উপাচার্য দ্বারা বিশ্ব ভারতীর বিজেপিয়ায়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে ছাত্রছাত্রীরা


  • January 16, 2020
  • (0 Comments)
  • 1374 Views

উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। বিজেপি আনুগত্যের জন্যই তার পদপ্রাপ্তি ও যেকোন প্রকারে তিনি সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন ও তার জোরে বিজেপি-আরএসএস-কে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছেন। গ্রাউন্ডজীরো রিপোর্ট।

 

 

দেশ জুড়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরূদ্ধে আন্দোলন এখন যতদিন যাচ্ছে ততই জোরদার হচ্ছে। আর এই আন্দোলনের পুরোভাগে রয়েছেন পড়ুয়ারা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্লোগান, পোস্টার, ব্যানার, শান্তিপূর্ণ অবস্থান, বিক্ষোভ মিছিল, লাগাতার প্রশ্ন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন সরকার এবং আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকে কোনঠাসা করতে মরিয়া। এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলন প্রতিদিনই নতুন মাত্রা পাচ্ছে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে। হয়তো সেইজন্যই ভয় বাড়ছে শাসকের। তাদের বিভাজনমূলক রাজনীতি ছাত্রছাত্রীদের একজোট বিরোধীতায় যত বেশি প্রশ্নের মুখে পড়ছে ততই তারা হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। নৃশংস আক্রমন হানছে এই আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের উপর, দেশের নানা রাজ্য থেকেই এ ধরনের খবর আসতে শুরু করেছে প্রায় প্রত্যেক দিন।

 

পশ্চিমবঙ্গে গত কয়েক মাসে এনআরসি, সিএএ বিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা নিরবচ্ছিন্ন অংশগ্রহণ করে চলেছেন। নিয়মিত মিছিল, সভা-সমাবেশ, অবরোধে বার্তা পাঠাচ্ছেন এক ইঞ্চি জমিও বিজেপি-আরএসএস-কে ছাড়া যাবে না। সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো বিষয় হল শুধু নামজাদা বিশ্বিদ্যালয়গুলি যারা যেকোনও প্রতিবাদ আন্দোলনের মুখ হয়ে ওঠে, তারাই নয়, সাধারণত এ ধরনের কর্মসূচীর থেকে দূরে থাকা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছেন আন্দোলনে। কখনও শহর কলকাতার রাজপথে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচীর অংশ হচ্ছেন, কখনও নিজেদের নিজেদের এলাকায় জোটবদ্ধ প্রতিবাদ কর্মসূচী তৈরি করে নিচ্ছেন। এই প্রতিরোধের কারণে অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদের মধ্যে দিয়ে আরএসএস যে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলি দখল করার পরিকল্পনা করেছিল তা ব্যর্থ হচ্ছে। যতই তারা কোণঠাসা হচ্ছে ততই তারা প্রতিবাদী, প্রতিরোধী ছাত্রছাত্রীদের উপর বর্বর হামলা চালাচ্ছে। আতঙ্ক, ত্রাস তৈরি করে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে ক্যাম্পাসগুলিতে। তবে বিজেপি-আরএসএস-এবিভিপি বিরোধী ছাত্রছাত্রীদের জোট বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এতটাই দৃঢ়বদ্ধ যে তাদের ভয়ানক হামলাও প্রতিরোধের স্বরকে বিন্দুমাত্র দুর্বল করছে না, বরং প্রতিরোধ আরও জোরদার হচ্ছে।

 

পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা দেশের মানুষ চমকে উঠেছিল যখন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও বিজেপি-আরএসএস তাদের রাজনীতি ঢোকাতে শুরু করে। অখিল ভারত বিদ্যার্থী পরিষদের সদস্য ছাত্ররা ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস-এ তাদের জায়গা বাড়াতে শুরু করে। ছাত্রছাত্রীদের নানাভাবে হেনস্থা ও তাদের হিন্দুত্ববাদী ও বিভাজনকামী রাজনীতি ছড়িয়ে দিতে থাকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। আর এই পুরো বিষয়টি সহজ হয়ে যায় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিজেপি আনুগত্যের জন্য। বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিজেপি ঘনিষ্ঠতার কথা সকলেই জানেন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই যে এই ক্যাম্পাসে এবিভিপি-র দাপট ক্রমশ বেড়েছে তাও বহু আলোচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি-বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে পড়ুয়ারা আন্দোলন শুরু করলে তিনি তা দমন করার জন্য যাবতীয় পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। এমনকি কেন্দ্রের দৌলতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-এ প্রথমবার আধা সেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গও এসেছিল। যদিও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিরোধের সামনে তা স্থগিত করতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়।

 

৮ জনুয়ারি কা নিয়ে সেমিনার বয়কট করলো ছাত্রছাত্রীরা

 

তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বভারতীতে পৌষমেলার সময়ে উপাচার্যর অনুমতিতে দোকান ভেঙে দেওয়া, দোকান লুট করার মতো কদর্য ঘটনারও সাক্ষী থেকেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। আর তারও পরে বিজেপি-র সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্বপন দাশগুপ্ত ও দুধকুমার মন্ডলকে ডেকে এনে সিএএ-এর পক্ষে সভা করার পরিকল্পনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যে ধরনের রাজনীতির আগ্রাসন ঘটানোর চেষ্টা চলছে তাকেই স্পষ্ট করে দেয়। এই সভার বিরূদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে রুখে দাঁড়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। কোনওভাবেই এধরনের বিজেপি প্রোপাগান্ডা বিশ্বভারতীতে প্রচার করা যাবে না ও সিএএ-এর বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এই কথা মাথায় রেখে তারা প্রতিবাদ চালাতে থাকেন ও আয়োজিত সভাটি কার্যত বন্ধ করে দেন। তখন থেকেই উপাচার্যর হাত মাথায় থাকায় এবিভিপি-র চোখ রাঙানি বাড়তে থাকে। হুমকি ও নিয়মিত সন্ত্রাসের আবহ চালিয়ে যাচ্ছিলেন অচিন্ত্য বাগদী ও সাবির আলি বক্স নামে দুই এবিভিপি সমর্থক ছাত্র। এরা দু’জনেই একটা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। শুধুমাত্র ভাইস চ্যান্সেলর-এর কৃপাদৃষ্টি থাকার কারণেই তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুন্ডাগিরি চালিয়ে যেতে পারছে বলে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ।

 

গত ১৫ই জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএএ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছাত্র শুভনাথ, স্বপ্ননীল ও আরও কয়েকজন ছাত্রর উপর লাঠি, পেরেক গোঁজা বাঁশ, ধারালো টিউব ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় অচিন্ত্য বাগদী, সাবির আলি বক্স, সুদীপ্ত গড়াই ও তাদের বেধড়ক মারতে থাকে। আক্রমণকারীরা সকলেই আকন্ঠ মদ্যপান করেছিল ও সেই অবস্থায় প্রথমে তারা বিদ্যাভবন হস্টেলে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজ-এ তার প্রমাণও থাকার কথা। সেখানে তারা হুমকি দেয় ‘বিজেপি বিরোধীতা করলে ঘাড় ভেঙে দেওয়া হবে’। এরপরই রাস্তায় শুভনাথ, স্বপ্ননীল ও অন্যদের উপর হামলা চালায় তারা। কোনওরকম কথা বলার সুযোগই তাদের দেওয়া হয়নি। মারের যে ভিডিও ও ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় তাতেও দেখা যাচ্ছে কী বীভৎস ছিল সেই আক্রমণ, আক্রান্তদের জন্য প্রাণঘাতীও হতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদতপুষ্ট এই গুন্ডাবাহিনী আক্রান্তদের হাসপাআলে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও চড়াও হয়, এই আক্রমণের প্রমাণস্বরূপ ছবি, ভিডিও-ও রয়েছে ছাত্রদের কাছে। অচিন্ত্য বাগদী, সাবির আলি বক্স, সুদীপ্ত গড়াই এবিভিপি-র এই তিন মাথা সদর্পে তখন বলে বেড়াচ্ছিল তাদের উপর ভিসি-র হাত রয়েছে, কেউ কিছুই করতে পারবে না, আরও মার বাকি আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি, হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী কেউই এই পুরো সময়ে কোনওরকম পদক্ষেপ নেননি। গত আটই জানুয়ারি যারা ধর্মঘট সমর্থ করেছিলেন সেই সব ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপকদের হুমকি দেওয়া হয় ও হাসপাতালে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ থেকে শারীরিক আক্রমণ সবই করা হয়।

 

 

এই গোটা ঘটনায় ভাইস চ্যান্সেলর নিশ্চুপ। আশ্চর্যজনকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি অফিসার সুপ্রীয় গাঙ্গুলি না কি জানিয়েছিলেন তারা কিছুই জানেন না, প্রয়োজনে স্বপ্ননীলের বিরূদ্ধে তারা এফআইআর করবে !

 

উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জন্য সম্পূর্ণ দায়ী। বিজেপি আনুগত্যের জন্যই তার পদপ্রাপ্তি ও যেকোন প্রকারে তিনি সেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলেছেন ও তার জোরে বিজেপি-আরএসএস-কে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠা দিতে চাইছেন। লজ্জাজনক বিষয় হল তার নামে যৌন হেনস্থার একাধিক ফৌজদারি মামলা রয়েছে।

 

 

আজ সকালে ছাত্রছাত্রীরা সকলে মিলে উপাচার্যের দপ্তরে যায়। একটি ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয় সর্বপ্রথম উপাচার্য কে। উপাচার্য এর কাছে জবাব চাওয়া হয় এই ঘটনার । কিন্তু উপাচার্য ডেপুটেশন নিতে দ্বিধা করেন,এবং বলেন যে সিকিউরিটি মারফত ডেপুটেশন পাঠাতে । ছাত্রছাত্রীরা জানায় যদি ডেপুটেশন না নেয় সেইক্ষেত্রে উপাচার্য ঘেরাও চলবে। এরপর উপাচার্য বাধ্য হয় ডেপুটেশন জমা নিতে।

ছাত্রছাত্রীদের জেনারেল বডি মিটিং এর সিদ্ধান্ত হয় যে,শান্তিনিকেতন থানায় যাওয়া হবে,ও ওখানে অচিন্ত্য বাগদি ,সাবির আলি, সুলভ কর্মকারের গ্রেপ্তারের দাবিতে অবস্থান চলবে । থানায় গিয়ে প্রতিবাদ চলে অনেক্ষন। অচিন্ত্য বাগদি ও সাবির আলির গ্রেপ্তারের খবর অসার পর অবস্থান ওঠে । শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী তাদের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।

 

আগামিকাল এই আক্রমণের ঘটনা কে ধিক্কার জানিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একটি মিছিল হবে উপাসনা গৃহ থেকে বিকেল ৪টের সময়।

 

 

Share this
Leave a Comment