স্থানীয় বিজেপি মাতব্বরদের শাসানিতে বাসন্তী-তে বন্ধ হল ‘ইঁদুরকল’ নাটক


  • March 27, 2021
  • (1 Comments)
  • 1779 Views

“এটা বিজেপির এলাকা, এখানে নাটক করতে গেলে বিজেপির হয়ে কথা বলতে হবে। এ নাটক এখানে, পশ্চিমবঙ্গে করা যাবে না,” বাসন্তীতে ‘ইঁদুরকল’ নাটক করতে গিয়ে একথা শুনতে হল জনগণমন নাটকদলের অভিনেতাদের। বন্ধ করে দেওয়া হল শো। খুলে নেওয়া হল এনআরসি বিরোধী পোস্টার। গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট।

 

গতকাল ২৭ মার্চ ছিল বিশ্বনাট্যদিবস। সেই উপলক্ষ্যে বাসন্তীর জাগৃতি ক্লাবে ম্যানগ্রোভ থিয়েটারের আমন্ত্রণে দু’দিনের নাট্যোৎসবে শো করতে গিয়েছিলেন ‘ইঁদুরকল’ নাটকের অভিনেতারা। সদ্য প্রয়াত নাট্যকার ও গণআন্দোলনের কর্মী রাজা বিশ্বাসের লেখা এটা ছিল এই নাটকের একাশিতম শো। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় শো করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে নাটকটি। দলের নাম জনগণমন। শহুরে মধ্যবিত্ত দর্শকের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে গিয়ে পথেঘাটে মানুষকে নাটক দেখানোয় বিশ্বাসী এই নাটক দল। নাটকের পাশাপাশি গানের দলও – যাঁদের রাজনৈতিক বিশ্বাস তাঁদের গান-নাটকের সাথে জড়িয়ে আছে – যে রাজনীতি, নাটক, গান সাধারণ মানুষের কথা বলে, একজোট হবার কথা বলে, অধিকারের কথা বলে। দেশ বেচা সরকারের হাতে পড়ে দেশ কীভাবে মজুতদারের আড়ত বনে যায়, তাই নিয়ে কথা বলে:

 

ঘামের দাম দিলি নাই / মোদের হক দিলি নাই / ভাতও দিলি নাই / গোটা দেশ জুড়ে দিলি আড়ত বানাই / ভুখা পেট মরছে মানুষ / তবু তোর ফেরে না হুঁশ / তবু তোর দরদ হল নাই / দিলি তুই মজুতদারের আড়ত বানাই…”

 

এ মজুতদারি শুধু পিডিএস তুলে দেওয়া বিজেপি সরকারের দেশে খাদ্যের মজুতদারি না। আশ্রয়ের, নাগরিকত্বের মজুতদারি। ন্যায়বিচারের মজুতদারি। মানবিকতারও মজুতদারি। ‘ইঁদুরকল’ নাটকে ইঁদুরের ঠাঁই মেলে না চাষির ঘরে। মুরগি, কবুতর, পাঁঠা – সবাই তার শ্রমটুকু চুষে নিয়ে কাজ ফুরোলে তাকে ছিবড়ে করে ফেলে দেয়। শ্রমের মূল্য মেলে না, বসবাসের অধিকার মেলে না। যেমন এই নাটক নিয়ে কিছুদিন আগে নাট্যকর্মী অঙ্কুর লিখেছিলেন, “ইঁদুরদের ভাগিয়ে দাও, গরিবদের ফুটিয়ে দাও – সিস্টেম্যাটিক ক্লিনজিং! সবকটা ভোট-মারানি পার্টি এই গণ-উদবাস্তুকরণের, বা আরো সহজ করে বললে গণ-গায়েবের খুলে-আম দালাল! ভোটের ছোট্‌ঠাকুর বা বট্‌ঠাকুর, এই শয়তানির শরিক প্রত্যেকে।” ‘ইঁদুরকল’ নাটক এই ছোট্‌ঠাকুর বট্‌ঠাকুরদের চমকে দেয়। তাই এ নাটক কারো কারো কাছে বিপজ্জনক।

 

অন্য শো-গুলির মতো এই শো-তেও জনগণমন তাঁদের মঞ্চ সাজিয়েছিলেন এনআরসি বিরোধী পোস্টার দিয়ে। গতকাল দুটি শো হবার কথা ছিল, পরের দিন আরো তিনটি। বাজানো হচ্ছিল গান। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় স্থানীয় বিজেপি মাতব্বরদের চোখ রাঙ্গানি। পোস্টার খুলে নিতে বলা হয়, গান বন্ধ করে দিতে বলা হয়। দর্শকদের চলে যেতে বলা হয়। এধরনের নাটক এই এলাকায় করা যাবে না বলে শাসানি চলতে থাকে।

 

https://fb.watch/4vCEWFN4E8/

 

তাসত্ত্বেও নাটক দলের অভিনেতারা নিজেরা গিয়ে দর্শকদের একাংশকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু নাটক শুরু হবার কিছুক্ষণ পরে, যেই উঠে আসে কৃষকদের কথা, পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা, এদেশের তাড়া খাওয়া ইঁদুরদের কথা, জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় নাটক। অভিনেতাদের শুনতে হয়, “এটা বিজেপির এলাকা, এখানে নাটক করতে গেলে বিজেপির হয়ে কথা বলতে হবে”। শুনতে হয়, এ নাটক নাকি পশ্চিমবঙ্গেই আর করা যাবে না।

 

জনগণমন-র অভিনেতারা রাতের মতো উদ্যোক্তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। ক্যানসেল করতে হয় পরেরদিনের শো-ও। নাট্যকর্মীদের ওপর রাজনৈতিক দলের আক্রমণ এই প্রথম নয়, তবে বিজেপি যেভাবে বাংলায় সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠছে, তাতে আগামীদিনে গণসাংস্কৃতিক কর্মীদের ওপর এরকম আক্রমণ আরও তীব্র হবে, যদি না এখন থেকেই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ গড়ে তোলেন।

 

আরো পড়ুনঅফলাইন, জ্যান্ত থিয়েটারঃ জনগণমন-র ইঁদুর-কল

 

Share this
Recent Comments
1
  • comments
    By: saikat pal on March 28, 2021

    khub savabik protikriya. amader aro grenoo akromoner jonya parstut thakte hobe o take protirodh korte hobe. sudhu proti bader kono sthan nei. pother lorai pothei lorte hobe.

Leave a Comment