যশোর রোডের গাছ বাঁচাতে মিছিল 


  • June 4, 2023
  • (0 Comments)
  • 1262 Views

গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন | ০৪ জুন, ২০২৩

 

৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে যশোর রোডের শতাব্দী প্রাচীন গাছ বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে ৪ জুন রবিবার কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত একটি মিছিল আয়োজিত হল। মিছিলের ডাক দিয়েছিল ‘যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি’। কমিটির তরফে জানানো হয়েছে শুধুমাত্র যশোর রোডের গাছ বাঁচানোই নয়, সামগ্রিকভাবে পরিবেশের উপর, জল-জঙ্গল-জমির উপর যে আক্রমণ চলছে তার প্রতিবাদ-সহ, ইআইএ-২০২০ বাতিল ও বনাধিকার আইন দুর্বল করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধেও এই মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল

যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। ন্যাশানাল হাইওয়ে-১১২ (এনএইচ-১১২) অর্থাৎ যশোর রোডের বারাসাত চাঁপাডালি মোড় থেকে পেট্রাপোল বর্ডার (ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার) পর্যন্ত প্রায় ৬০-৭০ কিলোমিটার বিস্তৃত রাস্তাটিতে ৩৫৬টি গাছ কেটে সম্প্রসারণ করে ৫টি রেল ওভারব্রিজ বানানোর পক্ষে রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। সেই রায়কেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যায় কমিটি ও মানবাধিকার সংগঠন। অবশেষে দীর্ঘ টালবাহানার পর গত মার্চ মাসে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও থামেনি আন্দোলন। আন্দোলনকারীরা প্রেস ক্লাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন যে তারা এই রায়কে মানছেন না। মিছিল ও মানববন্ধনের মাধ্যমেও তারা তাদের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

 

এই দীর্ঘ সাত-আট বছরের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই ৪ জুন রবিবার আবারও পথে নামল কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক সৌভিক মুখার্জি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায় আমরা মেনে নিইনি৷ আমাদের আন্দোলন এখনও জারি আছে। এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়মিত লিফলেট বিলি, ছোট ছোট পথসভার মাধ্যমে আমরা গাছগুলিকে বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছি।” সৌভিক আরও বলেন, “এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ আছে যে ঝড় বৃষ্টির ফলে মাঝেমধ্যেই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে, যার ফলে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। এই অভিযোগ সত্য। যে গাছগুলি ভেঙে পড়ছে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব প্রশাসনের, কিন্তু প্রশাসন নিজের কাজ করছে না। তাই এই অবস্থা। আমরা এই ব্যাপারেও মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগ নিচ্ছি।”

 

সম্প্রতি কমিটি জেলাশাসকের দপ্তরে অভিযান করে ডেপুটেশন দিয়েছে। বারাসাত স্টেশন থেকে যশোর রোড হয়ে জেলাশাসকের দপ্তর পর্যন্ত মিছিলও করেছে। কমিটির অভিযোগ এই মিছিল আটকাতেও পুলিশের অতিসক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো ছিল। সৌভিক বলেন, “কমিটির সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে ফোন করে, সামাজিক মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফেসবুকে কমিটির পেজে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে। আর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলাশাসকের কাছে এবং স্থানীয় থানায় জানানো হলেও পুলিশের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।”

 

কমিটির আরেক আহ্বায়ক অর্পিতা সাহা বলেন, “আমায় ফোন করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, যারা হুমকি দিচ্ছে তারা বড় বড় রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছায়াসঙ্গী।” দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অস্বীকার করে এই আন্দোলন চালালে আদালত অবমাননাও হয়ে যেতে পারে, এ-প্রশ্নের জবাবে অর্পিতা বলেন, “আমরা আদালতের এই রায়ে সন্তুষ্ট না হয়েই প্রেস বিবৃতি দিয়েছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবন এই গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে, আর এমন একটা সময়ে যশোর রোডের গাছগুলিকে বাঁচানো আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আমরা দাবি জানিয়েছি গাছগুলিকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিতে হবে। সেই দাবিতেই শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।”

 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই মিছিলে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি-সহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠন, ছাত্রছাত্রী সংগঠন৷ মানবাধিকার সংগঠন, পরিবেশপ্রেমী মানুষেরা উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে চলমান বিভিন্ন পরিবেশ আন্দোলনগুলির প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। যশোর রোডের গাছ বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে রবিবারেই বনগাঁতে মিছিল করে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সংগঠনের সদস্য বাপ্পা ভুঁইয়া বলেন, “আমরা সারাবছরই যশোর রোডের গাছ বাঁচাতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আসছি। সুপ্রিম কোর্ট ৩৫৬টি কেটে ফেলার পক্ষে রায় দিয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি তাঁর চেয়েও বড় আদালত হল মানুষের আদালত। সেই কারণেই আমরা এলাকার সাধারণ মানুষের থেকে সই সংগ্রহ, লিফলেট বিলি ইত্যাদি করে চলেছি। ৫টি রেলওয়ে ওভারব্রিজ বিকল্প পথেও হওয়া সম্ভব, সেই বক্তব্যও আমরা মানুষের মধ্যে নিয়ে হাজির হচ্ছি।” এই মিছিলেও সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংগঠন, পরিবেশপ্রেমী মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা।

 

গাছ বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে রবিবার বনগাঁতে মিছিল

 

Share this
Leave a Comment