ভারতের কুস্তিগীর মহিলাদের লড়াই নিঃসন্দেহে নারীবাদী ও রাজনৈতিক


  • June 14, 2023
  • (0 Comments)
  • 793 Views

গ্রাউন্ডজিরো প্রতিবেদন : সুদর্শনা চক্রবর্তী

 

ভারতে কুস্তিগীরদের চলমান আন্দোলন ঘিরে এই মুহূর্তে নানা প্রশ্ন, নানা দ্বন্দ্ব, নানা মুনির নানা মত। কেন্দ্রের হীরণ্ময় নীরবতা এবং অভিযুক্তের দিব্যি বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোতে অন্তত একটি বিষয় স্পষ্ট, দেশের সর্বোচ্চ আইনব্যবস্থাও ভারতের নারীদের নিরাপত্তা তথা তাঁদের জন্য ন্যায় সুনিশ্চিত করতে সমর্থ নয়। আইনে যা খাতায়-কলমে লেখা রয়েছে তা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক, কিন্তু তার বাস্তব রূপায়ন প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পৌঁছেছে।

 

এমত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে আন্দোলনরত কুস্তিগীর, বিশেষত মহিলা কুস্তিগীরদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে। এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে সম্ভব নয়। বিশেষত গত কয়েক দিনের ঘটনা পরম্পরার পরিপ্রেক্ষিতে।

 

আসলে দিল্লি, কাঠুয়া, হরিয়াণা, কুশমান্ডি, কালিয়াগঞ্জ, বস্তার – এ দেশের, এই ভারতবর্ষের কোনও বয়সের কোনও মেয়েই ‘ভারতের মেয়ে’, ‘ভারত কি বেটি’, ‘ইন্ডিয়া’স ডটার’ নন, এবং এ কথাও যেন কোথাও বড় হরফে লেখা থাকে, এই ‘বেটি’ বা ‘মেয়ে’ হয়ে ওঠার মধ্যে কোনও গর্বের বিষয় নেই। এই ‘দেশের মেয়ে’, ‘আমাদের মেয়ে’ বলার মধ্যেই আসলে শিকড় গেড়ে রয়েছে মেয়েদের সম্পত্তি বানিয়ে রাখার, তাদের পিতৃতন্ত্রের নিগড়ে আটকে রাখার মনোভাব। এবং এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে বড় বিপদ হল – এই মানসিকতার সঙ্গে চমৎকারভাবে মিশে গেছে কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী মানসিকতা তথা বিভিন্ন রাজ্যের সরকারের পরোক্ষে বা প্রত্যক্ষে তাকে সমর্থন করার প্রক্রিয়া।

 

এই পরিস্থিতিতে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে ভারতের কুস্তিগীরদের চলমান আন্দোলন ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ভারতের কুস্তি ফেডারেশন-এর শীর্ষকর্তা ও বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-এর বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা নেননি এবং পুরো বিষয়টিই যে দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে করা হচ্ছে বা বলা যেতে পারে তাদের ব্যবহার করেই করা হচ্ছে তা স্পষ্ট। যার বিরুদ্ধে এমনকি ‘পকসো’ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে, যার বিরুদ্ধে একাধিক মহিলা পদ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন, তিনি এখনও পুলিশি হেফাজতের বাইরে রয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত স্রেফ একটা এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। হিন্দুত্বের ধ্বজা ওড়ানো সংসদ ভবন উদ্ধোধনে এই অভিযুক্ত খোশ মেজাজে উপস্থিত হয়ে বুঝিয়ে দিলেন সরকার কার পক্ষে।

 

এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কুস্তিগীরদের আন্দোলন দেশব্যাপী সমর্থন আদায় করে নিয়ে বৃহত্তর জনমত তৈরি করতে শুরু করেছে যখন, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মাত্রই কয়েক দিন আগে কুস্তিগীরদের বাড়িতে ডেকে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। তাঁর আশ্বাসে আস্থা রেখে কুস্তিগীরদের মধ্যে কয়েক জন নিজেদের রেলের চাকরিতে ফিরে যান।

 

লক্ষণীয় বিষয় হল, এই বৈঠকের খবর দু’দিন পর প্রকাশ্যে আসে এবং তৎক্ষণাৎ যে ভুয়ো খবর দাবানলের মতো সমস্ত সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে সাক্ষী মালিক আন্দোলন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন। চাকরীতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে, সাক্ষী নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ও তারপর ফেসবুক লাইভে এসে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর খবরটি যে ভুয়ো তা স্পষ্ট করতে বাধ্য হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কেন গেলেন ও তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনা ও প্রশ্নের আবহ তীব্র হয়। অথচ নিজেদের খেলার স্বীকৃতি হিসাবে যে সরকারী চাকরি তাঁরা পেয়েছেন তাতে ফিরে যাওয়ার মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও আমরা রাষ্ট্র তথা সরকারের বিরোধীতা নানাভাবে করলেও রুটি-রুজির জন্য পেশাগতভাবে এমন কিছুর সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই যুক্ত থাকি যা রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ। নিজেদের প্রশ্ন করি কি তখন? আর এটাও মনে রাখা দরকার কোনও নির্দিষ্ট দল সরকার গঠন করেছে মানেই তার পরিচয়েই সরকারের পরিচিতি নয়। দেশের সরকারের কাজ পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে মাত্র সেই দল।

 

এরপর কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর সঙ্গেও বৈঠক করেন কুস্তিগীরেরা এবং সেখানে ক্রীড়ামন্ত্রী বাধ্য হন এই আশ্বাস দিতে যে কেন্দ্রের তরফ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে অভিযুক্ত কুস্তি ফেডারেশন-এর সভাপতির বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করা হবে এবং ৩০ জুন নতুন সভাপতি নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহন করা হবে। ১৫ জুন পর্যন্ত কুস্তিগীরেরা আন্দোলন মুলতুবী রেখেছেন, প্রত্যাহার করেননি। এই বৈঠকের পরেও আন্দোলন প্রত্যাহার করা হচ্ছে, এমন খবর প্রচার হতে শুরু করে এবং আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের মিডিয়া ও নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ান দিতে হয় যে এমনটা মোটেই হচ্ছে না।

 

যা দেখার তা হল শুধু ‘গোদী মিডিয়া’ নয়, মূলস্রোতের একাধিক সংবাদমাধ্যম, এবং তাদের মধ্যে যারা নিরপেক্ষ বা বিজেপি-হিন্দুত্ব বিরোধী খবর করেন বলেও পরিচিত, তারাও আন্দোলন প্রত্যাহারের মতো খবর করেছেন। কুস্তিগীরেরা এরপর বারবারই বলেছেন তাঁদের ‘ইমেজ’ খারাপ করার জন্যই এহেন ভুয়ো খবর প্রচার করা হচ্ছিল। লক্ষ্য করার মতো হল যে, কুস্তিগীরদের আন্দোলন একটি ধারা অনুসরণ করে এগোচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাঁরা যখন আন্দোলন শুরু করেন, কিছুদিন পর তাঁরা সেই অবস্থান-বিক্ষোভ তুলে নিয়েছিলেন। এরপর যখন আবার তাঁরা অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন, তখন তাঁদের সংহতিতে এগিয়ে আসা সংগঠনগুলি স্পষ্ট করে দেয় দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের পরিকল্পনা ছাড়া তাঁদের পক্ষে এই আন্দোলনের পাশে থাকা সম্ভব নয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের যোগদানে এই আন্দোলন ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, দেশের নানা প্রান্তে তাঁদের সমর্থনে পথে নেমেছেন মানুষ। এই জনমত তৈরির পরেই কেন্দ্র থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অন্তত মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যা আপাতত নথিবদ্ধ থাকছে। এরপর যদি এগুলির কিছুই কেন্দ্রের সরকার পূরণ না করেন, তাহলে তারা কার পক্ষে থাকছেন তার মুখোশ খুলে যাবে ও আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, সংহতি বাড়বেই।

 

আন্দোলনকারীরা এভাবে সরকারকে ক্রমে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন। এইসমস্ত বৈঠক ও তাঁদের বক্তব্য মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দলিল হিসাবে রয়ে যাচ্ছে, তাঁরা শুধুই সরকারকে সময় দিচ্ছেন উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার। সরকারের আশ্বাসের মাঝেই অভিযুক্ত ব্রিজভূষণ নানা সভায় জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রীর তদন্তের কথাও তার উপরে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে বলে এখনও প্রমাণ নেই। আন্দোলনকারী কুস্তিগীরেরা এদিকে জানিয়ে দিয়েছেন এরমধ্যে কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া না হলে আগামী এশিয়ান গেমস-এ তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন না। এবং নিশ্চিতভাবেই আন্দোলন প্রত্যাহার হচ্ছে না।

 

সংবাদমাধ্যমে বড় বড় শিরোনামে খবর হচ্ছে নাবালিকা অভিযুক্তর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। কিন্তু কুস্তিগীরেরা মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে না জানালে যে – তাঁর ও তাঁর পরিবারের উপর কী পরিমাণ রাজনৈতিক চাপ তৈরি হচ্ছে, তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, চাপ সামলাতে না পেরে নাবালিকা বয়ান বদলাচ্ছেন – এগুলি হয়তো সামনেই আসত না। যেভাবে খবর করা হচ্ছে তাতে এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে, তার মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেই কুস্তিগীরেরা আন্দোলনটিকে দুর্বল করে দিচ্ছেন। সত্যিটা একমাত্র উঠে আসছে আন্দোলনকারীদের মুখ থেকেই।

 

এবার প্রশ্ন আসে, কেন কুস্তিগির মহিলাদের সঙ্গে ও তাঁদের যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে সারা দেশের ক্রীড়াবিদ মহিলারা ও অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মহিলারা একাত্ম বোধ করছেন? তার একটা বড় কারণ নিঃসন্দেহে তাঁদের এই মাটি কামড়ে পড়ে থাকার মনের জোর, ন্যায় পাওয়ার জন্য তাঁদের শেষ দেখে ছাড়তে চাওয়ার পণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করা বা নিজেদের পছন্দ মতো কাজ করতে চাওয়া মহিলারা যাঁরাই পদ ও ক্ষমতার জোরে কোনও না কোনওভাবে কখনও না কখনও পুরুষের দ্বারা যৌন হেনস্থায় বিপর্যস্ত হয়েছেন, তাঁরা এই মহিলা ক্রীড়াবিদদের সমর্থনে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছেন। যেন নিজেদেরই প্রতিবিম্ব দেখছেন তাঁদের মধ্যে। ইংরাজিতে যাকে ‘সিস্টারহুড’ বলা হয়, তেমন বোধ তৈরি হচ্ছে, যা যতটা আবেগনির্ভর, তার চেয়েও হয়তো বেশি লড়াইনির্ভর।

 

অবশ্যই ইতিহাস ভুলে যাওয়া কখনওই ঠিক নয়। এবং সেই জায়গা থেকেই এই আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সঠিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছিল। ভুলে যাওয়ার কোনও অবকাশ নেই যে এই কুস্তিগীরদের অধিকাংশই বিজেপি-আরএসএস সমর্থক, তাদের টিকিটে নির্বাচনে লড়েছেন, এমনকি এনআরসি, সিএএ প্রশ্নেও তাঁরা এই সরকারের পক্ষেই দাঁড়িয়েছিলেন।

 

স্বভাবতই তাঁদের রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মনে করা হচ্ছে নিজেরা গোষ্ঠী হিসাবে বিপন্ন বোধ করার ফলেই ফলেই তাঁরা রুখে দাঁড়িয়েছেন, না হলে হয়তো এই সরকার ও তাদের দূর্নীতিগ্রস্ত, যৌন হেনস্থাকারী সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও আওয়াজই তাঁরা তুলতেন না। ধরে নেওয়াই যায় যে এই বিশ্লেষণ ভুল নয়। বিশেষ করে সরকারবিরোধী সিএএ, এনআরসি আন্দোলনে তাঁদের অনেকের বক্তব্যই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। তবু তার সঙ্গেই যা মাথায় রাখতে হয়, তা হল এই ক্রীড়াবিদদের বেড়ে ওঠা ও খেলাধূলার পরিসর আদ্যোপান্ত পুরুষতান্ত্রিক ও সেখানে সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি এক বড় অংশ জুড়ে থাকে। সেই সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি এই বিজেপি শাসনে হিন্দুত্বে পরিণত হয়েছে। বিশেষত বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরে পদক জিতে, সাফল্য নিয়ে আসার পর যখন তাঁদের দেশের বর্তমান সরকার, প্রশাসন, খোদ প্রধানমন্ত্রী ‘দেশের বেটি’ বলে আপ্লুত হন, তখন সেই সরকার তথা তাঁদের অ্যাজেন্ডায় সায় দেওয়ার জায়গাই এই মহিলা কুস্তিগীরদের জন্য তৈরি হয়। কারণ নিজেদের কুস্তিগীর হিসাবে তৈরি করা তথা আন্তর্জাতিক কেরিয়ার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পুরুষতন্ত্র, বৈষম্য, নানাবিধ সামাজিক বাধা পেরিয়ে যখন তাঁরা এই জায়গায় পৌঁছান তখন রাজনৈতিকভাবেও তাঁদের অবস্থা অনেকটাই চোখে ঠুলি পরা হয়ে যায়।

 

বিভিন্ন নারী আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনের আন্দোলনকারীরা যখন এই কুস্তিগীরদের সমর্থনে এগিয়ে আসছেন তখন রাজনীতির স্তরগুলি নতুন করে বোঝার পরিসর তৈরি হয়। যখন প্রিজন ভ্যান-এ ওঠার সময়ে একজন মহিলা কুস্তিগীর চিৎকার করে ওঠেন, ‘নয়া দেশ মুবারক হো’ তখন বোঝা যায় এই মানুষগুলোর কাছে ‘দেশ’ শব্দটা নিছক প্রধানমন্ত্রীর ফাঁপা বুলি নয়। জাতপাত প্রধান, লিঙ্গবৈষম্য প্রধান এক সামাজিক পরিসরে নারী হিসাবে, মানুষ হিসাবে, কুস্তিগীর হিসাবে বড় হয়ে উঠতে উঠতে তাঁদের মধ্যে যে রাজনীতির বোধ তৈরি হয়, তাকে হাতিয়ার করেই বিজেপি-আরএসএস নিজেদের ঘর গোছায়। কুস্তির মতো একটি খেলা এবং সেই খেলাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া দেশাত্মবোধকে কীভাবে যেন গ্রাস করে নেয় আগ্রাসী রাষ্ট্র। এবং সেখানে যাঁদের টার্গেট করা হয়, তাঁরা মহিলা, শুরু থেকেই প্রান্তিক। পদকজয়ী কুস্তিগীর হওয়ার সুবাদে যাঁরা সেই প্রান্তিকদের মধ্যে কিছুটা এগিয়ে থাকেন। যে সরকার, যে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে এই মহিলারা, এই ক্রীড়াবিদরা নিজেদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করেছিলেন, লিঙ্গসাম্য প্রতিষ্ঠা বা মহিলাদের প্রতি হওয়া হিংসার ক্ষেত্রে তারাই যে সম্পূর্ণ উদাসীন ও অগ্রাহ্য করার রাজনীতি করবে সম্ভবত তা তাঁদের ভাবনার অতীত ছিল। দেশ ও নারী – দুইয়ের প্রতিই যে এই সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা একই রকম উদাসীন তা ধীরে ধীরে তাঁদের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে। এবং এই সত্যটিও যে, দেশকে ‘ভারতমাতা’ বললেও নারী ও দেশ উভয়েই তাদের কাছে খুব বেশি সম্মান দাবি করতে পারবে না, যদি না তা তাদের অ্যাজেন্ডায় ‘ফিট’ করে। আন্দোলনে দলগত রাজনীতির রং লাগাতে দেবেন না বলে শুরুতে সিদ্ধান্ত নিলেও, ধীরে ধীরে আন্দোলনরত কুস্তিগীরেরা বুঝতে পারেন এই ইস্যুগুলি, বিশেষত মহিলাদের প্রতি হওয়া হিংসা, যৌন হেনস্থাকে বৃহত্তর রাজনীতির সঙ্গে না জুড়লে তা কোনওদিনই বড় ধরনের অভিঘাত তৈরি করতে পারে না।

 

কুস্তিগীরদের এই চলমান আন্দোলন কখনওই একস্তরীয় নয়। সেইজন্যই সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন, কৃষক আন্দোলনের সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি খাপ পঞ্চায়েতও মহিলা ক্রীড়াবিদদের পাশে এসে দাঁড়ান। পিতৃতান্ত্রিক অথচ হিন্দুত্ববাদী-বিজেপি বিরোধী যে মানসিকতা তারই যেন প্রতিচ্ছবি দেখা যায় এই সমর্থনের মধ্যে। সেইরকমই হরিয়াণার এক খাপ পঞ্চায়েতের সদস্য অজিত, গ্রাউন্ডজিরো-র এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, “এই পহেলওয়ান মেয়েরা যখন পদক জেতেন তখন কত আনন্দ আর গর্বের সঙ্গে দেশের তিরঙ্গা ওড়ান, রাষ্ট্রীয় সঙ্গীত গান। আমাদের এখানে কুস্তিগীর তৈরি করার যে পরম্পরা তা কত পুরনো! আমরা বলি, পরিবারের পহেলওয়ান একদিকে আর বাকি সবাই আরেক দিকে। তাদের জন্য ঘি, দুধ, ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। ১৫ বছর লাগে একেক জন পহেলওয়ান তৈরি করতে। আর তাঁদের না কি বলা হচ্ছে ১৫ টাকা দামের মেডেল নিয়ে আসছেন! বিজেপি এমন লোককে সাংসদ বানিয়েছে। এমন যেন না হয় যে একজনকে বাঁচাতে গিয়ে বিজেপি পুরোটাই হারিয়ে ফেলে।” অজিতের কথায় আসে পরম্পরা, পরিবারের কথা। অর্থাৎ, মহিলাদের সম্মানের সঙ্গে তাঁরা জুড়ছেন পাঞ্জাব-হরিয়াণার চিরায়ত পরিবার-পুরুষতন্ত্র-দেশাত্মবোধকে। কিন্তু তারপরেও তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দেশের জন্য পদক জেতা খেলোয়াড় ও নারীদের রাষ্ট্রের দ্বারা হেনস্থার ঘটনা ও তার বিরুদ্ধে নির্দ্বিধায় সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ। অজিত বলছিলেন, “এই দেশে আসলে আইন বদলাতে হবে। বিজেপি হোক বা কংগ্রেস সরকারে যে থাকবে তাকে সংবেদনশীল হতে হবে। এই যে কৃষক আন্দোলনের সময়ে কৃষকদের গাড়ি চাপা দিল যে, সে তো দিব্যি গোঁফে তা দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন? আর যৌন হেনস্থায় তো কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত। এক দিনের মধ্যে গ্রেফতার করে তারপর দ্রুত আইনি বিচার করতে হবে। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়াণা সব জায়গায় মহিলাদের উপর অত্যাচার করা অপরাধীদের সরকারই শেল্টার দিচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। আইন যারা বানাচ্ছে তারাই আইন মানছে না।” সরাসরি খাপ-এর থেকেই লড়ছেন তাঁরা। কিন্তু খাপ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে, বিশেষত মহিলাদের প্রতি, জাতভাত ভিত্তিক বৈষম্য দেখানোর ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রচুর এবং তার বিরুদ্ধেও লড়ছে নারীবাদী সংগঠনগুলি। অজিতের বক্তব্য, খাপ পঞ্চায়েত সমাজের খারাপ দিকগুলির বিরুদ্ধে লড়ে। সামাজিক হিংসার ফলেই যেহেতু ‘পহেলওয়ান’ মেয়েদের যন্তর-মন্তরে ধর্ণায় বসতে হয়েছে তাই বিনা প্রশ্নে খাপ থেকে সমর্থন জানানো হয়েছে। কুস্তিগীরদের আন্দোলনে খাপগুলির মহা পঞ্চায়েত হয় ও স্থির হয় এই আন্দোলনে যতদিন পর্যন্ত মহিলা কুস্তিগীরেরা ন্যায় পাচ্ছেন, তার সর্বতোভাবে এই আন্দোলনের পাশে থাকবেন। তিনি মনে করিয়ে দেন, খাপ পঞ্চায়েতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পন প্রথা বা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা। সরকারের ভুল নীতির বিরুদ্ধে সব সময়েই তারা সোচ্চার হন এবং সরকারের মিথ্যে প্রচারেই তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময় জনমত তৈরি হয়। এর প্রমাণ হিসাবে অবশ্য খাপ পঞ্চায়েতগুলির কৃষক আন্দোলনে সমর্থনের প্রসঙ্গও ভাবা যেতে পারে। বিশেষত নারীবাদী রাজনৈতিক সংগঠনগুলি এখন খাপ পঞ্চায়েতের সামাজিক-রাজনৈতিক মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে অনেকটাই কার্যকরী ভূমিকা নিচ্ছে।

 

একটা বিষয় স্পষ্ট, কৃষক আন্দোলন, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন বা নারীবাদী আন্দোলন – সব আন্দোলন যেখানে গিয়ে মিলে যাচ্ছে তা হল মহিলাদের প্রতি অন্যায় এই সরকারের আমলে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আর মুখ বুজে মেনে নেওয়ার উপায় নেই। সেদিক থেকে দেখলে এক সময়ে বিজেপি-আরএসএস সমর্থক এই মহিলা কুস্তিগীরেরা পথে নেমে নারীদের প্রতি যৌন হেনস্থা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন। ‘সহি’ নারীবাদী হওয়ার জন্য যদি তাঁদের এই লড়াইকে অস্বীকার করা হয়, তাহলে নারীবাদের রাজনৈতিক জটিলতাকেই অস্বীকার করতে হয়। কারণ একইসঙ্গে দেশের সম্মান হিসাবে পদক জেতার জন্য তাঁদের যে সমাজে সবটুকু সুবিধা দিয়ে বড় করে তোলা হয়, সেখানেই আবার স্রেফ মেয়ে হওয়ার জন্য তাঁরা নিজেদের আশেপাশে, এমনকি নিজেদের সঙ্গেও বহু ক্ষেত্রে প্রতিদিনের জীবনে বৈষম্য হতে দেখেন আজীবন। ফলে ‘মেয়ে’ হিসাবে তাঁদের প্রাথমিক অবস্থানটি বুঝে উঠতে, নিজেদের দাবির জায়গাগুলি অনুধাবন করতেই চলে যায় অনেকটা সময়। এই ক্রীড়াবিদেরা যেমন নিজেদের খেলা, যা তাঁদের পেশা সেখানে পৌঁছে দেখেছেন যৌন নির্যাতনের কদর্য রূপ। বুঝেছেন ‘বেটি বচাও’ বলা সরকার আসলে অভিযুক্তকে বাঁচায়।

 

এই জায়গা থেকেই এই লড়াই মেয়েদের লড়াই হয়ে ওঠে। সংযুক্ত কিসান মোর্চার সদস্য বিকাশ সিসর যেমন বলেন, “বহেন, বেটি তো সবার একই হন। মহিলাদের বিষয়, যখন মেয়েদের যৌন হেনস্থার মতো ঘটনা ঘটেছে তখন তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তো সকলের যাওয়া উচিত।” তিনি একটি জরুরি দিকও তুলে ধরেন, যখন বলেন, “এই আন্দোলন বিজেপির বিরুদ্ধের থেকেও তাদের সাংসদ ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে বেশি। তাঁর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা হয়েছে, কোর্ট এফআইআর করতে বলে ছেড়ে দিয়েছে। এতদিনে তো তার গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার কথা।” সংযুক্ত কিসান মোর্চা সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এই আন্দোলনকে। তাঁদের কাছে এই আন্দোলন নারীদের বিষয়, মহিলাদের ইস্যু। সেইজন্য এর সমর্থনে নির্দ্বিধায় দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। বিকাশ বলেন, “আমরা খেলোয়াড়দের থেকেও, এই বেটি, এই মহিলাদের জন্য যাচ্ছি। খেলোয়াড়, কৃষক, মজদুর, সাংবাদিক, পেশা যাই হোক, মহিলাদের শোষন হলে সেই ‘মুদ্দা’য় সবার একজোট হয়ে লড়তে হবে।” বিকাশের এই কথায় হয়ত বহু শতকের পুরুষতন্ত্রের ছায়া দেখতে পাবেন কেউ, কিন্তু সেই ছায়া যে সময়ের সঙ্গে বদলে মহিলাদের শোষনকে প্রাধান্য দিতে শিখেছে, শিখছে লড়াইয়ের ময়দানে তা লক্ষ্য করাটাও জরুরি। সেখানে প্রকৃত নারীবাদী রাজনীতির পাঠ দিচ্ছেনই তাঁদের সহযোগী নারী সংগঠনের নেত্রী ও সদস্যরা, তা কৃষক আন্দোলনেই দেখা গিয়েছিল।

 

তরুণ কিসান নেতা রবি আজাদ এই আন্দোলনের রাজনৈতিক দিকটি ও তার নারীবাদী দিকটিও স্পষ্ট করে দেন যখন বলেন, “দেখুন, এই খেলোয়াড়রা আমাদের দেশের জাতীয়, আন্তর্জাতিক স্তরের মেডালিস্ট, আমাদের স্টার খেলোয়াড়। তাঁদের প্রতি যখন সরকারের এই মনোভাব তখন দেশের কোটি, কোটি মহিলার সুরক্ষা কোথায়? এই খেলোয়াড়রা ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেছেন, সেইসঙ্গে কুস্তি ফেডারেশনে তার যে ক্ষমতার অপব্যবহার সেই বিষয়টিও সামনে এনেছেন। ট্র্যাক রেকর্ড দেখুন এই খেলোয়াড়দের আর ব্রিজভূষণের, তাহলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। অবস্থা এমন যে পকসো আইনে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সে গ্রেফতার হয় না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এফআইআর হয় আর তারপরেও সে খোলা ঘুরে বেড়ায়।” বিজেপি যে এই ইস্যুটিকে আগামী লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে জুড়ছে সেই বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। “ওরা এইভাবে দেখাচ্ছে যে পূর্ব, উত্তর ভারতে এই বিষয়টাকে একটা রাজনৈতিক ইস্যুর সঙ্গে জোড়া হচ্ছে, রাজ্যে একটা কমিউনিটির সঙ্গে খেলোয়াড়দের জোড়া হচ্ছে। ব্রিজভূষণ এদিকে যখন বলছে ১৫ টাকায় মেডেল পাওয়া যায়, তখন বিজেপি, আরএসএস, কেন্দ্রের সরকার সবাই চুপ। তাহলে কি মেনে নেব সরকার সমর্থন করছে এই বক্তব্য? প্রধানমন্ত্রী না কমনওয়েলথে মেডেল জেতার পর বলেছিলেন, ‘ভিনেশ ফোগত আমার মেয়ে’! কিন্তু বিজেপির নেতা, সাংসদদের বিরুদ্ধেই তো সবচেয়ে বেশি যৌন হেনস্থার অভিযোগ, মেয়েদের কি তবে বিজেপির হাত থেকে বাঁচাতে হবে?”

 

রবি আজাদের কথায় জানা যায় এক মাস আন্দোলনের পর তাঁরা যখন উঠে যান তখন তাঁরা বলেছিলেন আন্দোলন বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। আড়াই মাস পরে ফের অবস্থানে বসলে বিভিন্ন সংগঠন তাদের পাশে এসে দাঁড়ায় ও রাজনৈতিকভাবে আলোচনা শুরু হয়, কুস্তিগীরেরাও বলেন এবার লড়াই সরকার ও সিস্টেম-এর বিরুদ্ধে। বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে খেলার বিষয়ে তাঁরা অভিজ্ঞ হলেও, আন্দোলনের বিষয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা যথেষ্ঠ নয়। সেই কারণেই এবার কৃষক সংগঠন, নারীবাদী আন্দোলনকারীরা, খাপ পঞ্চায়েত সবাই একজোট হয়ে এই আন্দোলনের সমর্থনে ও সংহতিতে এগিয়ে এসেছে, পাশে রয়েছে।

 

অন্যদিকে রবি বলেন, “এই আন্দোলনকে পলিটিকাল ভাবলে ভুল হবে। এটা মহিলাদের বিষয়। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশে তাঁদের সুরক্ষা নেই, অন্যায় হলেও তাঁরা ন্যায় পান না। অথচ তাঁদের দাবি তো সাংবিধানিকভাবে এ দেশের নাগরিকদের দাবি – সুরক্ষার দাবি। এটা সুনিশ্চিত করতেই হবে। তাঁদেরও লড়ে যেতে হবে। আমরা বলছি এটা জাতি-ধর্ম, কোনও প্রদেশের লড়াই নয়। নিরপেক্ষভাবে মহিলাদের জন্য ন্যায়ের লড়াই।” অর্থাৎ বোঝা যায় আন্দোলন ও মহিলা অধিকারের বিষয়টি নিয়ে তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ঠ স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হলেও তাকে বৃহত্তর রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেখার চর্চা এখনও চালিয়ে যেতে হবে।

 

যে কাজটিই করে চলেছেন হারিন্দর সিং বিন্দুর মতো নারীবাদী কৃষক নেত্রীরা। বিকেইউ উগ্রাহান-এর এই নেত্রী প্রথম দিন থেকেই কুস্তিগীরদের আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন। ফোনের অপর প্রান্তে ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন, “যন্তর-মন্তরে আমাদের কুস্তিগীর মেয়েদের উপরে দিল্লি পুলিশ, বিজেপি সরকার যে দমনপীড়ন চালিয়েছে, তা থেকেই আবারও পরিষ্কার, এই সরকার দলিত-নারী-কৃষক বিরোধী। কাঠুয়া, বিলকিস বানো সব ক্ষেত্রেই পীড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার, অভিযুক্তকে ছেড়ে দিয়ে। কোন্‌ সাহসে পুলিশ অফিসার বলতে পারে যে ‘আমরা এদের উপরে গুলিও চালাতে পারি’? সারা দেশে মহিলাদের নির্বিচারে ধর্ষণ, নৃশংস হত্যা চলছে। বিজেপি সরকার যে এত বড় বড় কথা বলে তো এঁরা তো হরিয়াণার বেটি, হিন্দুর বেটি – তাদের সুরক্ষা কই?” বিন্দু-র মতো তৃণমূলস্তরের নেত্রীদের কাছে এই আন্দোলন রাজনৈতিক। তাই তিনি বলেন, “এই সরকার দেশ ভাগ করতে চায়, বিক্রি করতে চায়। একদিকে যেমন তার বিরুদ্ধে লড়ছি। তেমনি যারাই মহিলাদের উপর শোষন, অত্যাচার করবে তার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। এই সমস্ত ‘দাস্তান’ চিৎকার করে বলে যাব। বিজেপি শুধু পাকিস্তান-খালিস্তান-কানাডা বলে নজর ঘোরাতে চাইবে, তা হবে না। লড়াই, আন্দোলন আমরা চালিয়ে যাব। ন্যায় হাসিল করে ছাড়ব।”

 

ভারতের মহিলা কুস্তিগীরদের লড়াই আসলে এ দেশের নারীবাদী আন্দোলন, তার রাজনৈতিক চিত্র সবটাকে নতুন করে প্রশ্ন করতে, বুঝতে ও ভাবতে শেখাচ্ছে। একটা লেন্স দিয়ে দেখলে তার সামগ্রিক রূপ বোঝা সম্ভব নয়। বহুস্তরীয় এই নারীবাদী রাজনৈতিক লড়াইকে তাই সময়ের সঙ্গেই পর্যবেক্ষণ করে যেতে হবে, যা এ দেশের রাজনৈতিক নারীবাদী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।

 

পড়ুন :  মহিলা কুস্তিগীরদের লড়াই এবার পিতৃতান্ত্রিক মনুবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে

 

Share this
Leave a Comment