করোনা শেখালো কাকে বলে পরিযাণ, কারাই-বা পরিযায়ী


  • April 10, 2020
  • (1 Comments)
  • 6959 Views

দেশের অভ্যন্তরে এই ঘরে ফিরতে চাওয়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক অনেকের কাছেই যেন হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা এক বিস্ময়। কারা এঁরা? কোথায় গিয়েছিলেন? কীবা কাজ তাঁদের? কত মানুষ? সংখ্যা কত? না, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে পারবে না কোনও সরকার। পরিযায়ী শ্রমিকদের হালহকিকতের খোঁজ নিলেন দেবাশিস আইচ

 

 

বাড়ি ফিরে দেখলেন বিদ্যুৎ, জলের লাইন কাটা। বার্তা পরিষ্কার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও। মাসের ২২ দিন কাজ হয়ে গিয়েছে, ঠিকাদারের খোঁজ নেই ২২ দিনের মজুরি মিলল না। কিন্তু মুলুকে ফিরে যেতে হবেই। ঘাড়ে ধাক্কা দেয়নি শুধু। তখনও ট্রেন চলছে। আর মুম্বাই, পুনে, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, পঞ্জাব, কেরালা থেকে  উপচে পড়া মানুষ নিয়ে ট্রেন এসে পৌঁছচ্ছে রাঁচি, ধানবাদ, হাওড়া।  যাত্রা অবশ্য আরও আগেই শুরু হয়েছিল এবং সারা দেশ জুড়েই। ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ‘জনতা কার্ফু’ ঘোষণা করলেন। আর তার সঙ্গে রাখলেন বিকেল পাঁচটায় গণআমোদ ‘থালি বাজাও’। ২২ মার্চ পালিত হল কার্ফু। বিকেল পাঁচটায়  বারান্দাওয়ালা, লোহার গেট আর প্রাচীর ঘেরা নাগরিকরা থালা-বাটি হাতের কাছে যে যা পেয়েছেন বাজিয়ে নিয়েছেন। যাঁদের বারান্দা নেই, বারো ঘর এক উঠোন, তাঁরা কার্ফু চুলোয় দিয়ে থালাবাসন নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন পথে পথে। বাজি ফাটল দেদার। আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…। দেশে ততদিনে করোনায় মৃত তিন, আক্রান্ত ১৪২। কাজ কারবার লাটে উঠছে। আতঙ্কিত পরিযায়ী শ্রমিকরাও বেরিয়ে পড়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। ২২ মার্চ থেকেই বন্ধ হয়ে গেল ট্রেন চলাচল। ২২ মার্চ ভোর চারটে পর্যন্ত যে ট্রেনগুলি ছেড়েছিল সেগুলিই একমাত্র গন্তব্যে পৌঁছেছিল। সেদিন সেই ট্রেন ভরা ছিল পরিযায়ী শ্রমিকে। ভুক্তভোগী ছাড়া আর কারো তা নজরে পড়েনি।

 

সঙ্গত কারণেই ১৪ মার্চ সোমবার থেকে রাজ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল স্কুল-কলেজ। ২৩ মার্চ কলকাতা-সহ ছোট-বড় সমস্ত শহর, জেলার এক বড় অংশ জুড়ে প্রায় চারদিনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করে বলা হল ‘ঘরে থাকুন’। দেশের ৩২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও ততদিনে একধরনের লকডাউনের আওতায়। রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় পরামর্শ মাফিক জারি করল এপিডেমিক ডিজিজ অ্যাক্ট, ১৮৯৭। ‘সোশ্যাল ডিসটেন্সিং’, ‘কোয়ারান্টিন’ ‘স্যানিটাইজার’, ‘মাস্ক’ ততদিনে  দেশজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত শব্দরাজি। ২৪ মধ্যরাতে মাত্র চারঘণ্টার নোটিশে তিন সপ্তাহের জন্য দেশজোড়া লকডাউন ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার।

 

আর সারা দেশ বিস্ফারিত চোখে দেখল দিল্লি, মুম্বাই-সহ দেশের সমস্ত শহরের পথে পথে উপচে পড়েছে মানুষ। হাইওয়ে জুড়ে মানুষের দীর্ঘ মিছিল। ২৭ মার্চ দ্য হিন্দু লিখছে লকডাউনের খবর হতেই মধ্যপ্রদেশের ৩০ হাজার আদিবাসী শ্রমিক তাদের পরিবার নিয়ে রওনা দিয়েছে  গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র থেকে। আটকে পড়েছেন আরও ৩০ হাজার। অবাক বিস্ময়ে নগর ভারত জিজ্ঞাসা করে বসল, ‘কারা এঁরা?’ অথচ, এঁরাই তো তাঁদের ঘর বানিয়েছে, এঁরাই তাঁদের রান্না করে, কাপড় কাচে, আবাসন পাহারা দেয়, মোট বয়, সবজি বেচে, নর্দমা-আবর্জনা সাফ করে, রাজ্যের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক, কাগজ, ভাঙা যন্ত্রপাতি, লোহালক্কর সংগ্রহ করে পাঠায় রি-সাইকেল শিল্পে। নগর পরিচ্ছন্ন হয়। ইতোমধ্যে, যাঁরা যথেষ্ট খাদ্যসম্ভারে সাজিয়ে তুলেছেন স্ব স্ব শস্যাগার, সবজি মাণ্ডি, মাছ-মাংসে সাজিয়ে তুলেছেন গৃহকোণের কোল্ড স্টোরেজ — টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মোবাইলের নিউজ অ্যাপে মুখ গুঁজে তাঁদের অনেকেই তখন সামাজিক মাধ্যমে হাঁক পাড়তে শুরু করেছেন ‘মার শালাকে’, ‘গুলি কর’, ‘মিলিটারি নামা’। যাঁরা দিন আনেন দিন খান ভদ্রজনের সমবেত ঘৃণার শিকার হয়ে উঠলেন তাঁরা। হাটে-বাজারে তখন লাঠির ঘায়ে জর্জরিত এই মানুষেরা। শিশুর দুধ আনতে গিয়ে লাঠির আঘাতে কারো স্থান হয়েছে মর্গে। এ রাজ্যে। আকাশ ছোঁয়া ‘কন্ডোভিলে’ থেকে  বেতন না-ঠেকিয়ে বার করে দেওয়া হচ্ছে গৃহসহায়িকাকে। এ শহরে। ভিন রাজ্য থেকে আসছে অপমানে, অসহায়তায় একাধিক আত্মহত্যা আর পিটিয়ে মারার খবর। রাষ্ট্রের লেঠেল বাহিনী হাইওয়েতে লাঠি পেটাচ্ছে, হামাগুড়ি, ফ্রগজাম্প দেওয়াচ্ছে লকডাউন ‘অমান্য’ করে ঘরে ফেরা জনতাকে। গা-ধুয়ে দিচ্ছে রাসায়নিক মেশানো জলে।

 

 

ইতোমধ্যে, সংবাদমাধ্যম-সরকার-বিশেষজ্ঞদের কল্যাণে আরও একটি শব্দের বাড়বাড়ন্ত হল, ‘মাইগ্রেন্ট লেবার’, ‘রিভার্স মাইগ্রেশন’। যে শব্দটি ক্রমে পরিচিত হয়ে উঠেছিল আসাম ও এনআরসি-র কল্যাণে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাঁদের ‘উইপোকা’ বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন। তারও আগে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান থেকে গ্রিস পেরিয়ে ইউরোপে যাওয়া, যেতে চাওয়া, মেডিটেরেনিয়ানে ডুবে মরা, ভেসেল ডুবিয়ে দেওয়া, বন্দি হওয়া শরণার্থীদের মাইগ্রেশন; ট্রাম্পের মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তোলা আর মায়ানমারে মিলিটারি জুন্তার গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় প্রার্থী রোহিঙ্গাদের কল্যাণেও ‘মাইগ্রেশন’ ‘রিফিউজি’ শব্দগুলি ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হতে শুরু করেছিল যুগপৎ ঘৃণা ও সহমর্মিতায়। কিন্তু, দেশের অভ্যন্তরে এই ঘরে ফিরতে চাওয়া লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক অনেকের কাছেই যেন হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা এক বিস্ময়। কারা এঁরা? কোথায় গিয়েছিলেন? কী-ই-বা কাজ তাঁদের? কত মানুষ? সংখ্যা কত? না, এর পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব দিতে পারবে না কোনও সরকার। কী কেন্দ্র কী রাজ্যগুলি। না দিতে পারবে সরকারের শ্রম দপ্তর বা মন্ত্রক কিংবা কোনও কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। খণ্ড খণ্ড তথ্য পাওয়া যায় বটে, সামগ্রিক তথ্য মেলে না।

 

এনআরসি-এনপিআর, গুজরাতে ট্রাম্প-সার্কাস, দিল্লির গণহত্যা, মধ্যপ্রদেশে সরকার ফেলে দেওয়ার মতো কুকাজে লিপ্ত থাকা একটা সরকার অমূল্য তিন তিনটি মাস এভাবেই হেলায় নষ্ট করেছিল। লকডাউনের ধাক্কায় যখন চরম বিপর্যস্ত পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যান্য গরিব বিপন্ন মানুষ তখনও সরকারের সম্বিত ফিরতে ফিরতেই কেটে গেল মহামূল্যবান আরও কয়েকটি দিন। বেসরকারি হিসেব মোতাবেক পথক্লান্ত হয়ে ততদিনে মৃত্যু হয়েছে শিশু-সহ বেশ কয়েকজনের। ক্ষিপ্ত কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করার নির্দেশ দিল। পথেই আটকে পড়লেন খিদে-তেষ্টায় ক্লান্ত, মজুরিহীন লক্ষ লক্ষ শিশু, মহিলা-সহ শ্রমিক পরিবারগুলি। অবশেষে, পাঁচই এপ্রিল সংবাদসংস্থা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তবকে উদ্ধৃত করে জানাল, ৭৫ লক্ষ মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়েছে। কতদিন ধরে তার হিসাব অবশ্য নেই। ২৩,৯২৪টি আশ্রয় শিবির খুলেছে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি। ৩,৭৩৭টি শিবির তৈরি করেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই ২৭,৬৬১টি শিবিরে আছেন সাড়ে ১২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যান্য দু:স্থ মানুষ। আরও সাড়ে তেরো লক্ষ শ্রমিককে শিবির ও খাবারের ব্যবস্থা করেছেন তাঁদের নিয়োগকারীরা। জানানো হল, ১৯,৪৬০টি বিশেষ খাদ্যশিবির খোলা হয়েছে। সরকারি আর বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগ যেখানে প্রায় সমান সমান। সরকারি পরিচালনায় খাদ্যশিবিরের সংখ্যা যেখানে ৯,৯৫১ এনজিও পরিচালিত খাদ্য শিবিরের সংখ্যা সেখানে ৯,৫০৯। দেশজোড়া নানা শিবিরে থাকা এই শ্রমিকদের বাইরেও কি আছে আরও আরও শ্রমিক? স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা wbtrackmigrants.com জানাচ্ছে, ২ এপ্রিল পর্যন্ত তারা সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি শ্রমিকদের মধ্যে ৫০,১৭২ জনকে যোগাযোগ এবং সাহায্য করতে পেরেছে। শ্রীমতী শ্রীবাস্তবের তালিকায় কি এঁরা রয়েছেন? কিংবা ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ ভিন রাজ্যে আটকে পড়া যে ২০ হাজার বাঙালি শ্রমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁরা? এই তালিকায় কি যুক্ত করা হয়েছে অন্ধ্রের শ্রীকাকুলাম ও ভিজিয়ানগরম জেলার যথাক্রমে সাড়ে পাঁচ ও আড়াই লক্ষ নির্মাণ ও অন্যান্য শ্রমিকের কথা, যাঁরা নয়াদিল্লি, চেন্নাই, মুম্বাই, আহমেদাবাদ, হায়দরাবাদে গিয়েছিলেন। যাঁদের নির্মাণ এলাকা ও অন্যান্য কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। দেখা মেলেনি তাঁদের মালিক কিংবা ঠিকাদারের। অথচ সিংহভাগ ঘরে ফিরতে পারেননি। এই তালিকায় আছে কি এ রাজ্যে বর্ধমান ও হুগলি জেলার নানা ব্লকে আলু তুলতে এসে আটকে পড়া পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, সুন্দরবন, ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকেরা (আইচ ২০২০)। রাজারহাট, নিউটাউন, সেক্টর ফাইভে আটকে থাকা নির্মাণ শ্রমিকরা? তাহলে তো ওই সাড়ে সাতাশ হাজার শিবিরে থাকার কথা আরও প্রায় নয় লক্ষ শ্রমিকের। এখনও এই সাতই এপ্রিল জানতে পারছি নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ক্রমাগত বিদেশ-বিভুঁইয়ে অসহায় অবস্থায় থাকা বাংলার শ্রমিকদের নানা ভাবে সাহায্য করে চলেছে। প্রশ্ন করবেন না এই পুরো সময়টি জুড়ে কোথায় রয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

 

লকডাউনের আগেই অবশ্য হাজারে হাজারে মানুষ মুম্বাই, পুনে, দিল্লি, চেন্নাই, পঞ্জাব, কেরালা থেকে বিহারে পৌঁছে গিয়েছেন। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ২৪ মার্চ জানাচ্ছে, তার আগের সাতদিনে আল্লাপুঝা-ধানবাদ এক্সপ্রেসে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার হাজার মানুষ রাঁচিতে নেমেছেন। শুধুমাত্র রবিবার দিনই পুনে-দানাপুর এক্সপ্রেসে রাজ্যে ফিরেছেন ৪০০০ জন। কোনও যানবাহন না-মেলায় হাওড়া স্টেশনে খাবারহীন, টয়লেটহীন অতি কদর্য পরিবেশে ৪০ থেকে ৯৬ ঘণ্টা আটক থেকেছেন এই রাজ্য, আসাম, ওডিশার শ্রমিকরা। অবশেষে, রাজ্য পরিবহন দপ্তর ও পুলিশের সহযোগিতায় তাঁরা নিজ নিজ জেলা কিংবা রাজ্যে ফিরতে পেরেছেন। রাজ্যে রাজ্যে ফিরে আসা শ্রমিকদের একটা বড়সড় অংশই গ্রামে ফিরে গেছেন, অল্পই রয়েছেন কোয়ারান্টিন সেন্টার বা শিবিরে। কোথাও কোথাও যেমন বিহারে এ কারণে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, খুন, অশান্তি কম হয়নি। পুরুলিয়ায় দু’দল ঘরে ফেরা শ্রমিকের প্রাথমিক স্থান হয়েছিল গাছতলায় কিংবা গাছে টাঙানো মাচায়। একই ছবি দেখা গিয়েছে বান্দোয়ানে। দুর্গাপুর থেকে কোনও ক্রমে পুরুলিয়া শহরে আসা আটজন আদিবাসী শ্রমিক ৬৫ কিলোমিটার হেঁটে গ্রামে পৌঁছেছিলেন। প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। বাড়ি ফিরতে সাহায্য করেনি। গ্রামে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার অবস্থা নেই, তাই গাছতলায় ঠাঁই হয়েছিল (আইচ ২০২০)। সংবাদমাধ্যম এর মধ্যে শ্রমিকদের ‘সচেতনতা’র পরিচয়  পেয়েছে, মনুষ্যত্বের অমর্যাদা, অবমাননার কথা তাদের মনে হয়নি। সরকারি আধিকারিকরা কী করছেন ওঠেনি সে প্রশ্নও। এই সময়ের নির্দিষ্ট এসওপি বা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর, স্বাস্থ্য বিষয়ক আচরণবিধি বা হেলথ প্রটোকলটুকুই বা কী — তা এক্ষেত্রে বেমালুম ভুলে বসেছিল গণমাধ্যম। তারা শুধু মনে রেখেছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ জাতীয় শব্দবন্ধ। যার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘তফাত যাও’। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বোধহয় হতে চলেছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের জামালদহে। সেখানকার গ্রামবাসীরা ‘গাছবাড়ি’ বানিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে খবর। এমনটা কী হতে পারত যদি এই মানুষগুলোই আসতেন বিমান কিংবা রাজধানী এক্সপ্রেস চেপে? এর মধ্যে গ্রামবাসীদের অসচেতনতা জনিত আতঙ্ক খুঁজে পাওয়া যেতে পারে, তবে সাংবাদিকদের গাছমাচায় ‘সচেতনতা’র হদিস পাওয়া আর এরোপ্লেনে এলে ‘হাসপাতালে যাননি কেন’ প্রশ্ন করাটা আসলে শ্রেণি ও জাতিগত পক্ষপাতিত্ব। এই পক্ষপাতিত্বই এই লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। যাঁদের কথা মনেই পড়েনি মোদী আর তাঁর পরামর্শদাতাদের। যেমন নেপাল সীমান্ত লাগোয়া গোরক্ষপুরের উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকা রামজিৎ বলেছিলেন, ‘মোদীজি যখন এসব (লকডাউন) করবেন ভেবেছিলেন তখন বোধহয় কেউ তাঁকে আমাদের কথা বলেননি। হয়তো উনি জানেনই না আমাদের কথা।’ আমাদের অস্তিত্বের মধ্যেও যে যাঁদের স্থান নেই বললেই চলে।

 

আবারও ফেরা যাক সেই অমোঘ প্রশ্নে, কারা এঁরা?

একটি পর্যবেক্ষণ বলছে, দেশের ৬ ভাগের একভাগ পরিবারের কেউ না-কেউ কর্মজনিত পরিযায়ী। সংখ্যাটি প্রায় ১০০ মিলিয়ন বা দশ কোটি (তুম্বে, ২০১৯)। এই সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। আরও এক পর্যবেক্ষণ, সেনসাস বা জনগণনার তথ্য তুলে ধরে জানাচ্ছে, ১৯২১ সালের পর ২০১১ সালে প্রথম গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে মানুষের সংখ্যা বেশি যোগ হয়েছে। ২০১১ সালের জনগণনায় যেখানে ৩৭৭ মিলিয়ন শহুরে জনসংখ্যায় যোগ হয়েছে ৯১ মিলিয়ন মানুষ সেখানে গ্রামাঞ্চলে যোগ হয়েছে ৯০.০৬ মিলিয়ন। ২০০১ -এর সেনসাসে দেখা যায় যোগ হওয়া সংখ্যাটি যথাক্রমে ৬৮ ও ১১৩ মিলিয়ন। বলা হয়, এর একটি কারণ নতুন নতুন শহর গড়ে ওঠা বা নগরায়ন, দ্বিতীয় কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি। কিন্ত অন্যতম প্রধান কারণটি পরিযাণ। ১৯২১-এর তুলনাটি টানা হয়েছে এই কারণে যে, সে সময় স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি হিসেবে দেখা দিলে আমাদের দেশে ১.৬ কোটি থেকে থেকে ২.১ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এবং গ্রামাঞ্চলে নিট জনসংখ্যা হ্রাস পায়। ২০০১ থেকে ২০১১-র এই বৃদ্ধি কোনও মহামারির জন্য ঘটেনি, লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেনি, তবুও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০২১ সালের জনগণনায় এই বৃদ্ধি অব্যাহত তো থাকবেই এবং তা আরও বৃদ্ধি পাবে। বলা হচ্ছে আমাদের এমন কোনও সংখ্যাতাত্ত্বিক ভিত্তি কিংবা সাংখ্যিক সক্ষমতা নেই যা দিয়ে পরিযাণের প্রকৃত সংখ্যাটি বলা যায়। তবু, সেন্সাস ও অন্যান্য নথি ঘেঁটে মনে করা হচ্ছে সংখ্যাটি প্রায় ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি (সাইনাথ, ২০২০)।

 

এই পরিযায়ী শ্রমিকরা চিরকালই ছিলেন। কখনও  তাদের জোরজবরদস্তি করে কিংবা ভালো আয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দক্ষিণ কিংবা পুবের কফি ও চা বাগিচায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, আবার তাদের জমি, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে সাদরে নিয়ে আসা হয়েছে আসামে। কখনো তাঁরা দলে দলে গিয়েছেন বাংলার চটকল, বোম্বের সুতাকল, খনি-সহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলে। কিন্তু, বিগত দু’দশকের বেশি সময় ধরে যে বিপুল পরিমাণ শ্রমজীবী গ্রাম ছেড়ে শহরের পথে যাত্রা করছেন, ফিরে আসছেন, ফের যাত্রা করছেন এমনটি এর আগে কখনও দেখা যায়নি।

 

মধ্যপ্রদেশের যে আদিবাসী শ্রমিকদের কথা নিবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে, এক সময় তাঁরা ছিলেন কৃষি শ্রমিক। নিজের সামান্য জমিতে কিছু কিছু চাষ ছিল। কিন্তু, অনিয়মিত বৃষ্টি, সেচের অভাবের জন্য তাঁরা ছড়িয়ে পড়তেন রাজ্যের বিভিন্ন বড় কৃষকের জোতজমায়। যন্ত্রের আবির্ভাব তাদের ছিটকে দিয়েছে চিরাচরিত পেশা থেকে। পেটের দায়ে হয়ে উঠেছেন নির্মাণ শ্রমিক। তথ্য বলছে, এ দেশে ১৯৯০-২০০০ সালের মধ্যে কৃষকের মর্যাদা হারিয়েছেন ৭৫ লক্ষ চাষি। ২০০১-২০১১-র দশ বছরে আরও ৭৭ লক্ষ। অর্থাৎ, বিশ বছরে দেড় কোটি চাষি যাঁদের বছরে অন্তত ছ’মাস প্রধান জীবিকা ছিল চাষবাস, তাঁরা তাঁদের পেশাগত মর্যাদা হারিয়েছেন (সাইনাথ ২০২০)। বলা ভালো, খেতমজুরে পরিণত হয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হয় কৃষিপণ্যের মূল্য হ্রাস, ঋণ, খরা-বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকের আত্মহত্যা। ১৯৯৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে ৩,৩২,৬০৩ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৭ সালের ২ মে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে একটি মামলার প্রেক্ষিতে জানায়, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ১২ হাজারেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি সামান্য কমে দাঁড়ায় ১০,৩৪৯। দেশের ৬৬ শতাংশ মানুষ গ্রামে বাস করেন। একদিকে কৃষি উপাদানের ব্যয় বৃদ্ধি অন্যদিকে ফসলের ন্যায্যমূল্য না-মেলা — এই সাঁড়াশি আক্রমণে কৃষকরা গভীরভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলত কৃষিক্ষেত্রে এক গভীর সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০১৮ বার বার কৃষকদের ক্ষোভ রাজপথে প্রতিফলিত হতে দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই দিল্লির রাজপথে তিন-তিনবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কৃষকরা। আবার যদি জমির মালিকানার দিকে তাকান যায় দেখতে পাব, মাত্র ৭ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার ৪৭ শতাংশ জমির মালিক। আর ৯৩ শতাংশের অধিকারে জমি নেই বললেই চলে তারা নিছকই ছোট কিংবা প্রান্তিক চাষি (নিলসেন ২০১৮)। আবার অধিকাংশ প্রান্তিক চাষিকেই চাষের পাশাপাশি দিনমজুরিও করতে হয়। আর ৪০ শতাংশ কৃষিশ্রমিক সম্পূর্ণ ভাবে দিনমজুরির উপর নির্ভরশীল। দেশে গড় জমিধারণের পরিমাণ মাত্র ০.৮৭ একর। যা কৃষিক্ষেত্রে নিয়োজিত প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি ভারতীয়কে কোনোভাবেই সম্মানের সঙ্গে বাঁচার হদিশ দিতে পারে না। একে এই মজুরি কম তা আবার মরসুমি, ফলত দেশান্তরী হওয়াটাই ভবিতব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে (নিলসেন ২০১৮)।

 

এই পরিযাণেরও নানা রকমফের রয়েছে। যেমন, (এক) গ্রাম থেকে গ্রামে কৃষিশ্রমিকের কাজে যাওয়া। এই মুহূর্তে পূর্ব বর্ধমানের মূলত আটটি ব্লকে আলু তুলতে গিয়ে আটকে পড়েছেন কয়েক হাজার আদিবাসী ও অন্যান্য দিনমজুর। যাঁরা এসেছেন বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সুন্দরবন এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও। শুধুমাত্র মেমারি-১ ব্লকে আটকে পড়া এই শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১১০০ ( আইচ ২০২০)। (দুই) গ্রাম থেকে মেট্রো শহর। (তিন) শহর থেকে শহর। (চার) শহর থেকে গ্রাম। যেখানে হয়তো কোনও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। এই চতুর্থ অংশটিতে পরিযাণ খুবই স্বল্প। আরেক জাতের মাইগ্রেশন রয়েছে যাকে বলা হচ্ছে ‘ফুটলুজ মাইগ্রেশন’ বা মুক্ত পরিযাণ’। যেমন, একজন প্রান্তিক চাষি কোনও পর্যটন  মরশুমে শহরে গেলেন রিক্সা টানতে, পরের মরসুমে হয়তো তাঁকে দেখা যেতে পারে ইটভাটায়, বর্ষায় ঘরে ফিরলেন চাষের টানে আবার চলে গেলেন ভিন শহরে কোনও নির্মাণ কাজে (সাইনাথ ২০২০)। বান্দোয়ানের শালিডি গ্রামের নির্মল মান্ডি এমনই একজন প্রান্তিক চাষি। প্রতিবছরের মতো এবারও সবজি চাষ করেছেন। যার একাংশ পচছে মাঠে, বিলোচ্ছেন আর নিজের উদরপূর্তি হচ্ছে কিন্তু লকডাউনের জন্য বাজারে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য বছরেই এই চাষের পর বর্ষায় নামালে যান ধান রুইতে, কাটতে, ঝেড়ে গোলায় তুলতে। কাটা-ঝাড়ায় মজুরি বেশি। কাটার দিনগুলিতে ২০০ টাকা রোজ ও ২ কেজি চাল পাওয়া যায়। ধানকাটা হয়ে গেলে নির্মল এবং তাঁর গ্রামের অনেকেই চলে যান গুজরাত থেকে তামিলনাডু যেকোনও রাজ্যে নির্মাণকাজে। ইট-সিমেন্ট বওয়া ঢালাইয়ের মশলা বওয়ার কাজে আট ঘণ্টার রোজ তিনশো টাকা। ওভারটাইম করলে খাওয়াটা ফ্রি। পাঁচ-ছ’মাস কাজ থাকেই। বাড়িতে পাঠানো যায় মাসে অন্তত পাঁচহাজার টাকা (আইচ ২০২০)। এই শ্রমিকদের সংখ্যাটি নির্ধারণ করা খুবই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবেই বাংলার বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিক, গঙ্গা-পদ্মার ভাঙনে সর্বস্বান্ত মানুষ, ফল বাগিচা চাষের জমি গ্রাস করায় জীবিকা হারানো কৃষিজীবী, রাজারহাট-নিউটাউনের মতো নগরায়নের ফলে জমি হারানো চাষি এবং ভেড়ি হারানো মৎস্যজীবী,  জঙ্গলমহলের আদিবাসী মানুষ, সুন্দরবনের ভাঙন, আয়লা আর নোনাজলে জমি হারানো মানুষ, বন্ধ কল-কারখানার শ্রমিক, মালদা-মুর্শিদাবাদের ভূমিহীন, প্রান্তিক মুসলমান চাষি ও খেতমজুর — নির্মাণ শিল্প, রাস্তাঘাট মেরামত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে; বড় বড় বাজারে-বন্দরে মুটে-মজুরের কাজে, ইট ভাটা থেকে খাদানে; নানা ধরনের হকারি, গৃহসহায়িকা, রান্নাবান্নার কাজে, কারখানা থেকে আবাসনের সিকিউরিটি গার্ড, হোটেল-রেস্তোরাঁর ওয়েটার থেকে বেলবয়, বড় বড় অফিস, হোটেল দূরপাল্লার ট্রেনে হাউসকিপিঙের চাকরিতে; কৃষিকাজ, বাগিচার ফল তোলা থেকে অন্যান্য কৃষিকাজে —  লাদাখ থেকে কেরালা সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন সোনার কাজে অতি দক্ষ দক্ষিণবঙ্গের কয়েক হাজার হস্তশিল্পী — গুজরাতের সুরাত থেকে কেরালার কোচি — তাঁদের আলাদা কদর। সুরাতের হিরে পালিশ শিল্পে এক বড় অংশ ওডিশার সমুদ্র তীরবর্তী জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। এছাড়া হিরে ও সিন্থেটিক টেক্সটাইল মিলগুলিতেও সারা দেশের পরিযায়ী শ্রমিকে ঠাসা। অতি দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাওয়া এই শহরের ৭০ শতাংশ শ্রমিকই ভিন রাজ্যের।

 

এই বৃত্তাকার ও আধা-স্থায়ী, পুরুষ প্রধান, রেমিট্যান্স নির্ভর (যা আয় হয়, তার একটি অংশ সংসার চালানোর জন্য দেশে-গাঁয়ে পাঠানো), এই পরিযাণ পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে দীর্ঘ মনুষ্যধারা। প্রেরিত অর্থ যেন গঙ্গার শাখা নদীর মতো সারা বছর ধরে পুষ্ট করে চলেছে হাজার হাজার গ্রাম ও ছোট ছোট শহরকে। (প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে ভারতীয়দের স্থান এক নম্বরে, সংখ্যা ১.৭৫ কোটি, দ্বিতীয় মেক্সিকো ১.১৮ কোটি ও তৃতীয় চীন ১.৭ কোটি।) পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রধান প্রধান হটস্পট পূর্ব উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিম বিহার (দেশের তো বটেই কোনও একটি অঞ্চল ধরলে এই বলয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন)। মুম্বাই-দিল্লির শিল্পাঞ্চল থেকে পঞ্জাবের কৃষিক্ষেত্র ছাড়িয়ে এ অঞ্চলের মানুষ পারস্য উপসাগরের দেশে শুধু যাত্রা করছে না, কেরালাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। এছাড়া হিমালয় অঞ্চল এবং দেশের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের ৬০ শতাংশ (তুম্বে ২০১৯)। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। রাজস্থান, উত্তর কর্নাটক, মহারাষ্ট্রের সাঙ্গলি, ছত্তিশগড়ের দুর্গ। পুনে-বেঙ্গালুরু-হায়দরাবাদ ত্রয়ী মাইগ্রেশন মানচিত্রে এখন উল্লেখযোগ্য।

 

কোভিড-১৯ আমাদের অনেক নতুন কিছুই শিখিয়েছে, নতুন করে শিখিয়েছে আরও অনেক কিছু। শিখিয়েছে কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে হাঁচতে-কাশতে হয়, ধুতে হয় হাত। মহামারি ঘটলে কী করতে হবে কী করা উচিত নয়। দেখিয়েছে অস্পৃশ্যতার নয়া রূপ, সামাজিক গণর্ভৎসনার নগ্ন চিত্র, সাম্প্রদায়িক ঘৃণার নয়া তরিকা। আবার শিখিয়েছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়ে ঐক্যের ছবিটাই-বা কীভাবে তুলে ধরতে হয়। কেমন করে দাঁড়াতে হয় হাজার হাজার বিপন্ন, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে। আর অন্তত পক্ষে দেশের এক বিপুলায়তন শ্রমশক্তিকে, দলিত-আদিবাসী-মুসলমান জনশক্তিকে — যাঁদের শ্রমের কোনও মূল্য দেয়নি, সম্মান দেয়নি কেউ, যাঁদের নিয়ে কোনও মাথাব্যথা ছিল না দেশের মালিকদের — যাঁরা বিনা দেশ অচল, নগর অচল, নাগরিক জীবন অচল — তাঁদের অস্তিত্ব অন্তত স্বীকার করছে ভদ্রজন, কর্পোরেট মিডিয়া, সরকার। এই লকডাউন যত দীর্ঘ হবে হাজারো ক্ষেত্র জুড়ে আমরা তাঁদের অনুপস্থিতি আমাদের জীবনে তত বেশি করে করে টের পেতে থাকব। এও এক নতুন শিক্ষা বটে, ঠেকে শেখা। দেশ চেনা, দেশকে জানা। ঠেকে জানা, বড় মূল্য দিয়ে চেনা।

 

 

সূত্র:

১। https://www.groundxero.in/2020/03/28/corona-causes-food-crisis-among-sabar-tibals-in-purulia/

২। https://www.newindianexpress.com/nation/2020/mar/28/west-bengal-migrant-labourers-who-returned-to-village-quarantine-themselves-on-banyan-tree-branches-2122629.html

৩। পি সাইনাথের পরিযাণ বিষয়ক বক্তৃতা, ৪ এপ্রিল ২০২০

https://mit.zoom.us/rec/share/ovJkNJXo-3JOQtbwsk_hZqolLqHDeaa81iNL_fEJxBrv2hL7f9o2XABoXffUuVBX

৪। A million migrations: Journeys in search of jobs, Chinmoy Tumbde, Mint, January 16, 2019.

৫। Indian democracy has failed to advance redistributive reforms for  marginalised groups, Alf Gunvald Nilsen, EPW.

 

লেখক সাংবাদিক এবং সামাজিক কর্মী।

 

ছবি : লাবণী জঙ্গী ।

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: GOUTAM CHAKRABORTY on April 11, 2020

    Informative article. We need to resolve this crisis but don’t know the process. If possible, apply the measurements to resolve the matter.

Leave a Comment