এমনিতেই ইংরেজি মাধ্যম সর্বভারতীয় বোর্ডগুলোর চাপে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থী কমছে, তার সঙ্গে এই ঘটনা আরো বেশি করে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথ উন্মুক্ত করবে।
সুমন কল্যাণ মৌলিক
সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা। যাদের উপর দেশগঠনের ভার, তারা আজ রাস্তায়, পুলিশের নির্মম লাঠির শিকার। এই বিপর্যয় শুধু একটা বিশাল সংখ্যক শিক্ষকদের চাকরি হারানোর বিষয় নয়, এই ঘটনা ইতিমধ্যে ধুঁকতে থাকা সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক। শুধু যারা চাকরি হারালো তারাই নয়, আমরা অর্থাৎ যাদের চাকরি যায় নি, তারাও এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজের চোখে গণশত্রুতে রূপান্তরিত। এই রায় যে সম্ভাব্য সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে তা পরিমাপ করা এই মুহূর্তে দুঃসাধ্য। এই রায় তাই এক বহুমাত্রিক মূল্যায়ণের দাবি রাখে।
আজকে ‘অযোগ্য’ (ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় হয়েছে tainted শব্দটি) শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ্য শিক্ষকদের বিসর্জন কোন আকস্মিক ঘটনা নয়, এটি এক ধারাবাহিক আইনি প্রক্রিয়া যার ফলে বলি হলেন অন্তত ১৯ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী যারা নিজেদের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। প্রথমে স্পষ্ট ভাষায় আমাদের বলা উচিত যোগ্য শিক্ষকদের এই পরিণতির জন্য প্রধান দায়ী নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন, তৃনমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার এবং দালাল চক্র। এটি কোন অজান্তে করা ভুল নয় বরং একটি সংগঠিত দুর্নীতি এবং এই প্রক্রিয়ায় কয়েকশ কোটি টাকা অবৈধ ভাবে লেনদেন হয়েছে। পরীক্ষার নোটিশ প্রকাশ, পরীক্ষার প্রক্রিয়া এবং চূড়ান্ত নিয়োগের নানা স্তরে দুর্নীতি করে একটা অংশের নিয়োগ হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে এই দুর্নীতির পরিমাণ শিক্ষকদের চেয়ে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি (শিক্ষাকর্মী) প্যানেলে তুলনায় বেশি। কোন বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়, এই দুর্নীতির কথা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। পরিস্থিতির চাপে তারা সংগঠিত হন, আরটিআই করেন এবং পরে মামলা করেন। এক্ষেত্রে অতি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য হল বাগ কমিটির রিপোর্ট যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন অসঙ্গতি ও সাক্ষ্য প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থিত করেন। আমরা যদি শুধু স্কুল সার্ভিস কমিশনের হলফনামার দিকে চোখ ফেরাই তাহলে দেখতে পাব যে দুর্নীতির রূপগুলো নানা রকম যেমন মেধা তালিকায় কারচুপি (র্যাঙ্ক জাম্প), সাদা খাতা জমা দেওয়া অর্থাৎ ওএমআর শিটে কারচুপি করে নাম্বার বাড়িয়ে নেওয়া, কাউন্সেলিং এর তালিকা প্রকাশ না করা (চতুর্থ দফায়), গ্রুপ ডি এর প্রথমে একটি প্যানেল প্রকাশ করে তা বাতিল করে পুনরায় প্রকাশ, এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়া লোককে চাকরি দেওয়া। এই অসঙ্গতিগুলো ইতিপূর্বেই বিশেষ ভাবে আলোচিত বিশেষ করে একদা বাম পরে তৃনমূল সরকারের মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর কন্যার চাকরি পাওয়া, আদালতের নির্দেশে চাকরি চলে যাওয়া, তার বদলে নতুন একজনের চাকরি পাওয়া এবং পরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং পুনরায় আরেকজনের চাকরি পাওয়ার পর্বটি প্রায় রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজের মত মিডিয়ায় আলোচিত। এখানে দেখবার মত বিষয় হল হাইকোর্টের রায়, ডিভিশন বেঞ্চের রায় এবং সর্বোপরি সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের মধ্যে কমন এলিমেন্ট হল অযোগ্য প্রার্থীদের সংখ্যাটা মোটের উপর ৭,৫০০। এমনকি সিবিআই ও এই সংখ্যাটার কথাই বলেছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বঞ্চিত শিক্ষকরা যারা এই মামলাটা লড়েছেন তারাও কিন্তু কখনো পুরো প্যানেল বাতিলের দাবি তোলেন নি। বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের প্রথম থেকে দাবি ছিল অযোগ্য প্রার্থীদের অপসারিত করে বঞ্চিত যোগ্যদের নিয়োগ। বহু টাকা পয়সা খরচা করে, ভালো উকিলদের দিয়ে মামলা লড়ানোর উদ্দেশ্য সঠিক ভাবে ছিল যোগ্যদের বহাল কারণ তারাও জানতেন পুরো প্যানেল বাতিল হলে তাদের দাবি পূরণ অধরাই থাকবে।
এই কথাগুলো এত বিস্তারে বলার কারণ এটা প্রমাণ করা যে যোগ্য ও অযোগ্য তালিকা পৃথক করা ও যোগ্য শিক্ষকদের রক্ষা করার যথেষ্ট সময় এসএসসি ও রাজ্য সরকার পেয়েছিল কিন্তু তারা তাদের কর্তব্য পালনে চূড়ান্ত অযোগ্যতা ও গাফিলতি দেখিয়েছে। একথা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে অযোগ্য বা ঘুরপথে চাকরি পাওয়াদের রক্ষা করার দায় তাদের কর্তব্য পালনে বাঁধা দিয়েছে। এখানেই সামনে আসে তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে সিবিআই এর ভূমিকা। এ রাজ্যে বিভিন্ন তদন্তে আজকাল হাইকোর্ট মুড়ি-মুড়কির মত সিবিআই দেওয়া হয়। সেদিন হয়ত দূরে নয় যখন লোকের গরু হারালেও সিবিআই দেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সির প্রতি নির্বোধ মুগ্ধতা দূরে সরিয়ে রেখে আমরা যদি সঠিক মূল্যায়ণ করি তাহলে দেখতে পাব সিবিআই বা ইডির মত তদন্ত সংস্থাগুলো নেহাৎই অযোগ্য প্রতিষ্ঠান যাদের সাফল্যের পরিমাণ গড়ে ৫ শতাংশেরও কম। এই অযোগ্যতার কারণ তাদের দলদাস মনোভাব ও কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ। তাই বৃহত্তর চক্রান্তের জাল ছিন্ন করার আদালত প্রদত্ত দায়িত্ব তো তারা পালন করেই নি বরং রাজনৈতিক খেলার অংশীদার হয়েছে। এইজন্য সেই সময়কার মন্ত্রীসভার সদস্য (মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে এ প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত রয়েছে) ও বর্তমানে বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে কখনোই তদন্তের আওতায় আনা হয় নি। বিশেষ করে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজের অস্তিত্ব সন্ধানে সিবিআই কি আদৌ সচেষ্ট হয়েছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন থেকেই যায়। এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক রায় ঘোষণার পর একদা বিচারপতি (ভক্তের ভগবান!) ও বর্তমানে গেরুয়া সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলির ডিগবাজি অনেক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। একদিকে শুভেন্দু অধিকারী বলছেন ২৬’ এর নির্বাচনে তারা জিতলে যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা প্রকাশ করবেন এবং অভিজিৎ বাবু রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে এসএসসির কাছে যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশের ‘সবিনয় আবেদন’ জানাচ্ছেন। এই অলীক কুনাট্য দেখার পর আমরা তো প্রশ্ন করতেই পারি যে কেন শুভেন্দু ও অভিজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে না সিবিআই? রায় ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর এক জন প্রাক্তন বিচারপতির এই ধরণের নাটকীয় আচরণ অবশ্যই সিবিআই তদন্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। এক কথায় বলা যায় রাজ্য সরকারের মত সিবিআইও যোগ্য প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।
এবার আসা যাক সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রসঙ্গে যা সব অর্থেই হতাশাজনক এবং বিতর্কের উর্ধ্বে নয়।বিচারের প্রথম কথা হল প্রয়োজনে পঞ্চাশজন অপরাধী পার হয়ে যাবেন কিন্তু একজন নিরপরাধকেও শাস্তি দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে আইনেও এটা বলা আছে যে অপরাধ সম্পর্কে চূড়ান্ত ভাবে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় কিন্তু বিচারের সাধারণ ভাবনাকে অনুসরণ করে নি। আদালতের রায়টা থেকে একটা কথা পরিষ্কার যে বিচারকরা কম-বেশি একটা যোগ্য-অযোগ্যর তালিকাকে মান্যতা দিয়েছেন। রায়ে নিশ্চিতভাবে ‘অযোগ্য’ দের কথা আছে যাদের শুধু সুদ সহ টাকা ফেরত দিলেই চলবে না, তারা ভবিষ্যতে এসএসসি আয়োজিত কোন পরীক্ষায় বসতেও পারবেন না। এই শাস্তি কিন্তু এক ধরণের পৃথকীকরণ (segregation) যা আদতে কারা প্রকৃত যোগ্য, তাদের দিকে দিক নির্দেশ করে। মজার বিষয় হল এর আগের বার এই সংখ্যক অযোগ্যদের চাকরি কিছুদিনের জন্য স্থগিত হয়েছিল। অনেকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের যথার্থতা প্রমাণের জন্য ‘১৭ দফা’ দুর্নীতির কথা উল্লেখ করছেন। কিন্তু সেই তালিকার আশি শতাংশ পদ্ধতিগত ত্রুটি বা দুর্নীতি যার দায় কখনো যোগ্য শিক্ষকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। অযোগ্যদের চাকরি দেবার জন্য সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি হয়েছিল — তথাকথিত ১৭ দফার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশটি আজ খোদ সর্বোচ্চ আদালতই বাতিল করে দিয়েছে। এই অবস্থায় যাদের অযোগ্যতার নির্দিষ্ট প্রমাণ আছে (সংখ্যাটা মোটের উপর ৭,৫০০) তাদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের রক্ষা করা যেতে পারত। তাই সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের সঙ্গে সহমত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কাঁকড় বাছতে গিয়ে সমস্ত চাল ফেলে দেওয়াটা কখনো আদর্শ বিচার হতে পারে না।
একটি ক্ষেত্রে অবশ্যই আদালত রক্ষাকবচ দিয়েছে। সেটি হল যোগ্য শিক্ষকদের মধ্যে যারা আগে কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন, তাদের তিন মাসের মধ্যে পুরানো জায়গার কাজে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জায়গা না থাকলে প্রয়োজনে পদ তৈরি করতে হবে। এই রক্ষাকবচকে সমর্থন করেই আমার প্রশ্ন, একই রক্ষাকবচ কেন সমস্ত যোগ্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে না? আদালতের রায়ের পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নেতাজি ইনডোরে চাকরি হারাদের সঙ্গে সভা তাই কিছু গোল গোল, অস্বচ্ছ কথার সমষ্টি ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং অযোগ্যদের জন্য দায় নেওয়ার কথা বলাতে বিষয়টা আরো ঘোরালো হয়েছে। ঐ দিনের সভা যখন চলছে তখন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি আবেদনপত্র সর্বোচ্চ আদালতের কাছে পেশ করা হয় যা আদতে এক অসহায় প্রার্থনা। রিভিউ পিটিশনের সুযোগ আছে কিন্তু তার ফল নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। তবে যোগ্য শিক্ষকদের ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনের উপর পুলিশের নৃশংস লাঠিচার্জ এক ধিক্কার জনক ঘটনা। এর প্রতিবাদ আমাদের করতেই হবে। একই সঙ্গে এই আন্দোলনের পক্ষে আমাদের দাঁড়াতেই হবে কারণ মামলার সঙ্গে যুক্ত এক বামপন্থী বচনবাগীশ আইনজীবীর অমৃতবানী, ঝুঁড়ি তে কয়েকটা পচা আম থাকলে, সব কটা আম ফেলে দিতে হবে — আমরা নির্বোধ প্রলাপ মনে করি।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে এই রায়ের ধ্বংসাত্মক প্রভাব শুধু শিক্ষকদের চাকরি যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্যে পরিণত হওয়া। দীর্ঘ সময় ধরেই সরকার পোষিত মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও পরবর্তীতে উচ্চ প্রাথমিক স্কুলগুলো রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড। কংগ্রেস আমল থেকে বামফ্রন্টের রাজত্বের প্রথম দুই দশক পরিচালন কমিটির মাধ্যমে শিক্ষকদের নিয়োগ হত। এই নিয়োগ পর্বে যথেচ্ছ দুর্নীতি ও স্বজন পোষণ হত। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে নিয়োগ নিয়ে বামপন্থী দলগুলোর মধ্যেই তীব্র ক্ষোভের জন্ম হয়। এই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি হয় যা অবশ্যই এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। বামফ্রন্টের অতি বড় সমালোচকও একথা স্বীকার করতে বাধ্য যে স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং নিয়মিত এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ হত। পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এসএসসির মাধ্যমে নিয়োগ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এমনকি প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু একবার মন্তব্য করেন যে এসএসসি পরীক্ষা দুর্গাপুজো নয় যে প্রতিবছর করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের উপর রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষিত ও বিএড প্রশিক্ষিত যুবক-যুবতী ভরসা করত। এই প্রতিষ্ঠানের এই পরিণতি কখনোই কাম্য ছিল না। আরেকটি বিষয় হল শিক্ষকদের যোগ্যতার প্রশ্নে সমাজের বিশ্বাস টলে যাওয়া (trust deficit)। আজ এ রাজ্যে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে যা শিক্ষার্থী-অভিভাবক-শিক্ষকদের মধ্যেকার সম্পর্কের ভিত টলিয়ে দিয়েছে। এমনিতেই ইংরেজি মাধ্যম সর্বভারতীয় বোর্ডগুলোর চাপে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থী কমছে, তার সঙ্গে এই ঘটনা আরো বেশি করে শিক্ষার বেসরকারিকরণের পথ উন্মুক্ত করবে।
________________
লেখক স্কুল শিক্ষক ও অধিকার আন্দোলনের কর্মী।
দরকার ছিল শিক্ষার বেসরকারীকরণ সংক্রান্ত বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা। কেন এবং কি পদ্ধতিতে । অর্থ হল স্বাস্থ্যক্ষেত্রের মতো শিক্ষায় পুঁজি বিনিয়োগের রাস্তা খুলে দেওয়া। শিক্ষার বেসরকারীকরণের এটাই উদ্দেশ্য। পুঁজি পুঁজি এবং পুঁজি বিনিয়োগ ।এটাই আজকের পার্টি প্রশাসন মিডিয়া বুদ্ধিজীবি সকলেরই মূলমন্ত্র। সুযোগ বিনিয়োগের দিতে হবে। নাহলে তুমি ব্যাকওয়ার্ড রক্ষণশীল পিছিয়ে আছো ইত্যাদি প্রভৃতি। বাজার মানে পুঁজির বাজারের এটাই দস্তুর । একে পূজো করো ধূনো দাও। নাহলে তুমি বাতিল অযোগ্য ইত্যাদি প্রভৃতি। সরকারী নিয়োগে দূর্নীতি নিয়ে এতো আলোচনা ধামাকা মিডিয়া প্রচার এই কারনে যে —
মনে গেঁথে দাও গোঁজের মতো সরকারী সবকিছুই খারাপ পচা বাজে । এর মধ্যে দিয়ে যে সব ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগের রাস্তা বানানো হচ্ছে – প্রাইভেট হাতে দিয়ে মুনাফা কামানোর রাস্তা সাফ করা হচ্ছে – যুক্তিযুক্ত করা বা সামাজিক অনুমোদন তৈরি হচ্ছে – ভেবেছিলাম লেখকের প্রাথমিক বয়ান থেকে- লেখা সেদিকেই এগোবে। দেকগলাম হল না সেই পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকার অমোঘ টান এই প্রতিশ্রুতিবান লেখককেও তার কোলে টেনে নিল।