“এসব রদ করা নিয়ে কোনও কথাই চলবে না, আইন বাতিল করতেই হবে।” — জানালেন কৃষিজীবি শেখ কামাল হোসেন


  • January 22, 2021
  • (0 Comments)
  • 590 Views

দিল্লির চলমান কৃষক আন্দোলনের সংহতিতে ২০-২২ জানুয়ারি রাণী রাসমনি রোডে চলছে নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচী। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার কৃষিজীবি মানুষেরা ও তাদের সমর্থনে থাকা মানুষ। সুদর্শনা চক্রবর্তীর রিপোর্ট।

 

দিল্লির চলমান কৃষক আন্দোলনের তরফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষি আইন প্রত্যাহার ছাড়া তাঁরা আর কোনও বিকল্প সমাধানের পথে যেতে কোনও মতেই রাজি নন। ফলত, কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ মাসের জন্য তিনটি কৃষি আইন রদ করার যে প্রস্তাব দিয়ে ২৬ জানুয়ারির আগে কৃষক আন্দোলন স্থগিত করার যে পরিকল্পনা করছিল তা আপাতত ভেস্তে গেছে। দিল্লির চলমান কৃষক আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণার পরেই সারা দেশে এই আন্দোলনের সংহতিতে চলতে থাকা প্রতিটি প্রতিবাদ কর্মসূচীই যেন নতুন উদ্যম খুঁজে পেয়েছে। কলকাতায় গত ৯ জানুয়ারি থেকে ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলে চলছে এআইকেএসসিসি-র আহবানে ‘অন্নদাতাদের সংহতিতে বাংলা’। নানা কর্মসূচীর মাঝখানে ২০-২২ রাণী রাসমনি রোডে চলছে নিরবচ্ছিন্ন অবস্থান কর্মসূচী। যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন জেলার কৃষিজীবি মানুষেরা ও তাদের সমর্থনে থাকা মানুষ। পোস্টার, ছবি, পত্রিকা, পতাকায় ছড়িয়ে পড়ছে সমর্থনের বার্তা। লাগাতার বক্তব্য পেশের পাশাপাশি চলছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসাহে কোনও ভাটা নেই।

গোপাল হেমব্রম

গোপাল হেমব্রমের বয়স প্রায় ৭০। এসেছেন পান্ডুয়া থেকে, কৃষক না হলেও, আন্দোলনের সমর্থক। মোদি সরকারের ১৮মাসের জন্য তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহারের পরিকল্পনাকে তিনি নিছকই ধাপ্পা বলেই মনে করছেন। “এই প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কোনও কারণই নেই। এই সরকার শুধুই মিথ্যে কথা বলে। মানুষের কথা ভাবার এদের কোনও সদিচ্ছাই নেই। সুতরাং কোনওভাবেই অবস্থান বা প্রতিবাদ তুলে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। কৃষকদের কথা, গরীবদের কথা ভাবতে এরা রাজি নয়। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত, কৃষিবিল সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবেই,” দৃঢ় গলায় জানিয়ে দিলেন ৭০ ছোঁয়া মানুষটি।

 

শেখ কামাল হোসেন

হুগলির তারকেশ্বর থেকে সাথীদের সঙ্গে এসেছেন বছর চল্লিশের কৃষিজীবি শেখ কামাল হোসেন, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন, সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও চারপাশ সম্পর্কে যথেষ্ঠ সচেতন তরুণ এই মরশুমে হিসাব দিয়ে বললেন, তাঁর প্রায় ২৬,০০০ টাকা লোকসান হয়েছে। দাবি একটাই, “এমএসপি-কে আইনের অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। প্রতিটি কৃষিদ্রব্যের জন্য নির্ধারিত এমএসপি থাকতে হবে। ধান, সর্ষে, আলু ইত্যাদি যা কিছু আমরা ফলাই তার দাম যেন আমরা পাই। সবচেয়ে বড় কথা এই সরকার পুঁজিপতিদের স্বার্থে কাজ করছে। না চাষীদের কথা ভাবছে, না সাধারণ মানুষের কথা, সাধারণ চাকরিজীবি মানুষ যারা, তাদেরও কি বছর বছর মাইনে বাড়ে? কৃষিপণ্যের দাম এই হারে বাড়লে, সবাই কি খাবে? এই প্রশ্ন করার সাহস হয় কী করে যে চাষীরা কেন পিজা খাচ্ছে? কেন জিনস্ প্যান্ট পড়ছে? কেন চার চাকা চড়ছে? আমরা চাষী বলে কি মানুষ নই? সরকার যা ইচ্ছে তাই করবে আদানি-আম্বানীর পকেট ভরাতে আর আমরা প্রশ্ন তুললেই আমরা কিছু বুঝি না বলে চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আমরাও সব কিছুর খোঁজখবর রাখি, কৃষি বিলের মধ্যে দিয়ে কীভাবে আমাদের সর্বনাশ হতে চলেছে তাও বুঝতে পারছি স্পষ্ট। এসব ১৮ মাসের জন্য রদ করা নিয়ে কোনও কথাই চলবে না, আইন বাতিল করতেই হবে। কখনও ভারত-পাকিস্তান, কখনও চীন, কখনও ধর্ম এসব দিয়ে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা বৃথা। চাষীদের কি বোকা ভাবছে। আমাদের চোখ খুলে গেছে আর তো আমাদের আটকে রাখতে পারবে না আর আমাদের ক্ষতি করে পুঁজিপতিদের পকেট ফুলিয়ে দিতেও আর দেব না। আইন বাতিল করিয়েই ছাড়ব,” সমস্ত রাগ উগরে বললেন এই তরুণ কৃষক।

 

Share this
Leave a Comment