নয়া বন আইন : কর্পোরেটকে লাগামহীন যথেচ্ছারের ঢালাও লাইসেন্স


  • September 5, 2023
  • (0 Comments)
  • 1302 Views

এতদিন বনকে নিয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন, বনের সেই বাসিন্দাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে আইনব্যবস্থার মধ্যে, রাষ্ট্রনায়কদের মদতে, কর্পোরেটের স্বার্থে। লিখছেন তিথি রায়

 

 

দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ সহজ, মসৃণ করে তুলতে চায় বিজেপি সরকার। সেই লক্ষ্যে দেশের নীতিনির্ধারকরা এক চমকপ্রদ স্লোগানের জন্ম দিয়েছেন — ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস।’ আর এই সরল বাণিজ্য পথে বন-জঙ্গল-পাহাড়কেই মস্ত বাধা হিসেবে ঠাউরেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আর সে অবশ্যই সাঙ্গাত কর্পোরেটের মুখ চেয়ে। আর ক্ষমতায় আসা থেকেই বন সংরক্ষণ, পরিবেশ রক্ষার মতো অতীতের একের পর এক নিয়মবিধির নানা রক্ষাকবচগুলোর বাঁধন আলগা করে চলেছে। আর সেই ফাঁক দিয়েই বিদ্যুৎ প্রকল্প, খনি, রাস্তা-রেললাইন তৈরি কিংবা স্রেফ অর্থকরী বনসৃজনের কারণে মহারাষ্ট্র থেকে মণিপুর, কাশ্মীর থেকে নিকোবর — সর্বত্র চলছে বননিধন যজ্ঞ। না, পুরনো আইনের রাশ আলগা করা হলেও না মন ভরছে কর্পোরেটের, না সরকারের। শেষমেষ, বন-জঙ্গলকে মুক্ত অর্থনীতির উন্মুক্ত বাজারে বিকিকিনির জন্য দরজা খুলে দেওয়া হল আইন সংশোধন করে। সংসদের বাদল অধিবেশনে একের পর এক বিল পাসের বান ডেকেছিল। কী লোকসভা, কী রাজ্যসভা, বিল পেশ হওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে আলোচনা কিংবা বিরোধী মতামতের তোয়াক্কা না করেই বিপুল ভোটে পাশ হয়েছে শাসকদরদি (পড়ুন কর্পোরেট দরদি) নানা বিল। এই রীতিতেই, ২ অগস্ট রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল ফরেস্ট কনজারভেশন অ্যাক্ট, ১৯৮০-র সংশোধনী বিল। এর আগেই ২৬ জুলাই বিলটি পাস হয় লোকসভায়। বন সংরক্ষণ আইনের নতুন নাম, বন (সংরক্ষণ এবং সংবর্ধন) অধিনিয়ম, ১৯৮০।

 

সংশোধনী আইন বন সংরক্ষণ নয়, বরং বন সংরক্ষণের আওতা থেকে একাধিক ছাড়ের যেন এক লম্বা তালিকা। কিন্তু, বন ব্যবহার বা না-ব্যবহারের প্রসঙ্গে আরও কতকগুলি মৌলিক প্রশ্ন এসে পড়ে। প্রথমত, সংশোধনী আইনে ‘বন’ কাকে বলা হচ্ছে? বন ব্যবহারে কতটাই বা ছাড় দেওয়া হচ্ছে? দ্বিতীয়ত, বনের সঙ্গে জড়িয়ে যাদের জীবন-জীবিকা, বন ব্যবহারে তাদের আইনি সম্মতির কথা কতটা মাথায় রাখা হচ্ছে? বনবাসী ও বননির্ভর মানুষের সম্মতি ছাড়া কি সরকার (কেন্দ্র ও রাজ্য) আদৌ পারে বনভূমিকে অ-বন্য বা বন বহিভূর্ত (নন ফরেস্ট্রি) কাজে পরিবর্তন করতে? এমনকি, বনভূমি রক্ষা এবং সংরক্ষণের কাজেও বননির্ভর মানুষের গুরুত্বকে একেবারে অস্বীকার করতে? সরকার আইন করে বনভূমিকে সরকারি/ বেসরকারি কাজে ব্যবহারের নামে লাগামহীন যথেচ্ছাচারের যে সুযোগ দিচ্ছে সেই চাপের মুখে, আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসী সম্প্রদায়ের লড়াই কি পারবে তাদের জীবন-জীবিকাকে সুরক্ষিত করতে, তাঁদের উচ্ছেদকে আটকে দিতে? প্রসঙ্গত, নতুন আইনের উর্দি হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করার বিষয়টিও তুলে ধরা হচ্ছে। ধোঁয়াশা সে জায়গাতেও।

 

সুতরাং, বনভূমি ব্যবহারে বননির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকার সংকট, এবং একই সঙ্গে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়াকে ঘিরে সেই পুরনো প্রশ্ন আরও একবার উসকে দিচ্ছে নতুন এই আইন-কানুন। তাই, বেবাক প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা জরুরি। ধাপে ধাপে সেই চেষ্টাই করা যাক।

 

বনের সংজ্ঞা বদল

 

বন সংরক্ষণ নিয়মবিধির ক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন, আমরা ‘বন’ বলতে কী বুঝি? এবং কোন ধরনের বনাঞ্চলে আইন প্রযোজ্য হবে। ১৯৯৬ সালে গোদাবর্মন বনাম ভারত সরকারের মামলা হয়। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বনের যে সংজ্ঞা, তার বহর বেড়ে যায়। ১৯৮০ বন সংরক্ষণ আইনের আওতায় সরকারি নথিভুক্ত যে বনের কথা বলা হয়েছিল তা তো রাখাই হল। ভারতের বহু বনাঞ্চল যা চিহ্নিত করা হয়নি, সংজ্ঞায়িত করা যায়নি কিংবা যেসব বনাঞ্চল রাজস্ব বিভাগ/ভূমি বিভাগের অধীন, তাদেরও আইনের আওতাভুক্ত করা হল। শুধু এই নয়, সরকারি হিসাবের বাইরে থাকা বনাঞ্চলকে যাতে সরকারিভাবে নথিভুক্ত করা যায় সেদিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। ২০২৩ বন সংরক্ষণের সংশোধনী আইনের ১ক (১)নং ধারায় বলা হচ্ছে, ১৯৯৬-এর গোদাবর্মন মামলার আগে যে বনাঞ্চল রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের শাসকের নির্দেশে অ-বন্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে, তা এই আইনের মধ্যে কোনওভাবেই গণ্য হবে না।

 

পাশাপাশি, ভারতীয় অরণ্য আইন (১৯২৭) অনুযায়ী যে বন নথিভুক্ত হয়েছিল, এবং এর বাইরে ১৯৮০ ও তার আগে পর্যন্ত যে সমস্ত বন সরকারি খতিয়ানে রয়েছে তা বাদ দিলে অন্য কোনও বন-জঙ্গলকে সংরক্ষণ আইনের আওতায় ধরা যাবে না।

 

বোঝাই যাচ্ছে, যে বন-জঙ্গল চিহ্নিত হয়নি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কিংবা, যে বন রাজস্ব বিভাগের অধীন, সেক্ষেত্রে বন সংরক্ষণ আইনের নিয়ম খাটবে না। ঠিক এখানেই, বন সংরক্ষণ আইন এবং বনাধিকার আইন, ২০০৬-এর মধ্যে বিরোধ বাঁধছে। সরকারি ও ব্যক্তিমালিকাধীন বন-সহ সমস্ত ধরনের বনের আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসী সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বনাধিকার আইন ২০০৬। এখন, বনাঞ্চলের নির্দিষ্ট কিছু অংশ আইনি সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া আসলে, বেঁচে থাকার জন্য সেই বনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের অধিকারকে নাকচ করার রাষ্ট্রিক চাল।

 

বন ব্যবহারের ছাড়পত্র

 

বনের পরিধি কমানোর সমান্তরালেই, সংরক্ষণের আওতা থেকে একাধিক বনভূমি ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে সংশোধনী আইনের ১ক (২) নম্বর ধারায়। প্রথমেই, সরকারের অধীনে থাকা রেললাইন বা রাস্তার ধারের বনগুলিতে এককালীন ০.১০ হেক্টর পর্যন্ত জমি যেকোনও কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বন ব্যবহারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ছাড়ের কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে, জাতীয় সুরক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থ। সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরিতে ১০ হেক্টর বন ব্যবহারে ছাড় রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও কিছু ছাড়পত্র। যেসব অরণ্য বা তৎসংলগ্ন এলাকা ‘বাম চরমপন্থী’দের দখলে (অর্থাৎ, মাওবাদী), সেখানে সুরক্ষার খাতিরে ৫ হেক্টর পর্যন্ত জঙ্গল ব্যবহার করা যাবে প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো তৈরিতে। অথবা, ‘জনগণের পক্ষে লাভজনক’ যেকোনও কাজে।

 

ফলত, ‘দেশের সুরক্ষা জোরদার করতে’, ‘স্ট্র্যাটেজিক লিনিয়ার প্রজেক্ট’ তৈরি হবে বা হচ্ছে। ‘লিনিয়ার প্রজেক্ট’ বলতে বোঝায়, রাস্তাঘাট বা রেলপথ বানানোর প্রকল্পগুলিকে। আর তা দেশের প্রতিরক্ষার প্রয়োজনে করা হলে, তাকে ‘স্ট্র্যাটেজিক প্রজেক্ট’ বলা হয়। আইন সংশোধনের পর, বড় রাস্তা বা রেলপথের নীলনকশা পরিবেশ রক্ষার অন্তরায় হলেও, তা দেখানোর সুযোগ থাকছে না দেশের আইন ব্যবস্থায়। সুতরাং, রাষ্ট্র তৎপর ও বদ্ধপরিকর, পরিবেশ, বন-জঙ্গল রক্ষার লড়াইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। যদিও আইন সংশোধনের বহু আগে থেকেই হিমালয়-পরবর্তী (ট্রান্স-হিমালয়) চিন সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলে ও অন্যত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (বা ‘উন্নয়নের’) প্রয়োজনে রাস্তা তৈরি হচ্ছে পাহাড়-বন ধ্বংস করে। কিন্তু, উন্নয়নে মুখ ধোয়া শাসক লুকিয়ে যায় ‘উন্নয়ন কার স্বার্থে?’ — এই প্রশ্ন। ‘জাতীয় সুরক্ষা’র ক্ষেত্রেও অমীমাংসিত থেকে যায়; সুরক্ষা কাদের, রাষ্ট্রক্ষমতাসীনদের না রাষ্ট্রের পেটের ভেতর দুরমুশ করে রাখা প্রান্তিক নাগরিকের?

 

বনের ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা কার?

 

সংশোধিত আইনে বন ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুচ্ছ গুচ্ছ ছাড়ের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু, বনকে অ-বন্য কাজে ব্যবহারে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা সরকারি কর্তৃপক্ষের আদৌ আছে কি না তা বুঝে নেওয়া যাক।

 

বনাধিকার আইনের ৩(ঝ) ও ৫ (১, ২, ৩ ও ৪)নং ধারা অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট বনাঞ্চল পরিচালনার ক্ষমতা সেই বনে বসবাসকারী বা বন-নির্ভর মানুষের। এই কাজের প্রয়োজনে তাঁরা গ্রামসভা তৈরি করেন। এবং আইনের বলেই সমস্ত গ্রামসভাগুলির অধিকার এবং শাসন প্রতিষ্ঠা হয় বনাঞ্চল জুড়ে। ২০০৯-এর অগস্টে, কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের তদানীন্তন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ সংসদে একটি নির্দেশিকা জারি করেন। ১৯৮০-র বন সংরক্ষণ আইন এবং ২০০৬-র বনাধিকার আইন — এই দুই আইনের সামঞ্জস্য রক্ষা করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। নির্দেশে বলা হয়, যেকোনও প্রকল্পে বন ব্যবহারে ছাড়ের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চলের সবকটি গ্রামসভার সম্মতিপত্র আবশ্যিক। এবং বনকে অ-বন কাজে পরিবর্তনে, গ্রামসভাগুলির অনুমতি লিখিত আকারে জানাতে হবে।

 

পরবর্তীতে, ওড়িশার নিয়মগিরির ঘটনায়, সুপ্রিম কোর্টের রায়েও (Orissa Mining Corporation vs Union of India, (2013) 6 SCC 476) বন ব্যবহারে গ্রামসভার অনুমতিপত্রকে বাঞ্ছনীয় করা হয়। নিয়মগিরির বন-জঙ্গল ও আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে বক্সাইট খনি চালানোর ছাড়পত্র পেয়েছিল বেদান্ত কোম্পানি। ২০১৩ সালে বেদান্তের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন সেখানকার বনবাসী ডোঙরিয়া কন্ধ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষজন। এই ঘটনাতেই, শীর্ষ আদালতের রায়ে, নিয়মগিরির আদিবাসী মানুষ গ্রামসভা ডেকে বন্ধ করে দিয়েছিল বন-জঙ্গল ও জীবন-জীবিকা ধ্বংসের কারবার।

 

অতএব, বন সংরক্ষণের সংশোধিত আইনে, বন ব্যবহারে যে সমস্ত ছাড়গুলি দেওয়ার কথা বারবার বলা হচ্ছে তা সরকারের ক্ষমতার বাইরে। ‘উন্নয়ন’ কিংবা ‘সুরক্ষা’ যথা মহৎ উদ্দেশ্যের দোহাই যতই দেওয়া হোক না কেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ বনাধিকার আইন মানতে বাধ্য। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামসভার ৫০ শতাংশের বেশি সদস্যের সম্মতি ভিন্ন কোনও ছাড়পত্র দেওয়া যায় না। এই প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে ভারত সরকার কোনও বন-জঙ্গলকে বন বিষয়ক নয় এমন কোনও ব্যবহারের কাজে ছাড় দিতে পারে না। বনবাসীদের এই হক বনাধিকার আইনের ৫ নং ধারা মেনেই বৈধ ও সাংবিধানিক।

 

গোদাবর্মন মামলা থেকে শুরু করে নিয়মগিরির ঘটনা, বারবার সুপ্রিম কোর্টের মধ্যবর্তীতায় বন সংরক্ষণ আইনের পরিধি অনেকটাই বেড়ে যায়। শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে বনকে অন্য কাজে পরিবর্তনের বিষয়ে নতুন নতুন নির্দেশিকা বানানো হয়েছে, আইনের আঁটঘাঁট শক্ত করা গেছে। যা বনের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং বননির্ভর মানুষের জীবন-জীবিকাকে কিছুটা আইনি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। বর্তমানে, সংসদীয় ব্যবস্থায় আইন সংশোধন করে এতদিনের এই ধারাকে উল্টে দিতে চাইছে বিজেপি সরকার। এতে, বিচারব্যবস্থা ও তার প্রজ্ঞার প্রতি সরকারের বিরোধিতাই সুস্পষ্ট।

 

রাজ্য সরকারের অবস্থান

 

বন ব্যবহারে ছাড় বা ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্সের জন্য গ্রামসভার অনুমতি ও বনাধিকার আইনের নিষ্পত্তি — এই গোটা বিষয়টা শেষতক এসে পৌঁছয় রাজ্য সরকারের হাতে। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের বনদপ্তরের দায়িত্ব ফরেস্ট ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার। এ কথা মাথায় রেখেই দেখা যাক, বনাধিকার আইন ও গ্রামসভাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

 

২০১৭-তে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে, ঠুড়গা ও বান্দুতে ‘পাম্প স্টোরেজ’ গোছের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সরকারের হিসেব বলছে, শুধুমাত্র ঠুড়গা প্রকল্পের জন্য মোট ২৯২ হেক্টর জমি প্রয়োজন। যার মধ্যে ২৩৪ হেক্টর বনভূমি। সুতরাং, সেই বনভূমি ব্যবহারের জন্য বনের আদিবাসীদের অনুমতি দরকার। ২০১৭-তেই পুরুলিয়ার জেলাশাসকের পক্ষ থেকে বাঘমুন্ডি ও অযোধ্যার গ্রামবাসীদের সম্মতিপত্র জমা করা হয়। বন ব্যবহারের আইনি খুঁটিনাটি বিষয়ে ছাড়পত্র দেয় ফরেস্ট অ্যাডভাইজারি কমিটিও। এর ওপর ভিত্তি করেই ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য প্রথম ধাপের ছাড়পত্র পায় রাজ্য সরকার।

 

কিন্তু, এর মাঝে ঢের গন্ডগোল। বনগ্রামের যেসব বাসিন্দা সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করলেন তাঁরা কেউই জানতেন না কোথায় কেন স্বাক্ষর করা হচ্ছে। আদতে এই প্রকল্প এবং প্রকল্পের ফলাফল সম্পর্কে নূন্যতম তথ্য তাদের জানানোই হয়নি প্রশাসন কিংবা বনবিভাগের পক্ষ থেকে। আরও আশ্চর্য, ঠুড়গা প্রকল্প এলাকায় মোট প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা গড়ে দুই হাজার। অথচ, বাঘমুন্ডি ও অযোধ্যার যথাক্রমে ১০ ও ২৪ জনের স্বাক্ষরে প্রকল্পের সম্মতিপত্র তৈরি হয় কীভাবে? প্রশাসন কিংবা বন বিভাগের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের ভুল বোঝানো, তথ্য না-জানানোর এহেন ফন্দি-ফিকির চলছেই। তবে, ওই অঞ্চলের আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসীদের আন্দোলনের মুখে কিছুটা থমকেছে ঠুড়গা প্রকল্পের বাস্তবায়ন। তারপরেও, গ্রামসভার সম্মতি ছাড়াই সেখানে গাছকাটা, পরিকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদির জন্য টেন্ডার নোটিশ জারি করেই চলেছে রাজ্য সরকার।

 

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমে জঙ্গলমহলের ঘটনার পর, উত্তরের দার্জিলিং পাহাড়-বনের আরও একটি ঘটনার দিকে তাকাই আমরা। সরকারের ‘লিনিয়ার প্রজেক্ট’-র কথা আমরা আগেই জেনেছি। দার্জিলিংয়ের সেবক থেকে সিকিমের রংপো পর্যন্ত রেলপথ তেমনি একটি লিনিয়ার প্রজেক্ট। সেখানে পাহাড় কেটে টানেলের মধ্যে দিয়ে ৪৫ কিমি দীর্ঘ রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। এই রেলপথের মূল উদ্দেশ্য পূর্ব হিমালয়ের চিনের সীমান্ত জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা। ২০১৩-র ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবেশ মন্ত্রক একটি চিঠিতে এই প্রকল্পের জন্য নর্থ ইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়েকে প্রায় ৪০ হেক্টর বনভূমি ব্যবহারে ছাড় দেওয়ার কথা জানায়। বনভূমিকে অ-বনভূমি বিষয়ক কাজে ব্যবহারের জন্য দু’টি ধাপে (যথা, স্টেজ-ওয়ান এবং স্টেজ- টু) ছাড়পত্র দরকার হয়। মোটামুটিভাবে, বনভূমি ধ্বংসে পরিবেশের কতটা ক্ষতি হচ্ছে এবং তার বিচারে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কি না সেসব দেখে রাজ্য সরকার ও ফরেস্ট অ্যাডভাইজারি কমিটি একটি প্রস্তাবনা দেয়। তার ওপর ভিত্তি করে, কেন্দ্রীয় সরকার স্টেজ-ওয়ান ছাড়পত্র পাঠায়। যথারীতি এভাবেই ২০১৭ সালে সেবক-রংপো রেলপ্রকল্পের স্টেজ-ওয়ান ছাড়পত্র মেলে। কিন্তু, প্রাথমিক ধাপের ছাড়পত্রে এই ধরনের বড় প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায় না। দ্বিতীয় ধাপ বা ফাইনাল ক্লিয়ারন্সের মূল বিষয়ই হল বনাধিকার আইনের নিষ্পত্তি ও গ্রামসভার সম্মতি। এক্ষেত্রে ২০২০-তে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাত্র কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে জেলা প্রশাসক আলোচনা করেন, এবং তার ভিত্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয় যে প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় বনাধিকার আইনের নিষ্পত্তি করা হয়ে গেছে। একই কাজ করা হয় কালিম্পং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সুতরাং, এখানেও বনাধিকার আইন এবং গ্রামসভার ভূমিকাকে পাত্তাই দেওয়া হল না। বন ব্যবহারের সম্মতিতে আসল ভূমিকা ওই অঞ্চলের বাসিন্দা ও তাদের গ্রামসভার। এবং জেলা প্রশাসন কিংবা বনবিভাগ — সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষই সম্মতিপত্র দেওয়ার মালিক নন, এই সহজ বিষয় নিয়েই বারবার জটিলতা তৈরি হয়।

 

২০১৭-১৮ সাল থেকেই সেবক-রংপো প্রকল্প অঞ্চলের বননির্ভর স্থানীয় মানুষ লাগাতার আন্দোলন করছে তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে, তাদের যাবতীয় অধিকারের দাবিতে। দার্জিলিং-কালিম্পং জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এই প্রকল্পের আইনি নিষ্পত্তির কথা ঘোষণা করা হলেও দ্বিতীয় ধাপের অর্থাৎ, স্টেজ- টু ক্লিয়ারেন্স এখনও পাওয়া যায়নি। কিন্তু, কার তাতে কী? ২০২০-তে কোভিড-লকডাউন অবস্থাতেই তাড়াহুড়ো করে শুরু করা হয়েছিল সেবক-রংপো রেল তৈরির কাজ। গত তিন বছরে এই প্রকল্পের প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলা হয়েছে। তাহলে এখানেই প্রশ্ন আসে, বনাধিকার আইনের নিষ্পত্তি না করে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ছাড়পত্র না পাওয়া সত্ত্বেও এই ধরনের লিনিয়ার প্রজেক্টকে বাস্তবায়িত করা কতটা বৈধ? তবে কি দ্বিতীয় ধাপের ক্লিয়ারেন্সের পুরো প্রক্রিয়াকে বাদ রেখেই এই ধরনের প্রকল্পকে ন্যায্য করে তুলতে চাইছে সরকার? এই পরিস্থিতিতে, আইনি নিষ্পত্তির পুরো দায় রাজ্যের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া এবং সব মিলিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের এই টালমাটালে অপ্রাসঙ্গিক থেকে যায় বননির্ভর মানুষের বেঁচে থাকার আইনি প্রশ্নটাই।

 

সম্প্রতি সংসদের বাদল অধিবেশনে, রাজ্যসভায় আদিবাসী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী বিশ্বেশ্বর টুডু তাজ্জব বনে যাওয়া কিছু তথ্য সামনে এনেছেন। অবশ্য, এই তথ্য উঠে এসেছে সাংসদ শ্রী এলামারাম করিমের প্রশ্নের প্রেক্ষিতে। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বনমিত্র পোর্টাল’-এ বনবাসীদের অধিকারের যেসব দাবি খারিজ করা হয়েছে, তার রাজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান। তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট খারিজ হওয়া এমন অধিকারের দাবির সংখ্যা ৯৬,৫৮৭।

 

তাহলে ব্যাপার-স্যাপার দাঁড়াল, বনাধিকার আইনের বাস্তবায়ন, বন ধ্বংস করার ক্ষেত্রে গ্রামসভার সম্মতির বিষয়ে রাজ্য কী কেন্দ্র — কোনও সরকারের ভূমিকাই আশাব্যঞ্জক নয়। বনাধিকার আইন সম্পর্কে যেসব অঞ্চলে মানুষ সচেতন হচ্ছে, আন্দোলন গড়ে উঠছে, তার বাইরে বনবাসীদের অধিকার আইন নিয়ে চির উদাসীন সরকারি কর্তৃপক্ষ। ক্ষমতার চোরাগলি দিয়ে কাজ মিটিয়ে নেওয়া চলছেই। স্বাধীন ভারতের ৭৭ বছর পেরিয়ে এটাই হকিকত।

 

বন ব্যবহারে আরও ছাড় এবং বনবাসীদের অবস্থা

 

‘বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আনুষঙ্গিক কাজ’কে বিধি-নিয়ম থেকে মুক্ত করা হয়েছে সংশোধনী আইনে। এই কাজগুলি হল— ‘সিলভিকালচার’ (বনের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে গাছ লাগানো ইত্যাদি)’, ফরেস্ট কর্মীদের জন্য চেকপোস্ট তৈরি। আগুন নেভানো ও বেতার যোগাযোগ স্থাপন। বেড়া, সেতু ও কালভার্ট, চেক ড্যাম, জলের গর্ত, পরিখা এবং পাইপলাইন তৈরি ইত্যাদি। পাশাপাশি, সংরক্ষিত এলাকা ছাড়া অন্য বনাঞ্চলে (সরকার বা কোনও ব্যক্তি কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন) চিড়িয়াখানা এবং সাফারি করা যাবে। এবং ইকো-ট্যুরিজমেও বাধা রইল না।

 

গোড়াতেই যে কথা হচ্ছিল, বন ও বন সংলগ্ন অংশের আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ বনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্বভাবত, বনের ভালো-মন্দ দেখার অধিকার তাঁদেরই। বনাধিকার আইনের, ২(ক)নং ধারা অনুযায়ী, বনবাসী ও বননির্ভর মানুষের ব্যবহৃত জঙ্গল গ্রামসভার সাধারণ বনসম্পদ বা কমিউনিটি ফরেষ্ট রিসোর্স। এবং এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্যেক গ্রামসভা বন পরিচালন কমিটি তৈরি করতে পারে (৫নং ধারা অনুযায়ী)। আইন মোতাবেক, গ্রামসভা এবং বনাধিকারভোগীরা বন সংরক্ষণের (বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ) ব্যবস্থা নিতে পারে। এমনকি, বনজ সম্পদ ধ্বংস করতে পারে এমন যেকোনও কাজ ঠেকানোর ক্ষমতাও রয়েছে গ্রামসভার। এছাড়াও, ৩ (গ ও ঘ)নং ধারা অনুযায়ী, সব ধরনের বনাঞ্চলে বনবাসীদের বেঁচে থাকার জন্য রসদ সংগ্রহ, পশুচারণ ও মাছ ধরার অধিকার আছে। এই কাজগুলি করা যাবে গ্রামসভার সম্মতিক্রমে।

 

অথচ, ২০০৮ সালে রাজ্যে তৈরি হয়েছিল ‘জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট’। এই ব্যবস্থাপনা মারফত সরকারের বনবিভাগ এবং বননির্ভর আদিবাসী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের যৌথভাবে বন পরিচালনার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে কী ঘটল? যৌথ বন পরিচালনার আড়ালে, বনবিভাগ হয়ে উঠল বনের মালিক। বনের সম্পদ গেল সরকারি কর্তৃপক্ষের দখলে। তাদের অনুমতি বিনা, আদিবাসী ও অন্যান্য বনবাসীরা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে বন ব্যবহারের সুবিধা হারাল। আরও যা হল, এই ব্যবস্থাপনায় গ্রামসভার কর্তৃত্বকেই অস্বীকার করা হল।

 

২০১৫ -য় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রক, বনাধিকার আইনের ১২ নং ধারার অধীনে একটি নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে বলা হয়, কমিউনিটি ফরেস্ট রিসোর্স বা সাধারণ বনসম্পদকে বনাধিকার আইনের সূত্র ধরেই নতুন এক ধরনের জমি হিসেবে নথিভুক্ত করতে হবে। উল্লেখ করা হয়, কমিউনিটি ফরেস্ট রিসোর্সগুলি পরিচালনা, সংরক্ষণ করা এবং তার ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্ব গ্রামসভার। যার মধ্যে রয়েছে সরকারি বনবিভাগের বন সংরক্ষণ ও বনের যাবতীয় কাজের পরিকল্পনাও। তাহলে, নতুন আইনে বলা ‘বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আনুষঙ্গিক কাজ’ ও গ্রামসভার অধিকারের মধ্যেই পড়ে। ফলে, সে কাজের ছাড়পত্র সরকারি বনবিভাগ বা কোনও বেসরকারি/ কর্পোরেট সংস্থাকে দেওয়া আইনত অবৈধ।

 

গোড়ায় গলদ

 

সংশোধনী আইনের গোড়াতেই একটি প্রস্তাবনার কথা বলা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা মোতাবেক ভারতের কার্বন নিঃসরণ ২০৭০-এ ‘নেট জিরো’ (অর্থাৎ, যা কার্বন গ্যাস ছাড়া হবে, তা অন্য নানা কায়দায় কমিয়ে ফেলা হবে) লক্ষ্যমাত্রার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনকে রোধ করতে ২.৫ – ৩.০ বিলিয়ন টন কার্বন সিংক (গাছ দিয়ে কার্বন ধরে রাখা) তৈরির কথাও জানানো হয়েছে। এসব দেখেশুনে নতুন আইনের চমৎকারিত্ব ঠাহর হয়। বাস্তব ছবি কী? ঠিক যে সময় নতুন আইনে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, ঠিক সেই সময় আন্দামান-নিকোবরে প্রায় ৯ লক্ষ ৬৪ হাজার গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেখানকার ‘হলিস্টিক ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’ হিসেবে বাণিজ্য-বন্দর তৈরির জন্য। এবছর সংসদের বাজেট অধিবেশনে, রাজ্যসভায়, কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে জানান, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৮৮,৯০৩ হেক্টর বনাঞ্চলকে পরিবর্তন করার অনুমোদন পেয়েছে। যার মধ্যে, বেশিরভাগ রাস্তা প্রকল্পের জন্য (প্রায় ১৯,৪০০ হেক্টর)। এবং তারপরে খনির জন্য (প্রায় ১৮,৮০০ হেক্টর)। এইভাবে হাজার হাজার হেক্টর বন নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে যথেচ্ছ ছাড়পত্র দিয়ে।

 

বন-জঙ্গল ধ্বংস করলে, পরিবেশ সংবেদী এলাকার জীব বৈচিত্র্য নষ্ট হলে, খেসারত দেওয়ারও অনেক সরকারি ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু, সেখানেও সমস্যা ঢের। কোনও একটি প্রকল্পে জীববৈচিত্র‍্যের সামগ্রিক ক্ষতির তুলনামূলক ‘নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু’(বনের মোট দাম) টাকা-পয়সায় চুকিয়ে দিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলা যায় সহজে। এই টাকা-পয়সার হিসাব-নিকাশ করা এবং তা বিনিয়োগ করার দায়িত্বে থাকে সরকারের বন দপ্তর। ২০১৬ সালে নতুন আইন বানিয়ে বনের দাম বাবদ পাওয়া টাকা বনকর্তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। টাকা-পয়সা লেনদেনের নিরিখে পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ আসলে কি হচ্ছে, খতিয়ে দেখার কোনও ব্যবস্থা নেই। জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির মূল্য থেকে শুরু করে সেখান থেকে পাওয়া টাকা-পয়সার পুনর্বিনিয়োগ — পুরোটাই চলছে অনুমানের ভিত্তিতে। আরও বড় সমস্যা, নিকোবরের উন্নয়ন প্রকল্পে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে তার খেসারত দিতে হরিয়ানায় কয়েক হাজার গাছ লাগানো হবে বলে অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। খেয়াল রাখা জরুরি, সমুদ্র উপকূলবর্তী একটি বাস্তুতন্ত্রের ঘাটতি কিছুতেই মেটানো সম্ভব নয় পাহাড় বা সমতলে গাছ লাগিয়ে। কোনও একটি বাস্তুতন্ত্রে, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার ইতিহাস-ভূগোল, ও অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা। একবার সেসব উপড়ে ফেললে, তা পুনঃস্থাপন করা যায় না। তাই, জমা-খরচের হিসেবে পরিবেশের ক্ষতি মেটানোর চিন্তাভাবনাতেই গলদ।

 

বিলের প্রস্তাবনায় শেষের দিকে উল্লেখ করা হচ্ছে বন সংরক্ষণে দেশের নিজস্ব ধারা ও ঐতিহ্যর। ঠিক এখানে আরও একবার প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে আদিবাসী ও বনবাসীদের বনাধিকার-সহ বন রক্ষণাবেক্ষণের ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা। এতদিন বনকে নিয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন, বনের সেই বাসিন্দাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে আইনব্যবস্থার মধ্যে, রাষ্ট্রনায়কদের মদতে, কর্পোরেটের স্বার্থে।

 

References:

 

  1. https://egazette.gov.in/WriteReadData/2023/247866.pdf
  2. https://tribal.nic.in/FRA.aspx
  3. 3.https://forestsclearance.nic.in/viewreport.aspx?pid=FP/WB/RAIL/40708/2019
  4. 4.https://www.downtoearth.org.in/news/gram-sabha-to-be-consulted-on-vedantas-mining-project-says-sc-40852
  5. 5.https://scroll.in/article/1030774/a-railway-project-to-the-china-border-in-sikkim-is-violating-land-rights-of-indigenous-communities 
  6. https://www.wbsedcl.in/irj/go/km/docs/internet/new_website/TPSP.html
  7. সংবাদ মাধ্যম বিজ্ঞপ্তি, বিষয় – ঠুড়গা ও বান্দো পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প বাতিলের দাবী ও অগণতান্ত্রিক-স্বৈরাচারী প্রশাসনিক আচরনের প্রতি ধিক্কার, প্রকৃত বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ, ০১-০৮-২০২৩, পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ।
  8. Over 80K hectares of forests diverted for infrastructure projects in 5 years: Centre | Latest News India – Hindustan Times
  9. Great Nicobar Project may see 9.64 lakh trees axed, says Minister – The Hindu

 

Share this
Leave a Comment