আমাদের পরের প্রজন্ম কি আর রুদ্রমঙ্গল পড়বে না ? তাঁরা কেবল মতাদর্শের বানানো সিলেবাস চোখ-কান-নাক বুজে মুখস্থ করে যাবে? … আপাতত কোন উত্তর নেই জানা। কেবল দীর্ঘদিন ধরে হেরে যাওয়ার অনুভূতি, একটা বৃহৎ দানবিয় মতাদর্শের হাত থেকে আমাদের রুহুকে বাঁচাতে না পারার অনুভবটুকু আছে। লিখেছেন লাবণী জঙ্গী।
আমরা অনেকদিন হল মারা গেছি! আমাদের শবদেহ পচনের উৎকট গন্ধ এই কয়েক বছর ধরে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র। সেই উৎকট গন্ধ সহ্য করতে না পেরে অসাড় কিছু শরীর কখনো নড়েচড়ে উঠছে, স্বল্প সময়ের জন্য, তারপর আবার যা কে তাই। আমরা অনেকদিন হল আমাদের সীমাহীন লোভের কাছে, নিজেদের রুহু বিনিময় করে ফেলেছি। সে রুহু-হীন দেহ কেবল নির্বিকার ভাবে খায়–দায়, হেঁটে বেড়ায়, কোন্দল করে, মরা মানুষেরাই মারে আর মরে।
কখনো কখনো নিজেদের রুহু-হীন দেহের পচা উৎকট গন্ধ সহ্যসীমা ছাড়ালে হেলেদুলে ওঠে, তারপর আবার সেই এক মৃত পৃথিবীতে ফিরে যায়। সেই মৃত পৃথিবীর এক মায়া-টান আছে। সেই মৃত পৃথিবী আমাদের রুহু-হীন দুই চোখে একটা দূর-স্বপ্ন বুনে দিয়েছে, সেই মহান মায়া স্বপ্ন হল “উন্নয়নের স্বপ্ন”। কখনো ব্যক্তি উন্নয়নের স্বপ্নে দেহগুলো যন্ত্রের মতো কাজ করে যায়; কখনো দেশের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ওই যন্ত্র-মানুষগুলোকে অস্ত্র হিসাবে কাজে লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর অস্ত্রের ধর্মই ভয় নির্মাণ করা, আঘাত করা। এই নিরন্তর খেলাটা যে খেলে আসছে সে এখন পোক্ত খেলুড়ে। সে কোনও ব্যক্তি-মানুষ নয়, একটা ‘মতাদর্শ’; এবং সময়ের সাথে এটা শক্তি অর্জন করেছে, আরও আরও ধূর্ত হয়েছে, খেলার নানা কৌশল বদলেছে। এই মতাদর্শ এই সময়ে শক্তিশালী নয়, আমাদের জন্মের সময়ও সমান শক্তিতে কাজ করেছে, আমাদের জন্মের অনেক আগেও।
এসব লেখা খুবই অর্থহীন দমবন্ধ হয়ে আসা এ সময়ের বুকে, সামান্য একটি লেখাতে ওই বৃহৎ-মতাদর্শের বিন্দুমাত্র যায় আসবে না জানি। যে প্রক্রিয়াতে খেলাটা সার্বজনীনভাবে চলছে সেটা আরও ব্যাপকভাবে চলতে থাকবে। তবু এ লেখাটা কেবল একটা ক্ষুদ্র নথি হয়ে থাকুক, যখন রুহু-বিনিময় করা এই মানব সমাজের বিকৃতি, উৎকট পচা গন্ধ আর শরীরে পরজীবী কিলবিলিয়ে উঠছে। ব্যক্তি উন্নয়নের সু-স্বপ্ন যখন আর ঘরে বসিয়ে রাখতে পারছে না। তখন গ্রাম-গঞ্জ মহল্লার রাস্তাতে ঘুরে যে ক্ষুদ্র দেখা ক্ষুদ্র বোঝা সেটুকুই লিখছি।
নয়া উন্নয়ন / বিকাশ
এই শব্দ দিয়েই তো শুরু হয়েছিল আমার দেশে আর এক রুহু-বিনিময়ের পর্ব। শক্তিশালী মতাদর্শটি সবসময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, আমাদের চোখ-কান বোজা দাসত্বের বিনিময়ে উন্নয়ন/বিকাশ। কেমন সেই উন্নয়ন বা বিকাশ? এই ধরুন ২২ তারিখ কৃষ্ণনগর থেকে মাজদিয়া যাওয়ার রাস্তা-উন্নয়নের কথা বলি। এবড়োখেবড়ো ভাঙা রাস্তা, টিনের তুবড়নো বাস লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটছে যখন, মনে হল এই রাস্তাটা ঠিক করে না কেন রাষ্ট্র। কি অবস্থা করে রেখেছে। গোবরাপোতা ঢুকতেই, উন্নয়ন বিকাশের দূর-প্রতিশ্রুতি কাছাকাছি মনে হল। দেখলাম রাস্তার দুইপাশে মৃত দেহের অবশিষ্ট অংশ পড়ে আছে। শতাব্দী প্রাচীন গাছেদের ছায়া নিবিড় রাস্তাটা উন্নয়নের সৌন্দর্যায়নে বদলে যাচ্ছে। মোটামোটা গুড়িগুলো রাস্তার পাশেই চেরাই চলছে। আর মাটির ভিতর থেকে শিকড়গুলো খুবলে তুলে আনা হয়েছে। পাকা রাস্তা আরও পাকা হবে। পাকা রাস্তা মেরামত হবে মানে উন্নয়ন হবে আর উন্নয়নের জন্য শত-শত বছরের প্রাচীন গাছগুলো সমূলে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
রাস্তার দুই পাশে সমূলে তুলে দেওয়া ওই প্রাচীন বৃক্ষগুলো দেখে, কোন অজানা কারণে চোখে পানি চলে আসছিল বারবার। মনে হচ্ছিল রাস্তার দুই ধারে কাফনহীন মৃতদেহ সাজানো রয়েছে; আমরা নির্বিকারে সেই মৃতদেহর দিকে না তাকিয়ে উন্নয়নের স্বপ্নে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি থুনবার্গ নই, একা এ দেশে কোনও বিরোধ কতটা সম্ভব জানা নেই, আর সেই সাহসও আমার নেই। আমি কেবল এক দিনের হুট করে ঢুকে পরা দর্শকমাত্র। আমার স্বল্প দেখা নিয়ে এটুকু এই মুহূর্তে বুঝতে সক্ষম, আমরা রুহু-হীন মানুষরা উন্নয়ন বা বিকাশের নামে নির্দ্বিধায় শত-শত বছরের প্রাচীন গাছ সমূলে তুলে দিতে পারি। যে গাছগুলো আমাদের শুধু নয় আমাদের পূর্বপুরুষদেরও পরিশুদ্ধ অক্সিজেন, আর প্রখর রোদে ছায়া দিয়ে এসেছে বিনা স্বার্থে, নীরবে। এই গাছগুলো আমাদের বড় করেছে, আমাদের আশ্রয় দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছে কয়েক’শো বছর। তাঁদের দেহে করাত চালাতে বা চালাতে দেখে আমাদের বিন্দুমাত্র খারাপ লাগা নেই, অনুশোচনাবোধ নেই, প্রতিরোধ তো দূরে থাক। কারণ আমরা সেই মতাদর্শের কাছে আমাদের রুহু বিনিময় করে ফেলেছি। বিনিময় শর্তে সে চেয়েছে আমাদের নির্লিপ্ততা, আমাদের দাসত্ব; আমরা উন্নয়নের স্বপ্নজালে বশবর্তী হয়েছি সেসব শর্তে।
আজকে জন্ম থেকে দেখে আসা এই প্রাচীন গাছেদের মৃত্যু পীড়া দেয় না আমাদের। তবে জন্ম থেকে এক সাথে বড় হওয়া ভিন-ধর্মের পড়শিকে যদি এই একই মতাদর্শ একদিন উন্নয়ন বা বিকাশের নামে উৎখাত করে, খুন করতে বললে তা করবে অসংখ্য রুহুহীন মানুষ। রুহুহীন এই আত্মকেন্দ্রিক সমাজের চোখে কেবলই নিজের ভালো থাকা সুখে থাকাটুকুই অর্থ বহন করে। আজ এই বিশালাকার গাছেদের শরীরে বিকাশের নামে করাত চালাচ্ছে এক পক্ষ, অন্য পক্ষ উন্নয়ন স্বপ্নে বিভোর সেই করাত চালনাকে উল্লাসের সাথে বা নির্লিপ্ত থেকে সমর্থন জানাচ্ছে। এমনটাই তো হল, যেদিন সিএএ বিল পাশ হল। এক পড়শির বাড়িতে বাজী পোড়ানোর উল্লাস, অন্য পড়শির চোখে ত্রাস। এবার নাকি ‘উন্নয়ন’ আসবে।
আহ্! উন্নয়ন/বিকাশ! গাছ কেটে পীচ রাস্তা, মানুষ তাড়িয়ে, খুন করে বেকারত্ব অর্থনীতি চাঙ্গার প্রতিশ্রুতি; এসব জালি স্বপ্নে বিভোর জনতা, কেউ করাত হাতে খুনিদের নির্লিপ্ত সমর্থক।
তবে এই ঝুটা স্বপ্নের জন্য রুহু-বিনিময় করা আমরা নির্জীব যন্ত্র মানুষগুলো যদি একটু খতিয়ে দেখতাম। এতো মিসাইল, এতো আধুনিকতা, এতো নতুন যন্ত্র, মতাদর্শবাদীদের হাতে এত অর্থ থাকার পরও কেন রাস্তার দুই পাশের গাছ কেটে রাস্তার উন্নয়ন করতে হয়? আধুনিকতা এখানে এই কাজে এসে কেন থেমে গেল? এই সত্যটুকু আজ ঢাকা সম্ভব নয়, যে বর্ডারের থেকেও অনেক বেশি ভয় এই মুহূর্তে দূষণের, তবুও এর জন্য বরাদ্দ তো বাদ; বরং যে প্রাচীন গাছগুলো আমাদের পরিশুদ্ধ বাতাস দিত সেগুলোকেও উপড়ে দেওয়ার এই জোরদার প্রকল্প কেন?
আসলে এই মতাদর্শ রুহুহীন মানুষের একটা নতুন দুনিয়া বানাতে চায়। এমন একটা নগ্ন নিঃস্ব দাম্ভিক দুনিয়া যেখানে কোন স্মৃতি থাকবে না, সেখানে থাকবে না পারস্পারিক সুখ-দুঃখের আদানপ্রদান, ভালোবাসার, নির্ভরতার সুতোগুলো। সেই দুনিয়া যেখানে পড়শি, পড়শির দুশমন জাতের জন্য ধর্মের জন্য। আর হিংসা আর ঘেন্না মাখা শৈশব যেখানে নিজেরটুকু বুঝে নেওয়ার রাট্টা লাগানো শিক্ষা। এই রুহুহীন মানুষদের প্রথমে বোঝানো হয় গাছ মানুষ নয়, তারপর বোঝানো হয় ওরা মুসলমান ওরা দলিত।
গাছগুলো মানে রাস্তার দু’ধারের প্রাচীন গাছগুলোকে সমূলে তুলে দেওয়ার কারণ কি? গাছগুলো না কাটলে কি উন্নয়ন আসতো না, নতুন রাস্তা বানানো হতো না? আসলে এই ধূর্ত মতাদর্শ জানে ওই গাছগুলোর খতম হওয়া কতোটা জরুরী। যদি ওগুলো এই রুহুহীন যন্ত্র মানুষের মনে কোনদিন কোনভাবে স্মৃতি উগড়োনোর চেষ্টা করে। ওই প্রাচীন বৃক্ষরাই তো সাক্ষী ছিল, আমাদের একসাথে পথ হাঁটার, আমাদের পথ বিচ্ছেদের, ভিটেহারা হওয়ার আবার নতুন ভিটে মাটিতে একসাথে পথ হাঁটার, খিদের লড়াই লড়ার। দীর্ঘ ছায়া নিবিড় পথে হাঁটতে গিয়ে আবার রুহুহীন মানুষের মনে এই প্রাচীন বৃক্ষরা স্মৃতি উগড়ে দেয়, পড়শিদের সাথে একসাথে বাঁচা, লড়া ও শাসকের চোখে চোখ রেখে অধিকারের কথা নতুন করে ফিরিয়ে আনে।
এই মতাদর্শ প্রাচীন বৃক্ষদের ভয় পায়। তাই তাঁদের সমূলে উচ্ছেদ করে দেওয়াটাকেই সমীচীন ভাবে। আর অন্যদিকে এই প্রয়াস একটা পরীক্ষণও। রুহু বিনিময় করা মানুষেরা আজও যেমন তাঁদের আশ্রয়, নিঃস্বার্থ বন্ধুর এই মৃত্যুতে করাত হাতে তুলে নিচ্ছে বা নীরব দর্শক হয়ে থাকছে। গাছেদের মতো পড়শিদের ও মানুষের মৃত্যুও এতটাই সহজ আর স্বাভাবিক মনে হবে, তাঁরা বিশ্বাস করবে উন্নয়নের স্বার্থে সবকিছু।
ফেরার সময় আমার সহযাত্রী বন্ধুটি বলল, এটা দেখে দুঃখ পাচ্ছিস কেন,এই দেশে সব ভালো রাস্তাই এই গাছ কেটে হয়, এভাবেই হয়। সত্যিই তো, উন্নয়নের চকচকে রাস্তা দিয়ে যখন যায়, প্রাচীন বৃক্ষদের খুনের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়। ধুবুলিয়া থেকে আজ ৩৪ নং জাতীয় সড়কের যে রাস্তাতে আসলাম সেখানে অসংখ্য প্রাচীন কৃষ্ণচুড়া, রাধাচূড়া, গুলমোহর, অশত্থ, বট, তেঁতুল, জাম গাছ ছিল, ওই গাছগুলো আমাদের ঋতুদের রং, রূপ, সুগন্ধের অন্য গল্প শোনাত। এখন কালো পীচের ন্যাড়া রাস্তার মাঝে একটা করে করবী গাছ লাগানো; করবী বুনে গাছেদের খুনিরা এখন সৌন্দর্যায়ন করে।
শিবনিবাস থেকে ফিরে এসে কৃষ্ণনগরের গ্রেস কটেজে এলাম ইন্নাস কাকুর সাথে, এখানে প্রস্তুতি কমিটি এনআরসি নিয়ে একটা মিটিং ডেকেছিল। গ্রেস কটেজে কাজি নজরুল ছিলেন ১৯২৬-’২৮। এখানেই রুদ্রমঙ্গল লেখা হয়। এই বইটা ইন্নাস কাকার সুবাদে পড়তে পারলাম।
“নিশীথ রাত্রি। সমুখে গভীর তিমির। পথ নাই। আলো নাই। প্রলয়-সাইক্লোনের আর্তনাদ মরণ বিভীষিকার রক্ত-সুর বাজাচ্ছে। …
এ কি বেদনা এ কি ক্রন্দন! উৎপীড়িতের আর্তনাদে, ‘মজ্লুমের ফরিয়াদে’ আকাশের সারা গায়ে আজ জ্বালা, বাতাসের নিশ্বাসে ব্যাথা, মাতা বসুমতীর বুক ফেটে নির্গত হচ্ছে অগ্নিস্রাব আর ভস্মধুম। অত্যাচারীর ভীম নিষ্পেষণে বাসুকীর অচল ফনা থরথর করে কাঁপছে, এই ভূমিকম্পের কম্পিতা ধরণীকে অভয়-তরবারি এনে সান্ত্বনা দেবে কে আছ বীর? আন তোমার প্রলয় সুন্দর করাল কমনীয় হস্ত! আন তোমার রক্ত কৃপাণের বিদ্যুৎ হাসি, আন তোমার মারন মঙ্গল অভয় অসি! হে আমার ধ্বংসের দেবতা, একবার মহা প্রলয়ের বুকে তোমার ফুলের হাসি দেখাও! স্তুপকৃত শবের মাঝে শিবের জটায় কচি শশি হেসে উঠুক! এই কুৎসিত অসুন্দর সৃষ্টিকে নাশ কর, নাশ কর হে সুন্দর রুদ্র দেবতা! এই গলিত আর্ত সৃষ্টির প্রলয়ভস্ম-টীকা পরে নবীন বেশে এসে দেখা দাও!
জাগো জনশক্তি! হে আমার অবহেলিত পদপিষ্ট কৃষক, আমার মুটে মজুর ভাইরা! তোমার হাতে ঐ লাঙল আজ বলরাম স্কন্ধে হালের মত ক্ষিপ্ত তেজে গগনের মাঝে উৎক্ষিপ্ত হয়ে উঠুক। আন তোমার হাতুড়ি, ভাঙ ঐ উৎপীড়কের প্রাসাদ। ধুলায় লুটাও অর্থ–পিশাচ বলদর্পীর শির। ছোড়ো হাতুড়ি চালাও লাঙল উচ্চে তুলে ধর তোমার বুকের রক্ত মাখা লালে লাল ঝাণ্ডা। যারা তোমাদের পায়ের তলায় এনেছে, তাঁদের তোমরা পায়ের তলায় আন”।
ইন্নাস কাকা গ্রেস কটেজ-এর ইতিহাস ও তাকে ভাঙার হাত থেকে উদ্ধারের কথা জানালেন। আর জানালেন তাঁরা বছর তিনেকে ধরে এখানে দুটো হারমোনিয়াম এনে রেখেছেন ও কৃষ্ণনগরের ভালো গায়কদের শিক্ষক হিসেবে বলে রেখেছেন। খুব সামান্য টাকাতে এখানে নজরুলের গান শেখানোর একটা সাপ্তাহিক ক্লাস যদি তৈরি করা যেত এই চিন্তা থেকে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করছেন নানা ভাবে। যাতে নজরুলের স্মৃতি সমেত এই বাড়িটিতে অন্তত কিছু কালেকটিভ কাজ হয়, গত দুই বছরে কোন ছাত্র মেলেনি এই শহরে; যারা গ্রেস কটেজ-এ নজরুলের গান শিখবে, তাকে নিয়ে চর্চা করবে। এই শহরের কি হল? প্রথমে আমি অবাক হয়েছিলাম, ছাত্র না মেলার এই কথা শুনে। তারপর শুনলাম “এখন কিছু বাবা-মায়েরা তাঁদের সন্তানদের বাড়িতে একা মাস্টারমশাই রেখে গান শেখালেও সমবেত ক্লাসে পাঠাতে ইচ্ছুক নন। আর একটা অংশের বাবা-মায়েরা এই সময় প্রতিযোগিতার বাজারে সন্তানদের গানটান শেখাতে ইচ্ছুক নন”।
তাহলে আমাদের পরের প্রজন্ম কি আর রুদ্রমঙ্গল পড়বে না। তাঁরা কেবল মতাদর্শের বানানো সিলেবাস চোখ-কান-নাক বুজে মুখস্থ করে যাবে? আমাদের পরের প্রজন্ম কি ঐ “শুকনো পাতার নূপুর পায়ে নাচিছে ঘূর্ণিবায়” গানে কেবল কোন উৎসবের প্যান্ডেলে নাচবে? গানটা কি ওরা অনুভব করবে না, প্রাচীন গাছের সাথে সম্পর্ক দূরে থাক, একটা গান অনুভব করার সক্ষমতাটুকু কেড়ে নেবে এই ‘বৃহৎ শক্তিশালী মতাদর্শ’? আপাতত কোন উত্তর নেই জানা। কেবল দীর্ঘদিন ধরে হেরে যাওয়ার অনুভূতি, একটা বৃহৎ মতাদর্শের হাত থেকে আমাদের রুহুকে বাঁচাতে না পারার অনুভবটুকু আছে।
লেখক : সেন্টার ফর সোশ্যাল সাইন্স কলিকাতা-র শিক্ষার্থী ও গবেষক।