একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত : চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে ১৫%, নৈরাজ্য বলল ট্রেড ইউনিয়ন


  • June 9, 2022
  • (0 Comments)
  • 683 Views

৯ জুন ২০২২

গ্রাউন্ডজিরোর প্রতিবেদন

 

মজুরি বৃদ্ধির ত্রিপাক্ষিক আলোচনা চলাকালীনই চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার আলিপুরদুয়ারে মমতা বলেন, “চা শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। ১১ বছরে তা বাড়িয়ে ২০২ টাকা করেছি। আরও বাড়ানো হবে। না বাড়া পর্যন্ত ১৫% অন্তবর্তী রিলিফ পাবেন।” উল্লেখযোগ্য যে, মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের মজুরি ‘আরও বাড়ানো’ হবে বললেও ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোনও কথা বলেননি। আর তার ফলেই, এই ঘোষণায় খুশি নয় চা বাগানের কোনও ট্রেড ইউনিয়নই।

 

ইউনিয়গুলির দাবি, শ্রমিক স্ংগঠনগুলি দীর্ঘ সাত বছর ধরে চা শিল্পে ন্যূনতম মজুরি আইন অনুযায়ী মজুরি ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। ২০১৫ সালে এই বিষয়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল। নর্থ বেঙ্গল টি প্ল্যান্টেশন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায় এক প্রেস বিবৃতিতে জানান, “২০১৭ সালের গোড়াতেই ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজ পর্যন্ত বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি।” চা বাগান সংগ্রাম সমিতি এই অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধিকে ‘চটকদারি’ আখ্যা দিয়েছে। স্ংগ্রাম সমিতির প্রশ্ন, “ত্রিপাক্ষিক চুক্তির প্রক্রিয়াকে নস্যা করে বারবার অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধির এই চটকদারি আর কতদিন চলবে? চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কবে চালু হবে?” তারা সরকারের জমিবাড়ির পাট্টা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। অভিজিৎবাবুও এই একই সুরে বলেন, “রাজ্য সরকার একতরফা ভাবে মর্জিমাফিক এবং বৈষম্যমূলক ভাবে কয়েক দফায় যে অন্তর্বর্তীকালীন মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে তা এই শিল্পের মজুরি/বেতনের ক্ষেত্রে এক নৈরাজ্য কায়েম করেছে।”

 

শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি, বেতনক্রম সংশোধন না হওয়ায় চা বাগান কর্মচারীদের একটি বড় অংশের মাসিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবং সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। ট্রেড ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, এই পরিস্থিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার লিখিত ঘোষণা এবং মন্ত্রী ও আধিকারিকদের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে তারা ‘স্বল্প সময়ের জন্য মজুরি/ বেতনবৃদ্ধি সংক্রান্ত ত্রিপাক্ষিক বোঝাপড়ায় রাজি’ হয়েছিল। ইউনিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিগত দু’মাসে দু’টি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। এবং ২ জুনের বৈঠকে শ্রমসচিব ১০ দিনের মধ্যে শ্রমমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিষয়টি চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেলেন। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন ৮ জুন মুখ্যমন্ত্রীর ‘একতরফা’ ঘোষণায় বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।

 

মুখ্যমন্ত্রীর ১১ বছরে ৬৭ থেকে ২০২ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিকে নসাৎ করে অভিজিৎ রায় বলেন, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির ত্রিপাক্ষীয় নিষ্পত্তি অনুযায়ী—যা ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল—সেখানে তিন বছরে দৈনিক মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১৮%, ৯% ও ৮%। যদি তা কার্যকর হত তবে ২০২২ সালের এপ্রিলে মজুরি হত ২৬২ টাকা। পাশাপাশি চা বাগানে ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাগান মালিকদের দেয় রেশনের অর্থমূল্য ২৬ টাকা হিসাবে মজুরির সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলেছিল। কিন্তু মালিকপক্ষের আপত্তিতে তা ৯ টাকায় দাড়ায়। এবং তা বহাল থাকলে এপ্রিল থেকে মজুরি দাঁড়ায় ২৬৪ টাকা। এবং পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দাঁড়ায় ২৮১ টাকা। ট্রেড ইউনিয়নগুলি শ্রমসচিবের ২ জুনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মজুরি বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানের লক্ষ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার দাবি জানিয়েছে।

 

Share this
Leave a Comment