েছে তাই শেয়ার করা যাচ্ছে না। আর হাবিজাবি কি সব লেখা দেখা যাচ্ছে।

  • comments
    By: রঞ্জিত শূর on January 31, 2024

    চমৎকার লেখা। নাড়িয়ে দিয়ে গেলো।

  • comments
    By: Jahangir Alam on January 31, 2024

    যুক্তি সংগত বক্তব্য। কেন প্যালেস্টাইনকে সহমর্মিতা জানিয়ে পোস্টার লেখা বা আন্দোলন করা যাবে না?

  • comments
    By: Dhiman brahmachari on January 31, 2024

    সমর্থনে আছি। আমার স্টলের সামনেই এই ঘটনা ঘটেছে।

  • comments
    By: Ashish Lahiri on January 31, 2024

    অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও জোরালো ভাষায় একদিকে বৃহৎ পুঁজির অন্যদিকে চাপা হিন্দুত্ববাদী নিয়ন্ত্রণের বিষয় টি তুলে ধরা হয়েছে। বইমেলা অনেক দিন ধরেই স্পেক্টাক্ লে পরিণত হয়েছে। চিন্তার স্বাধীনতা নয়, চিন্তার মুখে সুদৃশ্য লাগাম পরানোই তার অভীষ্ট।

  • comments
    By: Shampa Bhattacharjee on January 31, 2024

    It’s shameful!

  • comments
    By: Kaushik Banerjee on January 31, 2024

    বেশ ভাল লেখা। বিশেষত প্রশংসনীয় রাজনৈতিক দৃষ্টির প্রখরতা। কিন্তু ‘আজ লড়াই জারি হয়ে গেছে’ এর অর্থ বোধগম্য হল না। যে পরিসরের কথা এখানে আলোচিত হয়েছে সেখানে লড়াই তো বহুকাল আগেই জারি হয়ে গেছে। পুঁজির সবগ্রাসিতা বইমেলা কোন ছাড়, হাগু হিসু করার ক্ষেত্রকেও ছাড় দিতে নারাজ।

  • comments
    By: Pranab Das on February 1, 2024

    ✊🏻✊🏻✊🏻✊🏻✊🏻✊🏻

  • comments
    By: Sahil on February 1, 2024

    অসাধারণ লেখা।

  • comments
    By: SAROJ BOSE on February 2, 2024

    বইমেলায় পুলিশ প্রশাসনের বিপদ এক অত্যাচারের রূপ ধারণ করেছে I ১৪৪ ধারা বইমেলায়! গণতন্ত্রের গলায় দড়ি I কিন্তু তুমি তীক্ষ্ণভাবে এবং সঠিকভাবেই তুলে ধরেছো বইমেলা বহু বছর ধরে শুধু পণ্য পূজার একমাত্রিক বিষাক্ত বিপণন ও বিজ্ঞাপন হয়ে উঠছে এবং তুমি ঠিক ভাবেই বলেছ শিশুদের অধিকারের হস্তক্ষেপ কোন আন্তর্জাতিক ইমেজ তুলে ধরছে I যদিও এ প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যাবে না I পুলিশ গিল প্রশাসন এবং সরকারি প্রশাসন মার্চেন্ট অফ ভ্যানিশ এর sylok আচরণে দিনের পর দিন আরও বেশি শক্তিশালী রূপে নিপুন হয়ে উঠছে I তুমি ঠিক ভাবেই বলেছ” জঙ্গল জামিন কুনিন ছে হামিন ছে হামিন ছে” শিশুদের ও শৈশবের বইমেলা আমরা পিছু হাটছি না I তোমাকে ধন্যবাদ এই লেখাটা আগামী বছরের বইমেলার জন্য তুলে রাখতে হবে। এবং প্রথম দিন থেকেই বিলি করতে হবে।

  • comments
    By: Rabi Roy on February 2, 2024

    যথাযথ উপস্থাপনা।
    ঐ শিশুদের পাশে আছি।

  • comments
    By: ভিষক গুপ্ত on February 2, 2024

    ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরাচারের মধ্যে ফারাকটা ক্রমশঃ মুছে যাচ্ছে।
    যে বইমেলা ছিল বইপ্রেমী সকল মানুষের, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তার চরিত্র বদলে দেওয়া হচ্ছে।
    ২০১৪- র পর থেকে যে বইমেলার উদ্বোধক একজনই, অন্য কোনো লেখক কবি প্রাবন্ধিক বা বিশিষ্ট ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যায় না, সেই বইমেলায় তো এমনই ঘটা স্বাভাবিক। মুক্তচিন্তার আধার হিশেবে যে বইমেলাকে চিনতে অসুবিধে হতো না,গত কয়েক বছর ধরে সেই বইমেলায় ক্ষমতার আঁধার।
    প্রতিবেদনটি ভবিষ্যতের দলিল হিশেবে থেকে যাবে।
    সবকুছ ইয়াদ রাখা যায়েগা।

  • comments
    By: মানব মিত্র on February 7, 2024

    প্রতিবেদনে লেখা কয়েকটি বিষয়ে আমি একমত নই, যেমন – ব‌ই বা কোনো কিছুই শিশুদের হাত দিয়ে বিক্রয় করা অনৈতিক, শুধু তাই নয় কোনো কিছু বিক্রয় শ্রমের আওতায় পরে। তাছাড়া কোনো প্রতিবাদ বা মিছিলে শিশুদের সামিল করা অনৈতিক ও অন্যায়।
    বাকিটা যেমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের উপর পুলিশী অত্যাচার, ভীতি প্রদর্শন অমানবিক ও অনৈতিক।
    এর আগে যখন বইমেলায় বাংলাপক্ষ অবাঙালীদের বিরুদ্ধে প্রচার ও ঘৃণা চালাচ্ছিল, তখন পুলিশ, প্রশাসন, গিল্ড বা কেউই কোনো প্রতিবাদ করেনি। প্রশাসন সর্বদা জনগণকে বিভাজিত করে শাসনের সুবিধা ভোগ করে। ভারতে সরকারি উদ্যোগে এত কোটি টাকা ব্যায়ে রাম মন্দিরের প্রতিবাদ করাটা অবশ্য‌ই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু হিন্দু চরমপন্থীদের মন্তব্যের সাথে মুসলিম চরমপন্থীদের মন্তব্যের‌ও তীব্র প্রতিবাদ জানানো উচিৎ, সেটা আপনারা করেছেন কোনোদিন? করা উচিৎ ছিলো।
    আরও কিছু বক্তব্য আছে, একসময়ে গণতন্ত্রে বিশ্বাসীরা যখন কর্পোরেট সংস্থায় চাকুরী পায় তখন তারা শ্রমিক শোষণের কোনো রাস্তাই ছাড়ে না। অন্যায়ের প্রতিবাদেই শুধু সমাধান হয় না, মানুষের ভিতর সুশিক্ষার বড়‌ই অভাব, যা আমারা সর্বদাই উপেক্ষা করে আসছি। পারলে অন্যায়ের প্রতিবাদের সাথে সাথে লোক শিক্ষা ও সাধারণ মানুষের চরিত্র গঠনে নিজেদের ভূমিকা পালন করুন। প্রতিটি সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন, এতে প্রাথমিক ভাবে সমর্থক হারালেও পরে দলে প্রকৃত মানবকতাবাদী সমর্থক পাওয়া যাবে।

Leave a Comment