বর্বরতার বিষ


  • August 24, 2021
  • (0 Comments)
  • 892 Views

Groundxero | 24 August, 2021

 

সাম্প্রতিক অতীতেই ত্রিপুরা সরকারকে গণতন্ত্রের শিক্ষা দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। আর মঙ্গলবার খোদ শিক্ষামন্ত্রীর সরকারি আঙিনায় শিক্ষিকাদের বিষপানের হাড় হিম করা দৃশ্য – এ রাজ্যের দীর্ঘ রাজনৈতিক কুশিক্ষা ও বর্বর প্রশাসনের অনেকানেক কাণ্ডের অন্যতম মর্মান্তিক প্রতীকচিহ্ন হয়ে উঠল। এর পরও নিশ্চয় শিক্ষামন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ভিন রাজ্যে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে যাবেন, কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট এই দৃশ্য তাঁর পিছু ছাড়বে না।

 

মমতা বন্দ্যোপাধায় সরকারের ইতিহাস বলে, এ রাজ্যে কোনও বিরোধী দল, গোষ্ঠী, স্ংগঠনেরই দাবি-দাওয়া, বাদ-প্রতিবাদ, অবস্থান বিক্ষোভ, আন্দোলনের স্বাভাবিক অধিকার নেই। অবজ্ঞা, নির্মমতা, পুলিশি নিপীড়ণ, মিথ্যা মামলা যে কোনও প্রতিবাদের সরকারি প্রত্যুত্তর। শিক্ষা দপ্তরের সামনে পাঁচ শিক্ষিকার বিষপান এই অগণতান্ত্রিক পরিবেশেরই নির্মম প্রতিফলন। সরকারি নির্দয়তা কতদূর ভয়াবহ হলে তা নাগরিককে আত্মঘাতী হতে প্ররোচিত করতে পারে – তা মনোবিদদের গবেষণার বিষয় হতে পারে। আমরা শুধু জানি রাজ্যে এই এসএসকে ও এমএসকে শিক্ষা সহায়িকারা যথাক্রমে মাসিক ১০,১৯০ ও ১৩,৫০০ টাকা বেতন পান। অথচ, দায়িত্বের কোনও শেষ নেই। স্থায়ী শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন বৈষম্য, চাকরির স্থায়ী করার দাবিতে দীর্ঘকাল তাঁরা দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসছেন। উত্তরে সরকার ১৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে দূর দূর জেলায় কোনও কোনও শিক্ষিকাকে ১০০০ কিলোমিটার দূরের জেলাতেও বদলি করা হয়। যেমন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানার শিক্ষিকা পুতুল মণ্ডলকে কোচবিহারের দিনহাটায়, মইদুল ইসলামকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি থেকে কোচবিহারের হলদিবাড়িতে, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির শিক্ষিকা জ্যোৎস্না টুডুকে জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে, পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের শিখা দাসকে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে বদলির নির্দেশ জারি করা হয়।

 

এখানেই শেষ নয় বদলির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গ্রেপ্তারও করা হয়। ঝাড়্গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভার অদূরে বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগে মইদুল ইসলামকে ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। জানা গিয়েছে একদিন বাদে আদালতে জামিন পাওয়ার পর তাঁরা বদলির বিরুদ্ধে ২৩ অগস্ট মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২২ অগস্ট মাঝরাতে কলকাতা পুলিশের গুন্ডা দমন শাখা কলকাতার এক গেস্ট হাউস থেকে সাত জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে গ্রেপ্তার করে লালবাজারে নিয়ে যায়। এবং ২৩ অগস্ট আদালতের সময় পার হওয়ার পর সন্ধ্যায় জামিনে ছাড়ে। প্রতিবাদে মঙ্গলবার পাঁচ শিক্ষিকা বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ জানাতে এবং শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাতে এসে পুলিশি বাধার পর বিষ খান। পাঁচ জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর পরও মরার উপর খাঁড়ার ঘা মারতেও পুলিশ প্রশাসন দু’বার ভাবেনি। এবং বর্বর নির্দয়তায় যেন তিল মাত্র কম না পড়ে সেই লক্ষ্যে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। শিক্ষিকাদের বিষপান প্রমাণ করে এ রাজ্যে অগণতান্ত্রিক মনোভাব এবং বর্বরতার বিষ সরকার ও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

Share this
Leave a Comment