নজরদারি নির্ভর চিকিৎসা ব্যবস্থা ও কোভিড মহামারী


  • May 25, 2021
  • (0 Comments)
  • 1160 Views

ডঃ অরুণ সিং এর কথা যদি আমরা মিলিয়ে দেখি তবে বুঝতে পারব কেনও এত এত অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ রোগটা ভাইরাস নয় মূলত ভাইরাসের প্রভাবে শরীরের অনাক্রম্যতার অতি সক্রিয়তা তৈরি করছে। তাই ভাইরাস মারতে কামান দেগে লাভ নেই। লিখেছেন অমিতাভ আইচ। 

 

“কোভিড চিকিৎসায় মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত সাইটোকাইন ঝড় আসছে কিনা তার উপর নজরদারি ও সেটাকে বাড়াবাড়ি হওয়ার আগেই সামলানো, আর তাতেই জীবন বাঁচবে।”

 

মনে হয় এই কথা গুলো আমরা কিছুটা শুনে ফেলেছি। এবং অধিকাংশ মানুষকে জিগ্যেস করলে বলবেন, কে বলছেন? না,ডঃ অরুণ সিং। অথচ ডঃ সিং যেটা বলছেন সেটা নতুন কিছু নয়। বাকিদেরও বলা উচিত ছিল এবং চিকিৎসাটাও সেভাবেই করাটা উচিত ছিল। ডঃ সিং শুধু একজন ভাল ডাক্তার নন, একজন ভাল গবেষকও। যিনি ইতিহাস ঘাঁটেন। তিনি এই কথা বলছেন গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকে, যা দেখাচ্ছে  ২০০২ সাল থেকে সারস ভাইরাসগুলির কাণ্ডকারখানা দেখলে বোঝা যায় যে তারা মূলত একই রকম আছে। হ্যাঁ অনেকে দেখতে পান না সেটা নিয়ে কিছু বিশেষ করার নেই। ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি মহামূল্য গবেষণা পত্রে (JSM Peiris et al, 2003: The Lancet) দেখাচ্ছে যে সারস ভাইরাস সংক্রমণের ক্লিনিকাল সিম্পটমগুলি কী করে প্রকাশিত হয়। যেমন, জ্বর আসা, পেট পাতলা হওয়া, অক্সিজেন কমা ও এ আর ডি এস বা মারাত্মক শ্বাসকষ্ট আর তা এখনও একই আছে (ছবিঃ ১)। এই গবেষণা পত্রে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে “The Consistent clinical progression, shifting radiological infiltrates, and an V viral load profile suggest that worsening in week 2 is unrelated to uncontrolled viral replication but may be related to immunopathological damage.”। এক কথায় শরীরের ভিতর এই সব ধ্বংসলীলার সাথে ভাইরাসের বংশবিস্তারের কোনও সম্পর্ক নেই, বরঞ্চ ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের অনাক্রম্য ক্ষমতা কী করছে তার সম্পর্ক আছে। এর অনেক পরে ২০২০ সালে নেচার পত্রিকায় সুস্পষ্ট করে একদল বিজ্ঞানী বলেন কোভিড রোগীদের মারাত্মক শ্বাসকষ্ট জনিত বিপদ থেকে বাঁচানোর রহস্য লুকিয়ে আছে তার রক্তের IL 6 ও TNF α নামক সাইটোকাইনের মাত্রায় (D M Del Valle et al, 2020, Nature Medicine, 26, 1636)। ততদিনে ভারতীয়, তুর্কি ও কোরীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে যে ভাইরাস লোডের সাথে কোভিড-১৯ রোগের কোনও সমানুপাতিক সম্পর্ক নেই বরঞ্চ অ্যাসিম্পটোমেটিক রোগীরাই বেশি ভাইরাল লোড বহন করছে (রেফারেন্স ৪)। এই তথ্য সামনে আসতেই কমতে থাকে রোগের প্রকোপ বুঝতে সিটি ভ্যালুর গুরুত্ব।

 

ডঃ অরুণ সিং কে?

আমরা এখন জানি উনি  সুবিখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও গবেষক চিকিৎসক। কিন্তু আমরা হয়তো ভুলে গেছি এই হলেন সেই ডঃ অরুণ সিং, অসামান্য গবেষক ও অধ্যাপক যিনি এসএসকেএম হাসপাতালে ভারতের প্রথম ও আধুনিক নিওনেটালজি ডিপার্টমেন্ট চালু করেছিলেন, বহু আলাদা গবেষণা প্রকল্প এনেছিলেন যা এসএসকেএম-এর ইতিহাসে কোনওদিন আসেনি, তৈরি করেছিলেন ব্রেস্টমিল্ক ব্যাঙ্ক। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট করে হাসপাতালে আসা আর গরিব রোগীকে ওষুধ কিনে দেওয়া এই ভদ্রলোক ২০১২ সালের কোনও এক সময় একটা ইন্টারভিউতে একজন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ক্যান্ডিডেটকে বলেন তার এই পোস্টে আবেদন করারই যোগ্যতা নেই। ছেলেটি পোস্টটি পায় না। কিছুদিন বাদে ডঃ সিং এর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সকলের চোখ কপালে ওঠে। কিন্তু তিনি সাগর দত্ত হাসপাতালে বদলি হন। পরে সাগর দত্তের উন্নতি হয় এবং ডঃ সিংকে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ন্যাশনাল চাইল্ড হেলথ প্রোগ্রামের উপদেষ্টা করে। যদিও তা সহজ হয়নি। কারণ তাঁর ‘পানিশমেন্ট পোস্টিং’ থেকে অত সহজে রেহাই দিতে চায়নি রাজ্য সরকার। তবে আটকে রাখাও যায়নি। এ নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়। আগ্রহী পাঠক নীচের সংবাদের রেফারেন্স লিঙ্ক গুলি (১ ও ২) দেখতে পারেন।

 

যাই হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি, আর তা হলো কোভিড নিয়ন্ত্রণে ডঃ সিং যেটা বলেছেন। আমরা যদি শুধুমাত্র রোগীর দেহের তাপ, পালস, প্রেসার, অক্সিজেন (৬ মিনিট সাধারণ ঘরের মধ্যে হাঁটার পর) এসব বিষয়ের দিকে নজর রাখি তবে রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে কিনা বুঝতে পারব এগুলির স্টেডি পতন দেখে। মনে রাখতে হবে SPO2 ৯৪ কোনও বিষয় নয়, অনেকের কম হয়, সকালে কম থাকে আবার উঠে যায়। স্টেডি পতন। রোগীর শরীরের কিছু বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়নিক, যাকে সাইটোকাইন (সাইটো মানে কোষ, কাইন মানে গতি) বলা হয়, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলি থেকে নির্গত হয়, তা ১৫-২০% রোগীর শরীরে বেড়ে যায় এই সংক্রমণ হলে। যেমন ইন্টারলিকুইন বা IL 6, IL 8, টিউমার নেকরোসিস ফ্যাকটার বা TNF alpha ইত্যাদি। এরা শরীরের নানান স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এই সাইটোকাইনসগুলি অন্যান্য অঙ্গের সাথে ফুসফুসকে আক্রমণ করে ও মারাত্মক নিউমোনিয়া তৈরি করে আর এর সাথে কমে যায় লিম্ফোসাইটও (লিম্ফোসাইটোপেনিয়া) আর বাড়তে পারে নিউট্রোফিল কোষ। এসব হওয়ার শুরুতেই তিনটি রক্ত পরীক্ষা এই ঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারে; C Reactive Protein (CRP) যা যকৃত বা লিভারে প্রদাহ হলে তৈরি হয়, d’ dimer (রক্তে তঞ্চনের পর পড়ে থাকা কিছু পদার্থ এবং অতিরিক্ত সাইটোকাইনস রক্তে তঞ্চন ঘটাচ্ছে কিনা তার প্রমাণ ) এবং ওই IL 6। রোগী কোভিড পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই থাক, রোগীর অবস্থা, রোগীর উপরে বর্ণিত চার্ট, যদি সম্ভব হয় এই রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা করতে হবে এবং বিশেষ ধরনের CSS কমানোর ওষুধের পাশাপাশি সবচেয়ে সহজ ভাবে কিছু বিশেষ স্টেরয়েড নির্দিষ্ট মাত্রায় দিলে এই সাইটোকাইন স্টর্ম যা মাল্টিঅরগান ফেলিওর, তঞ্চন ও ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করে প্রাণঘাতী হচ্ছে তা আটকানো যাবে। চার্ট ফলো করে যদি কাজ করা যায় তবে রোগের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া স্টর্ম যা ১৫-২০ শতাংশ মানুষের হয় এবং অক্সিজেন ও হাসপাতালের আই সি ইউ এর চাহিদা বাড়ায়, দেরি ও অপ্রতুলতায় মৃত্যু ঘটায় তা আমরা সামলাতে পারব।

 

ডঃ সিং এর কথা যদি আমরা মিলিয়ে দেখি তবে বুঝতে পারব কেনও এত এত অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ কোভিড সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ রোগটা ভাইরাস নয় মূলত ভাইরাসের প্রভাবে শরীরের অনাক্রম্যতার অতি সক্রিয়তা তৈরি করছে। তাই ভাইরাস মারতে কামান দেগে লাভ নেই। রেমডিসিভির নিষিদ্ধ হয়েছে হালে প্রচুর কালোবাজারির পর। বাকি অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিবায়োটিক ও রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসে ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, একটি ক্রিমির ওষুধ একে একে সবই পরিত্যক্ত হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত স্টেরয়েড যে আর্লি CSS নিয়ন্ত্রণ করে জীবন বাঁচাতে পারে তা গত বছর ব্রিটেনে রিকভারি ট্রায়ালে বোঝা গিয়েছিল (রেফারেন্স ৩)। অথচ টসিলিজুম্যাব জাতীয় অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের ওষুধ, যা এই সাইটোকাইনস গুলিকে শরীরের ভিতর ব্লক করতে পারে যার কার্যকারীতা একই সময় বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয় এবং যা কিনা বহু ধরনের রোগীদের দেওয়া যায় না যার দাম অনেক বেশি সেই ওষুধটির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু ব্যর্থ ওষুধ নিয়ে নক্কারজনক কালোবাজারি চলে দেশে। আর এসবই হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও মিডিয়ার প্রচারের কারণে (রেফারেন্স ৬)। এর দায় সরকার, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা এক শ্রেণির চিকিৎসক কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। কম পয়সার স্টেরয়েডের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার যে জীবন বাঁচাতে পারে তা আগেই প্রমাণিত হয়েছে আর ভারতের জন্য তা সর্বোত্তম তা বহু চিকিৎসক স্বীকার করেছেন (রেফারেন্স ৫)। শুধু তাই নয় কোভিডের পরিপ্রেক্ষিতে মূলত জঞ্জালসম অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলোকে নিয়ে এরপরও এক্সপেরিমেন্ট করেছে হু, যার নাম ছিল সলিডারিট ট্রায়াল। যদিও ট্রায়াল শেষে এর সবগুলোই পরিত্যক্ত হয়েছিল গত বছরই। ভারতে এক শ্রেণির ডাক্তার আর “আই সি এম আর” এই গাইড লাইন রেখে দেয়। ফলে দেশ জুড়ে এই ওষুধের ব্যবহার চলেছে। এখন হু শুধু সিভিয়ার সিম্পটম ছাড়া স্টেরয়েড দিতে নিষেধ করছে। আই সি এম আর এর ডাইরেক্টার ডঃ গুলেরিয়া স্টেরয়েডের বেশি ব্যবহার নিয়ে মানুষকে সতর্ক করেন কিন্তু তিনি ভুলেও এই সত্য গুলো মানুষের সামনে তোলেন না। ডঃ সিং সঠিক বলছেন ঝড় শুরু হয়ে গেলে বা বড় আগুন লাগলে যখন দমকলও কিছু করতে পারবে না তাই অপেক্ষা করে লাভ নেই। ঝড়ের আগে ছোট ঝড় বা আগুন সামলাতে ফায়ার এক্সটিনগুইশার ব্যবহার করলে ঘর ও প্রাণ দুই-ই বাঁচতে পারে। আর তার জন্য কম দামি ও সহজ লভ্য স্টেরয়েডের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ভারতের মতো দেশের ক্ষেত্রে যে সঠিক ব্যবস্থা তা আগেই বলা হয়েছে।

 

নিওন্যাটালজি ও কোভিড:

ডঃ অরুণ সিং গত বছর বলেন যে “ল্যাকটেটিং মা, বা প্রেগন্যান্ট মহিলারা ইমিউনিটি সাপ্রেসড হওয়ায় এদের শরীরে সাইটোকাইনস থেকে হওয়া এই মারাত্মক কাণ্ডগুলো প্রায় হয় না। তাই মা থেকে শিশুকে কোভিড সংক্রমণে আলাদা করা যাবে না”। এটা সেই সময় যখন সিডিসি থেকে পশ্চিমের সব নিয়ন্ত্রক সংস্থা এর ঠিক উল্টোটাই বলছিল।
এবং সেই শুনে আই সি এম আরও। অরুণ সিং সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেন এবং যোধপুর এইমসে তার হাইপোথিসিস পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন এবং তার উপর ভিত্তি করে সরকার পরবর্তী কালে নিওনেটাল ওয়ার্ডের কোভিড প্রোটোকল পরিবর্তন করে।


সামাজিক সংহতি ও প্রস্তুতি:

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় তিনি সামাজিক সংহতি ও নজরদারির উপর জোর দিয়েছেন এবং বলেছেন মানুষকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে, আলো ও অন্য মানুষের মুখ না দেখতে দিয়ে আমরা রোগীদের অবস্থা সেলুলার জেলের কয়েদিদের মতো করে তুলছি। বস্তুত আই সি সি ইউ-এর এসি আর পিপিটি পরা ডাক্তার আর নার্সরা রোগীর কোনও ভাল করছেন না এমন কথাও বলেছেন তিনি। বলেছেন পথ একটাই রোগীকে নজরে রাখা, খুশি রাখা, যাতে প্রদাহ কম হয় ও শরীরে সেরোটোনিন বেশি থাকে, সাহস দেওয়া, পাশে থাকা ও হাওয়া চলাচল করানো ও যদি CSS (Cytokine Storm Syndrome) হয় তবে সেটাকে নিয়ন্ত্রণের ওষুধ দেওয়া। সেই ওষুধ সবচেয়ে কম দামি ও সহজলভ্য স্টেরয়েড। তবে তা নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় দিতে হবে কারণ স্টেরয়েড (যেমন গ্লুকোকর্টিকয়েড) শরীরে শর্করা বাড়ায় ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কমজোরি বা ইমিউন সাপ্রেস করে সমস্যা করতে পারে। তাই রিকভারি ট্রায়ালের নিয়ম মেনে ও রোগীর অবস্থা ভেদে ১০ দিনের নিয়ন্ত্রিত ডোজ যা পরে কমানো বাড়ানো যেতে পারে, সাথে সুগার মাপা ও নজর রাখা আর যেটা একমাত্র একজন চিকিৎসকর তত্ত্বাবধানে শিক্ষিত নার্স বা প্যারামেডিকরাই পারেন। কোভিড চিকিৎসায় তাই তিনি কমিউনিটি মেডিসিন বা এলাকা ভিত্তিক চিকিৎসা এবং প্যারামেডিকসদের গুরুত্ব ডাক্তারদের চেয়ে বেশি এটা বার বার মনে করে দিইয়েছেন। মনে করে দিয়েছেন একটি গবেষণার কথা (R. Chaudhry et al, 2020, E Clinical Medicine 25 (2020) 100464) যা পৃথিবীর ৫০ টা দেশের সরকারি ব্যবস্থা, প্রস্তুতি, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং কোভিড মৃত্যুকে মিলিয়ে দেখেছে। এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সাথে এটাও বলেছে যে, যদি ১০ লক্ষ জনসংখ্যা পিছু ৬০০০ নার্স থাকে তবে এমন সংক্রমণে ২০-৩০ জন মারা যাবেন। আর সংখ্যাটা যদি ৩০০০ হয় তবে মৃত্যুর ওই সংখ্যাটা হয়ে যাবে তিন গুণ (নীচে গ্রাফ দেখুন)। তবে এসবই তখনকার তথ্য যখন দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে দেয়নি। আর মাস ভ্যাকসিনেট করে উন্নত বিশ্ব কোভিডকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এনে ফেলেনি।

 

একে এত খরচ তার উপর এত দামি রক্তপরীক্ষা সাধারণ মানুষ কীভাবে করবে:

২০২০র একটা পাবলিক লেকচারে ডঃ সিং বলেছেন, ভবিষ্যতের ভাইরাসগুলি আমাদের কীভাবে বিপদে ফেলবে এটা আমরা এর থেকে আন্দাজ করতে পারি। আর এর থেকে বাঁচার জন্য আমাদের চাই কমিউনিটি বা এলাকা ভিত্তিক সাইটোকাইন ল্যাব যেখানে পাড়ার ছেলেদেরও সিআরপি নির্ণয় করার ট্রেনিং দেওয়া যায়, যা কখনই আরটিপিসিআর-এর মতো ব্যয়বহুল, স্কিল নির্ভর নয়। যেখানে রোগীর লক্ষ্মণ ও চার্ট দেখে তার অবস্থা বোঝা যায় এবং সিধান্ত নেওয়া যায়। সেখানে আমরা সেটা না করে বড় বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নির্ভর ব্যবসায়িক পরিকাঠামো গড়ে তুলেছি। তার ফল তো আমরা পাবই। এই পলেসি পরিবর্তনটা আমাদের করতে হবে।

 

মোট কথা আপাতত এই রক্ত পরীক্ষা যাদের সামর্থ্য নেই যেন না করানো হয়। কারণ CSS হচ্ছে কিনা তা লক্ষণ দেখে বোঝা যায়। বাতাসে সারস ভাইরাস আছে আর এই লক্ষণ মানে CSS। এর উপরই চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এখানেই এবং এই নজরদারি নির্ভর ক্লাসিকাল চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে আস্থা রাখাটাই ডঃ সিং এর বক্তব্যের গুরুত্ব। আমরা যদি অযথা ছোটাছুটি না করে সকলকে এটার উপর নজর রাখতে বলি ও চার্ট করে রাখি, ডাক্তারকে জানাই, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগীকে বাঁচিয়ে দেব। এটাই উনি বলতে চেয়েছেন। আর এটা পরীক্ষিত সত্য।

 

ছেলেটা কে ছিল?

যেটা বলা হয় নি, যে ছেলেটিকে না নেওয়ায় অরুণ সিং-কে এই রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হয় সে সেই সময়ের শাসক দলের বড় নেতা ছিল আর সিং একটু বামঘেঁষা ছিলেন। ডঃ সিং এর ঘটনা প্রায় ডঃ সুভাষ মুখার্জির ঘটনা নিয়ে করা ‘এক ডক্টর কি মওত’-এর ঘটনার একটা রিপ্লে। মূল ঘটনা যাই হোক সিনেমার গল্প শেষে প্রতিভাবান ডাক্তার রাজ্য ও দেশ ছাড়েন। আজ এই প্রশ্ন করার সঠিক সময় পশ্চিমবঙ্গের এই ভয়ানক কোভিড পরিস্থিতিতে কেনও রাজ্য সরকার ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ সার্ভিসের এই অসামান্য চিকিৎসককে ব্রাত্য করে রেখেছ। এ রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সামলানোর স্টিয়ারিং কমিটির মাথায় যদি তাকে বসানো হয় তবে কতটা পার্থক্য হবে আমরা কি তা বুঝতে পারছি না? না কি ইগোই সব এই দেশে ও সমাজে। ডঃ অরুণ সিংরা আমাদের বরাবরই শিখিয়ে এসেছেন ডাক্তার কথাটার আসল মানে। আমরা শিখছি কি?

 

রেফারেন্সঃ

১) https://m.timesofindia.com/city/kolkata/after-surprise-transfer-probe-shock-for-doctor/articleshow/16857855.cms

২) https://www.telegraphindia.com/west-bengal/top-doc-tethered-to-dud-post-mamata-ministry-no-to-national-duty/cid/1287058

৩) রিকোভারি ট্রায়াল

(ডেক্সামিথাসন)  https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMoa2021436 

৪) https://health.economictimes.indiatimes.com/news/industry/indian-scientists-find-higher-viral-load-in-asymptomatic-covid-19-patients/77872935

৫) https://www.thehindu.com/news/national/indian-doctors-express-cautious-endorsement-for-dexamathasone-for-covid-19/article31845167.ece

৬) https://www.hindustantimes.com/india-news/indians-turn-to-black-market-unproven-drugs-as-covid-19-surges-101619696786801.html

Share this
Leave a Comment