আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র, অঘোষিত জরুরি অবস্থা এবং ভারতের সাংবাদিকতার স্বরূপ


  • July 10, 2020
  • (1 Comments)
  • 1434 Views

এই মুহূর্তে সাংবাদিকরা এক অসম যুদ্ধের শরিক। একদিকে রাষ্ট্র আর পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা, একদিকে রাষ্ট্রের দমননীতি আর একদিকে সময়ের দলিল ধরে রাখার জান কবুল লড়াই। সাংবাদিকদের ধারাবাহিক ভাবে গলা টিপে ধরার প্রয়াস — হুমকি, গ্রেপ্তার এমনকি খুন — জরুরি অবস্থার কথা মনে করিয়ে দেয়। যেন অঘোষিত এক জরুরি অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে দেশ। এমন দমবন্ধ পরিবেশের বিস্তৃত ছবি তুলে ধরলেন সুদর্শনা চক্রবর্তী

 

তৃতীয় ও শেষ পর্ব

 

একটা ছোট্ট তথ্য তুলে ধরা যাক। গত এপ্রিলে প্রকাশিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রকাশক সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হয়েছে ১৪২, আগের থেকে দু’ধাপ নেমে। আর এরসঙ্গে জুতসই মন্তব্য করেছিলেন দেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীও – “ভারতে গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করে।” চলতি বছরের শুরুতে দিল্লি হিংসার সময়ে সংবাদমাধ্যমে সেই হিংসার ছবি তুলে ধরতে চাওয়া পেশাদার সাংবাদিকদের, ক্ষমতায় থাকা সরকারের ‘ভক্ত’দের হাতে নিদারুণ হেনস্থা, মারধর, প্রাণনাশের হুমকি সবেরই মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু তবু ‘খবর’ চেপে রাখা যায়নি, সমস্ত হুমকি-হেনস্থা-ভয়ের মুখেও তাঁদের পেশার প্রতি এই সাংবাদিকেরা ছিলেন অবিচল। ফলে যেভাবে এক নির্দিষ্ট ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নেমে এসেছিল আক্রমণ, যেভাবে তাদের প্রাণ, সম্পত্তি সবই ধ্বংসের মারণখেলায় নেমেছিল সরকারের মদতপুষ্ট আততায়ীরা, তা রিপোর্ট হয়ে, ছবি হয়ে উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। শাহিনবাগের ধরনামঞ্চে গুলি চালানো, দেশের রাজপথে খোলা পিস্তল হাতে যুবকের সরকারের সমর্থনে হুমকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার উপর গুলিচালনা পেরিয়ে একজন মুসলমান মানুষকে রক্তাক্ত করার ছবি সবই দেশের মানুষের সামনে সংবাদমাধ্যমই তুলে ধরেছে। সবক্ষেত্রেই পুলিশ প্রশাসন হিংসার ঘটনায় নীরব দর্শক। অথচ সাংবাদিকদের ধরপাকড়ে তারাই অতি তৎপর। চিত্র সাংবাদিক দানিশ সিদ্দিকি এরমধ্যে বেশ কয়েকটি ছবি ‘এক্সক্লুসিভ’ তোলেন এবং হুমকির জেরে তাঁকে বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেও থাকতে হয়। যদিও ছবি তোলা বন্ধ করেননি তিনি। এই দিল্লি হিংসার সময়েই এক চিত্রসাংবাদিক বন্ধুর কাছে জেনেছি কীভাবে কাজ করতে গিয়ে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছিলেন আর ক্রমাগত এক ভয়ের আবহের মধ্যে টানা কাজ করে গেছেন। ছবি তুলেছেন চূড়ান্ত নৃশংস হত্যার, ট্রমায় চলে গিয়েছেন, কিন্তু কাজ থামাননি। কিছু সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলও নিয়মিত প্রতিবেদন পেশ করেছে এই নির্মম সাম্প্রদায়িক হিংসার। সত্যি সামনে আনতেই জুটেছে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা। তবুও ‘রিপোর্টিং’ থামেনি। সাংবাদিকদের এই হার-না-মানা মানসিকতা, ভয়ডরহীন একরোখামিকেই বড্ড ভয় মাথায় আতঙ্কের বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ চালাতে চাওয়া সরকারের। তাই কখনও ঘোষিত জরুরি অবস্থা, কখনও অঘোষিত জরুরি অবস্থায় বারবারই থামাতে চাওয়া সাংবাদিকদের।

 

প্রথম পর্ব : আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র, অঘোষিত জরুরি অবস্থা এবং ভারতে সাংবাদিকতার স্বরূপ

 

মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, লকডাউন ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর মতো এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সামনাসামনি হল আমাদের দেশও। আর তখনই সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে গেল এই দেশের সরকারের একেবারে ভেঙে পড়া অর্থনীতি, কোনও রকম আপদকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনও রকম কৌশলগত পরিকল্পনা না থাকা এবং দেশটা যে চালানোই হচ্ছে বেসরকারিকরণ আর পুঁজিপতিদের স্বার্থে সেই নির্লজ্জ সত্যিটি। সেইসঙ্গে অমানবিকতার নতুন নজিরও তৈরি হল দেশের নানা প্রান্তে। পরিযায়ী শ্রমিকদের চরম দুর্দশা, স্রেফ হাঁটতে হাঁটতে মরে যাওয়া, সংক্রমণ রোধ করতে দরিদ্র মানুষের কাছে ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিষেবা না পৌঁছনো, এই আপৎকালীন সময়েও দুর্নীতি, ‘মন কি বাতে’-তে প্রধানমন্ত্রীর যাবতীয় অকাজের কথা এবং সত্যিকারের জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের সার্বিক ব্যর্থতায় দেশের নাগরিকরা যে এক ভীষণ বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে তা বিকিয়ে না যাওয়া সংবাদমাধ্যমই এখনও তুলে ধরছে। এই ক্ষেত্রে কিছু মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম এবং সেইসঙ্গে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলির ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ‘দ্য ওয়্যার’, ‘স্ক্রোল’, ‘নিউজলন্ড্রি’, ‘ফার্স্টপোস্ট’-এর মতো নিউজ পোর্টালগুলি শুরু থেকেই সরকারবিরোধী এবং দেশের মানুষের স্বর তুলে ধরায় বিশ্বাসী। বিশ্লেষনধর্মী লেখা, ভিডিও, ছবির প্রতিটিতেই সরকারের সমালোচনা, ভ্রান্ত নীতি, দুর্নীতির প্রতিবেদন। ফলে তারা সরকারের কালো খাতায় নাম লিখিয়েছে। যেহেতু অনলাইন সংবাদে সে অর্থে সেন্সরশিপ চালানো সম্ভব নয়, তাই শুরু হয়েছে কোনও একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে সেই রিপোর্টের সাংবাদিককে হেনস্থা, আটক, তাঁর নামে অদ্ভুত সব ধারায় মামলা দায়ের, সম্পাদককেও হেনস্থা। না, সরকার জরুরি অবস্থা জারি করেনি। কিন্তু নজরদারি, খবরদারি চলছে লাগাতার।

 

সম্প্রতি রাইটস্ অ্যান্ড রিস্কস্‌ অ্যানালিসিস গ্রুপ একটি সমীক্ষা করেছে ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে দেশ জুড়ে সাংবাদিকদের উপরে কি ধরনের আক্রমণ নেমে এসেছে তার একটি বিস্তৃত প্রতিবেদনে – ‘ইন্ডিয়া: মিডিয়াজ ক্র্যাকডাউন ডিউরিং কোভিড নাইন্টিন লকডাউন’। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে এই সময়সীমার মধ্যে ৫৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এফআইআর, সমন বা শো-কজ নোটিস, শারীরিক হেনস্থা, সম্পত্তি ধ্বংস হওয়া, কোভিড ১৯-এর উপরে রিপোর্টিং-এর জন্য বা স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন এমনকি গ্রেফতার করা হয়েছে। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ। সেখানে মোট ১১ জন সাংবাদিক কোনও না কোনওভাবে হেনস্থার শিকার। তারপরেই রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর (৬ জন), হিমাচল প্রদেশ (৫ জন), পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুতে ৪ জন, পঞ্জাব, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, কেরালায় ২ জন এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট, কর্নাটকে একজন করে সাংবাদিক প্রশাসনের দ্বারা কোনও না কোনওভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। আশ্চর্যজনকভাবে এই ধরনের ঘটনা সরকারের দালাল মিডিয়া বা সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘটেনি। এর শিকার হয়েছেন তাঁরাই যাঁরা সরকারের সমালোচনা করেছেন, সরকারের আসল নেতিবাচক ছবিগুলো তুলে ধরেছেন। এই রিপোর্ট থেকেই জানা যাচ্ছে যে, সাংবাদিকদের বিরূদ্ধে করা ২২টি এফআইআর-এর মধ্যে ১০টি ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা গ্রেফতার হয়েছেন, অন্তত ৭ জন সাংবাদিককে সমন বা শো-কজ নোটিস পাঠানো হয়েছে। কমপক্ষে ন’জন সাংবাদিক শারীরিক নিগ্রহের শিকার, যার মধ্যে দু’জন পুলিশি হেফাজতে। অরুণাচল প্রদেশে একজন মহিলা সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওড়িশাতে একজন সাংবাদিককে ‘সরপঞ্চ’ আটকে রেখেছিল, তেলেঙ্গানায় একজন সাংবাদিকের বাড়ি ভেঙে দিয়েছিল সাংসদ। আর এই সবই কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও লকডাউনের সময়ে প্রশাসনের দুর্নীতি সামনে আনার ‘শাস্তি।

 

ভারতীয় সংবিধানে আলাদা করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উল্লেখ নেই। বলা হয়েছে সংবাদমাধ্যম হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অর্ন্তগত। সংবিধানে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা আছে। সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর আম্বেদকর স্পষ্টই বলেছিলেন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। কারণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে সংবাদমাধ্যম এবং একজন ব্যক্তি বা নাগরিক সমান। সংবিধানের ১৯ (১) (ক) ধারায় বলা হয়েছে “সকল নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার থাকবে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও এর অর্ন্তভুক্ত।” দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট-ও একে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সেই ’৭৫-এর জরুরি অবস্থার মতোই এখনও দেশের সরকার সাংবিধানিক অধিকারকে খণ্ডন করছে, আইনের ফাঁক গলে দেশের নিরাপত্তা-শান্তি-শৃঙ্খলার দোহাই দিয়ে নিজেদের অন্যায় লুকোতে সাংবাদিকদের কাঠগড়ায় তুলছে।

 

দ্বিতীয় পর্ব : আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র, অঘোষিত জরুরি অবস্থা এবং ভারতের সাংবাদিকতার স্বরূপ

 

আর সেইজন্যই কখনও ‘স্ক্রোল’-এর মতো কোনও জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল আবার কখনও এ রাজ্যের ‘আরামবাগ টিভি’-র মতো কোনও নেহাতই স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলকে রাষ্ট্রের, সরকারের, প্রশাসনের রোষের মুখে পড়তে হয়। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশ অবশ্য সাংবাদিকদের হেনস্থা করার সব সীমা পেরিয়ে গেছে। অশ্বিনী সাইনি নামক একজন সাংবাদিকের বিরূদ্ধে এপ্রিল মাস জুড়ে ৬টি এফআইআর করা হয়, সব ক’টি রিপোর্টেই তিনি লকডাউনকালীন সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন পাওয়া নিয়ে দুর্নীতি, ইটভাটায় লকডাউনের নিয়ম ভাঙার মতো সরাকারি দুর্নীতি প্রকাশ করেছিলেন। ফলে সরকার যে তাঁকে চুপ করাতে চাইবে এ আর নতুন কি। আমাদের রাজ্যেও তো সরকারি স্তরে পিপিই নিয়ে প্রতিবেদন পেশ করায় সাংবাদিককে হেনস্থা হতে হয়। এই অবসরেই বহু দিনের পুষে রাখা রাগও বেরিয়ে আসছে সরকারের। সেই কারণেই সাংবাদিক ও নিউজ পোর্টাল ‘স্ক্রোল’-এর সাংবাদিক সুপ্রিয়া শর্মাকে প্রধানমন্ত্রীর দত্তক নেওয়া উত্তরপ্রদেশের গ্রামে লকডাউনকালীন সময়ে দরিদ্র মানুষদের দুরবস্থা নিয়ে রিপোর্ট করায় এফআইআর-এর সম্মুখীন হতে হয়। এবং তাঁকে শিডিউল কাস্ট অ্যান্ড শিডিউল ট্রাইব অ্যাক্ট, ১৯৮৯-এর বিভিন্ন ধারায় ও ভারতীয় দণ্ডবিধির আরও নানা ধারায়  অভিযুক্ত করা হয়েছে। সুপ্রিয়ার বিরূদ্ধে অভিযোগটি যিনি করছেন তিনি খাতায়-কলমে সেই গ্রামের এক বাসিন্দা। কিন্তু ঠিক কোন্‌ পরিস্থিতিতে তিনি অভিযোগ করেছেন বা কারওর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে করেছেন কি না জানার উপায় নেই। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিয়াকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ২৬৯ ও ধারা ৫০১-এ অভিযুক্ত করা হয়েছে, দু’টিই ‘অ্যাট্রোসিটিস অ্যাক্ট’। প্রধানমন্ত্রীর দত্তক নেওয়া গ্রামের দারিদ্র্য, না-খেতে-পাওয়া গ্রামবাসীদের অবস্থার কথা তুলে ধরা সাংবাদিককে যে চূড়ান্ত হুমকি পেতে হবে তাই স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্র তো আরওই রেগে উঠবে কারণ এ ধরনের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম হাজার হুমকির সামনেও নিজেদের প্রতিবেদন ও সাংবাদিকের পাশ থেকে সরে না।

 

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় অবশ্য সর্বশেষ পেরেকটি পুঁতেছে প্রসারভারতী। এতদিন পর্যন্ত এই সম্প্রচারক সংস্থাটি যা সরাসরি রাষ্ট্রের অধীনে তারা পরোক্ষে রাষ্ট্রীয় অঙ্গুলি-হেলনে চলতো, কিন্তু এবার যাবতীয় আড়াল সরিয়ে তারা পিটিআই-কে দেশদ্রোহীতার  অভিযোগে অভিযুক্ত করল। প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া-র অন্যতম বড় ‘সাবস্ক্রাইবার’ প্রসারভারতী জানিয়েছে যে তাদের সঙ্গে চুক্তি এই মুহূর্তে বিবেচনাধীন কারণ সাম্প্রতিক সময়ে পিটিআই-এর প্রতিবেদনগুলি তাদের দেশবিরোধী বলে মনে হচ্ছে। প্রসারভারতীর অধীনে রয়েছে দূরদর্শন ও অল ইন্ডিয়া রেডিও। যখন প্রসারভারতী ঠিক করছে যে, কোনও সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন সরকারের সমালোচনামূলক হলে বা এক অর্থে সরকারের পক্ষে না থাকলেই তা দেশবিরোধী তাহলে তা যে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের উগ্র জাতীয়তাবাদের মানদণ্ডে মাপতে চাইছে সংবাদমাধ্যমকে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেন্দ্রের এই মানসিকতার ছাপ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে চাওয়াতে তারা সকলেই মুদ্রার এ পিঠ আর ও পিঠ। এখনই প্রয়োজন পি সাইনাথ-এর মতো সাংবাদিকদের যিনি দেশ জুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিক মানুষদের কণ্ঠস্বর তুলে আনছেন, যিনি ‘সিটিজেন রিপোর্টার’ তৈরি করছেন আর সাংবাদিকতাকে উচ্চমার্গীয় পেশার ঘেরাটোপ থেকে বের করে সাধারণ নাগরিকের দক্ষতা বাড়িয়ে তাদেরই সাংবাদিক হয়ে উঠতে উৎসাহিত করছেন। আর এভাবেই সামনে উঠে আসছে আসল ভারতের ছবি।

 

এই মুহূর্তে তাই ভারতের পেশাদার, নিরপেক্ষ, সাহসী সাংবাদিকরা এক অসম যুদ্ধের শরিক। একদিকে রাষ্ট্র আর পুঁজিপতিদের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরা, একদিকে রাষ্ট্রের দমননীতি আর একদিকে সময়ের দলিল ধরে রাখার জান কবুল লড়াই। কারণ সাংবাদিকতা কখনওই চুপ করে যেতে পারে না।

 

লেখক ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং স্বতন্ত্র সাংবাদিক

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: Rahat on July 21, 2020

    Great info, thank you! I’ll try to make something cool right now 🙂

Leave a Comment