জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় আটকে কলকাতার পরিবেশবান্ধব সিএনজি পাওয়ার প্রক্রিয়া


  • August 19, 2020
  • (0 Comments)
  • 975 Views

কলকাতায় বায়ুদূষণ কমাতে যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে সিএনজি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্তু সিএনজি সরবরাহে কেন্দ্র সরকারের নোডাল এজেন্সি জিএআইএল জানাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে পাইপলাইন তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া খুবই মন্থর। 

 

পরিবেশবান্ধব স্বয়ংক্রিয় জ্বালানি – কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) – কলকাতায় আসার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে দূরবর্তী মনে হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ফুলপুর থেকে কলকাতায় এই গ্যাস বয়ে আনার যে পাইপলাইন, তা তৈরির কাজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

 

৮৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের একটি অংশ পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার কাজ সম্পূর্ণ করতে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া কোনওভাবেই এগোচ্ছে না – জানাচ্ছে গ্যাস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (জিএআইএল) যা সিএনজি-র ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারের নোডাল এজেন্সি।

 

কলকাতা ভারতের সেই কয়েকটি বড় শহরগুলির একটি, যেখানে সিএনজি এখনও পৌঁছয়নি। এই জ্বালানিটি কলকাতার বায়ুদূষণের সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এটি যান-দূষণ কমাতে পারে।

 

পশ্চিমবঙ্গে এই পাইপলাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া খুবই ধীর গতিতে চলছিল – জিএআইএল এমনটাই জানিয়েছে ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুন্যাল-এ (এনজিটি), গত ১৩ জুলাই পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সুভাষ দত্ত-র করা একটি হলফনামায় যা বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়।

 

সেখানে ট্রাইবুন্যালকে অনুরোধ করা হয় “জরুরি নির্দেশনামা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জন্য” জারি করতে, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য ও পাইপলাইনটি পাতার কাজের ক্ষেত্রে রাইট অফ ইউজ (আরওইউ) বা ব্যবহারের অধিকার প্রদানের জন্য।

 

জমি অধিগ্রহণ একটি এমন নিবেদিত পথ তৈরির প্রাথমিক পূর্ব শর্ত যেখানে এই পাইপলাইনটি পাতা হবে। ট্রাইবুন্যালে এই মামলাটির আগস্ট মাসের শেষে শুনানি হবার কথা।

 

জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা

 

“জিএআইএল ২০১৮ থেকে নিয়মিতভাবে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার বিষয়টি তুলে ধরেছে ও আরওইউ পাওয়া ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করে চলেছে,” হলফনামায় এমনটা বলা হয়েছে।

 

পাইপলাইনটির নকশা এমন, যাতে তা উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ডের মধ্যে দিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছায় এবং তার চূড়ান্ত গন্তব্য কলকাতা।

 

পাইপলাইন পাতার কাজ পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুর পর্যন্ত হয়েছে, কিন্তু দুর্গাপুরের পরে তা আটকেই রয়েছে – তার সুনির্দিষ্ট কারণ বৃহত্তর কলকাতার মধ্যে জমি অধিগ্রহণে ব্যর্থতা।

 

হলফনামা অনুযায়ী এই পাইপলাইনের প্রায় ৫৮২ কিলোমিটার ঝালাই করা ও মাটির নিচে পাতা হয়ে গেছে, ১১০ কিলোমিটারের জন্য কাজ চলছে।

 

এতে বলা হয়েছে, দুর্গাপুর থেকে হুগলির হাঁসাগাড়া ও কলকাতা পর্যন্ত পাইপলাইনের প্রায় ১৬৬ কিলোমিটার লম্বা একটি অংশের কাজ তখনই করা যাবে, যখন আরওইউ পাওয়া যাবে।

 

জিএআইএল বলেছে সরকারি প্রশাসন উঃ ২৪ পরগনা, নদীয়া ও হুগলি জেলায় জমি অধিগ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। জিএআইএল অনুযায়ী দেরি হওয়ার এটাই প্রাথমিক কারণ।

 

নোডাল এজেন্সি আরও জানিয়েছে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ও ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের জমির ভেতর দিয়ে পাইপলাইন যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়ার জন্য ছ’মাসেরও বেশি সময় চুপচাপ ছিল।

 

১৫ বছর ধরে থমকে রয়েছে

 

পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য – ২০০৫ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি ভাষণ দেওয়ার সময় দাবি করেছিলেন যে, জিএআইএল-এর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে।

 

মমতা ব্যানার্জি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তারও ন’বছর হয়ে গেছে, কিন্তু সিএনজি-র এখনও কলকাতায় এসে পৌঁছানো বাকি রয়েছে। জমি অধিগ্রহণে বাধার জন্য খুব তাড়াতাড়ি তার এসে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও কম।

 

সুভাষ দত্ত – যিনি ১৯৯০ সাল থেকে যান-দূষণকে কেন্দ্র করে কলকতা হাইকোর্ট ও এনজিটি-তে অনেকগুলি আবেদন করেছেন – খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব না হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অনুপস্থিতিকে দেখিয়েছেন।

 

“এটি ১৫ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে কারণ অতীতের বামফ্রন্ট সরকার বা বর্তমানের তৃণমূল কংগ্রেস শাসিত সরকার কারোরই শহরের বায়ুদূষণ রোধ করা ও সিএনজি নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেই,” দত্ত বলেছেন।

 

সুভাষ দত্তর বক্তব্য অনুযায়ী রাজ্য সরকার ২০০৭ সালে হাইকোর্টে সিএনজি নিয়ে আসার জন্য অঙ্গীকার করে ও তেল কোম্পানিগুলির সঙ্গে সমঝোতাপত্র বা বোঝাপড়ার স্মারকলিপি স্বাক্ষর করে।

 

“যখন বাস্তবে কিছু হচ্ছিল না তখন আমি ২০১৫ সালে এনজিটি-তে যাই কলকাতায় সিএনজি আনার দাবি নিয়ে,” তিনি জানিয়েছেন।

 

এনজিটি শহরে সিএনজি নিয়ে আসার পরিকল্পনায় জোর দেওয়া এবং জিএআইএল ও একটি রাজ্য সরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে কোম্পানি তৈরির পরেও কোনও কিছুই বাস্তব রূপ পায়নি, দত্ত নির্দিষ্টভাবে জানালেন।

 

“এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া নয়। আমাদের তরফ থেকে আমরা চেষ্টা করছি। অনেকগুলি দফতর যুক্ত,” অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দেওয়ার জন্য নভেল করোনাভাইরাস মহামারী (কোভিড ১৯)-কে দায়ী করে জানালেন রাজ্য পরিবহন দফতরের বরিষ্ঠ আধিকারিক।

 

জিএআইএল-এর হলফনামা অনুযায়ী, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ২০১৬ সালে এই ১২,৯৪০ কোটি টাকার পাইপলাইন প্রকল্পটিকে ছাড়পত্র দিয়েছিল, অর্থনৈতিক বিষয়ের ক্যাবিনেট কমিটির একটি সম্মতির উপর ভিত্তি করে। জিএআইএল স্পষ্ট করে দেখিয়েছে যে, মন্ত্রক পরামর্শ দিয়েছিল ২০২০-র মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করতে।

 

একটি ওয়র্ক অর্ডার বেরিয়েছিল ২০১৯-এর এপ্রিল মাসে দুর্গাপুর থেকে কলকাতার অংশটি সম্পূর্ণ করার জন্য, ফুলপুর থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত অংশটি “আশা করা হয়েছিল নভেম্বর ২০২০-এর মধ্যে শেষ হবে”, জিএআইএল-এর একটি বক্তব্য থেকে জানা যাচ্ছে।

 

এই প্রকল্প থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড ও পশ্চিমবঙ্গে কলকাতা সহ সাতটি শহরে সিএনজি-র সরবরাহ হবে।

 

সিএনজি কলকাতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

 

পরিবেশবিদরা বলেছেন কলকাতায় বায়ুদূষণ কমাতে যানবাহনের জ্বালানি হিসাবে সিএনজি ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ। দূষণ ছড়ানো ডিজেল-চালিত বাণিজ্যিক পরিবহন এই শহরের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে।

 

দিল্লীর অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট-এর অনুমিতা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, “কলকাতার অবিলম্বে সিএনজি প্রয়োজন, যাতে তা দিয়ে শহরে চলা ডিজেল-চালিত যানগুলি, যা সবচেয়ে বেশি দূষণ ছড়ায়, তাদের প্রতিস্থাপন করা যায়।“”

 

এসএম ঘোষ, একজন এমিশন এক্সপার্টের বক্তব্য অনুযায়ী, শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিক যানবাহন ডিজেলে চলে।

 

ঘোষ জানিয়েছেন, “এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই পুরনো ও যথাযথ দেখভালের অভাবে যথেষ্ঠ পরিমাণে দূষণ ছড়িয়ে থাকে, যার মধ্যে পড়ছে বস্তুকণা ও নাইট্রোজেন অক্সাইড।” “এটা একমাত্র তখনই থামানো যাবে, যখন সব বড় শহরের মতো কলকাতাতেও প্রধান পরিবহন জ্বালানি হিসাবে ডিজেলের বদলে সিএনজি ব্যবহার করা যাবে।”

 

………………….

মূল ইংরেজি থেকে বাংলায় লেখাটি অনুবাদ করা হয়েছে। লেখাটি ৩ আগস্ট ২০২০-এ  www.downtoearth.org.in-এ প্রকাশিত।  মূল লেখাটি এই লিঙ্কে পাওয়া যাবে।

 

Share this
Leave a Comment