প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। দ্বিগুণ দূরে থাক —তিনটি কৃষিবিল গা-জোয়ারি করে পাশ করিয়ে — কৃষিক্ষেত্র সহ কৃষকদেরই পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিল বিজেপি। এ-দেশের কৃষকরা তা যে কোনওভাবেই মেনে নেবেন না, ২০টি রাজ্যের ২৫০টি কৃষক সংগঠনের সম্মিলিত ভাবে আজ দেশজোড়া ধর্মঘটের ডাক ও রাস্তার দখল নেওয়া তারই প্রমাণ। স্তব্ধ দেশের শস্যভাণ্ডার বলে খ্যাত পঞ্জাব, হরিয়ানা। হিমাচলপ্রদেশ থেকে কেরালা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহারাষ্ট্র কৃষকরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায়। দেশজোড়া কৃষক বিক্ষোভের কিছু ছবি রইল পাঠকদের জন্য।
দেশজুড়ে রাস্তার দখল নিয়েছেন কৃষকরা। স্তব্ধ দেশের শস্যভাণ্ডার বলে খ্যাত পঞ্জাব, হরিয়ানা। হিমাচলপ্রদেশ থেকে কেরালা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহারাষ্ট্র কৃষকরা মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের সব ক্ষোভ-বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায়। সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এ-রাজ্যে অন্তত ৩০০টি স্থানে মূলত বামপন্থীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ, রেল ও রাস্তা অবরোধ করেছেন কৃষকরা। বিগত ছ’বছর ধরে কৃষকরাই, একমাত্র কৃষক সংগঠনগুলিই দেশজুড়ে মোদীর নানা নীতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলনে করে চলেছে। ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে সেচ, ঋণ মকুব; বুলেট ট্রেনের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিরোধিতা থেকে নদী সংযুক্তকরণের ফলে চাষের জলের সমস্যা; খরা থেকে অতিবর্ষণ, বন্যা-শিলাবৃষ্টিতে ফসল নষ্টে ক্ষতিপূরণ; আদিবাসীদের জমির অধিকার থেকে পশুধন, আত্মহত্যা থেকে গো-রক্ষকদের গণপিটুনির বিরোধিতা — কী নেই এই কৃষক আন্দোলনের দাবিদাওয়ার মধ্যে!
২০১৪ থেকে ২০১৬ — এমনই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে কৃষকদের ছোট-বড় রাস্তা জোড়া আন্দোলনের সংখ্যা ৭০০ শতাংশ বেড়ে ৬৪৮ থেকে ৪,৮৩৭টিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৮ বার বার তাঁরা সংঘবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নেমে এসেছেন। ২০১৭ সালে নরমুণ্ড গলায় পরে দিল্লির যন্তরমন্তরে অবস্থানরত তামিলনাড়ুর কৃষকদের ছবি এখনও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল। তামিলনাড়ু থেকে মিছিল করে এসেছিলেন তাঁরা। এই ২০১৭ সালেই মধ্যপ্রদেশের মান্দাসৌরে ৬ জন কৃষক পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে মুম্বাই ১৮০ কিলোমিটার পদযাত্রা মহারাষ্ট্রে বিজিপির ভিত নড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৮ সালে সারা দেশ থেকে ৮০ হাজার খেতমজুর, ছোট, মাঝারি, বড় চাষি ‘অল ইন্ডিয়া কিষাণ সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটির (এআইকেএসসিসি) ‘দিল্লি চলো’ অভিযানে রাজধানীতে হাজির হয়েছিলেন। সেদিন তাঁদের দাবি ছিল, ঋণ মকুব, ফসলের সর্বোচ্চ মূল্য এবং কৃষকদের সমস্যা নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন। বনাধিকার আইনে আদিবাসীদের জমির অধিকারকে মান্য করার দাবিও ছিল অন্যতম। ২০১৮ সালে বিজেপি ছাড়া ২১টি দলের সমর্থনে এআইকেএসসিসি’র তৈরি ‘কৃষাণ মুক্তি বিল’ সংসদে প্রাইভেট বিল হিসেবে পেশও করা হয়।
বিগত কুড়ি বছরে প্রায় চার লক্ষ চাষি আত্মহত্যা করেছেন। মূলত খারাপ সেচ ব্যবস্থা, ফসল মার খাওয়া, পুঞ্জিভূত ঋণ এই আত্মহত্যাগুলির কারণ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, রাজস্থানে বিজেপির পরাজয়ের এবং হরিয়ানায় খারাপ ফলের অন্যতম প্রধান কারণই কৃষক আন্দোলন। বিজেপি শিক্ষা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ হবে। দ্বিগুণ দূরে থাক —তিনটি কৃষিবিল গা-জোয়ারি করে পাশ করিয়ে — কৃষিক্ষেত্র সহ কৃষকদেরই পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিল বিজেপি।
এ-দেশের কৃষকরা তা যে কোনওভাবেই মেনে নেবেন না, ২০টি রাজ্যের ২৫০টি কৃষক সংগঠনের আজ দেশজোড়া ধর্মঘটের সম্মিলিত ডাক, রাস্তার দখল নেওয়া তারই প্রমাণ। দেশজোড়া কৃষক বিক্ষোভের কিছু ছবি রইল পাঠকদের জন্য।
All images of protest courtesy to Facebook wall of various activists and Facebook page of AIKS.