ভাঙড়ে শহীদ হলেন পাওয়ার গ্রীড আন্দোলনের কর্মী হাফিজুল মোল্লা


  • May 11, 2018
  • (0 Comments)
  • 3769 Views

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভাঙড়ে আবার চলল গুলি। খুন হলেন আন্দোলনকারী হাফিজুল মোল্লা। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত দুমাস ধরে উত্তপ্ত ছিল পাওয়ার-গ্রীড বিরোধী আন্দোলনের ভাঙর।

শহীদ হাফিজুল মোল্লা

আন্দোলনের নেতৃত্বদায়ী সংগঠন, জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়ছেন যাঁরা, তাঁদের সমর্থনে শুক্রবার মিছিল বেরিয়েছিল মাছিভাঙা থেকে। সাড়ে চারটে নাগাদ নতুনহাট এলাকায় পৌঁছতেই মিছিলে সশস্ত্র বাহিনী হামলা করে মিছিলের উপর। চলে বোমা, গুলি। মারা যান হাফিজুল। গ্রামবাসীদের অভিযোগ তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাহিনী হামলা চালিয়েছে।। আরাবুল স্বাভাবিকভাবেই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে, আরাবুলকে গ্রেফতারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিছুক্ষণ আগে সাড়ে দশটার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে এই গ্রেপ্তারি, স্রেফ লোক দেখানো। উন্মত্ত, ক্ষুব্ধ, সাথী হারা সাথীহারা ভাঙড়ের মানুষের জনরোষ থেকে তাকে বাঁচাতেই গ্রেপ্তারির এই নাটক।

আরাবুলের ভাই খুদেও এই হামলায় অভিযুক্ত। অভিযুক্ত আরও অন্তত ১০ জন। প্রত্যেককে গ্রেফতারের দাবিতে ভাঙড় ২ ব্লকের নতুনহাটে এখন বিক্ষোভ চলছে। গুলিতে যাঁর মৃত্যু হয়েছে, সেই হাফিজুল মোল্লার দেহ রাস্তায় রেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। মশাল হাতে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী হাড়োয়া মেন রোড অবরোধ করে রেখেছেন বলে জানা গিয়েছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রাম-সভার ছবি

পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের চাপে বেশ কিছু দিন ধরে ভাঙড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যথেষ্ট কোণঠাসা তৃণমূল তথা আরাবুল ইসলাম। মাছিভাঙা, খামারআইট-সহ বেশ কিছু গ্রামে মাসের পর মাস ধরে ঢুকতেই পারছে না শাসক দল। জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়েছে গ্রামগুলি।

তৃণমূলের সঙ্গে কমিটির সংঘাত বহু দিন ধরেই চলছে। গত বছরখানেকে একাধিক বার হামলা করা হয়েছে জমি জীবিকা বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্যদের ওপর।   তবে অনেকগুলি গ্রামেই হারানো জনভিত্তি এখনও পুনরুদ্ধার করতে পারেনি শাসক দল। আজকের হামলা পঞ্চায়েত ভোটকে ‘বিরোধীশূন্য’ করারই একটি প্রচেষ্টা মাত্র।

পঞ্চায়েত নির্বাচনেও তৃণমূলকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছোড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিটি। তাই কমিটির ব্যানারে প্রার্থী দেওয়া হয় বেশ কিছু গ্রামে। মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি প্রথমদিকে কমিটির কোন প্রার্থীদের। হাইকোর্টের রায়ে, তাঁরা মনোনয়ন জমা দিলেও গত কয়েক দিন ধরেই চলছিল প্রার্থীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হামলা। অপহরণ করা হয় একজন প্রার্থীর সন্তানদের। প্রার্থীদের  সমর্থনে শুক্রবার বিকেলে মিছিল বার করেছিল জমি কমিটি। মিছিলটি নতুনহাট এলাকায় পৌঁছতেই সশস্ত্র হামলা হয়। বোমা পড়তে থাকে মিছিল লক্ষ্য করে। চলে গুলিও। এর আগে, ২০১৭ জানুয়ারি মাসে ভাঙ্গড় আন্দোলন চলাকালীন দুষ্কৃতী-পুলিশের গুলিতে খুন হন মফিজুল ইসলাম ও আলমগীর নামের দুই গ্রামবাসী।

আগামীকাল, ১২ই মে, আরাবুল বাহিনীর হাতে হাফিজুল মোল্লার খুনের বিরুদ্ধে, ভাঙ্গড় আন্দোলন সংহতি কমিটি মৌলালী থেকে ধর্মতলা অবধি প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে।

Share this
Leave a Comment