আমাজনে আগুন, গ্রেটা থুনবার্গ, জলবায়ু সঙ্কট ও জলবায়ু রাজনীতি   


  • September 26, 2019
  • (0 Comments)
  • 3511 Views

সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে নিবিড় অচ্ছেদ্য সম্পর্ক, ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখতে গেলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণব্যবস্থা যে বিপন্ন হয়ে পড়বেই, এটা আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে চর্চা হচ্ছে, সেখানে রাজনীতির বিষয়টা ঢুকেই পড়েছে, এড়িয়ে যাবার জো নেই। এমনকী স্কুলপড়ুয়াদের ডাকে যে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট হচ্ছে, তারও অন্যতম শ্লোগান, ব্যবস্থাটা বদলাও, কার্বন পুঁজিবাদ খতম করো। জলবায়ু সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচতে হলে, সঙ্কটের কারণগুলোকে তলিয়ে দেখা যে আগে দরকার, সে কথা উঠে আসছে বারবার। মোদ্দা, জলবায়ু বিজ্ঞান নয়, জলবায়ু রাজনীতি। লিখছেন সৌমিত্র ঘোষ

 

প্রাককথনঃ জলবায়ুপ্রতিবাদ

দিনকয় আগে পৃথিবীর যাবতীয় টেলিভিশন, স্মার্টফোন ও কম্পিউটার ট্যাবলেট-এর নীল পর্দা জুড়ে হা হা আগুন লাফাচ্ছিল। আমাজনের আগুন। ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু, গুয়াতেমালা সহ ন’টা দেশে বিস্তৃত যে আমাজন বর্ষাবন, সে বন ছারখার হয়ে যাচ্ছিল অকাল দাবানলে। উপগ্রহ ও নেট প্রযুক্তি, এবং ফেসবুক যথা সোস্যাল মিডিয়ার মারফত ওই দাবানলের আঁচ এসে ঢুকছিল আমাদের পোড়া বাংলায়। আসল দাবানল অথবা ওয়াইল্ডফায়ারের থেকে অনেক অনেক বেশি ক্ষিপ্রতা ও দ্রুততায় আমাজনের আগুন ও ধোঁয়া এক ফেসবুক খবরদানি থেকে পরেরটায়, পরের পরেরটায়। যেমন হয়ে থাকে, ফেসবুক থেকে সঘন প্রতিবাদী আন্দোলন জন্মে থাকে, কলকাতা ও জেলা শহরগুলোতেও আমাজন আগুন বিরোধী মিছিল পোস্টার ইত্যাদি দেখা দিল, স্কুলপড়ুয়া শিশুরা পথে নামল। আমাজন বাঁচানোর দাবিতে তামাম পৃথিবী এক, এমন ঠাওর হচ্ছিল।

 

আমাজনের দাবানল মানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন, মানে জলবায়ু পরিবর্তন। দুনিয়ার সর্বত্র ধুন্ধুমার বন-কাটাই চলছে, এমতাবস্থায় আমাজনও যদি যায়, পৃথিবীর ঘোর বিপদ। আমাজনের আগুনের পিঠোপিঠি, জলবায়ু পরিবর্তন বিরোধী আন্দোলন বিশ্ব-মিডিয়া ও ফেসবুকে খবর, সুতরাং তা নিয়েও দাবানলবিরোধীদের নড়াচড়া। গত বছর থেকেই সুইডেনের এক সাহসী স্কুলছাত্রী খবরের শিরোনাম, তাঁর উদ্যোগে ও আহ্বানে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্ব ধর্মঘট ডাকা হয়েছে, যা খবর পাওয়া গেল, বাংলার পরিবেশপন্থী স্কুলছাত্র এবং বিভিন্ন সংস্থা সংগঠন তাঁরাও পথে নামছেন। পৃথিবীর বড় বিপদ, এই সময় পথে না-নামলে রক্ষা নেই।

 

অন্য আর এক উদ্যোগে, ভারতবর্ষের ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু সংগঠন ও ব্যক্তি, হায়দরাবাদে মিলিত হচ্ছেন। যতদূর জানি, তাঁরা দাবি করছেন, অবিলম্বে রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে জলবায়ু-জরুরি অবস্থা মানে ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি ঘোষণা করা হোক।

 

সব মিলিয়ে বাজার সরগরম। প্রতীয়মান হয়, চারপাশে লোকজন পরিবেশ সঙ্কট, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে খুব ভাবনায় পড়েছেন। পৃথিবী ব্যাপারটা বড্ড বড় ও গোলমেলে, কোথায় কে কী ভাবছেন কী করছেন ঠাওর করে ওঠা যায় না। ভারত তুলনায় ছোট, বাংলা আরো, ফলে এ মুল্লুকে কী ঘটছে তা অবশ্য চেষ্টা করলে জানা যায়। বর্তমান কলমচি অনেকদিন যাবৎ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নাড়াঘাটা করে আসছে, সে বাবদে কিছু অধিকারবোধ তৈরি হয়েছে, সুতরাং কিছু কথা সাহস করে বলে ফেলা যায়। এ ভিন্ন, এটিই যাকে বলে বেরাহ্মমুহুর্ত বা ঠিক সময়, মিডিয়াবাজারে আমাজন জলবায়ু পরিবর্তন অক্সিজেন নাইট্রোজেন কার্বন- ডাই-অক্সাইড পরিবেশ প্রকৃতি সব কিছু দেদার খাচ্ছে, এর পরে এসব নিয়ে ভাটালে লোকে কচি হাই তুলে অন্য খবরে যাবে।

 

কী হচ্ছে, কী হয়, কী হতে পারে, কী করা উচিত, সে প্রসঙ্গে বিশদে যাবার পূর্বে বলে নেওয়া ভালো, এই লেখায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান বিষয়ক কোনও তথ্য সেভাবে থাকবে না। বায়ুমণ্ডলে ঠিক কত লক্ষ কোটি টন গ্রিনহাউস গ্যাস জমা হলে পৃথিবীর উত্তাপ ঠিক ক’ ডিগ্রি বাড়বে, কিংবা ডিগ্রিপিছু উষ্ণায়নের ধাক্কায় পৃথিবীর জলবায়ু ঠিক কী কী ভাবে বদলাবে, এহেন অতি প্রয়োজনীয় চুলচেরা বৈজ্ঞানিক সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসেবে আমরা ঢুকব না। ঢুকব না তার প্রথম কারণ, এ বিষয়ে প্রচুর লেখাপত্র আছে, আগ্রহীরা ইচ্ছে করলেই পড়ে ফেলতে পারেন। দ্বিতীয়ত, এই লেখক মনে করে না, নিছক বিজ্ঞান এবং সংখ্যাতত্ত্ব  দিয়ে জলবায়ু সঙ্কটের ল্যাজামুড়ো বুঝে ফেলা যাবে। বরং তথ্য ও সংখ্যার দুর্বোধ্য কচকচানি থেকে মনেই হতে পারে যে গোটা ব্যাপারটা বিশেষজ্ঞ ভিন্ন আম-সাধারণের বুদ্ধির অগম্য, ফলে এ নিয়ে কালক্ষেপে লাভ নেই। তৃতীয় ও প্রধান কারণ, গুটিকয় ফন্দিবাজ মুনাফাবাজ ক্ষমতাধর লোক/গোষ্ঠী ঠিক এইটাই চায় — লোকে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় যথাক্রমে গৃহহীন, জীবিকাচ্যূত, উদ্বাস্তু, দরিদ্রতর ও নিশ্চিহ্ন হবে, অথচ কী হচ্ছে কেন হচ্ছে তা জানার উপায়টি থাকবে না।

 

মোদ্দা, জলবায়ু বিজ্ঞান নয়, জলবায়ু রাজনীতি। বিদেশে, বিশেষত ইউরোপে, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে চর্চা হামেহাল হচ্ছে, সেখানে রাজনীতির বিষয়টা ঢুকেই পড়েছে, এড়িয়ে যাবার জো নেই। এমনকী স্কুলপড়ুয়াদের ডাকে যে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘট হচ্ছে, তারও অন্যতম শ্লোগান, ব্যবস্থাটা বদলাও, কার্বন পুঁজিবাদ খতম করো। জলবায়ু সঙ্কটের হাত থেকে বাঁচতে হলে, সঙ্কটের কারণগুলোকে তলিয়ে দেখা যে আগে দরকার, সে কথা উঠে আসছে বারবার। এ সময়ের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার যে নিবিড় অচ্ছেদ্য সম্পর্ক, ব্যবস্থাটাকে জায়গামতো রাখতে গেলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণ-ব্যবস্থা যে বিপন্ন হয়ে পড়বেই, এটা আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। অবিশ্যি, এই সব স্বীকার-অস্বীকার, জানাবোঝার সবটাই আন্দোলনরত ও বিপদাপন্ন আমজনতার, পুঁজিব্যবস্থার মাথায় যারা বসে থাকেন, সে সব রাষ্ট্রনেতা ও কর্পোরেটকর্তাদের নয়। জলবায়ু রাজনীতি বলতে তাঁরা যা বোঝেন, তাতে ব্যবস্থাটা অক্ষুন্ন থাকে, ধান্দাপাতি চলে, এমনকী নইধান্দা মানে মুনাফা ও আধিপত্য বাড়ানোর দশ-বিশ-পঞ্চাশ নতুন তারিকা ঝটপট আমদানি হয়। এই লেখাটায় আমরা ভারত ওরফে বঙ্গভূম নিয়ে কথা বলছি, জলবায়ু রাজনীতির মেইনস্ট্রিম অবতার প্রসঙ্গে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই, তা ভিন্ন, বাপারটা সাতিশয় খটোমটো মাথা-গুলোনো। তৎসত্বেও, দু’চারটি গোড়ার কথা বলতেই হয়।

 

জলবায়ু রাজনীতি/গোড়ার কথা বিশ্ব পরিপ্রেক্ষিত 

ধরে নেওয়া যাক, সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে, খানিক প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি (বা “উষ্ণায়ন”) এবং তজ্জনিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টার সঙ্গে কম-বেশি পরিচয় ইদানীং আমাদের ঘটছে। জলবায়ু-পরিবর্তন নিয়ে বৎসরান্তিক যে কপ-সম্মেলন হয়ে থাকে, সে কথাও মোটামুটি সবার জানা, সমস্ত দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা একসঙ্গে বসে জলবায়ু-পরিবর্তনের সঙ্কটের সমাধানসুত্র বার করেন, মানে ১১-১২ দিন ধরে নানান রকম আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্কের (এবং তামাশা) পর যে যার বাড়ি চলে যান। অথবা বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন ইত্যাদি, যথা ২০০৯-এর কোপেনহাগেন, ২০১৫-র পারি ইত্যাদি, যেখানে জলবায়ু-সন্ধির খসড়া তৈরি হয়, কিম্বা সন্ধিচুক্তি সই হয়।

 

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কিছু জানা কথা আবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা উষ্ণায়ন হচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহের সামগ্রিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর জলবায়ু (বা আবহাওয়া) বদলে যাচ্ছে, যথা যে সময়ে বা যে জায়গায় গরম পড়ার কথা নয়, সে সময়ে, সে জায়গাতেই গরম বাড়ছে দারুণভাবে; অন্যত্র কোথাও, খরাক্রান্ত এলাকা গরমকালেই অতিবৃষ্টিজনিত বন্যায় ভেসে যাচ্ছে,অথবা বারবার ‘ফিরে আসছে’ শীত, কোথাও এমন বরফ পড়ছে যে সাধারণ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত। তাপমাত্রা বাড়ার ফলে মেরু অঞ্চলগুলি সঙ্কটাপন্ন, হিমালয় সহ অন্যত্র চিরতুষারক্ষেত্রের বরফ গলছে, প্রতিদিন একটু একটু করে উঠে আসছে সমুদ্রতল। একের পর এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ছে উপকূল এলাকায়, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট দ্বীপ, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে অন্তত একটি জনবহুল দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের জলে তলিয়ে গেছে, অন্য একটি দ্বীপ অর্ধেক ডোবা, সেখান থেকে মানুষ পাড়ি দিচ্ছেন অন্যত্র, জলবায়ু উদ্বাস্তু বা ক্লাইমেট রিফিউজি হয়ে। জলবায়ু বদলের এই বাহ্যিক, প্রত্যক্ষ চেহারার সঙ্গে আমরা পরিচিত। দীর্ঘমেয়াদী অভিঘাত বা লং-টার্ম ইমপ্যাক্টগুলো সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয় না। অথচ, আমাদের দেশসুদ্ধ পৃথিবীর সর্বত্র প্রকৃতি নির্ভর মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা জলবায়ু বদলে আক্রান্ত, কী চাষি কী বনবাসী আদিবাসী কী মৎস্যজীবী প্রত্যেকেরই জীবিকায় টান পড়ছে নানাভাবে।

 

কেন উষ্ণায়ন? কেনই বা জলবায়ু বদলের বিপদ? বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায়ই বা কী?  

আপাতভাবে, এই তিন প্রশ্নেরই কিছু ‘সর্বস্বীকৃত’ উত্তর আছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সেগুলিকে মেনেও নিয়েছেন। জলবায়ু-বদল বিষয়ে তথ্য-সংগ্রহ ও তার ‘সমাধান’ নিয়ে কাজ করার জন্য অন্তত দুটি অন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা গঠিত হয়েছে, যথা আইপিসিসি  বা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ, এবং ইউএনএফসিসিসি বা ইউনাইটেড নেশান ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ। প্রথম সংস্থাটি জলবায়ু বদলের প্রাকৃতিক ঘটনাটির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন, পরের সংস্থা কাজ করেন জলবায়ু-পরিবর্তনের সমাধানকল্পে রচিত সন্ধি (যথা কিয়োটো কী পারি) রূপায়ণের জন্য।

 

আইপিসিসি প্রদত্ত (আইপিসিসি’র বাইরেও এ নিয়ে কাজ করছেন বহু বিজ্ঞানী, যথা আমেরিকার জেমস হানসেন) তথ্য মোতাবেক, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ক্রমশ বাড়ছে মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের (যে যে গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জমে থেকে সূর্যের তাপকে ভূপৃষ্ঠে আটকে রাখতে সাহায্য করে, ফলে পৃথিবী হয়ে ওঠে এক উত্তপ্ত গ্রিনহাউসের মতো) পরিমাণ। বায়ুমণ্ডলের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ গ্যাস সেখানে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে জমা হচ্ছে। এই গ্যাস আসছে প্রধানত কয়লা বা পেট্রলের মত জীবাশ্ম-জ্বালানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার থেকে।

 

মূল গ্রিনহাউস গ্যাস, অর্থাৎ কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে ছাড়ার পরিমাণ পৃথিবীতে বেড়ে যেতে থাকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময় থেকেই। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান-সহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র যে শিল্পনির্ভর ‘আধুনিক’ সভ্যতা মানবজাতির তথাকথিত আদর্শ হয়ে ওঠে, তা গড়ার জন্য (বিভিন্ন ইঞ্জিন, বয়লার চালানোর জন্য,পরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য) যে পরিমাণ তেল-কয়লা পোড়াতে হয় (এখনো হচ্ছে) তা সোজাসুজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসাবে বায়ুমণ্ডলে জমা হতে থাকে। এছাড়াও, যেখানে-সেখানে যথেচ্ছ বনধ্বংসের ফলেও গাছে জমা থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাইরে বেরিয়ে আসে। পৃথিবীতে কার্বনের যে ক’টি প্রাকৃতিক ভাণ্ডার আছে, যথা সমুদ্র, মাটি ও উদ্ভিদ, এই বিপুল পরিমাণ অ-প্রাকৃতিক কার্বনের সবটা শুষে নিতে পারে না, পৃথিবী আক্ষরিক অর্থেই কার্বনময় ও তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে, যা থেকে দেখা দেয় জলবায়ু-বদলের সঙ্কট।

 

এই সঙ্কট থেকে মুক্তির উপায় কী? আইপিসিসি ও হানসেন-আদি বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বাতাসে কার্বন গ্যাস সহ সব ধরণের গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখতে হবে, যাতে পৃথিবীর তাপমাত্রা হুহু করে না বেড়ে  যেতে পারে। কীভাবে তা সম্ভব? ১৯৯২-এ ব্রাজিলের রায়ো-ডি-জানেরোর বিখ্যাত বসুন্ধরা বৈঠকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হন, রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু বদল বিষয়ক সমিতি ইউএনএফসিসিসি’র জন্মও তখনই হয়। ঠিক হয়, গ্রিনহাউস গ্যাস বাতাসে ছাড়ার পরিমাণ কম করতে হবে।

 

জলবায়ু বদলের বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, অথচ আর্ন্তজাতিক জলবায়ু রাজনীতির বিষয়টি এখনো প্রবল ধূম্রজালে আচ্ছন্ন, নানান বৈজ্ঞানিক তথ্য-অতথ্য, যুক্তি-কুযুক্তি এবং বিপুল পরিমাণ ‘জার্গন’-এর বোঝা সরিয়ে ঠিক-বেঠিক বুঝে নেওয়া দুষ্কর।

 

কম তো করতে হবে। কিন্তু, কীভাবে? আর, করেই বা কে? ১৯৯২ থেকে ঝগড়া-কাজিয়া চালিয়ে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছোনো যায় না, এমনকী, যখন ১৯৯৭-এ জাপানের কিয়োটোয় কিয়োটো সন্ধি সাক্ষরিত হচ্ছে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া-সহ একাধিক দেশ এই সন্ধিতে সই করতে অস্বীকার করে। কিয়োটো সন্ধির মোদ্দা কথা ছিল যেহেতু বাতাসে বেশি কার্বন ছাড়ার জন্য শিল্পোন্নত দেশেরাই দায়ী, চুক্তি-সাক্ষরকারী ৩৮টি এইরকম দেশকে ২০০৮ থেকে ২০১২-র মধ্যে তাদের মোট গ্যাস নির্গমন গড়ে ৫.২ শতাংশ হারে (১৯৯০-এর নির্গমনমাত্রাকে বেসলাইন বা শুরুর মাত্রা ধরে) কমিয়ে ফেলতে হবে। কীভাবে এই ‘কমিয়ে ফেলাটা’ ঘটবে? কিয়োটো সন্ধি অনুযায়ী, শিল্পোন্নত দেশগুলো একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত কার্বন গ্যাস বাতাসে (কী সমুদ্রে, উদ্ভিদে) জমা করার ‘অধিকার’ পাবে। মাত্রাধিক গ্যাস ছাড়া ‘কমানোর’ জন্য এই সন্ধিতে এক অপূর্ব উপায় বাতলানো হল। বলা হল, যেহেতু বায়ুমণ্ডল বিশ্বজনীন, পৃথিবীর যেখানেই এই ‘কমানোর’ কাজটা করা হোক না কেন, তাতে কিছু এসে যায় না, ইচ্ছা করলে শিল্পোন্নত দেশের শিল্পসংস্থারা নিজেদের শিল্পের বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেই (এবং সে কারণে যথেচ্ছ তেল-কয়লা পুড়িয়েই) নিজেদের কার্বন নির্গমন কম করতে পারবেন। কী করে? না, তাঁরা উন্নয়নশীল বা গরিব দেশে কম-কার্বন (যথা কোনো লোহা কারখানায় এমন প্রযুক্তি বসানো যাতে বিদ্যুৎ কম লাগে) বা না-কার্বন(যথা বায়ুবিদ্যুৎ কী জলবিদ্যুৎ উৎপাদন) প্রকল্প স্থাপনে পয়সা দেবেন। গরিব দেশের যে সব প্রকল্প এই পয়সা নিতে চায়, তারা কতটা কার্বন প্রকল্প করে বাঁচল তার হিসাব সহ (হিসাব করে দেবার, প্রকল্প লেখার জন্য রাতারাতি সব পরামর্শদাতা সংস্থা বাজারে এসে গেল।) ইউএনএফসিসিসিতে আবেদনপত্র জমা দেবে। ‘বাঁচানো’ কী ‘কমানো’ কার্বনের হিসাবনিকাশ খতিয়ে দেখে ইউএনএফসিসিসি প্রকল্পগুলিকে প্রতি টন হিসাবে ‘কার্বন ঋণ’ মঞ্জুর করবে। সেই ‘কার্বন ঋণ’ বিশ্ববাজারে বেচে যে পয়সা পাওয়া যাবে তা দিয়ে প্রকল্প করার খরচা উঠবে। অন্যদিকে যে সংস্থা এই ‘ঋণ’ কিনবেন, তাঁরা নিজেদের নির্দিষ্ট নির্গমনমাত্রায় কেনা ‘ঋণ’-এর সমানুপাতে ছাড় পাবেন। ধরা যাক, ইংল্যান্ডের আর্সেলর-মিত্তাল সংস্থাটির একটি নির্দিষ্ট কার্বন ছাড়ার পরিমাণ আছে। ভারতের বাজার থেকে উপযুক্ত পরিমাণে ‘কার্বন ঋণ’ কিনে এই পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি কার্বন ছাড়ার অধিকার তাঁদের জন্মাতে পারে। এই বাজারি ব্যবস্থাটাকে বলা হচ্ছে কার্বন ট্রেডিং বা কার্বন বাণিজ্য।

 

কিয়োটোপন্থী যাঁরা কার্বন ছাড়া- কমানোয় রাজী হলেন তাঁরা এই চমৎকার খেলাতে হইহই করে নেমে পড়লেন। অন্যদিকে, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের মতো যে দেশ কিনা মোট পৃথিবীর মোট কার্বন নির্গমনের সিংহভাগের জন্য দায়ী, তারা তো সই-ই করেনি। আমেরিকার বক্তব্য, ভারত আর চীন যদি নিজেদের গ্যাস ছাড়ার পরিমাণ নিয়ম করে না-কমায়, তাদের সই করার কোনো মানে হয় না। এর মানে এই নয় যে আমেরিকা কার্বন বাণিজ্য করছে না। আমেরিকান/অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানিরা নিজেদের দেশে জলবায়ুর ফাটকাবাজার খুলে ফেলেছে, সেখানে তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা কার্বন ঋণ বিক্রি হয় (বিশেষত যে ক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসি’র ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি।

 

এসবের যা ফল,তাই-ই হল। ২০০৭ নাগাদ আইপিসিসি তাদের চতুর্থ প্রতিবেদন পেশ করার পর দেখা গেল, কমা দূরস্থান, বাতাসে কার্বনের মাত্রা বেড়েই চলেছে,পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। ২০১০-এর গোড়ায়,কোপেনহাগেন পরবর্তী সময়েও অবস্থা একইরকম। ২০১১-১২ নাগাদ পরিষ্কার বোঝা গেল, কার্বন ব্যবসার নামে খুলেআম ধাপ্পাবাজি চলছে, একই কার্বন ঋণ বিভিন্ন দালালি মানে ব্রোকারেজ কোম্পানির হাত ঘুরে দু’তিনবার বিক্রি হচ্ছে, তদুপরি জালি কনসালটেন্সি সংস্থাকে টাকা খাইয়ে, দূষণ হ্রাসের কাল্পনিক হিসেব তৈরি হচ্ছে। কার্বন ঋণ বিক্রি কমে গেল, বাজারে মন্দা। অথচ, ২০১৫-র পারি সন্ধিতে নাম বদলে সেই কার্বন বাণিজ্য ফিরে এল আবার, এবারের, অর্থাৎ ২৪-তম কপ সম্মেলনে, সে বিষয়ে নিয়মকানুন তৈরি হবে, এমন ভাবা হচ্ছে।

 

জলবায়ুরাজনীতি/ভারতবর্ষ, উন্নয়ন, কয়লা, নাকয়লা বিকল্প             

দেশে ফেরা যাক। জলবায়ু রাজনীতির একটা দিক যদি হয় কার্বন ব্যাপার, অন্যদিকে দূষণের অধিকার কিংবা ‘কমন বাট ডিফারেনশিয়েটেড’ দায়িত্ব। অর্থাৎ ভারত সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, যেহেতু উন্নত দেশগুলি “উন্নত” হবার জন্য প্রচুর কয়লা আর তেল পুড়িয়েছে, তাদের শিল্পটিল্প থেকে কার্বন-ডাই- অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস বেরিয়ে বায়ুমণ্ডলে জমা হয়ে হয়ে এই বিপদ তৈরি করেছে, দায়টা তো সবচাইতে বেশি ওদেরই নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ‘উন্নয়নের’, বা শিল্পায়নের পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে না। অতএব কোনো নির্দিষ্ট এবং বাধ্যতামূলক নির্গমন হ্রাসমাত্রা দেশ গ্রহণ করতে পারে না। ২০১৫-র পারি চুক্তিতে ভারত রাজি হয়েছে কেননা ওই চুক্তিতে কোনো আপত্তিকর ‘বাধ্যতামূলক নির্গমন হ্রাসমাত্রা’র কথা বলা নেই। দেশীয় কর্পোরেট সংস্থাকুল, বড় এনজিওগুলো, দেশের সংবাদমাধ্যমের মুখ্য অংশ, এবং বড়ছোট বামপন্থী দল এই দেশপ্রেমিক দৃষ্টিভঙ্গীর সমর্থক, এবং সরকারি ভাষ্যে তাঁরা হুক্কাহুয়া করেন।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের রাজনীতিকে এভাবে আদ্যন্ত ভুল এক পরিসরে নিয়ে যাওয়া হয়। ‘উন্নত’ যেহেতু হতেই হবে, সেই উন্নয়নের মূল্যে আরো বেশি করে কার্বন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে মিশতে থাকে। গাছ কেটে, কৃষিজমি-অরণ্য-জলা নষ্ট করে নতুন নগরকেন্দ্রগুলি গড়ে ওঠে, রাস্তা তৈরি হয়, প্রচুর নতুন গাড়ি সেই রাস্তায় নামে। এ সবের কারণে, আর নতুন শিল্প তৈরি করতে গিয়ে, যে শক্তির দরকার তা আসে মূলত তেল আর কয়লা থেকে, যা পোড়ানো মানেই ভূমণ্ডলে সঞ্চিত কার্বন গ্যাস বাইরে আসা। অন্যদিকে,কৃষিজমি আর অরণ্যে জমে থাকা কার্বনও বাইরে আসে, এই প্রাকৃতিক সম্পদগুলির উপর নির্ভরশীল মানুষেরা উন্নয়নের উদ্বাস্তু হয়ে যখন শহরাঞ্চলে ভিড় করেন, তাঁদের শক্তি ব্যবহারের পরিমাণও আগের চাইতে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। উন্নয়নের সামগ্রিক প্রক্রিয়াটা, চক্রবৃদ্ধিহারে, কার্বন গ্যাস ছাড়া বাড়িয়েই চলে।

 

ভারত সরকার মহোল্লাসে একের পর এক নতুন কয়লা খনি খুলছে, মাটির তলায় জমে থাকা কয়লা বাইরে আনার জন্য নিয়ম করে বনজঙ্গল সাফ হচ্ছে। এ বছরের গোড়ার দিকের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দেশের কয়লা উৎপাদন ১৯৭০-এর গোড়ায় স্রেফ ৭ কোটি টন, ২০১৭-১৮ নাগাদ ৬৭ কোটি। ২০১৮-১৯, উৎপাদন বাড়ছে ৭.৯ শতাংশ। সরকার দাবি করছে, কয়লা অপরূপ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, আগামী অন্তত শতাব্দী দুয়েক, প্রধানত কয়লাই ভারতের তামাম শক্তির যোগান দেবে। জাতীয় বিদ্যুৎ পোর্টালে ছাপা হালের তথ্য বলছে, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩৫০ গিগাওয়াট, তার মধ্যে কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ ২২২, অর্থাৎ ৬৩ শতাংশ। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

 

আশ্চর্য কী, ভারতে কার্বন গ্যাস ছাড়ার পরিমাণও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ২০১৮-র শেষাশেষি ইউএনএফসিসিকে দেওয়া  সরকারি তথ্য মোতাবেক, ২০১০ নাগাদ ভারতের মোট কার্বন নির্গমন ২০০.১ কোটি টন, ২০১৪-য় তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০০.৬ কোটি। ২০১৫-র সরকারি হিসেব বলছে, ভারতের মাটির তলায় নিদেনপক্ষে ৩০০০ কোটি টন কয়লার ভাঁড়ার মজুদ। ২০১৪-১৫ নাগাদ, দেশের কয়লা উৎপাদনের শতকরা ৯২ ভাগ আসত খোলামুখ খনি থেকে। পুরোনো পাতালখনির তুলনায়, খোলামুখ খনি থেকে কার্বন গ্যাস বেরোয় বেশি, স্থানীয় পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবও এহেন খনিতে বেশি।

 

কয়লা থেকে না-কয়লা ‘সাফ’ বিকল্প, যথা জল, হাওয়া, সৌরতাপ, ও জৈব উৎস থেকে তৈরি বিদ্যুৎ। সরকারের দাবি, ২০৩০-এর মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতার  চল্লিশ ভাগ আসবে এহেন না-কয়লা না-তেল (non fossil fuel) ক্ষেত্র থেকে। এই বছরের গোড়ায়, দেশের মোট ৩৫০ গিগাওয়াট উৎপাদনের ৩৬ শতাংশ না-কয়লা না-তেল, যার মধ্যে বড় জলবিদ্যুৎ ও পরমাণুবিদ্যুৎ সব মিশে আছে। উৎপাদনক্ষমতা (installed capacity) আর উৎপাদন (actual generation) আদৌ এক নয়। ২০১৯-এর গোড়ায়, পুর্ননবীকরণযোগ্য ক্ষেত্র ( যথা হাওয়া, জৈবপদার্থ, সৌর ও ছোট জলবিদ্যুৎ) থেকে উৎপাদনক্ষমতার ২১ ভাগ পাওয়া গেলেও, ২০১৮-১৯ নাগাদ উৎপাদন সীমিত থাকছে ৬ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে।

 

ফলত, ‘পরিচ্ছন্ন শক্তি’ বা ‘সবুজ শক্তি’ বলতে আপাতত বৃহৎ জলবিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি, বা তার চাইতেও অনেক অনেক বেশি ক্ষতিকর, পরমাণুবিদ্যুৎ, নিদেনপক্ষে দৈত্যাকার সব হাওয়াকল, কী সৌরবিদ্যুৎ-এর কাঁচের ঘেরাটোপ, যার কোনটিই বিস্তর মানুষকে বাস্তুচ্যুত (জমি, পশুচারণভূমি, বন দখল হতে থাকে) ও জীবিকাচ্যুত না-করে সম্ভব নয়। এ ভিন্ন, জলবিদ্যুৎ তৈরির জন্য যে বাঁধ দেওয়া হয়, সেখানে জমা জল থেকে নিরন্তর মিথেন বেরোতে থাকে, জৈববিদ্যুৎ তৈরি করতে গিয়ে যথেচ্ছ দূষণ ছড়ানো হয়, সৌরবিদ্যুতের কাঁচের প্যানেল চালু রাখতে গেলে, চাষের কী দৈনন্দিন ব্যবহারের জলে টান পড়ে। আরো যা গড়বড়ে, অতি নচ্ছার কর্পোরেটদের দখলে না-কয়লা না-তেল পুনর্নবীকরণযোগ্য প্রকল্পের বেশিরভাগ, যথা যে আদানি কোম্পানির রোজগারের অধিকাংশ আসে খোলামুখ কয়লাখনি আর তাপবিদ্যুৎ থেকে, তারাই দেশের সবচাইতে বড় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদক। সুজলন, যারা কিনা হাওয়াবিদ্যুৎ উৎপাদনে পৃথিবীতে একনম্বর, দেশের নানান জায়গায়, স্থানীয় মানুষজনের জমিজিরেত নানা ছলছুতোয় হাতিয়ে, হাওয়াকল বানায় এবং টাটা, বাজাজ ইত্যাদি কর্পোরেটদের বেচে থাকে। সুজলন, আদানি, টাটা, আম্বানি, বিড়লা আদি মশহুর কর্পোরেটেরা কিয়োটো পরবর্তী সময়ে জলবায়ু সঙ্কটের সমাধানকল্পে হুদো হুদো ‘সাফ’, না-কার্বন, সিডিএম (ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম) প্রকল্প করে কার্বন ঋণ কামিয়েছে ও বেচেছে।

 

 

লেখক সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী।

 

 

Share this
Leave a Comment