নারী জাগরণের পথিকৃৎ আলাপিনী মহিলা সমিতির সদস্যাদের প্রতিবাদ


  • January 9, 2021
  • (0 Comments)
  • 876 Views

বিজেপির মদতপুষ্ট বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদানের আদর্শ ও আশ্রমের নানা প্রতিষ্ঠানের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করে চলেছেন। এবারে তাঁর লক্ষ্য আলাপিনী মহিলা সমিতি। এর মধ্যেই সমিতিটিকে তাঁদের অধিবেশন কক্ষ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। আশ্রমের নারী জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাধারী এই সমিতির সদস্যারা অবশ্য এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন, সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন কথা বলতে অনিচ্ছুক উপাচার্যের সাথে। একটি গ্রাউন্ডজিরো রিপোর্ট 

 

শান্তিনিকেতন: আলাপিনী মহিলা সমিতি একটি একশো চার বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান। এটি বিশ্বভারতীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘আলাপিনী মহিলা সমিতি’ নামটি দিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূলত আশ্রমবাসী মহিলা এবং প্রাক্তন ছাত্রীরা এই সমিতির সদস্যা। আশ্রমের নারী জাগরণে এই সমিতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আশ্রমের ছাত্র-ছাত্রীদের দেখাশোনা, সেবা-শুশ্রূষা, কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার প্রদান, পত্রিকা প্রকাশ, শারদ উৎসবে নাটক প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাধ্যমে এই সমিতি আশ্রমের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া আলাপিনীর মহিলারা প্রথম যুগে ধাত্রীবিদ্যা শিখে গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য শিবির করতেন। আশ্রমবাসী মহিলাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি প্রতিষ্ঠান হল আলাপিনী সমিতি।

 

বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দিল্লি থেকে এসে বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা কার্যকর করতে তৎপর। তিনি বিশ্বভারতীর গেরুয়াকরণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরএসএস-বিজেপির ঘাঁটি বানাতে চান। কিন্তু তাঁর এই কাজে বাধা হল রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা এবং আশ্রমের নানা প্রতিষ্ঠান। তাই তিনি পুরনো যা কিছু ঐতিহ্য বর্তমান, তাকে ধ্বংস করতে চান, কারণ পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করতে না পারলে তাঁর একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে না। তাই উপাচার্য রবীন্দ্রনাথকে ‘বহিরাগত’ বানিয়ে দেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাঠভবনের প্রাক্তন ছাত্র অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালান।

 

 

আশ্রমিক সংঘের পর এবার উপাচার্যের নজর পড়েছে আলাপিনী মহিলা সমিতির উপর। তিনি সমিতির সদস্যাদের নির্দেশ দেন ৩১ ডিসেম্বর ২০২০-র মধ্যে তাঁরা যে অধিবেশন কক্ষটি ব্যবহার করেন, তা ছেড়ে দিতে হবে। ১ জানুয়ারি তাঁদের ব্যবহৃত ঘরটি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সিল করে দেয়। আলাপিনীর সদস্যারা প্রতিবাদ জানান। দু’দিন অবস্থানে বসেন। উল্টোদিকে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সমিতির সদস্যাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনেন। সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য পরিবেশন করেন যে, তাঁদের নাকি আলাদা ঘর দেওয়া হবে। সমিতির সদস্যারা জানিয়েছেন, এটি মিথ্যা। তাঁদেরকে কোনও নতুন ঘর দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, কর্তৃ‌পক্ষ সমিতির সদস্যাদের নামে মিথ্যা কুৎসা অবধি রটিয়েছেন। আলাপিনীর মহিলারা প্রথম থেকেই জানিয়েছেন যে, তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। কিন্তু উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে কোনও সাক্ষাৎ না করেই বলেন যে, তিনি নাকি সমিতির সদস্যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

 

আলাপিনী মহিলা সমিতি ধ্বংসের চক্রান্তের বিরুদ্ধে, অমর্ত্য সেনের অপমানের বিরুদ্ধে এবং কর্তৃপক্ষের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে আলাপিনীর তরফ থেকে ৮ জানুয়ারি প্রতীচী (অমর্ত্য সেনের বাড়ি) থেকে কেন্দ্রীয় দপ্তর পর্যন্ত একটি পদযাত্রা হয়। এই পদযাত্রায় আলাপিনীর মহিলা, আশ্রমিক, প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা যোগদান করেন। রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে তাঁর লেখা গান গাইতে গাইতে এই পদযাত্রা সম্পন্ন হয়। তারপর সমিতির তরফ থেকে দু’জন প্রতিনিধি উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। তাঁরা এখনো উপাচার্যের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলতে চান। আলাপিনী আশ্রমের শতাব্দীপ্রাচীন একটি ঐতিহ্য। বর্তমান সদস্যারা এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে চান।

 

 

 

আরও পড়ুন: https://www.groundxero.in/2021/01/03/visva-bharati-university-authority-seals-104-years-old-alapini-mahila-samity-office/

Share this
Leave a Comment