পরিযায়ী-দুর্দশার সর্বাধিক দায় মোদীর


  • February 9, 2022
  • (0 Comments)
  • 652 Views

লোকসভায় জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে পরিযায়ীর ক্ষত ফের খুঁচিয়ে দিলেন নরেন্দ্র মোদীকোভিড প্রথম ঢেউয়ের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের যাবতীয় দুর্দশার ভার চাপিয়ে দিলেন বিরোধী দল ও সরকারগুলির উপর। ৬ ফেব্রুয়ারি রাজসভায় মোদীর মন্ত্রী জানিয়েছেন, গঙ্গায় ভেসে যাওয়া, গঙ্গার চরে পুঁতে দেওয়া লাশের তথ্য সরকারের কাছে নেই। কথায় আছে একটি মিথ্যে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ১০টা মিথ্যে বলতে হয়। তাই তথ্য নেই বলে দেওয়াই অনেক সুবিধাজনক। কিন্তু, কথায় তো এও বলা হয় যে সত্য লুকিয়ে রাখা যায় না। তা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই। লিখেছেন দেবাশিস আইচ

 

সত্যিকে ডাহা মিথ্যা, অর্ধসত্যকে সত্য বলে চালিয়ে দিতে নরেন্দ্র মোদীর জুড়ি নেই। আবার তথ্যকে ধামাচাপা দেওয়ার রেওয়াজ সব জমানাতেই ছিল। মোদী-জমানায় তা বেমালুম হাপিস করে দেওয়াই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদজ্ঞাপন বিতর্কে এমনই আরও এক নজির সৃষ্টি করলেন প্রধানমন্ত্রী। কোভিড প্রথম ঢেউয়ের সময় পরিযায়ী শ্রমিকদের যাবতীয় দুর্দশার ভার চাপিয়ে দিলেন বিরোধী দল ও সরকারগুলির উপর। পাশাপাশি, একইদিনে রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় জলশক্তি প্রতিমন্ত্রী বিশ্বেশ্বর টুডু জানিয়েছেন, দ্বিতীয় কোভিড ঢেউয়ে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে “কোভিড-যোগ থাকা আনুমানিক কত মৃতদেহ গঙ্গায় ফেলা হয়েছে, সেই তথ্য নেই।”

 

মোদীর নিশানায় ছিল কংগ্রেস ও আপ শাসিত দিল্লি ও মহারাষ্ট্র। তাঁর অভিযোগ, প্রথম ঢেউয়ের সময় মহারাষ্ট্র ও দিল্লি সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের দায়িত্ব নেয়নি উল্টে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর ফলে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, পঞ্জাবে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যায়। তথ্য তো অন্য কথা বলে। অর্থনীতির ঘা এখনও শুকোয়নি। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ ফিরে পাননি। কাজ ফিরে পেলেও সংগঠিত ক্ষেত্রের বহু শ্রমিক, কর্মচারী বেতন, মজুরি কাটিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। অসংগঠিত শিল্প ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, কত ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, ক’টা ফের খুলেছে, কিন্তু শ্রমিকরা সবাই ফেরেননি — তার প্রকৃত হিসাব এখনও মেলেনি। ফলে অর্থনীতি ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে তার প্রকৃত হিসাব এখনও মেলেনি। অথচ লোকসভায় জবাবি ভাষণ দিতে গিয়ে পরিযায়ীর ক্ষত ফের খুঁচিয়ে দিলেন।

 

এ নিয়ে আজ আর কোনও দ্বিধা নেই যে, বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ও নির্দয় লকডাউনটি ভারতেই হয়েছিল। বার বার চর্চিত হতে হতে আজ আর্থ-রাজনীতি কিংবা সমাজনীতির যে কোনও ছাত্রীই দিনক্ষণ উল্লেখ করে বলে দিতে পারে যে — ২৪ মার্চ রাত আটটায় এক টেলিভিশন ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশজোড়া লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর ঘোষণা ছিল “আজ রাত বারা বাজে সে, পুরে দেশ মে, ধ্যান সে শুনিয়ে, পুরে দেশ মে, আজ রাত বারা বাজে সে, সম্পূর্ণ দেশ মে, সম্পূর্ণ লকডাউন হোনে যা রহা হ্যায়।“ মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে দেশের মানুষ গৃহবন্দি হল, কল-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-কাছারি স্তব্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল অর্থনীতির চাকা।

 

দেশ স্তব্ধ হল বটে, রাজপথ-জাতীয় সড়ক-জাতীয় রেলপথ ভরে গেল লক্ষ লক্ষ শ্রমিকে,  শ্রমিক পরিবারে। মহিলা-শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধায়। কাজ হারিয়ে, মজুরি হারিয়ে, মাথার উপর ছাদ  হারিয়ে, অজানা রোগের আতঙ্কে লকডাউন চুলোয় দিয়ে পথ ভরে ফেললেন দেশের মজুর  শ্রেণি। না শুধু দিল্লি, মুম্বাই নয়, মোদীর গুজরাত থেকেও পথে নেমে পড়েছিলেন অভুক্ত,  অর্ধভুক্ত, মজুরিহীন শ্রমিকেরা। লকডাউনের খবর হতেই ৩০ হাজার আদিবাসী শ্রমিক গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রদেশের গ্রামের বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছিল। ওই রাজ্যের আরও হাজার তিরিশেক শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন। মোদী তাঁর ভাষণে দিল্লি ও  মহারাষ্ট্র এবং কংগ্রেস ও আপ ছাড়া আর কোনও রাজ্য বা দলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেননি। এ কথা জেনেই যে, মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের জোট সরকার আর দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বড় দায়িত্বই তো কেন্দ্রের। বুঝতে অসুবিধা হয় না পাঁচ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস তো বটেই আপও বিজেপি-র প্রতিদ্বন্দ্বী দল। এই ফাঁকে সংসদকে ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারও খানিকটা তো হয়ে গেল। থাক সে কথা, আমরা প্রথমে ফিরে দেখি লকডাউন ঘোষণার পর পরই ঠিক কী ঘটেছিল দিল্লির বুকে। ২৪ মধ্যরাত থেকে, অর্থাৎ রাত বারোটা থেকে বন্ধ হয়ে গেল সব। সকাল হতেই লক্ষ লক্ষ মজুর বুঝে গেল কাজ বন্ধ শুধু নয় মজুরিও মিলবে না। হাজারে হাজারে শ্রমিক রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লেন। শুধু দিল্লি নয়, হরিয়ানা এমনকি পঞ্জাবে কর্মরত শ্রমিকরা দিল্লির আনন্দবিহার বাস টার্মিনাস, গাজিপুর এবং দিল্লি-গাজিয়াবাদ সীমান্তের লালকুঁয়া অঞ্চলে পৌঁছাতে শুরু করেন।  কেউ কেউ তাঁদের কর্মস্থল থেকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হেঁটে সীমান্ত এলাকায় কিংবা বাস টার্মিনাসে পৌঁছেছিলেন বাড়ি ফেরার বাসের আশায়। ২৬ তারিখ গাজিয়াবাদ, গাজিপুর, আনন্দবিহারে তখন লোকে লোকারণ্য। কত মানুষ? পুলিশ-প্রশাসনও হিসাব দিতে পারেনি ২৫ মার্চ থেকে ঠিক কত মানুষ উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করেছিল। এই শ্রমিক বাহিনীর অধিকাংশই ছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এমন হাজার হাজার শ্রমিক রাস্তায় নেমে আসায় উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁদের রাজ্যে ফেরানোর জন্য প্রাথমিক ভাবে ২০০ সরকারি বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ‘বাস চলছে’ এই বার্তা ছড়িয়ে পড়তেই দলে দলে  শ্রমিকরা দিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল। এই সামান্য কয়েকটি বাস দিয়ে হাজার হাজার মরিয়া শ্রমিকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব ছিল না। ২৭ ফেব্রুয়ারি আনন্দবিহার বাস টার্মিনাস জনসমুদ্রের চেহারা নেয়। স্ংবাদ সংস্থা এএনআই এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ট্যুইট করা ভিডিও-তে দেখা যায় হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি বাস ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। যে দিকে ক্যামেরা প্যান করছে, যতদূর ক্যামেরার চোখ পৌঁছাতে পারছে ততদূর শুধু মানুষের ঢল। মুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। সংবাদ মাধ্যম যাঁর সঙ্গেই কথা বলেছে তিনিই বলেছেন, তাঁরা ঘরে ফিরতে চান। দিল্লিতে থেকে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। দিল্লিতে সাহায্য করার কেউ নেই। গ্রামে তবু সাহায্য পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই বাস না পেয়ে শত শত মানুষ হাঁটা লাগিয়েছেন ১৫০-২০০ কিলোমিটার দূরের গাঁয়ের উদ্দেশ্যে। কারও কাঁধে বোঁচকা-বুচকি, কারও কোলে-কাঁখে দুধের শিশু।

 

ভারত ‘বনধ’ ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। এমনই চূড়ান্ত সফল সে বনধ যে কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিকের মজুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ভারত জুড়েই তারা রাস্তায়। ২৯ মার্চ খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাতে বাড়ি ফেরা আর খাদ্যের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ভিনরাজ্যের শ্রমিকরা। এই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পরিযায়ী শ্রমিকদের  উপর কেন্দ্রীয়  সরকারের ‘দায়বদ্ধতা’র কাহিনি শুনিয়ে একই নিঃশ্বাসে বলছেন, রাজ্যগুলি যেন তাদের দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল ব্যবহার করে হাইওয়ের পাশে পাশে ত্রাণ শিবির খুলে দেয়। পর মুহুর্তে প্রচ্ছন হুমকির সুরেই জানিয়ে দেন রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে “গণপরিযাণ যেন সীমান্ত পার করতে না পারে।” ২৬ মার্চ শুক্রবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আমরা রাজধানী এলাকার ২২৪টি নাইট শেল্টারে দু’লক্ষ মানুষের জন্য “লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থা করেছি। শনিবার থেকে চার লক্ষ মানুষকে দু’বেলা খাবার দেব।“ এবং দিল্লির ৩২৫টি স্কুলে ৫০০ জন করে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ২৯ মার্চ থেকেই অবশ্য রাস্তায় নেমে পড়া হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। আর যাঁরা মাঝপথে ছিলেন, সংবাদমাধ্যমের দৌলতে সারা পৃথিবী দেখেছে কীভাবে  তাঁদের উপর লাঠি চলেছে, স্যানিটাইজ করার নামে সারা শরীরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে  রাসায়নিক। প্রধানমন্ত্রী যে সত্যি বলছেন না জনপরিসরে এখনও রয়ে যাওয়া এই তথ্যই তা প্রমাণ করে।

 

কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ করেন যে, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস লকডাউনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন ও বাসের টিকিট কেটে দিয়েছিল বাড়ি ফেরার জন্য। মোদীর এই অভিযোগ একদিকে নির্জলা মিথ্যে আবার অন্যদিকে খানিকটা সত্যি বটে। মিথ্যা এই কারণেই যে, প্রথম দফায় ২১ দিনের লকডাউনে জরুরি পরিষেবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু যানবাহনেরই ছাড় ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন-বাস চলাচলই করেনি। কোনও ব্যক্তি কিংবা দলের পক্ষে সম্ভব ছিল না শ্রমিকদের ট্রেনে-বাসে চড়িয়ে রাজ্যে রাজ্যে পৌঁছে দেওয়ার। রাজ্যে রাজ্যে শ্রমিক অসন্তোষ, বণিকসভা ও শিল্পপতিদের চাপ, ক্রমে তলাতে থাকা অর্থনীতির চাপে লকডাউন শিথিল করে নিয়ন্ত্রিত ভাবে কলকারখানা খোলা এবং যানবাহন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু করে ১ মে। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচলেও এ সময় ছাড়প্ত্র দেওয়া শুরু হয়। মোদীকে কেউ মনে করিয়ে দেয়নি যে, এই ট্রেন যাত্রার জন্য, বাস যাত্রার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা দল হিসাবে  বিজেপি শ্রমিকদের কোনও আর্থিক সাহায্যই করেনি। রেলমন্ত্রক টিকিটের দাম গুণেগেঁথে নিয়েছে। শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার জন্য মহারাষ্ট্র তো বটেই, বিশেষ ভাবে দক্ষিণের রাজ্যগুলি ট্রেন ভাড়া বাবদ সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও ১০ জুন পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষ শ্রমিকের ঘরে ফেরার জন্য ট্রেনের টিকিট বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে। বহু এনজিও, সোনু সুদের মতো ব্যক্তি মানুষ, অসংখ্য সাধারণ মানুষ অর্থ দিয়ে, খাদ্য দিয়ে শ্রমিকদের সাহায্য করেছেন। এই সময়  কংগ্রেস দলগত ভাবে শ্রমিকদের জন্য যেমন বাস রিজার্ভ করেছে, তেমন ট্রেনের টিকিট হাতে তুলে দিয়ে সাহায্য করেছে। যে কথা মোদী ও যোগীজিকে কংগ্রেস মনে করিয়ে দিতে পারত যে, যোগী প্রশাসন নানা অজুহাতে এমন অনেক বাসকে হয় সীমান্ত পেরলেই আটক করেছে। যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। না হয় রাজ্যের ভিতরে নানা স্থানে বাস চালকদের হেনস্থা করেছে।

 

শ্রমিকরা যে বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া ছিল এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্ক ২৯ মার্চ থেকে ৯ মে পর্যন্ত রাজ্যে রাজ্যে ১৫৮টি শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। শ্রমিকরা খাদ্যের জন্য, ঘরে ফেরার যানবাহনের জন্য, আশ্রয় ও মজুরির জন্য বার বার পথে নেমে পড়ে। গুজরাতের সুরাতে ২৯ মার্চ থেকে ৯ মে পর্যন্ত ন’টি  বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। ৩ মে টাইমস অফ ইন্ডিয়া এক রিপোর্টে জানাচ্ছে, গুজরাত থেকে ২৫টি রাজ্য ২০,৯৫,৪২৮ জন নাম নথিভুক্ত করেছে। এঁদের মধ্যে এ রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন ৫১,৯৪৩ জন। লকডাউনের প্রথম পর্বে স্ট্র্যান্ড্রেড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্ক সারা দেশে  আটকে থাকা ১১১৫৯ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে এক সমীক্ষায় করেছিল। রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, লকডাউন ঘোষণার পর ৮৯ শতাংশ শ্রমিক মজুরি পাননি। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৬ শতাংশের রেশন মেলেনি। ২৭ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত কমপক্ষে ৭০ শতাংশের হাতে ছিল মাত্র ২০০ টাকা। এই সমীক্ষাকৃত শ্রমিকরা ছিলে কেউ দিনমজুর, কারখানা বা নির্মাণ শ্রমিক, গৃহ পরিচারিকা, গাড়ি চালক, ভেন্ডার, হকার প্রভৃতি। শ্রমিকরা কেন ঘরে ফিরতে চাইছিলেন, কেন বার বার বিক্ষোভে জড়িয়ে পড়ছিলেন উপরের তথ্য থেকেই তা পরিষ্কার।

 

এই দেশগাঁয়ে ফেরার পথে রাস্তায়, রেলপথে অসংখ্য দুর্ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জল ও খাবারের অভাবে, টানা হাঁটার পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে, হৃদরোগ কিংবা করোনা-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন অনেকেই। ঠিক কতজন তার হিসাব দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। সংসদে মুখের উপর বলে দিয়েছে কোনও তথ্য নেই। যেমন, ৬ ফেব্রুয়ারি রাজসভায় মোদীর মন্ত্রী জানিয়েছেন, গঙ্গায় ভেসে যাওয়া, গঙ্গার চরে পুঁতে দেওয়া লাশের তথ্য সরকারের কাছে নেই। কথায় আছে একটি মিথ্যে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ১০টা মিথ্যে বলতে হয়। তাই তথ্য নেই বলে দেওয়াই অনেক সুবিধাজনক। কিন্তু, কথায় তো এও বলা হয় যে সত্য লুকিয়ে রাখা যায় না। তা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই।

 

Share this
Leave a Comment