সল্টলেক: কার নগর? আজও কেন নেই বস্তিবাসীদের নাগরিক অধিকার?


  • May 17, 2019
  • (0 Comments)
  • 2656 Views

ভোট যুদ্ধে বাংলায় কে জিতবে – মোদী না দিদি ? এই নিয়ে যখন গোটা রাজ্য তর্কে-আলোচনায় মশগুল, ‘নগরে’ থেকে, শ্রম দিয়েও যাঁরা কোন সরকারের চোখে এখনো ‘নাগরিক’ হয়ে উঠলেন না, সল্টলেক শহরের সেই বস্তিবাসীদের নাগরিক অধিকার রক্ষার দাবি নিয়ে রায়া দেবনাথ-এর এই লেখা।

 

২০১৭ সাল। সে’বার ফুটবল যুব বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজকের ভূমিকায় ভারত। সল্টলেক স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিলো ৭টি ম্যাচ। শহর জুড়ে সাজোসাজো রব। আন্তর্জাতিক ইভেন্ট। বহু বিদেশি টিম এবং তাঁদের সমর্থক, টিম মেম্বাররা আসবেন। শহর, রাজ্য, দেশের সম্মানের বিষয়। হক কথা। শুরু হলো সৌন্দার্যয়নের সিলসিলা। এবং কোপ পড়লো কাদের উপর? সল্টলেক এবং বাইপাস সংলগ্ন খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপর। ঝাঁ চকচকে সুন্দরের মাঝে বড় বেমানান তাঁরা। ফলে বুলডোজার দিয়ে তাঁদের ‘অসুন্দর’ বাসস্থান-ঝুপড়ি, ছোটখাট অস্থায়ী দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে নেওয়া হোল। অথচ, বাসিন্দারা এ’দেশেরই, প্রত্যেকের কাছেই আছে বৈধ পরিচয়পত্র। তাহলে কেনো তাঁদের এতদিন ওই ভাবে রাস্তার ধারে ঝুপড়িতে থাকতে হচ্ছে? এতদিন কেনো প্রশাসন ব্যবস্থা নেইনি তাঁদের অন্তত মানুষের মত বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়স্থায়ী বাসস্থানের বিষয়ে? যদি তাঁদের বস্তি, বসতি এতই “দৃশ্যকটু” কেনো তবে নিজেদেরই “দৃশ্যসুখের” জন্য একটু উদ্যোগী হওয়া গেলো নামানবিক ভাবে! এর কোনওটার উত্তরই জানা নেই। যাই হোক, অতয়েব বুলডোজার এলো, শুরু হলো ভাঙা, শুরু হলো মানুষ আর তার রুচিরুজির উৎখাত। সরকারি উদ্যোগেই।

 

গুঁড়িয়ে যায় বাসস্থান, কর্মস্থান। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া প্রাথমিকভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খবরটি ছড়াতে থাকে। বস্তিবাসীরা আস্তে আস্তে জোট বেঁধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। শহরের বেশ কিছু সহমানুষ, গণ সংগঠন, ছাত্র সংগঠন তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়। তৈরি হয় বস্তি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। সেই সম্মিলিত প্রতিবাদের জোরেই সম্ভবত যে পরিমাণে উচ্ছেদ এবং ভাঙচুরের পরিকল্পনা ছিলো সরকারের, তা খানিকটা হলেও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

 

এতো গেলো ২০১৭ এর কথা। কিন্তু তার আগে? কেমন, ছিলো অবস্থা? আলাদা ছিলো কি কিছুই? এ’দেশে বস্তি বা ‘স্লাম এরিয়া’ বললে চোখের সামনে কোনও নির্দিষ ছবি ফুটে ওঠা মুশকিল। ধরুন মুম্বইয়ের ধারাবি বস্তি দেখে যদি মেটিয়াবুরুজের বস্তি সম্পর্কে ধারণা করতে চান কেউ, তাহলে ভুল করবেন। চরিত্রগত, গঠনগত এমনকি সংস্কৃতিগত গুচ্ছ গুচ্ছ পার্থক্য ভীষণ ভাবে অমিলটাকেই দৃড়ভাবে সূচিত করবে। মিল বলতে বস্তিতে মূলত শ্রমজীবী, গরীব মানুষরাই বাস করেন, এইটুকুই। কিন্তু, ওই যে এ’দেশে, দরিদ্র, দরিদ্রতর, দরিদ্রতমর ফারাকটাও এতই স্পষ্ট, এক জায়গার বস্তির সঙ্গে আর এক জায়গার বস্তির আর্থসামাজিক ফারাকটাও সহজেই চোখে পড়ে।

 

এই ধরুণ সল্টলেকের ১২ নম্বর ট্যাঙ্ক সংলগ্ন বস্তি। এক ঝলক দেখে ঝুপড়ির সমারোহ মনে হতে পারে। বস্তির ঢোকার মুখটাতে ডাঁই করে পরে আছা গাদা গাদা প্লাস্টিকের বস্তা। যার মধ্যে বন্দী শহরের আলোকিত অংশের বিবিধ উচ্ছিষ্ট। সেই সব বস্তাবন্দী উচ্ছিষ্ট টপকে আপনি যেখানে পড়বেন, সেখানে চোখের সামনে যা কিছু চোখে পড়বে, তা দেখে মধ্যবিত্ত বিলাসী মস্তিষ্কে প্রথম যে প্রশ্নটা উঁকি দেবে “এখানে মানুষ থাকে?”ঘোর কাটলেই বোঝাযাবে, হ্যাঁ, এখানে মানুষরাই থাকেন। চারটে বাঁশের খুঁটি, দর্মা বা কঞ্চি জুড়ে জুড়ে বানানো কোনও মতে ঠেকা দেওয়া দেওয়াল। যার ফাঁকফোঁকর বুঝিয়ে আভ্যন্তরীণ “আব্রু”বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে কুড়িয়ে পাওয়া কালো প্লাস্টিক অথবা তেল চিটে শতছিদ্র বহুপুরাতন কাপড়। ভাঙা কাঠ, নারকেল গাছের পাতা আর ত্রিপলের মত প্ল্যাস্টিকদিয়ে জোড়াতালি মারা কিছু একটা। এই হল বাড়ি। মোটের উপর এই উপাদানগুলোই এ’দিক ও’দিক করে এই রকম বেশ কয়েকটি ‘বাড়ি’গা ঘেঁষাঘেঁষি কিন্তু এলোমেলোভাবে ছড়ানো ছিটানো। এই আমাদের কাছে ঝুপড়ি আর বস্তিবাসীদের কাছের ‘ঘর’এর ভিতরের অবস্থাও তথৈবচ। একফালি জায়গা। কোনওরকমে সে’খানেই শোয়া আর রান্নার ব্যবস্থা। ওই টুকু জায়গায় হয়ত দু’জনের বেশি মানুষের বিশেষ নড়াচড়াও উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে ওই একএকটা ঝুপড়িতে অন্তত জনা চারেক মানুষ বাস করেন। ভাঙা বিছানা, প্রায় ‘না-আসবাব’ দশা, জীর্ণ পুরনো জামা কাপড়, বাসনপত্তর আর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার একটা দু’টো বই। এই নিয়ে সংসার।

 

কেন্দ্র সরকারের স্বচ্ছভারত অভিযান গোটা দেশে সত্যি সত্যি কতটা কার্যকারীভাবে শৌচাগার গড়েছে স্বচ্ছভাবে তা জানা নেই, তবে ১২ নম্বর বস্তির অন্তত ৪০০ জন্য মানুষ থাকলেও একটি শৌচালয়ও যে নেই, তা নিজের চোখে দেখা। নেই বিদ্যুৎ। নেই পানীয় জল। এই তীব্র গরমের সঙ্গে মোকাবিলা করার উপায় গাঁটের পয়সা খরচ করে কেনা ব্যাটারি। যাতে একটা টিমটিমে বালব আর ছোট্ট টেবিলফ্যান (যে’গুলো দেখে খেলনা ফ্যান বলে ভ্রম হওয়াও অস্বাভাবিক নয়) ছাড়া আর কিছুই চলতে পারে না। জল আনতে যেতে হয় লাবণী অবধি। কারণ কাছাকাছি কোনও টাইম কলও নেই। সেখানেও ঝুপড়িবাসী বলে কম বৈষম্যর শিকার হতে হয় না। এই বস্তির মহিলা বাসিন্দাদের অধিকাংশই গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। দৈনিক পাঁচবাড়িতে উদোয়স্ত পরিশ্রম করে মাস গেলে কুড়িয়ে বাড়িয়ে খুব বেশি হলে জোটে হাজার চারেক। পুরুষরা কেউ করেন জোগাড়ের কাজ, কেউ বা ঠিকা শ্রমিক, রিক্সা টানেন কেউ, কেউ কেউ কন্ট্র‍্যাক্টে রাস্তাঘাট, নর্দমা সাফাইয়ের কাজে যুক্ত, কেউ আবার মোট বন। কারোর কারোর ফুটের ধারে অস্থায়ী চা বা ফুচকার দোকান। মোটের উপর সবাই শ্রমজীবী মানুষ। মুর্শিদাবাদ, রাণাঘাট, সুন্দরবন, মালদা, বর্ধমান এমনকি ইউপি বিহার থেকেও মানুষজন পেটেরটানে শহর কলকাতায় এসে জড়ো হয়েছিলেন এই খানে। আজ থেকে ৩৫-৪০ বছর আগেই। পরবর্তী প্রজন্ম, তার পরবর্তী প্রজন্মের চিহ্নহীন সাকিন ওই বস্তিই।

 

২০১৭ সালে যুব বিশ্বকাপের দরুণ উচ্ছেদ নিয়ে খানিক হইচই হওয়ায় বিষয়টি নজরে এলেও, যখন তখন উচ্ছেদ, বাসস্থান ভেঙে গুঁড়িয়ে যেতে দেখা এই বস্তিবাসীদের নতুন নয়। নিজেরাই জানালেন বাম জামানায় মাসে অন্তত তিনদিন উর্দিধারীরা বুলডোজার আর লাঠিদিয়ে গুঁড়িয়ে দিত উলোঝুলো নড়বড়ে ঝুপড়িগুলোকে। বুলডোজার দেখলেই কোচড়ে করে যা কিছু জিনিসপত্তর নেওয়া সম্ভব সেইটুকু, আর ছানাপোনার হাত ধরে দ্রুত পালিয়ে চোখের সামনে বাসার নিমেষে গুঁড়িয়ে যাওয়া দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকতো না। পুলিশ যেই চলে যেত আবার শুরু হ’ত খড়কুটো জুড়ে ঝুপড়ি গড়ে তোলা। সাইক্লিক অর্ডারে চলতেই থাকতো এই ভাঙাগড়ার ‘খেলা’। ওই বস্তি অঞ্চলে নবাগত হাইরাইজ তৈরির পরিকল্পনা হলেতো কথাই নেই! সব উজিয়ে পাশের কোনও একফালি জমিতে কোনওরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু গড়ে তোলার নয়া অধ্যায় শুরু। তৃণমূলের আমলে এই মাসকাবারি ধ্বংসলীলার প্রাবল্য হয়ত কমেছে খানিক। বস্তুত ২০১৭-র পর এখনও অবধি কোনও বুলডোজার গুঁড়িয়ে দিতে আসেনি ঠিকই, তবে সে’খানে জীবনের মানের উন্নতি ঘটেছে এমনটা ভাবার কিন্তু কোনও কারণ নেই। ভোট এলে অথবা কোনও বড় মিছিল মিটিং হলে ক্ষমতাসীন দলের থেকে অলিখিত নির্দেশ আসে। “লোক ভরাবার”। বাসে ভরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনও কারণে অনুপস্থিত থাকলে “শাস্তি”স্বরূপ ভেঙে দেওয়া হয় ঝুপড়ির দোকান। চলে হুমকি। তোলাবাজিও। বাসিন্দারা ছোটেন স্থানীয় বিধায়ক বা কাউন্সিলের কাছে। কিছু সুরাহার প্রত্যাশায়। ন্যূনতম দাবিটুকু নিয়েই। একটু জলের ব্যবস্থা, একটু বিদ্যুৎ, একটা অন্তত কমন শৌচাগার বা ভোটার কার্ডের ঠিকানা বদলের আর্জিটুকু নিয়ে। লাভ হয় না। ওই উড়ো প্রতিশ্রুতিটুকু মেলে মাত্র। কেউ কেউ হয়ত দয়াপরবশ হয়ে “যা তোদের উচ্ছেদ করবো না”বলে করুণা ছুঁড়ে দেন খানিকটা। রাজনৈতিক দলের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে পার্টি বা পুলিশ, কারোর কাজে গিয়েই কোনও উপকার মেলে না। ফলস্বরূপ একই ভাবে বা খানিক বৃদ্ধি পেতে পেতে চলতে থাকে সে’সবও। বহাল তবিয়তেই।

 

১২ নম্বর বস্তির বাসিন্দা সঞ্জয় দাস জানাচ্ছেন, এমনকি বস্তি খানিক পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে একটা ডাস্টবিন বা ভ্যাটের আবেদনও করা হয়েছিলো। মেলেনি সেইটুকুও। ফলত চরম অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। শিশুরা ওই নোংরা আবর্জনার স্তুপ থেকেই খেলার সরন্জাম খুঁজে নেয়, আদুর গায়ে অথবা শতচ্ছিন্ন জামায় খুদে খুদে শরীরগুলোকে ঢেকে। ওই বস্তিরই আর এক বাসিন্দা গোপাল কর রিক্সা চালান। প্যাডেল রিক্সা। যে ‘ফণী’ না আসায় কলকাতার মধ্যবিত্ত ভারী মুষড়ে পড়েছিলেন, তার হালকা বৃষ্টি আর খানিক হাওয়ার জেরেই উড়ে গেছে তাঁর বাড়ির চাল। ভেঙে পড়েছে কঞ্চির দেওয়াল। পরিবারের ২২ দিনের শিশুটি তাই ৩৯ ডিগ্রি তীব্র দাবদাহর মধ্যে তাই একটা ন্যাকাড়ায় মুড়ে মাটিতে শুয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। তরুণী মা কোনওরকমে তাকে শান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ। পরিতক্ত, কারোর ফেলে দেওয়া, কুড়িয়ে পাওয়া ভাঙাচোড়া প্লাস্টিকের টুলে বসে তিনি শুধুই উদাস অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন সন্তানের দিকে। গোপাল দা আর বৃদ্ধ বাবা মা তখন জোর কদমে জোড়াতালি দিয়ে কোনওরকমে ধ্বংসাবশেষ থেকে গড়ে তোলার চেষ্ট করে চলেছেন ঝুপড়িটুকু। যদি রাতের মধ্যে ছাউনিটুকুও গড়ে ফেলা যায়, মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলবে সদ্যজাতর। কাজ করতে করতেই গোপাল দা জানালেন, এখন ব্যাটারি রিক্সার যুগ। প্যাডেল রিক্সার তুলনায় দ্রুতগামী। খানিক আরামদায়কও। তাই সওয়ারিরা আজকাল প্যাডেল রিক্সা চাপেন না। অথচ এক একটা ব্যাটারি রিক্সার দাম ৬৫ হাজার থেকে এক লাখ। কোথায় পাবেন অত টাকা? যদি সব বেচে ধারদেনা করে কেনাও হয় রিক্সা, তার রক্ষণাবেক্ষণের যা খরচ তা সামলাবার ক্ষমতা নেই গোপাল দা, তাঁর মত অনেকেরই। বিদ্যুতই নেই, সেখানে ব্যাটারি চার্জ দিতে যেতে হয় কেষ্টপুর। মাস গেলে খরচ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। কে জোগাবে সেই খরচ?

 

মোটামুটি একই সুর শোনা গেলো সিটি সেন্টার পার্শ্ববর্তী বস্তির সঞ্জয় দা’র গলাতেও। ব্যাটারি চালিত রিক্সা কিনতে কোনওরকম সরকারি অনুদান মেলেনি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টই নেই অধিকাংশের। তাই প্রশ্নও নেই ব্যাঙ্ক লোনের। গোটা সল্টলেকের ৮৪টা রিস্কস্ট্যান্ডের মধ্যে বহু অনুরোধ উপরোধ করে এতদিনে মাত্র ৭ টিতে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার যন্ত্র বসেছে। বাকিদের ভরসা সেই কেষ্টপুরের কোনও দোকান। রিক্সার লাইসেন্স মেলে না। লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টায় হয়রানি মেলে যদিও ভরপুর। অথচ রিক্সা কিনলেই লাইসেন্স আছে কিনা, তা চেক করার লোকের অভাব পড়ে না। রিস্কাচালকরা নিজেদের উদ্যোগে ইউনিয়ন গড়ে তুলেছেন। সেই ইউনিয়ন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বারবার অভাব অভিযোগের কথা জানালেও এখনও অবধি নিট ফল শূন্য। রিক্সা চালকদের কোনও সামাজিক সুরক্ষা নেই। ৮৪ টার মধ্যে একটাও স্ট্যান্ড সংলগ্ন শৌচাগার নেই।

 

সিটি সেন্টারের পাশের বস্তিতেই থাকেন রেখা সর্দার। জ্ঞান হওয়া ইস্তক সল্টলেকের বাসিন্দা। কবে থেকে সল্টলেকে থাকেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন যখন এখানে জঙ্গল ঘেরা ছিলো, যখল সল্টলেকের আনাচকানাচে শেয়াল ডেকে বেরাত, তখন থেকে তিনি এখানেই থাকেন। এখন যে’খানে সিটিসেন্টার আগে থাকতেন সেই খানেই। শপিংমল গড়ে ওঠায় উৎখাত হয়ে আপাতত বেশ কয়েকবছর আছেন রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবনের উল্টোদিকের বস্তিতে। যার মোটের উপর ছবিটা ১২ নম্বর বস্তির থেকে মোটেও আলাদা নয়। দু’টো দোকানে ঠিকে কাজ করেন অনিমা দি। জানালেন, কয়েকবছর আগে কর্পোরেশন থেকে প্রস্তাব এসেছিলো। হাজার ৪৫ টাকা করে দিলে মাথায় একফালি টিনের চাল পাওয়া যাবে। রাজি হননি অনিমাদিরা। কীভাবেই বা হবেন? এই চরম মাগগি গণ্ডার বাজারে মাস গেলে যাঁর উপার্জন তিন হাজার নিজের আর পরিবারের পেট চালিয়ে কোথায় পাবেন তিনি অত টাকা। ঠিকঠাক পুনর্বাসন পেলে ছেড়ে চলে যেতে রাজি এই বস্তির জমি। কিন্তু কেই বা দেয় পুনর্বাসন? ঠিকঠাকের প্রশ্নতো দূরাস্তো! মাঝেমাঝে উড়ো প্রস্তাব আসে। এখানে ওখানে নাকি দেওয়া হবে পূনর্বাসন। আশঙ্কা খেলে যায় বাসিন্দাদের মনে। কোন বাদাবনে হবে নতুন ঠিকানা? কতদূরে? পেট চালানোর সব উপাদানতো এই সল্টলেক আর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেই। সেইটুকুও গেলে যে একেবারে অনাহারে মরতে হবে! কোন শূন্য থেকে কীভাবে শুরু করবেন? হাজার শারীরিক অসুস্থতা, পারিবারিক অশান্তি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেনো, কাজে সামান্য ফাঁকে খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন যে বাবুবিবিরা তারা বা খানিক সহনুভুতিশীল পরিবার, যে কোনও ক্ষেত্রেই, দূরে চলে গেলে তাঁরা তো আর কাজে রাখবেন না, রাখতে পারবেনও না অনেকেই, সময়ের যাঁতাকলে। তখন কী হবে? যদিও, মূল দাবি এই সবও না। একটু পানীয় জলের। জল আনতে ঠেঙিয়ে যেতে হয় অনেকদূর। আশেপাশের দোকান বা বড় আপিসে টাকার বিনিময়ে ট্যাঙ্কে ভরে জল দিতে আসেন যাঁরা, ধার্য্য জল বন্টনের পর খানিক বেঁচে থাকলে, দয়া করে বস্তিগুলোতে মাঝেমধ্যে দিয়ে যান তাঁরা। সে’দিন গুলো খানিক স্বস্তি। বাকি দিনগুলো? পানীয় জলের জন্যও হাহাকার। টেনেটেনে সুদূর থেকে বয়ে আনা। একটু জলের ব্যবস্থা, একটা কল করে দেওয়ার জন্য এই দফতর থেকে সেই দফতরে মাথা ঠুকেও কিস্যু লাভ হয়নি। দাবি একটু বিদ্যুৎ আর শৌচালয়রও। ভয়াবহ দারিদ্র্যর মধ্যেও স্থানীয় ব্লক স্কুলে বাচ্চাদের পাঠাতে কসুর করেননি কিন্তু বস্তির মানুষেরা। কিন্তু কারেন্ট নেই। রাত নামলে অন্ধকারে পড়বে কী করে বাচ্চাগুলো। আবারও প্রশ্ন জানা থাকলেও উত্তর নেই কারোর কাছেই।

 

পাঁচ নম্বর ট্যাঙ্কের পাশের বস্তির অবস্থাও হরেদরে একই। যদিও, নয়া ট্যাঙ্ক হওয়ার দরুণ দ্রুতবেগে সঙ্কুচিত হচ্ছে বস্তির পরিধি। ঝুপড়িগুলো আপাতত আরও বেশি গায়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে, একটার সঙ্গে আরেকটা ঠিক মিশে যাওয়ার আগের মুহূর্তে পড়ে রয়েছে। সরকারি প্রজেক্টের দরুণ টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা হয়েছে বস্তির একাংশ। প্রজেক্ট থেকে এসে, কার যেনো বলে গেছে জলদি এখান থেকে পাততাড়ি গোটাতে। স্থানীয় বিধায়ক উচ্ছেদ না করার মৌখিক প্রতিশ্রুতি হয়ত দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কী আর ভয় যায়? ঘর পোড়া গরুদের আতঙ্কের জন্য সিঁদুরে মেঘই কাফি। তাও বিধায়কের কথায় আস্থা রাখছেন মানোয়ারা বিবিরা। শুধু চান বাসভূমি যেনো আর সঙ্কুচিত না হয়। একটু যেনো মুখ তুলে চায় রাষ্ট্রব্যবস্থা। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু যেনো আর একটু পোক্ত হয়। ঝুপড়ির পাশ দিয়ে ধুলো উড়িয়ে সাঁ সাঁ বেগে চলে যায় চারচাকা। স্থানাভাবে ওই রাস্তাতেই খেলে বেড়ায় অবোধ শৈশবের একগুচ্ছ কচিকাঁচা। রোজ তাদের শুধু বেঁচে থাকার কামনাটুকু আঁকড়েই কাজে বেরোন বাবা মা। এখন আবার সরকারের কল্যাণে টানা দু’মাস ইস্কুল বন্ধ। স্কুলে গেলেই যে’টুকু পড়াশোনা হ’ত, তারও উপায় নেই। নেই দু’মাস মিড ডে মিল। আছে শুধু আরও খানিক অতিরিক্ত অনিশ্চয়তা, চিন্তা, আতঙ্ক।

 

সল্টলেকের, ৫, ৯,১২ ট্যাঙ্ক, ফাল্গুনী, সিটিসেন্টার ইত্যাদি এলাকার বস্তিগুলোর ছবি এবং দাবি কম বেশি একই রকম। সল্টলেক প্ল্যান্ড সিটি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্নের প্রোজেক্ট। বাকি কলকাতার তুলনায় অনেক বেশি ঝাঁ চকচকে। গোছানো রাস্তা। পরিকল্পিত সাজানো পাকাবাড়ির সারি। অথচ সেই সল্টলেকেই গত ৪০ বছর ধরে বাস করা একাংশর মানুষের এমন “না-মানুষী”অবস্থানে হুঁশ নেই কারোরই। কোন সরকারের। কোনও প্রশাসনের। দেশের বৈধ নাগরিক হয়েও তাঁদের নেই কোনও সাংবিধানিক অধিকার। আইনের অধিকার। সামাজিক অধিকার। এঁরাই বাড়ি বাড়ি কাজ করেন, রাস্তাঘাট, নালা নর্দমা সাফ রাখেন, প্রয়োজনীয় পরিবহণের দায় সামলান, দু’কামরার বাড়ি থেকে অট্টালিকা বা বিপুল শপিংমল গড়ে ওঠে এঁদেরই রক্তজল করা শ্রমের বিনিময়ে। মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্তের সমস্ত পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বটুকুও এঁরাই সামলান।

 

এ’খানে প্রাপ্তবয়স্ক সব্বাই কিন্তু ভোটার৷ নিয়ম করে ভোটও দেন প্রত্যেকে। গণতান্ত্রিক দেশের দেশবাসীর কথিত দায়িত্বটুকু পালন করেন নিয়ম করেই। যে’হেতু এত বছরেও মেলেনি সঠিক বাসস্থানের মর্যাদাটুকু তাই কারোর ভোটার কার্ডে অ্যাড্রেস তাদের কোনও এককালের দেশের বাড়ি। কারোর বা খাতায় কলমে ঠিকানা কোনও পরিজনের বাড়ি। তাও তাঁরা ভোট দিতে যান। একদিনের কাজ ফেলে, একদিনের রুটি রুজি শিকেয় তুলে কেউ কান্দী, কেউ রাণাঘাট কেউ সেই বিহারে গিয়ে ভোটটা দিয়ে এসে নিজেদের দায়িত্বটুকু পালন করে আসেন। ভোটের সময় তাঁদের উপস্থিতি সম্পর্কে খানিক সজাগ হয়ে ওঠে রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের হিসাবের জন্যই। মানুষ নয়, রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখে এঁরা যে শুধুই সংখ্যা!

 

অথচ আইন কী বলে? ১৯৫৬ সালের the slum areas (improvement and clearance) Act, 1956 হোক বা ২০১৬ সালের রাষ্ট্র সঙ্ঘের  হ্যাবিটাট থ্রি সনদ (যার অন্যতম সাক্ষরকারী ভারত রাষ্ট্র), উন্নয়ন, যথাযথ পুনর্বাস, ক্ষতিপূরণ ব্যতীরেখে ইচ্ছামত এ’ভাবে বস্তির মানুষকে উচ্ছেদ করা যায় না৷ কোনও তাঁদের জীবন আর জীবিকার অধিকার এ’দেশের সাংবিধানিক অধিকার। দেশের বৈধ নাগরিক হওয়ার জন্য সংবিধান যা যা অধিকার মুকেশ আম্বানিকেও দেয় এই বস্তবাসী মানুষদেরও অধিকার তার থেকে এক ইঞ্চিও কম নয়। বরং এত বছর অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার দরুণ প্রাপ্য সমস্ত কিছু পাওয়ার সব রকম অধিকারটুকুও তাঁদের আছে। এমনকি ২০২২ এর মধ্যে বস্তি এরিয়া উন্নয়নের যে কেন্দ্রীয় প্রকল্প শোনা গিয়েছিলো তার কণামাত্র সুফলের হদিশও এই বস্তিবাসীদের কাছে এসে পৌঁছায়নি।

 

কিন্তু, দুঃখের বিষয় বস্তিবাসীরা জানেনই না তাঁদের এই নাগরিক অধিকারের কথা। ভয়াবহ দারিদ্র্য পরিসর দেয় না, আর রাষ্ট্রযন্ত্র, ক্ষমতাসীন যে’কোনও রাজনৈতিক দল জানতে দিতে চায় না। অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে যদি একদিন বুঝে নিতে চান না পাওয়া অধিকারের হিসাব নিকেশ? তাই চলে প্রশাসনিক, দলীয় দমন পীড়ন। হুমকি। উচ্ছেদের জুজু দেখিয়ে অথবা উচ্ছেদ না করার ‘করুণার’প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে এঁদের সংখ্যার গুটি করে দলীয় ক্ষমতা প্রদর্শন।

 

এত কিছুর পরেও মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আওয়াজ তোলে। জোট বাঁধে। যে’মন জোট বাঁধছেন সল্টলেক এবং আশপাশ এলাকার বস্তিবাসী মানুষজন। নিজেদের উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন “বস্তিবাসী শ্রমজীবী অধিকার রক্ষা কমিটি”। গত ৫ তারিখে তার প্রথম সম্মেলনও হয়ে গেলো যাদবপুরে সূর্য সেন সভাগৃহে। যারা মনে করেন, এই সব গরীব গুর্বো ‘অশিক্ষিত’মানুষগুলো আবার নিজেদের কথা কী বলবেন, তাঁদের সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে আলোচনার মধ্যে দিয়ে নিজেরাই নিজেদের সুসংগঠিত ন্যায্য দাবিগুলোর কথা গুছিয়ে বললেন।

 

দাবি গুলি হলঃ

১) বস্তিবাসীরা এখন যেখানে বসবাস করছেন, সেখানেই তাঁদের আইনি স্বীকৃতিসহ উপযুক্ত স্থায়ী বাসস্থান করে দিতে হবে।

 

২) সকল বস্তি অঞ্চলে পানীয় জলের সঠিক পরিষেবা দিতে হবে। এলাকার মধ্যেই নলকূপ এবং টাইম কলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।

 

৩) প্রত্যেক বস্তিবাসীর ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে।

 

৪) প্রত্যেকটি বস্তি অঞ্চলে শৌচালয়, স্নানাগার, পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যকর পরিবেশ চাই।

 

৫) অযথা পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হকারদের ওপর এবং বস্তির ঘরে ঘরে ঢুকে পুলিশের জুলুমবাজি, বস্তিবাসীর ওপর প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

 

৬) বস্তি অঞ্চলের যে সকল মহিলারা আশেপাশের বিল্ডিং, শপিং মলে গৃহপরিচারিকার কাজ করেন, তাঁদের কাজ অনুযায়ী সঠিক পারিশ্রমিক, নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় ছুটিগুলো দিতে হবে।

 

৭) নির্মাণ শ্রমিক এবং সকল অসংগঠিত শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে। কোনো শ্রমিক কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হলে বা অঙ্গহানি ঘটলে, সংশ্লিষ্ট মালিক বা কর্তৃপক্ষকে সেই শ্রমিকের চিকিৎসার খরচা দিতে হবে, তার পরিবারকে আপৎকালীন প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে হবে। এব্যাপারে প্রশাসন আইনমাফিক উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।

 

৮) ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের বিধাননগর পৌরনিগমের লাইসেন্স দিতে হবে, যাতে পুলিশের হয়রানি বন্ধ হয়, যাতে রিক্সাচালকরা ব্যাটারি চালিত গাড়ি চালাবার আইনি বৈধতা পায়।

 

৯) স্ট্রীট ভেন্ডার আইন ২০১৪ অনুসারে নাগরিক হকারদের নিয়ে টাউন ভেন্ডিং কমিটি তৈরি করতে হবে।

 

১০) পুরসভার সাফাই কর্মীদের ন্যূনতম মজুরি লাগু করতে হবে এবং স্থায়ী কাজ দিতে হবে। সাফাই কর্মের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করতে হবে।

 

১১) শহরে শ্রমদানকারী সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের এবং বস্তিবাসীদের শহরের প্রতি অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্যে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে হবে।

 

সভা করছেন, ইউনিয়নও। স্পষ্টভাবে দাবি জানাচ্ছেন। বাবুদের কানে খবর গেছে। সম্মেলনের পরের দিন কাজ করতে গিয়ে খোঁচা নেমে এসেছে। গৃহপরিচারিকার উদ্দেশ্যে তীব্র শ্লেষাত্মক ব্যঙ্গ ছুঁড়েছেন ‘শিক্ষিত বাবু’। “হ্যাঁরে তোরা নাকি ইউনিয়ন করছিস, লাল ঝাণ্ডা ধরছিস? দাবি নাকি অনেক? যা যা দেখ, কেমন করে দাবি টাবি মেটে তোদের, ঝাণ্ডা শেষে কোথায় যায়, দেখ!” মন্তব্য বাবু মশাইয়ের। এবং এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

বাঙালি মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত তথাকথিত শিক্ষিতদের মধ্যে একটা কথা বহুল পরিচিত। “বস্তি কলচর” – যা কিছু ‘রুচিহীন’, ‘অপরিচ্ছন্ন’, ‘অবমাননাকর’, ‘নিকৃষ্ট’, তা বোঝাতে মাঝে মাঝেই ব্যবহার হয় এই শব্দ বন্ধ। অর্থাৎ যা কিছু খারাপ তার উৎসস্থল যেন বস্তি, সোজা কথায় বস্তির মানুষজন। অথচ এই ‘বস্তি কালচারে’ কিন্তু হিন্দু মুসলিম হ্যানা ত্যানা তুড়িতে উড়িয়ে একে অপরের পাশে বিপদে আপদে নিঃস্বার্থ দাঁড়ানো আছে, শ্রমের বিনিময়ে সৎভাবে বেঁচে থাকার প্রাণপন চেষ্টা আছে। আধপেটা খেয়েও পরবর্তী প্রজন্মকে ন্যূনতম শিক্ষা দেওয়ার ঐকান্তিক চেষ্টা আছে। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে হঠাৎ আসা আগন্তুকের সঙ্গে ভাতটুকু ভাগ করে খাওয়ার অনাবিল মানবিকতাও আছে। আছে নিখাদ আন্তরিকতা। আছে, পিষে যেতে যেতে ঘুরে দাঁড়ানো, রুখে দাঁড়ানোর স্পর্ধাও।

 

বর্তমানে ভারতের মোট জনসংখ্যার অন্তত ১০% বস্তিবাসী। বাংলায় সংখ্যাটা অন্তত এক কোটি। সখ করে কেউ ভিটেমাটি ছেড়েতো আর এই ডিহিউম্যানাইজড অবস্থায় থাকতে আসেন না। কোন আর্থসামাজিক অবস্থায় তাঁরা ছিলেন একদা, তার খানিক ইঙ্গিত সহজেই মেলে যখন এই বস্তিজীবনকে তাঁরা খানিক হলেও বেটার অপশন ভেবে এতদূর চলে আসেন। হ্যাঁ, পূর্বেকার আরও ভয়াবহ খারাপ অবস্থাতাই তাঁদের তূলনামূলক ‘কম’খারাপ অবস্থা বেছে নিতে বাধ্য করে। বাঁচতে হবেতো! এই ভীষণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কোনওরকম ঝুপড়ি গড়ে, জুলুম সহ্য করে থাকাটাও তাঁদের কাছে আগের অবস্থার থেকে ভালো! এ’দেশের মানুষ ঠিক কতটা খারাপ আছেন সেইটে বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হতে হয় না, মানুষরা নিজেরাই জ্যান্ত প্রমাণ হয়ে বেঁচে আছেন।

 

(বস্তিবাসী শ্রমজীবী মানুষগুলোর নাম তাদের নিরাপত্তার খাতিরে পরিবর্তন করা হয়েছে।)

 

রায়া দেবনাথ একজন সামাজিক কর্মী।

 

ছবির সূত্র: শ্রমজীবী-বস্তিবাসী অধিকার রক্ষা কমিটি।

 

Share this
Leave a Comment