ঘরের মধ্যের হাতিটাকে প্রশ্ন করার সময় এসেছে


  • August 25, 2021
  • (0 Comments)
  • 1219 Views

এই তথাকথিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সত্তর ভাগ মানুষের কারণে প্রভাবিত। তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে ৯২ ভাগ, খরার ক্ষেত্রে ৬৫ ভাগ এবং বন্যার ক্ষেত্রে ৫৮ ভাগ  “প্রাকৃতিক দুর্যোগ ”, হয় মানুষের কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে নয় তার ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েছে। লিখছেন পরিবেশবিদ অরিন্দম রায়

 

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, তার আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় — এইবারে যদি আমরা ঘরের ভেতরে থাকা হাতিটিকে নিয়ে আলোচনা করি! করোনার আঘাতে জর্জরিত অবস্থায় গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত হাজির হয় ইয়াস। অথচ, একটু স্মরণশক্তি ঝালিয়ে নিলে কিন্তু দেখব, বিষফোঁড়ার মতো সাময়িক তো নয়ই, বরং সুগার-প্রেসারের মতো এক দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা করছে এরা। এরা অর্থাৎ এক্সট্রিম ইভেন্ট মানে বন্যা, খরা, তাপপ্রবাহ বা সাইক্লোনের মত সাংঘাতিক ঘটনা। এখন ইয়াস, তার আগে আমফান, তারও আগে ফণি, এছাড়াও দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে তাপপ্রবাহ, পঙ্গপালের আক্রমণ, আকাশ ভেঙ্গে বন্যা, ল্যান্ডস্লাইড। বিগত এক বছরের মধ্যে এর সবকটার সাক্ষী হয়েছি আমরা, কোনওটা হয়তো কান ঘেঁসে বেরিয়ে গেছে, কোনওটা বুকের মাঝে আঘাত করেছে।

 

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা এই জাতীয় ঘটনাগুলির একটা গালভরা শব্দবন্ধ আছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ। একবিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার দিক থেকে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা এই দুর্যোগগুলি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখলেন যে এই তথাকথিত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সত্তর ভাগ মানুষের কারণে প্রভাবিত। তাপপ্রবাহের ক্ষেত্রে ৯২ ভাগ, খরার ক্ষেত্রে ৬৫ ভাগ এবং বন্যার ক্ষেত্রে ৫৮ ভাগ “প্রাকৃতিক দুর্যোগ”, হয় মানুষের কর্মকাণ্ডে সৃষ্টি হয়েছে নয় তার ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে বঙ্গোপসাগরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা এবং এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা সাইক্লোনগুলিকে আরও শক্তিশালী করছে, ঢেউগুলিকে আরও বড় করছে যা উপকূলবর্তী মানুষের জীবন এবং জীবিকাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি দশকে ভীষণ শক্তিশালী ঝড়ের অনুপাত আট শতাংশ করে বেড়ে চলেছে। বায়ুমণ্ডল গরম হওয়ায়, বেশি বেশি করে জলীয় বাষ্প ধরে  রাখতে পারছে এবং এর ফলে বাড়ছে অল্প সময়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির ঘটনা যা মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। সাধারণ সাইক্লোন পরিণত হচ্ছে অতি শক্তিশালী সুপার সাইক্লোনে। ফলশ্রুতি, মিষ্টি জলের পুকুরে নোনা জল ঢুকে যাওয়া, চাষের জমিতে লবণাক্ততা বাড়া এবং জীবিকা হারানো লাখ লাখ মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া।

 

যে কোনও দুর্যোগের পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পাই সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। এ যুগে আবহবিজ্ঞানের উন্নতির কারণে বেশ কিছু সময় আগে থেকেই এই ধরনের দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব এবং সেই পূর্বাভাস পাওয়া মাত্রই সরকার সম্ভাব্য উপদ্রুত অঞ্চলগুলিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল উদ্যোগ যা আমাদের প্রাথমিক ভাবে অনেক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু প্রশ্ন হল, দুর্যোগকেন্দ্রিক মোকাবিলা করতে করতে আমরা দুর্যোগের পেছনের কারণটিকে গুরুত্ব দিচ্ছি কি? এই বারে সময় এসেছে ঘরের মধ্যে থাকা হাতিটির দিকে নজর দেওয়ার। অর্থাৎ কিনা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের থেকে আমাদের ক্রমশ জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য স্থির করতে হবে।

 

আমাদের মেনে নিতে হবে যে, সুন্দরবন সব সময় চীনের প্রাচীরের মতো আমাদের রক্ষা করতে পারবে না। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও প্রাবল্য দুই ক্রমশ বাড়বে। বঙ্গের মালভূমি অঞ্চলে বাড়বে তাপপ্রবাহ, যা দক্ষিণবঙ্গের একাধিক শহরে মানুষের প্রাণ নেবে হিট স্ট্রোক। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনার কারণে চাষি বাধ্য হবে বর্ষার জলের বদলে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার বাড়াতে, যা নামতে থাকা পানীয় জলস্তরকে আরও নামিয়ে দেবে। অল্প সময়ে অতিবৃষ্টি যেমন সমতলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে, তেমনি পাহাড়ে ধসের ঘটনা বাড়াবে। বৃষ্টিপাতের তারতম্য এবং আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাতে বাড়বে নতুন নতুন পোকার আক্রমণ, জলবাহিত বা ভেক্টরবাহিত রোগের সংখ্যা, মৌমাছি হারাবে তার প্রাকৃতিক বাসস্থান। পৃথিবীর ইতিহাসে সব থেকে বড় দেশান্তরী হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। যুদ্ধ বা অ্যাক্সিডেন্টের থেকে অনেক বেশি প্রাণ কাড়ছে সে। এতো গেল মানুষের ক্ষতির প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইতিমধ্যে যে হারে জীব বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তাকে বিজ্ঞানীরা তুলনা করছেন বিরাট উল্কাপাত বা হিম যুগের সময় হওয়া প্রাণের বিনাশের মত ঘটনার সঙ্গে।

 

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তন যদি একবিংশ শতাব্দীর সব থেকে বড় বিপদ হয়, তাহলে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন নামের হাতিটিকে নিয়ে কথা বলছি না কেন ? প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তন একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া, যার প্রভাব সম্প্রতি আমাদের চোখের সামনে আসতে শুরু করেছে। অথচ, সরকার গঠন হয় প্রতি পাঁচ বছর অন্তর। ফলে, কোনও সরকার যদি জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি নেয়ও তার প্রভাব আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি এই সমস্ত পদ্ধতি কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে খুব একটা কার্যকরী নাও হতে পারে। তাই উপায় হল, সাধারণ মানুষকে এই সম্পর্কে এতটাই সচেতন হতে হবে যে রাজনৈতিক দলগুলি ভোটে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রধান ইস্যু হিসেবে রাখতে পারে বা রাখতে বাধ্য হয়। দ্বিতীয়ত, এখনও আমাদের মনে ধারণা আছে যে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তন হবে আমাদের জীবদ্দশার পরে কখনও, আমরা হয়তো বেঁচে যাব। কিন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন যে হচ্ছে এবং তার ফলে আমাদের জীবন-জীবিকার ওপর যে সরাসরি প্রভাব ফেলছে তা আমাদের সবার আগে বুঝতে হবে। তৃতীয়ত, এখানে একটা অসাম্যের ব্যাপারও আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সমাজের ‘হ্যাভ নট’ শ্রেণির মানুষ, তাপপ্রবাহ হলে আমরা এসি চালিয়ে বসব, বা ঝড়ের সময় আমরা থাকব কংক্রিটের তৈরি সুরক্ষিত বলয়ে। কিন্তু সরাসরি প্রভাব পড়বে সেই মানুষদের ওপর যাঁরা এই সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত, যাঁরা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে পেট চালান। তাঁরা কিন্তু জলবায়ুর এই খামখেয়ালিপনার প্রথম শিকার হবেন। এই মানুষগুলির কথা কেই-বা শুনেছে। চতুর্থত, জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি বিষয় যেখানে বিজ্ঞান, কলা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ডেটা সায়েন্স, স্থাপত্য বা জনসংযোগের মতো একাধিক বিষয় জড়িয়ে। একটি ছোট্ট সিদ্ধান্তের ফল সুদূরপ্রসারী হয়ে যেতে পারে। সচরাচর, আমরা নিজেদের গণ্ডির মধ্যে থেকে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, তাই এরকম নানাবিধ বিষয়ের সমাহার যেখানে সেখানে কিন্তু আমরা সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে ভালোবাসি। এই কারণে আমরা হাতিটিকে এড়িয়ে এসেছি এত দিন, কিন্তু আর যে সময় নেই বেশি। একদিকে আমাদের তৈরি হতে হবে, আমাদের ঘর, চাষ, কারখানা এমনকি বেড়াতে যাওয়াকেও জলবায়ু প্রতিরোধী করতে হবে। আবার অন্যদিকে, আমাদের সুস্থায়ী উন্নয়নে জোর দিয়ে কমাতে হবে গ্রিন হাউস গ্যাস। আমরা নই, আমাদের পরের বা তার পরের প্রজন্মরা দেখবে শেষের সেই দিন। কাজেই এটা আমাদের দায়িত্ব যাতে এ পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যেতে পারি।

 

সময় কম, কিন্তু সময় আছে। আমাদের উন্নয়নের প্রতিটি সিদ্ধান্ত জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে বানাতে হবে। সেটা নদীর বাঁধের প্রকৃতি কী হবে বা কোন ধরনের বাড়ি ঝড়ের মুখে ভেঙে পড়বে না বা কোন শিল্পতে লগ্নি করব, সমস্ত সিদ্ধান্ত যেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধী হয়। দুই বাংলা সাংঘাতিক ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে এবং হবেও। অথচ, আমরা এই বিষয় নিয়ে খুব কম জানি, কারণ সিলেবাসে নেই যে। পৃথিবীর হাতে গোনা একটি-দু’টি উন্নত দেশে, জলবায়ু পরিবর্তনকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মধ্যে ঢোকানো হয়েছে। তাদের তুলনায় আমাদের প্রয়োজন অনেক বেশি। বাংলা যদি এই ব্যাপারে গোটা বিশ্বকে পথ দেখায় সেটা তো একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে ভূগোল বা পরিবেশ বিদ্যার একটা ছোট চ্যাপ্টারে আবদ্ধ করে না রেখে আলাদা করে বিষয় হিসেবে ছড়িয়ে দিতে পারলে, ভবিষ্যতের নাগরিকরা ওই হাতিটাকে নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করবে। আর তখনই প্রতিরোধ বাড়বে।

 

সম্প্রতি বেরোনো ইন্টার গভর্নমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ-এর রিপোর্ট আসলে নতুন কিছু বলছে না। হ্যাঁ, এর আগের রিপোর্টে বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিক উষ্ণায়নে মানুষের অবদান নিয়ে, আর এই রিপোর্টে বিজ্ঞানীরা জোর গলায় বলছেন যে, মানুষ এবং মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে৷ বাদবাকি, তাপপ্রবাহের বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনা থেকে শুরু করে সমুদ্রতলের উচ্চতাবৃদ্ধি বা মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাওয়ার হার সংখ্যা ও কনফিডেন্সের বিচারে সামান্য পরিবর্তন হলেও আমরা যে একেবারে জানতাম না, সেটা নয়। রিপোর্টে পৃথিবীর জন্য সামগ্রিক পরিবর্তন কী হবে তার থেকেও অনেক বেশি জরুরি এখন মেদিনীপুর বা কাঁচড়াপাড়া বা বালুরঘাট কিংবা গলসিতে কী পরিবর্তন হবে! জলবায়ু পরিবর্তন কে গ্লোবাল বা বৈশ্বয়িক হিসাবে না দেখে লোকাল বা স্থানীয় ভাবে দেখা উচিত। সেই দিক থেকে এই রিপোর্টে ব্যবহার করা তথ্য যা কয়েকটি ক্লিক করলেই আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। এবং এই তথ্য নিয়ে স্থানীয় আকারে পরিকল্পনা করা জরুরি। শুধু মাত্র পশ্চিমবঙ্গেই ছয়টি আলাদা আলাদা ভৌগোলিক অঞ্চল রয়েছে যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভিন্ন ভিন্ন পড়তে চলেছে। প্রতিটি জেলা বা ব্লক ধরে ধরে যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে যুঝে ওঠার পরিকল্পনা না করতে পারি তাহলে বিপদ। বৈচিত্র্য বেশি হওয়ার কারণে রুখে দাঁড়নোর পরিকল্পনাও আলাদা আলাদা হবে।

 

গড় বৃষ্টিপাত বাড়বে বা কমবে কিনা তার থেকে জরুরি দুই বৃষ্টির মধ্যে সময় বাড়বে কিনা বা অতি ভারী বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে কিনা! একই সঙ্গে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ল কিনার থেকেও জরুরি হলো বছরে ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার দিনের সংখ্যা বাড়ল করা কিনা! ক’ফুট সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়ছে তার সঙ্গে সঙ্গে দেখতে হবে সাইক্লোন আসার হার কতটা বাড়ছে। শহরগুলির অতিবৃষ্টি সামলানোর পরিকাঠামো নেই। যেমন নেই জলবায়ুর প্রকৃতি বুঝে জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা জীবিকা নির্বাহের অভ্যাস। খরা প্রবণ অঞ্চলে চাষের ক্ষেত্রে প্রচুর জল প্রয়োজন হয় এমন ফসল নির্বাচন যেমন ক্ষতিকর, তেননই ক্ষতিকর জলাশয়, খাল, জলাভূমি বুজিয়ে শহুরে উন্নয়ন। মানব সভ্যতা এত বড় সংকটের মুখে আগে কখনও পড়েনি। সম্ভবত, বিশ্বযুদ্ধ, কোল্ড ওয়ার বা কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের থেকে অনেকগুণ বেশি বিপজ্জনক জলবায়ু পরিবর্তন। কাজেই প্রতিরোধ শুরু করুন, প্রতিবাদ শুরু করুন এবং সর্বোপরি আলোচনা শুরু করুন।

 

লেখক একজন বৈজ্ঞানিক, সুইস ফেডারাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে কর্মরত এবং  www.sobujprithibi.in এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

 

Feature Image Courtesy: https://www.newscientist.com

 

Share this
Leave a Comment