নৃশংসতার ছবি সম্প্রচার ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি: একটি মতামত 


  • August 29, 2025
  • (0 Comments)
  • 889 Views

নৃশংতার জয়োল্লাসের বাইরে গিয়ে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নন্দনতত্ত্ব নির্মাণ করতে না পারলে, কোনোদিনই ওদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ জমাট বাঁধবে না।

 

নন্দিনী ধর

 

গত ৩১শে জুলাই, ২০২৫ সালে, একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক গণমাধ্যমে। পশ্চিম বর্ধমান তথা দুর্গাপুর অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী গো-রক্ষকদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন দুই মুসলমান গরু ব্যবসায়ী বৃদ্ধ ও তাঁদের সহযোগীরা। এই ধরনের গো-রক্ষক নজরদারি বা ভিজিল্যান্টে দল উত্তর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপৃত। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী রাজনীতির একটি অঙ্গাঙ্গী অংশ বলেই এই সব গো-রক্ষক দলগুলিকে চিহ্নিত করেন দেশের মানুষ।

 

কিন্তু, আমাদের খোদ বাংলায় এই গো-রক্ষক বাহিনীর এহেন দাপাদাপি দেখে আমরা অনেকেই একই সঙ্গে অবাক ও আশংকিত হই। যদিও পরবর্তী সময়ে সুমন কল্যাণ মৌলিক, মানিক সমাদ্দার, সুনীল মন্ডল ও নাড়ু নন্দী কর্তৃক তথ্যানুসন্ধান রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে বাংলায়, বিশেষত দুর্গাপুর অঞ্চলে, এই ধরনের ঘটনা প্রথম নয়। ঘটনার অব্যবহিত পরেই দুজনকে গ্রেফতার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। যদিও নাটের গুরু পারিজাত গাঙ্গুলী, যিনি কিনা ওই অঞ্চলে বিজেপির উঠতি যুব নেতা, তিনি বেশ কিছুদিন ফেরার থাকার পর, গত কয়েক দিন আগে, ১২ই আগস্ট, ধানবাদ থেকে গ্রেফতার হন।

 

এই গোটা ঘটনাটিতে আলোকচিত্র ও চলমান ছবি, অর্থাৎ, ভিডিও, একটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের মতো বহু সাধারণ মানুষের কাছে, যারা ঘটনাটির কথা জেনেছি ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক গণমাধ্যমের পাতা থেকে, তারা অনেকেই চমৎকৃত হয়েছিলাম ঘটনাটির আলোকচিত্রগুলি দেখে। একদিকে এই দুই মুসলামান বৃদ্ধ ও তাঁদের সহযোগীদের – যাঁদের নাম শেখ লখাই, শেখ সাজমল খান ও শেখ জাহিরুল – হাত-পা বাঁধা আতংকিত মুখ, অন্যদিকে পারিজাত ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোদের মুখের উল্লাসের অভিব্যক্তি, আমাদের অনেকের সামনেই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদী পৌরুষের ক্রূ্রতম নগ্ন রূপটিকে হাজির করে অতীব স্পষ্টভাবে। একইভাবে, যখন আমরা দাবি তুলেছি এহেন আক্রমণকারীদের গ্রেফতারির, আমরা ছবিগুলিতে তাঁদের মুখগুলিকে লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে ভাগ করে নিয়েছি ফেসবুকের পাতায় বন্ধু-পরিচিত-সতীর্থদের সঙ্গে। সন্দেহ নেই, এঁদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রেও, এই ছবিগুলি পুলিশের সহায় হয়েছে, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 

প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভালো মূলধারার মিডিয়া (পড়ুন: গোদি মিডিয়া) এই বিষয়টিতে সামগ্রিকভাবে নীরব। কাজেই, গোটা ঘটনাটির সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক গণমাধ্যমের লেখালেখি একটি অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা পালন করেছে। বাকি সবার মতন, আমিও এই নিগ্রহের ছবিগুলি দেখেছি এবং বিবশ বোধ করেছি। চোখ রাখতে পারিনি বেশিক্ষণ ছবিগুলির দিকে, আবার নিজেকে বাধ্য করেছি চোখ রাখতে এই নিগ্রহের আলোকচিত্রিক রূপায়ণের দিকে। এবং, নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছি, এই ছবি তুললো কারা?

 

নিশ্চিতভাবে, যাঁরা তুলেছেন, তাঁরা এই গোটা ঘটনাটিকে একটি অপরাধ – বিশেষত ঘৃণামূলক অপরাধ বা হেট ক্রাইম – বলে মনে করেছেন, এমনটি নয়। যদিও, আমরা যখন আমাদের নিজেদের সামাজিক গণমাধ্যম থেকে ছবিগুলিকে জনসমক্ষে এনেছি, আমরা এই ভাগাভাগি (বা, সামাজিক গণমাধ্যমের ভাষায় “শেয়ার”) করেছি, অনেকটাই সেই নিন্দা বা বিরোধিতার মনোবৃত্তি থেকে। আমরা ভেবেছি, এই ছবিগুলি জনসমক্ষে আনার মধ্য দিয়ে, আমরা সমাজের কাছে, নিজ নিজ পরিচিতজনদের কাছে তুলে ধরছি অপর পক্ষের নৃশংসতার কথা।

 

এবং, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই যে, ছবিগুলি দেখে সত্যিই আমরা শিউরে উঠেছি। হয়তো বা, স্বল্পসংখ্যক মানুষের কাছে আমরা এই ধরনের যে ঘৃণাজনিত অপরাধ ও তার সঙ্গে একটি বৃহত্তর ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের সম্পর্ক সম্বন্ধে কয়েকটি কথা নিয়ে যেতেও সক্ষম হয়েছি।

 

কিন্তু, তারপরেও, রয়ে গেছে একটি বৃহৎ দ্বন্দ্ব। কারণ, এই যে ছবিগুলি, যেগুলো অধিকাংশই তোলা হয় যারা নৃশংসতাটি  ঘটিয়েছে তাদের দ্বারা, অথবা তাদের সহায়কদের দ্বারা, সেখানে মূল উদ্দেশ্য নৃশংসতাকে তুলে ধরে সাধারণ মানুষের ভেতরে শুভবুদ্ধি জাগানো নয়, কোনো প্রতিবাদী চেতনা জাগানো  নয়। বরং, সেখানে উদ্দেশ্য, এই ছবিগুলিকে আরও বেশি করে জনসমক্ষে আনার ভেতর দিয়ে, একধরনের বিজয়ের উল্লাস ঘোষণা। যে বিজয়ের উল্লাস প্রকৃতপক্ষে এই দেশের মাটিতে আরও একটু শক্তপোক্ত করে ফ্যাসিবাদের ভিত্তিকে। গড়ে তুলতে চায় ফ্যাসিবাদের নিজস্ব রাজনীতিকে। এবং, সেই প্রক্রিয়া মাথায় রেখে, জনমানসে গড়ে তোলে সমর্থন। এবং, এক্ষেত্রে, বিশেষভাবে মনে রাখা প্রয়োজন যে এই যে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া, তা আসলে একভাবে গড়ে ওঠে আমাদের সমাজের বৃহদাংশের মানুষের ভেতরে যে মুসলিমবিরোধী সাম্প্রদায়িকতাবোধ আছে, তাকে আশ্রয় করেই।

 

খুব স্পষ্ট করে বললে, আমাদের বাম-উদারনৈতিক বিশ্বাসবোধে যতই আঘাত লাগুক না কেন, আজকের ভারতবর্ষ তথা বাংলার সমাজে এই জাতীয় ছবি বা ঘটনা সমাজের বৃহদাংশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষকে আর আশংকিত করে না। বরং, তাঁরা বোধ করেন একধরনের জাত্যাভিমান, তাঁরা বোধ করেন একধরনের গৌরববোধ। সেই গৌরববোধ ও সেই জাত্যাভিমানের ওপর ভরসা করেই একভাবে যেমন এইধরনের ছবির বিপুল ব্যবহার সংঘঠিত হয়, তেমনি অন্যদিকে এই ধরনের ছবি আবার নতুন করে ধোঁয়া দেয় এই গৌরববোধের গোড়ায়। তাকে নতুন করে উজ্জীবিত করে তোলে। এবং, এই যে যুগ্ম কার্যকলাপ, এর ভেতর দিয়েই ক্রমাগত প্রস্তুত ও শক্তপোক্ত হয় সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের ভিত্তি।

 

প্রকৃতপক্ষে, এই ছবিগুলি এক বিশেষ গোত্রীয়, এক বিশেষ ধারার। যে ধারাটিকে সমাজতাত্ত্বিক ও শিল্প-সমালোচকরা “নৃশংসতামূলক আলোকচিত্র” বা atrocity photography বলে বর্ণনা করেছেন। নৃশংসতামূলক আলোকচিত্র  সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শগতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেই। ঔপনিবেশিক-সাম্রাজ্যবাদী শাসনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্র-কর্তৃক এই ধরনের ছবির ব্যবহার বাড়ে। বাড়ে যে কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকালেও। লিবিয়ার শাসক গদ্দাফি যেমন আরও এক কদম এগিয়ে গিয়ে বৈকালিক দূরদর্শনে সরাসরি সম্প্রচার করতেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে জেল-হেফাজতে “থার্ড ডিগ্রি” অত্যাচারের দৃশ্য। বিখ্যাত ব্রিটিশ-লিবিয়ান ঔপন্যাসিক হিশাম মাতার-এর উপন্যাস “ইন দা কান্ট্রি অফ মেন”– এ আছে তার একটি হাড় হিম করা রূপায়ণ। এছাড়াও, ২০০১-পরবর্তী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তলপেট গুয়ান্তানামো বে – র বন্দীশালার সংগ্রহশালা খুঁজলে পাওয়া যাবে এমন হাজার হাজার অনাম্নী মুসলিম যুবকদের ছবি, ভিডিও। পৃথিবীর কাছে, নিজেদের পরিবারের কাছে, যাঁরা হয়তো বা “নিরুদ্দেশ।”

 

অন্যদিকে, ঠিক সরাসরিভাবে, রাষ্ট্রীয় মদতে না হলেও, পৃথিবীতে বহু সময়েই বর্ণবাদী বা জাতিগত অসাম্য ও বিদ্বেষে জর্জরিত সমাজে আধিপত্যকারী জনসমাজ এই ধরনের ছবি-সংস্কৃতি গড়ে তোলে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বোধহয় মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে কৃষাঙ্গদের গণধোলাইয়ের ভেতর নিহিত যে চিত্র ইতিহাস। যেখানে গণধোলাইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতো একটি প্রলম্বিত অনুষ্ঠানও। গণধোলাই, তারপর মৃত বা অর্ধমৃত শরীরটিকে গাছে ঝোলানো, কখনো কখনো সেই ঝুলন্ত অবস্থাতেই শরীরটিতে আগুন ধরানো, এবং সর্বোপরি ছবি তোলা ও সেই ছবি পোস্টকার্ড হিসেবে বাজারে বিক্রি করা। গোটা শ্বেতাঙ্গ পরিবার – বহুক্ষেত্রেই তারা খেটে খাওয়া ও দরিদ্র শ্রেণীর – পিকনিকের সরঞ্জাম ও শিশুসন্তানসহ কৃষ্ণাঙ্গ গণধোলাই দেখতে এসেছে, এই উদাহরণ ভুরি ভুরি। তার প্রমাণও রয়ে গেছে সেইসব পোস্টকার্ডে।  বলা বাহুল্য, এই যে প্রলম্বিত ও জটিল প্রক্রিয়া, তা রাষ্ট্রীয় মদত ছাড়া সম্ভব হয় না। “গণধোলাই” বা “lynching” শব্দটি তাই আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী লড়াইয়ে রয়ে গেছে এক গভীর রাজনৈতিক প্রতীকী অর্থ নিয়ে। সেই প্রসঙ্গ অতীব জটিল। এই প্রতিবেদনের স্বল্প স্থানে সেই বিষয়ে বিশদে লেখা সম্ভব নয়।

 

কিন্তু, যেটা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য করার মতন, তা হলো, বর্তমান ভারতবর্ষের যে গণধোলাই সংস্কৃতি, তার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণধোলাই সংস্কৃতির রয়েছে একটি বড়ো মিল। একদিকে যেমন সেখানে প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় উপস্থিতি নেই, তেমনি রয়েছে সক্রিয় পরোক্ষ রাষ্ট্রীয় মদত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই গণধোলাই সংস্কৃতির তীর যেখানে ধাবিত হয়েছিল মূলগতভাবে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর দিকে, যদিও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও শিকার হয়েছেন এই গণধোলাই সংস্কৃতির, ভারতবর্ষের এই গণধোলাই সংস্কৃতির আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু মূলত মুসলমানরা। যদিও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় একইভাবে আহত-নিহত ও নিপীড়িত হয়েছেন বিভিন্ন দলিত ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ।

 

একভাবে দেখতে গেলে, গণধোলাই সংস্কৃতিজাত নৃশংসতার কোনো ব্যাখ্যা কোনো সুস্থ যুক্তিবোধ দিয়ে পাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে এই অসুস্থতাই ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল উপাদান। এই অসুস্থতা একইসঙ্গে বাছাই করা জনগোষ্ঠীকে করে তোলে যেন মানবেতর। সেই মানবেতরতাকে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠা করতেই গণধোলাই সংস্কৃতি। যাকে হয়তো বা এক কথায় বলা যায় একধরনের সাডিজম। একদিকে এই সাডিজম যদি সংখ্যালঘুকে মানবেতর বানিয়ে নেয়, নিগ্রহকারী সংখ্যাগুরুকেও সে ঠিক ছেড়ে কথা বলে না। নিগ্রহে অংশগ্রহণ, তাকেও করে তোলে মানবেতর। এবং, এই বি-মানবীকরণের রাজনীতিই ফ্যাসিবাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম মূল স্তম্ভ।

 

যার একটি উদাহরণ আমরা দেখি দুর্গাপুরের ঘটনায়। এই বি-মানবীকরণই আমরা দেখতে পাই নিগ্রহ পরবর্তীতে বিজেপি যুব নেতা পারিজাত গাঙ্গুলীর টিভির ক্যামেরার সামনে আস্ফালনে। বছর কয়েক আগে “আমরা এক সচেতন প্রয়াস” সংগঠনটি নাগপুরের আর.এস.এস-এর সদর দপ্তরের ভেতর যাওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি লেখা তৈরী করেছিলেন।  সেই লেখায় তাঁরা দেখিয়েছিলেন, নাগপুরের সেই সদর দপ্তরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে হেগদেওয়ার-এর দল জুটিয়ে এক মুসলমান বৃদ্ধের নিগ্রহের ছবি। প্রসঙ্গ সেই একই – গো-রক্ষা। তাই, কোথাও যেন পারিজাত গাঙ্গুলির টিভির সামনে আস্ফালন, দুর্গাপুরের মুসলমান বৃদ্ধদের নিগ্রহের ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে পুনঃপুনঃ প্রচার, হয়ে দাঁড়ায় সেই একই ছবির পুনর্নির্মাণ, পুনরাভিনয়। যাতে আরও বেশি শক্তপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায় দেশের মাটিতে আর.এস.এস-এর রাজনৈতিক মতাদর্শ। এই ছবিগুলি সেখানে কাজ করে একধরনের অনুঘটকের।

 

কাজেই, ফিরে যাই ঠিক যেখান থেকে শুরু করেছিলাম। আমরা যারা এই রাজনীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে এই ছবিগুলি সম্প্রচার করেছি নিজ নিজ সামাজিক গণমাধ্যমের দেওয়ালে, তারা কি কোনও এক ভাবে নিজেদের অজান্তেই অংশ হয়ে পড়ি সঙ্ঘপরিবারের রাজনীতির? আমরা কি আমাদের বিরোধিতার রাজনীতি গড়ে তুলি ওদেরই সংস্কৃতির নিরিখে, ওদেরই রাজনৈতিক নন্দনতত্ত্বের ভাগীদার হয়ে? যদিও, প্রক্রিয়াটি ঘটে থাকে অনেকটাই অনিচ্ছাবশত, অনেকটাই অবচেতনে।

 

ব্যক্তিগতভাবে, আমার উত্তর, হ্যাঁ।

 

একইসঙ্গে এও বলবো, এই নৃশংতার জয়োল্লাসের বাইরে গিয়ে ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নন্দনতত্ত্ব নির্মাণ করতে না পারলে, কোনোদিনই ওদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ জমাট বাঁধবে না। পরিশেষে বলি, আমরা কেউই চাই না, আমাদের সার্বিক অব-মূল্যায়নের ছবি, অপমানিত হওয়ার ছবি ব্যাপকভাবে সম্প্রচারিত হোক। চাই না ওভাবেই সামাজিক স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে, পরিচিত হতে। আমাদের পরিবার, পরিজন, ভালোবাসার মানুষজনও তা চান না। কাজেই, নিশ্চিতভাবে বলা যায়, শেখ লখাই নামে ওই বৃদ্ধ বা শেখ জাহিরুল বা সাজমল খান ও তাঁদের পরিবারবর্গও তা চাননি। কাজেই, আমরা যারা এই ঘটনার বিরোধিতা করেছি, গলা ফাটিয়ে দাবি করেছি পারিজাত গাঙ্গুলীর গ্রেফতারি, তাদের ওপরেও দায়িত্ব বর্তায় জনপরিসরে নিগৃহীত মানুষের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্মানবোধ রক্ষা করা।

 

আজ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের চাহিদা সেটাও।

 

Share this
Leave a Comment