দম বন্ধ হয়ে আসছে


  • April 11, 2022
  • (0 Comments)
  • 947 Views

এমন অপযুক্তির, নির্যাতিতাকেই অপবাদ দেওয়ার, প্রকারান্তরে অপরাধীদের পক্ষ নেওয়ার, বাকস্বাধীনতাকে বেড়ি পরানোর হুমকির মতো এই নিষ্ঠুর, নির্দয়, শোকতাপহীন সম্রাজ্ঞীর কাছে সভ্য জগতের যুক্তিতর্ক, সংলাপ আজ অর্থহীন। লিখলেন দেবাশিস আইচ

 

গণধর্ষণে অতিরিক্ত রক্তপাতে মৃত্যু। সন্দেহটি এমনই। মরে যাওয়ার পর পুড়িয়ে দেওয়া হল দেহ। প্রয়োজন হল না ডেথ সার্টফিকেট কিংবা পোস্টমর্টেম রিপোর্টের।  ছাই উড়িয়েও আর কিছু খুঁজে পাওয়ার নেই। কেননা পোড়া ছাইও ধুয়েমুছে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যেটুকু প্রশ্ন ছিল সেইসব প্রশ্ন, সন্দেহ ছাইকণা হয়ে বাতাসে ইতিউতি ভেসে বেড়াচ্ছিল, তাকেও ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্ষণের অভিযোগ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন তিনি। প্রশ্ন তুললেন নাবালিকার চরিত্র নিয়েও। তুলতে পারলেন এই নিশ্চয়তা থেকেই যে, সব প্রমাণ পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। উলটে সন্দেহের তির ছুঁড়লেন মৃতার পরিবারের দিকে।  কেন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি? কেন এফআইআর করা হল পাঁচ দিন পর? কেন দাহ করা হল? এখন সব অপরাধের দায় নাবালিকার বাপ-মায়ের। আর এই কটু কথাগুলো, কূট প্রশ্নগুলো তুলে ধরার জন্য সংবাদমাধ্যমকে বিজ্ঞাপন না দেওয়ার জন্য বণিকদের কাছে ফের একবার আবদার করে বসলেন। যেন বলতে চাইলেন — হাতে তো মারছি, এবার ভাতে মারুক বিজ্ঞাপনদাতারা।

এমন অপযুক্তির, নির্যাতিতাকেই অপবাদ দেওয়ার, প্রকারান্তরে অপরাধীদের পক্ষ নেওয়ার, বাকস্বাধীনতাকে বেড়ি পরানোর মতো এই নিষ্ঠুর, নির্দয়, শোকতাপহীন সম্রাজ্ঞীর কাছে সভ্য জগতের যুক্তিতর্ক, সংলাপ আজ অর্থহীন। কোন পুরুষতান্ত্রিক বিদ্বেষ, কোন ক্ষমতার মদমত্ততা — মন্ত্রী-সান্ত্রী-কোটাল-বরকন্দাজ, নাগরিক সুধী সমাজ, বণিক-কবি-শিল্পীদের সাক্ষাৎ উপস্থিতিতে, লাইভ সম্প্রচারে আমনাগরিক সমাজকে সাক্ষী রেখে, পায়রার গলা মুচড়ে ছিঁড়ে নেওয়ার মতো সত্য, ন্যায়, আইন, সুশাসন, রাজধর্মের সকল বিধিবিধানকে টুঁটি ছিঁড়ে হত্যা করতে পারে? নতুন করে তার তল খোঁজা যেতে পারে, তবে শাসকের কাছে তা মূল্যহীন হয়েই রয়ে যাবে। যে কথা স্বীকার করে নিতে হবে, নেওয়া ভাল তা হল—গণতন্ত্র মরেহেজে পচা গন্ধ ছড়াচ্ছে। স্বৈরাচারের অতিমারি গ্রাস করেছে রাজ্যকে। পালানোর পথ নেই। ধাঙরের মতো, মুদ্দাফরাশের মতো এই পচাগলা লাশের সৎকার করা ছাড়া আর কোনও উপায়ও নেই।

 

এই কথাগুলো বলার জন্য, পুলিশ লেলিয়ে দেওয়ার আগে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আগে, গলায় পাড়া দিয়ে মারার আগে, গুমখুনের আগে এটুকু বলে যাওয়া যাক — দম বন্ধ হয়ে আসছে।

 

Share this
Leave a Comment