দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট-বিলগ্নিকরণ, কর্পোরেট আগ্রাসন বনাম প্রতিরোধ


  • September 16, 2019
  • (0 Comments)
  • 2533 Views

নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় সংস্করণে ভারতের শ্রমজীবী জনগণের উপর যে ধারাবাহিক আক্রমণ নেমে আসছে তা কি সমবেত প্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দেওয়া সম্ভব? দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট সহ তিনটি কারখানায় প্রস্তাবিত বিলগ্নিকরণ রুখে দেওয়া যাবে? উত্তরটা বহুমাত্রিক এবং জটিল।লড়াইয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে। লিখেছেন সুমন কল্যাণ মৌলিক

 

দেশজুড়ে আকাশে বাতাসে এখন চন্দ্রযানের গন্ধ। ইসরোর বিজ্ঞানীদের নিরলস পরিশ্রম ভারতবাসী হিসেবে আমাদের যেমন গর্বিত করেছে, তেমনি আমাদের নজর এড়াচ্ছে না চন্দ্রযানের সাফল্যকে নিজেদের ঝুলিতে টানার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা। এই প্রচারের আখ্যানে লুকিয়ে আছে দেশীয় প্রযুক্তির জয়গান। হ্যাঁ আমরাও পারি। কর্পোরেট মিডিয়ার সৌজন্যে অষ্টপ্রহর এসব দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল আমাদের দেশের রাষ্ট্রনেতা, পলিসি প্রণেতা, জনপ্রতিনিধিরা সত্যিই কি দেশপ্রেমকে মর্যাদা দেন? প্রশ্নটি আজ ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক। আসুন, একটু ফিরে তাকাই। সময়টা ১৯৭৫, মহাকাশে গিয়েছিল কৃত্রিম উপগ্রহ আর্যভট্ট। সেই কৃত্রিম উপগ্রহের ইস্পাত তৈরি করেছিল দুর্গাপুরের অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিকরা যারা আজ এই ‘দেশপ্রেমী’ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধ্বংসের মুখোমুখি। মনে পড়ে কারগিল যুদ্ধ, সেসময় রণক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল বোফর্স কামান। কিন্তু কজন জানেন যে সেই আপৎকালে বোফর্সের গোলা তৈরি করেছিলেন দুর্গাপুরের এই ছোট্ট কারখানার শ্রমিকরা, যারা আজ সরকারের কাছে অদক্ষ, বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়াই তাদের ভবিতব্য বলে নিদান হেঁকেছে আচ্ছে দিনের ফেরিওয়ালারা। নব্বইয়ের দশকে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেডের (সেইল) সেই গর্বিত ঘোষণাবাহী বিজ্ঞাপনটি মনে পড়ে যেখানে এক অপাপবিদ্ধ শিশুর পোশাকে একটা স্টিলের ক্লিপ, আর নীচে লেখা প্রত্যেক ভারতবাসীর শরীরে এক টুকরো ইস্পাত আছে যা তৈরি করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেইল।সেই স্টেইনলেস স্টিল তৈরি হতো তামিলনাড়ুর সালেমে, যারাও আজ নিলামে চড়ছে।

 

পরিকল্পনাটা একটু বিশদে ব্যাখ্যা করা ভালো। নীতি আয়োগের পরামর্শে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড তার তিনটি প্রোডাকশন ইউনিট (দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট, সালেম স্টিল প্ল্যান্ট, বিশ্বেশরাইশ স্টিল) কে বিলগ্নিকরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বলা হয়েছে আগ্রহী ক্রেতাদের ১৫ই এপ্রিল, ২০১৯ এর মধ্যে দরপত্র জমা দিতে হবে। এই বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়াকে সম্পাদন করার দায়িত্বে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া ক্যাপিটাল মার্কেটস লিমিটেড।

 

এই বিলগ্নিকরণের গল্পটা নতুন নয়। ২০১৬ সালের ২ আগস্ট নীতি আয়োগ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণের সুপারিশ করে। সেই মোতাবেক ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ক্যাবিনেট কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের প্রস্তাবে সায় দেয়। ২০১৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সেইল-এর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সভায় এই তিনটি কারখানায় ১০০ শতাংশ বিলগ্নিকরণের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এখন এই বিলগ্নিকরণের অর্থ কী? সোজা কথায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারি অংশীদারি জলের দরে কর্পোরেট সংস্থাগুলির হাতে বেচে দেওয়া। এর ফলে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি সংস্থাগুলির হাতে চলে যাবে। গত ২৬ বছরের বিলগ্নিকরণের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে কেন্দ্রীয় সরকার ১.১৪ লক্ষ কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করেছে। এর মধ্যে অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রীসভা ও নরেন্দ্র মোদির প্রথম দফার মন্ত্রীসভা বিক্রি করেছে মোট সম্পত্তির ৫২ শতাংশ। বাজপেয়ী জমানায় ভারত অ্যালুমিনিয়াম কোম্পানি (বালকো) ও হিন্দুস্তান জিঙ্ক কিনে নেয় কুখ্যাত শিল্পপতি অনিল আগরওয়ালের স্টারলাইট। ইন্ডিয়ান পেট্রাকেমিক্যালস যায় রিলায়েন্সের হাতে।

 

বর্তমান নিবন্ধে আমরা দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টকে ভরকেন্দ্রে রেখে এই তিনটি ইস্পাত কারখানার ইতিহাস, তাদের বর্তমান অবস্থা, ইস্পাত শিল্পের সংকট তথা সরকারের দায় নিয়ে আলোচনা করবো। শেষে এই বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রতিরোধের সমস্যা ও সম্ভাবনার জায়গাটাও যুক্ত করা হয়েছে।

 

 

দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কথা

ভারতবর্ষের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশেষ ইস্পাতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ২য় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তখনকার হিন্দুস্তান স্টিল লিমিটেডের (বর্তমান স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড) তত্ত্বাবধানে অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি উৎপাদন শুরু হয়। উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভারত সরকারের ইস্পাত ও খনি দপ্তরের মন্ত্রী নীলম সঞ্জীব রেড্ডি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে হাওড়া-দিল্লি মেন রেল লাইন ও জি.টি. রোডের পাশে ৪.৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কারখানাটি অবস্থিত। অ্যালয়  স্টিল প্ল্যান্ট (এ এস পি) কারখানার মূল কনসালটেন্ট ছিল এম এন দস্তুর অ্যান্ড কোম্পানি। প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়েছিল কানাডার অ্যাটলাস স্টিলস থেকে। প্রধান প্রধান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছিল জাপানের একটি কনসোর্টিয়াম জ্যাকসন থেকে। এ.এস.পি কারখানা হল ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস ভিত্তিক মিশ্র (alloy) ও বিশেষ ধরনের ইস্পাত (special steel) উৎপাদক সংস্থা। এখানে স্টেইনলেস ও নন-স্টেইনলেস উভয় ধরনের ইস্পাতই তৈরি হয়। কারখানায় বহুবিধ ও জটিল ব্যবহারের জন্য মিশ্র ও বিশেষ ধরনের ৪৫০’র বেশি গ্রেড তৈরিতে সক্ষম।

 

দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল একটি স্ট্র্যাটেজিক কারখানা। দেশের স্বাধীনতা, সার্বোভৌমত্ব রক্ষা ও বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতির জন্য এই কারখানাকে বাঁচিয়ে রাখা ও আধুনিকীকরণ একান্ত জরুরী। যদি কারখানার উৎপাদিত সামগ্রীর ক্ষেত্র ও বৈচিত্র্যেকে নজর করা যায় তবে এই কারখানার গুরুত্বটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

 

১) প্রতিরক্ষা : ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক তৈরির জন্য স্পেড ও জ্যাকল স্টিল, গাড়ি তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের স্টিল এই কারখানায় তৈরি হয়। কারগিল যুদ্ধ ও তার পরবর্তী কালে বোফর্স কামানের গোলা ও রাইফেল সহ অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্য এবং মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চারের জন্য প্রয়োজনীয় স্টিল এখানেই তৈরি হয়। দুর্গাপুর কারখানাতেই প্রথম দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার INS VIKRANT ও INS KAMORTA-এর জন্য উচ্চ চাপ ও কম তাপমাত্রা প্রতিরোধক ইস্পাত তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এই কারখানা প্রতিবছর গড়ে ১২,০০০-১৫,০০০ বিশেষ ধরনের ইস্পাত ইনগট রুটে এবং ৪,০০০-৬,০০০ টন কনকাস্ট রুটে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করে।

 

২) রেলওয়েজ: বেঙ্গালুরুর হুইল ফ্যাক্টরিতে অ্যাক্সেল তৈরির জন্য, রাজধানী ও শতাব্দীর মতো প্রিমিয়াম ট্রেনের এল এইচ বি কোচের জন্য বিশেষ ধরনের ইস্পাত এখানে তৈরি হয়। এ এস পি-এর অন্যান্য গ্রাহকদের মধ্যে আছে ডিজেল লোকো ওয়ার্কস (বেনারস), চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা ইত্যাদি। এই কারখানা প্রতিবছর গড়ে ৩৫০০০-৫০০০০ টন বিশেষ ধরনের স্টিল ভারতীয় রেলকে সরবরাহ করে।

 

৩) অ্যারোস্পেস, নিউক্লিয়ার অন্যান্য গবেষণায় : জেনিভাতে অবস্থিত European Organization for Nuclear Research (CERN) বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিরহস্য উন্মোচনে এবং ঈশ্বর কণার সন্ধানে Large Haddron Collider যন্ত্রের মাধ্যমে যে পরীক্ষা করেছিল সেই যন্ত্রের ফ্রন্ট অ্যাবসরবারটি যে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি সেই A1S1304L গ্রেডের স্টিল দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিলে তৈরি হয়েছে। নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টার যে স্টিলে তৈরি তা এই কারখানাতে তৈরি হয়।এছাড়া ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড, ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন, কোল ইন্ডিয়ার মতো রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে এ.এস.পি বিশেষ ধরনের ইস্পাত সরবরাহ করে।

 

৪) .এস.পি. তে উৎপাদিত ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যসামগ্রী: কার্বন কনস্ট্রাকশনাল স্টিল, কেস হার্ডেনিং স্টিল, ক্রিপ রেজিস্ট্যান্স স্টিল, স্প্রিং স্টিল, হাই ম্যাঙ্গানিজ স্টিল, আর্মার গ্রেড স্টিল ইত্যাদি।

ASP produces cheaper alternative to steel used in Agni missile

স্বাভাবিক ভাবে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন ৭৫৮ জন (এক্সিকিউটিভ ও নন এক্সিকিউটিভ) স্থায়ী কর্মী ও ১০০০ জন ঠিকা শ্রমিক সহ এই কারখানাটি কেন আজ সংকটের মুখে? কেন কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির সম্মুখীন? অতি অবশ্যই আমরা এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হবো। একথা কমবেশি সকলেরই জানা যে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় স্তরে ইস্পাত শিল্প দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মুখোমুখি। আমরা অবশ্যই সেটা আলোচনা করবো। কিন্তু আপাতত নির্দিষ্ট করে এ.এস.পি-এর সংকটের দিকে নজর ফেরানো যেতে পারে।

 

যেকোন কারখানাকে লাভজনক অবস্থায় চালানোর ক্ষেত্রে দরকার যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তার আধুনিকীকরণ। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে নতুন বিনিয়োগের অভাব, নতুন প্রযুক্তির অভাব রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে ক্রমাগত দুর্বল করে দিয়েছে। ১ লক্ষ টন উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ১৯৬৫ সালে একটি সেমি-ফিনিশড কারখানা হিসেবে এ.এস.পি-এর যাত্রা শুরু। জন্মের পরেই ৬০ হাজার টন বার্ষিক স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে ৩ লক্ষ টন করার প্রস্তাব ছিল। এর জন্য পুরনো জেড মিলের বদলে একটি নতুন জেড মিল বসানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও এই নতুন জেড মিলটি কোন এক অজ্ঞাত কারণে তৎকালীন ইস্পাত মন্ত্রী মোহন কুমার মঙ্গলমের উদ্যোগে সালেমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এ.এস.পি-এর স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার টন থেকে কমিয়ে ৮ হাজার টন করা হয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে কোন বিনিয়োগ এ.এস.পি তে হয়নি। ১৯৭৮ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের খনি ও ইস্পাত মন্ত্রী বিজু পট্টনায়ক চার স্তরে এ.এস.পি-এর আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে ২টি স্তরের সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয় কিন্তু বাকি কাজ আর শেষ করা হয়নি। এই সম্প্রসারণের ফলে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টনে দাঁড়ালো। এই বর্ধিত উৎপাদনকে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন ছিল তৃতীয় স্তরের সম্প্রসারণ। এতে ছিল সিমলেস টিউব প্ল্যান্ট যেটি ভেল-এর কারখানা তিরুচিরাপল্লীতে স্থানান্তরিত করা হয়। জেড মিল, একটি নতুন ফর্জ শপ এবং ওয়ার রড মিল বসানোর প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে পাঠানো হলো। ২০০৫ সালের ৩ আগস্ট সেইল-এর  প্রোডাকটিভিটি মিটিংয়ে মেসার্স দস্তুর অ্যান্ড কোম্পানির প্রস্তাব মোতাবেক এ.এস.পি-এর পুনরুজ্জীবনের জন্য প্রায় ২০০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ১০১ কোটি টাকার স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন জোরদার করার প্রকল্প মঞ্জুর করা হয়।

 

শেষমেশ এ.এস.পি-এর স্টেইনলেস স্টিল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল এবং বিনিয়োগের পুরো ১০১ কোটি টাকা জলে গেল। সেইল-এর অন্তর্গত সমস্ত কারখানাতে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও এ.এস.পি. তে তার ছিঁটেফোঁটা বিনিয়োগ হলো না। পরবর্তীতে সেইল-এর নিজস্ব পরামর্শদাতা সংস্থা CET(Center for Engineering and Technology) ১১০০ কোটি টাকার আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের প্রস্তাব গ্রহণ করে যার যার ভবিষ্যত বর্তমান পরিস্থিতিতে বিষ বাঁও জলে।

 

কিন্তু এখনও এই কারখানাকে লাভজনক করে তোলা সম্ভব। এক্ষেত্রে অবশ্যই দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডি এস পি) একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই কারখানা দুটির ভৌগোলিক অবস্থান পাশাপাশি হওয়ার কারণে এবং একই সংস্থার অধীনে থাকার জন্য জন্মের পর থেকেই কারখানা দুটি পরস্পর সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে চলছে। যেমন একই টাউনশিপ, স্কুল, হাসপাতাল, মেইন্টেনেন্স ইত্যাদি। ডি এস পি-এর উৎপাদিত ইস্পাত এই কারখানাতে ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ডি এস পি-এর সঙ্গে এ এস পি-এর সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে শ্রমিক ইউনিয়নগুলির মধ্যে দ্বিমত আছে। কংগ্রেস প্রভাবিত আই.এন.টি.ইউ.সি. চায় অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের সাথে সংযুক্ত হয়ে যাক। তাদের মতে এর ফলে উৎপাদন খরচ কমবে, তাদের গ্রাহক সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে, দুর্গাপুরের অংশ হিসেবে তাদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, ডি এস পি-এর আধুনিকীকরণের জন্য এ এস পি-এর নিয়ন্ত্রণাধীন জমি ব্যবহৃত হবে, অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের স্থায়ী ও ঠিকা শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তা বজায় থাকবে ইত্যাদি। অন্যদিকে সি পি আই (এম) প্রভাবিত সিটু সংযুক্তির বদলে সমন্বয়ের (synergy) পক্ষে। তাদের মতে ডি এস পি-এর সাথে সংযুক্তি ঘটলে এ এস পি তার পৃথক অস্তিত্ব হারাবে, শ্রমিকদের কাজের নিরাপত্তা বজায় থাকলেও আগামী দিনে নতুন কর্মসংস্থান হবে না, বিশেষ ধরনের ইস্পাত তৈরির জন্য যে দক্ষ প্রযুক্তি ও ম্যানেজমেন্ট দরকার তা ডি এস পি দিতে পারবে না। সিটুর আশঙ্কা যেহেতু দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টও আর্থিক ভাবে খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই, তাই এ এস পি-এর আর্থিক দায় ভবিষ্যতে ডি এস পি-এর উপর প্রভাব ফেলবে।

 

সালেম বিশ্বেশরাইয়ার কথা

সালেম স্টিল প্ল্যান্ট (এস এস পি/তামিলনাড়ু)-এর গল্প আলাদা কিছু নয়। ৯৪১ জন কর্মী (এক্সিকিউটিভ ও নন এক্সিকিউটিভ) বিশিষ্ট সালেম ভারতের স্টেইনলেস স্টিল তৈরির সর্বাধুনিক কারখানা। বর্তমানে এর উৎপাদন ক্ষমতা ২০৮৭ লক্ষ টন। ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষে কারখানা তার উৎপাদন ক্ষমতার ৮২ শতাংশ ব্যবহার করেছে। এখনও পর্যন্ত সালেমে দু’বার আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে যার অন্যতম প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হল ইন্টিগ্রেশন। চার দশকে উৎপাদনের বৈচিত্র্যের কারণে কারখানার মুকুটে বহু পালক যুক্ত হয়েছে। প্রথমে সালেমে কোল্ড রোলিং মিল ছিল, ১৯৯৩ সালে হার্ড রোলিং স্টিল স্থাপিত হয়।

 

২০১০ সালে শেষবার আধুনিকীকরণ হয় যখন সেখানে স্টিল মেল্টিং শপ তৈরি হয়। আধুনিকীকরণের পরে কারখানার আয়ের একটা বড় অংশ চলে যাচ্ছে ঋণের (যা আধুনিকীকরণের সময় ব্যয় করা হয়েছিল) সুদ বাবদ। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ২০১০ সালের আধুনিকীকরণে ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হয় যার মধ্যে সেইল-এর ছিল ১০০০ কোটি টাকা, বাজার থেকে ধার নেওয়া হয় ১৫০০ কোটি টাকা। শিল্পের সাধারণ নিয়ম হল আধুনিকীকরণের পর কোম্পানিকে পুনরায় লাভজনক করে তোলার জন্য একটা সময় দরকার। সেই সময়টার পর কোম্পানি আবার লাভের রাস্তায় ফিরতে পারে। ২০১১ সালে আধুনিকীকরণের পর ৮ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমানও কমতে শুরু করেছে।এছাড়া সরকারের পলিসিও রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের পক্ষে সংকট তৈরি করছে।সরকার কর্পোরেট ও আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাপে ইস্পাতের টন প্রতি আমদানি মূল্য স্থির করছে না ফলে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলি তাদের অবিক্রীত ইস্পাতকে কম দামে এদেশে বিক্রি করছে। এখন ওপেন টেন্ডার চালু হওয়ার ফলে সরকারি সংস্থাগুলির বরাত নিশ্চিত নয়, কোন সরকারি রক্ষাকবচের ব্যবস্থা নেই। একসময় ভারতীয় রেলওয়েজ টাঁকশালগুলি থেকে নিশ্চিত অর্ডার পাওয়া যেতো, যা এখন বেসরকারি কোম্পানিগুলির হাতে চলে যাচ্ছে।

 

কর্ণাটকের ভদ্রাবতীতে অবস্থিত বিশ্বেশরাইয়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড (ভি আই এস এল)। বর্তমানে কারখানার স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩৩৩। ১৯২৩ সালে মহীশূরের রাজা কৃষ্ণরানা উডিয়ারের দেওয়ানে বিশ্বেশুরাইয়া মাইসোর আয়রন ওয়ার্কস নাম দিয়ে এই ছোট্ট কারখানাটি শুরু করেন। পরবর্তী কালে কর্নাটক রাজ্য সরকারের হাতে কারখানাটির মালিকানা যায়। ১৯৮৯ সালে ভি আই এস এল সেইল-এর সহযোগী সংস্থা হিসেবে অধিগৃহীত হয় এবং ১৯৯৮ সালে সেইল-এর সঙ্গে কারখানার সংযুক্তি ঘটে। কিন্তু সেইল-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরেও কারখানার কোন উন্নতি হয়নি কারণ পুঁজি বিনিয়োগ ও আধুনিকীকরণের অভাব। প্রতিশ্রুতি ছিল ভি আই এস এলে প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে কিন্তু গত ১১ বছরে মাত্র ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। পরিকল্পনার অভাবও চোখে পড়ার মতো। সেইল-এর পক্ষ থেকে ফেরোসিলিকন ফার্নেসের আধুনিকীকরণের জন্য ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয় কিন্তু এক বছরের মধ্যে ফার্নেসটিকে স্ক্র্যাপ ঘোষণা করা হয়। এ বছর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে (২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯) কেন্দ্রীয় খনি মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি ঘোষণায় বিশ্বেশরাইয়ার জন্য ১৫০ একরের ওর ব্লক নির্দিষ্ট করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২৮ জুন ডেকান হেরাল্ড পত্রিকায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় ইস্পাত মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিং বলেন বিশ্বেশুরাইয়া কারখানার আধুনিকীকরণের জন্য ৬০০০ কোটি টাকার প্রকল্প ভাবা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে শ্রমিকদের প্রশ্ন এগুলো সবই কি গিমিক ছিল?

 

ইস্পাত শিল্পের সংকটযে কথাগুলো বলা হচ্ছে না

এ.এস.পি সহ তিনটি কারখানার বিলগ্নিকরণের পক্ষে সরকার যে আখ্যান তৈরি করছে তার মূল কথা হল কারখানা তিনটি ধারাবাহিক ক্ষতির মধ্যে দিয়ে চলছে, তাই আর কতদিন সরকার এগুলোকে পুষবে? বরং এগুলোকে বিলগ্নিকরণ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত। বিলগ্নিকরণের প্রকৃত অর্থ কী, তা আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। এবার আসা যাক ক্ষতির প্রশ্নে। আমরা দেখেছি আধুনিকীকরণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং সরকারের দায়হীনতা কীভাবে পরিকল্পিতভাবে কারখানাগুলিকে সংকটের মুখে ঠেলে দিল।

 

এই তিনটি কারখানার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু ওয়াকিবহাল মহল জানে সেইল-এর অধিকাংশ ইউনিটগুলিই আজ সংকটের মুখে। যারা ভাবে যা কিছু প্রাইভেট তাই পবিত্র- এই মতের সমর্থকদের জানা দরকার ইস্পাত শিল্পের সংকট শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে নয়, বেসরকারি কোম্পানিগুলিও একইভাবে আক্রান্ত। ভূষণ স্টিলের অবস্থা শোচনীয়। জিন্দাল ও এসার গ্রুপ ঋণভারে জর্জরিত। চীনে অলিম্পিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর গোটা বিশ্বজুড়ে ইস্পাত শিল্প মন্দায় আক্রান্ত। তাই বেসরকারি কোম্পানিগুলি অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টকে কিনে নিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে- এ নেহাতই মূর্খের কল্পনা।বরং বাস্তবে বিলগ্নিকরণ হলে সেইল এই তিনটি কারখানার মাধ্যমে যে বিশেষ ধরনের ইস্পাত বিক্রির বাজার তৈরি করেছে তা হারাবে। এই বাজার দখল করার জন্য হায়েনার মতো ওৎ পেতে বসে আছে জিন্দাল, এসার ও লারসেন-টুবরোর মতো কর্পোরেট সংস্থাগুলি। এই সরকারের ট্র্যাক রেকর্ড দেখলে একথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বিলগ্নিকরণের এই সিদ্ধান্ত আদতে দেশের সম্পদ কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের অংশবিশেষ। ইস্পাত শিল্পের সংকটের প্রধান কারণ হল ভারতের আভ্যন্তরীণ বাজারে যথেষ্ট ইস্পাতের চাহিদা না থাকা। চীনে পরিবার পিছু ইস্পাত ব্যবহারের পরিমান ৬৯০ কেজি, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১১১২ কেজি সেখানে ভারতে ৮০ কেজি?। ভারতে ইস্পাতের চাহিদা কম কারণ দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নেই। উপার্জন না থাকলে ক্রয় ক্ষমতা কোথা থেকে আসবে? তাই এই সংকট বাজার অর্থনীতির সংকট, সম্পদের সুষম বন্টন না হওয়ার সংকট। এই সত্যকে এড়িয়ে গেলে ইস্পাত শিল্পের সংকটের প্রকৃত সমাধান সম্ভব নয়।

 

আন্দোলনের বর্ণমালা: 

নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের দ্বিতীয় সংস্করণে ভারতের শ্রমজীবী জনগণের উপর যে ধারাবাহিক আক্রমণ নেমে আসছে তা কি সমবেত প্রতিরোধের মাধ্যমে রুখে দেওয়া সম্ভব? দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট সহ তিনটি কারখানায় প্রস্তাবিত বিলগ্নিকরণ রুখে দেওয়া যাবে? উত্তরটা বহুমাত্রিক এবং জটিল। লড়াইয়ের সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে।

 

প্রথমে সমস্যার দিকটি আলোচনা করা যেতে পারে। একথা অনস্বীকার্য যে মেরুকরণের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, উগ্র জাতীয়তাবাদ, যুদ্ধ উন্মাদনা ও কর্পোরেটদের প্রচারকে কাজে লাগিয়ে ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি যে বিপুল সংখ্যাধিক্য পেয়েছেন তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ঝড়ের গতিতে কর্পোরেটদের অ্যাজেন্ডা সফল করতে অগ্রণী। বিগত সংসদ অধিবেশনে যেভাবে একের পর এক জনবিরোধী বিল পাশ হয়েছে তা সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা। এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প সম্পর্কে মিডিয়ার ধারাবাহিক নৈবর্তিক প্রচার, ফলে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত নন এমন বহু মানুষের ধারণা যে করদাতাদের টাকায় এই ধরনের ‘সাদা হাতি’ পোষার কোন মানে হয় না। একই সঙ্গে এ কথাও স্বীকার করতে আমরা বাধ্য যে ৯০’র দশকে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নি সংস্থাগুলোর চাপে যে উদারীকরণ – বেসরকারিকরণ – ভুবনায়নের নামে যে সংস্কার কর্মসূচি চালু হয় তার বিরুদ্ধে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি ধারাবাহিক প্রচারের কর্মসূচি নিলেও কার্যক্ষেত্রে কোন অনুকরণযোগ্য প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলা যায় নি।নির্দিষ্ট করে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ক্ষেত্রে বলা যায় এম.এ.এম.সি, বি ও জি এল সহ একাধিক কারখানা বিগত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে কোন লড়াইয়ের ইতিহাস ছাড়াই। আবার সম্ভাবনার দিকটাও কম নেই।যেভাবে আমরা অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে প্রবেশ করছি সেখানে শ্রমিকের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।আজ নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি নিতে বাধ্য হচ্ছে অ-বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি। সম্ভবত ইস্পাত শিল্পেই এই সময়পর্বে ধারাবাহিক আন্দোলনের ইতিহাস আছে। ২০০১ সালে ম্যাকিনসে রিপোর্টের মাধ্যমে সমগ্র সেইল-কে টুকরো টুকরো করা ও তাকে বিক্রয় অথবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা গ্রহণ করে। সে সময় জিন্দাল গোষ্ঠী এ.এস.পি-কে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু শ্রমিকদের সমবেত প্রতিরোধের কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবারও বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে যেভাবে যৌথভাবে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়েছে তা যথেষ্ট আশাপ্রদ। সামগ্রিক ভাবেই আজ আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল অস্তিত্বের সংকটে। বর্তমানে প্রতিরক্ষা শিল্পের কর্মীরা যেভাবে ধর্মঘটে নামলেন তা সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে আশা ভরসা জুগিয়েছে। তাই সামনের পথ কঠিন হলেও লড়াইয়ে স্থির থাকতে পারা ও সমঝোতার প্রলোভনকে সরিয়ে অগ্রণী হওয়ার মধ্যেই আছে জয়ের সম্ভাবনা।

 

লেখক একজন স্কুল শিক্ষক ও গনতান্ত্রিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী।  

 

Share this
Leave a Comment