রাফাল বিমান ক্রয় দুর্নীতি — আবার এসেছে ফিরে


  • July 4, 2021
  • (1 Comments)
  • 1184 Views

ফরাসি যুদ্ধ বিমান ক্রয় সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রশ্নটি ভারত ও ফ্রান্সের শাসকদের পিছু ছাড়ছে না। এবার নতুন করে তদন্ত শুরুর সিদ্ধাত নিয়েছে ফ্রান্সের পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিসের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা (পিএনএফ)। এই তদন্ত শুরুর কৃতিত্ব প্রাপ্য সেদেশের তদন্তমূলক সাংবাদিকতার জন্য বিখ্যাত নিউজ পোর্টাল ‘মিডিয়াপার্ট’। সম্প্রতি তারা রাফাল বিমান ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তির অসঙ্গতিগুলো নিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে যা ফরাসি জনজীবনে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছে অভিযোগ দায়ের করে ‘শেরপা’ নামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা আর্থিক কেলেঙ্কারির স্বরূপ উন্মোচন নিয়ে কাজ করে। এ বছর জুন মাসে সংবেদনশীল বলে আখ্যায়িত চুক্তিটিকে বিচারের কাজ শুরু হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২০১৫ সালে রাফাল বিমান ক্রয় সংক্রান্ত পুরানো চুক্তি বাতিল করে নরেন্দ্র মোদি সরকার নতুন চুক্তি করেন তখন থেকেই দুর্নীতির প্রশ্নটি সামনে আসে। কিন্তু কর্পোরেট মিডিয়ার (দু একটি ব্যাতিক্রম বাদে) পরিকল্পিত নিস্তব্ধতা, বিচারবিভাগের অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে মামলা খারিজ, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির ব্যর্থতার কারণে দ্রুত রাফাল বিষয়টি আলোচনার বাইরে চলে যায়। একমাত্র অল্টারনেটিভ মিডিয়ায় মাঝে মাঝে কিছু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেসময় রাফাল বিমান ক্রয় নিয়ে যে সমস্ত দুর্নীতির প্রশ্ন উঠেছিল এবারে মিডিয়াপার্টের রিপোর্টে কম বেশি সেই প্রশ্নগুলি ন্যায্যতা পেয়েছে। পরিষ্কার বিষয়টি হল রাফাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে আদালতগ্রাহ্য বহু বিষয় আছে যা আরেকবার আমাদের ফিরে দেখা দরকার –

  • বিমান উৎপাদনকারী সংস্থা দাশাউ এবং অনিল আম্বানির সংস্থার মধ্যে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মৌ) স্বাক্ষরিত হয় ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ। আর নরেন্দ্র মোদি সরকার বিগত সরকার (তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিং) কতৃক স্বাক্ষরিত চুক্তিটি বাতিল করেন ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে। এটা সবচেয়ে বড়ো কেলেঙ্কারি।
  • মনমোহন সিং যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন তাতে একটি রাফাল বিমানের দাম ঠিক হয় ৫২৬ কোটি টাকা। আর মোদিবাবুর চুক্তি অনুযায়ী একটা বিমানের দাম হয় ১৬৭০ কোটি টাকা।
  • এই নতুন চুক্তিতে মিডিলম্যান (দালাল) সক্রিয় ছিল। সেই ভারতীয় দালালকে দাসাউ ১ কোটি ইউরো ‘ঘুষ’ দিয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
  • পুরানো চুক্তিতে রাফালের প্রযুক্তি হস্তান্তরের শর্ত ছিল। এরফলে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান নির্মাণ সংস্থা হ্যাল উপকৃত হত। কিন্তু নতুন চুক্তিতে এই গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি কৌশল করে সরিয়ে দেওয়া হয়।

 

ফরাসি দেশের তদন্তে পিএনএফের তৎকালীন প্রধান এলিয়েন হউলেটের ভূমিকাকে আতস কাঁচের আওতায় আনা হবে কারণ তিনি তার সহকর্মীদের বিরোধিতা সত্বেও একতরফা ভাবে তদন্ত বন্ধ করে দেন। একইভাবে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওঁলাদ ও বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকর (যিনি সেসময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন) কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক্ষেত্রে আমাদেরও মনে রাখতে হবে সেসময় আমাদের দেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রধানবিচারপতি রঞ্জন গগৈ (বর্তমানে বিজেপি সরকার মনোনীত সাংসদ) প্রমানাভাবে মামলা খারিজ করে দেন অথচ তিন সদস্যের বেঞ্চের অন্যতম সদস্য বিচারপতি কেএন. জোসেফ তদন্ত করার পক্ষে সওয়াল করেন। এমনকি ক্যাগও এই চুক্তি নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তোলে।

মোদি ঘনিষ্ট ও আদালতে দেউলিয়া বলে ঘোষিত অনিল আম্বানিকে কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকা না সত্বেও কিভাবে অফসেট বরাত দেওয়া হল তা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন সেসময় উঠেছিল।

 

বর্তমান নিবন্ধকার সেই সময় রাফাল ক্রয় নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্নগুলিকে নিয়ে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন যা নিউজ পোর্টাল ‘গ্রাউন্ডজিরো’তে দু পর্বে প্রকাশিত হয়। আশার কথা হল ফরাসি মিডিয়ার সৌজন্যে রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেশের প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত এরকম সংবেদনশীল বিষয়ে আবার তদন্তের জন্য সরকারকে বাধ্য করার জন্য আজ সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল, অধিকার সংগঠনকে সক্রিয় হতে হবে।

 

রাফাল বিমান ক্রয় দুর্নীতি ঘিরে সুমন কল্যাণ মৌলিকের লেখাটি পনঃপ্রকাশস করা হল।

 

রাফাল: দুর্নীতির সহজ পাঠ (প্রথম ভাগ)

 

সময়টা ২০১৪। সামনে লোকসভা নির্বাচন এবং দেশ জুড়ে কর্পোরেটদের আর্থিক সহায়তায় ব্র্যাণ্ড মোদীর আগ্রাসী প্রচার। স্বপ্নের ফেরিওয়ালা একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেই মোদীময় ভারতবর্ষে ভাবী প্রধানমন্ত্রীর একটা বচন খুব জনপ্রিয় হয়েছিল – “না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা”। অভূতপূর্ব নির্বাচনী সাফল্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদী গদিতে আসীন হলেন। তারপর প্রায় পাঁচটা বছর অতিক্রান্ত। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যথা নিয়মে গঙ্গা ও নর্মদার জলে ভেসে গেছে। আর সততার ধ্বজাধারীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠছে  রাজা তোর কাপড় কোথায়? প্রত্যেক দিন নতুন নতুন তথ্যের আগমনে জমে উঠেছে রাফাল দুর্নীতির প্রশ্ন। সেই দুর্নীতির গল্প লিখেছেন সুমন কল্যাণ মৌলিক। এটি গল্পের প্রথম ভাগ।

https://www.groundxero.in/2019/03/29/rafale-and-a-tale-of-corruption-part-one/

 

রাফাল: দুর্নীতির সহজ পাঠ (দ্বিতীয় ভাগ)

 

নরেন্দ্র মোদী সরকারের ৩৬টি রাফাল বিমান (Ready to fly) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে পরস্পর বিরোধী অভিযোগের সত্যাসত্য বিচার করা জটিল, কিন্তু যেভাবে আম্বানির সংস্থা রাফাল চুক্তিতে প্রবেশ করল এবং পরবর্তী ঘটনাবলি গতি পেল তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। 

https://www.groundxero.in/2019/03/30/rafale-and-a-tale-of-corruption-part-two/

 

Share this
Recent Comments
1
Leave a Comment