জয় পেলেন অযোধ্যার বনগ্রামবাসীরা। পুরুলিয়ার ঠুড়গা প্রকল্পে সরকারি নথি খারিজ করল হাইকোর্ট।


  • July 7, 2019
  • (0 Comments)
  • 2678 Views

ঠুড়গা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পের ছাড়পত্র ও অধিবাসীদের সম্মতির নথি রূপায়ন প্রক্রিয়াটি যেভাবে হয়েছে, আদালতের মতে তা ‘বনাধিকার আইন ২০০৬’এর পরিপন্থী। সেই বিচারেই উচ্চ ন্যায়ালয় ওই নথিগুলিকে বাতিল করেছে। লিখছেন সৌরভ প্রকৃতিবাদীনন্দন মিত্র

 

অবশেষে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের ওপর প্রস্তাবিত ঠুড়গা পাম্প স্টোরেজ পাওয়ার প্রজেক্টের ওপর একরকম নিষেধাজ্ঞাই জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট। ২ জুলাই ২০১৯, কলকাতা হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছে। যা নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। বিশেষত প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় সারা ভারত জুড়ে যে অসম লড়াই চলছে এবং আদিবাসী মানুষের প্রকৃতি-সংলগ্ন জীবন-জীবিকার ওপর পুঁজির যে আগ্রাসী আক্রমণ নেমেছে তার নিরিখে এই রায় আগামী দিনে আন্দোলনগুলিকে অনেকটাই শক্তি জোগাবে। যদিও, এ যাবৎকালের অভিজ্ঞতার নিরিখে, এই রায়কে অযোধ্যাবাসীর বা প্রকৃতি-পরিবেশের চূড়ান্ত জয় হিসেবে গণ্য করে ফেললে নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক ভুল হবে। খেয়াল রাখতে হবে, আদালত প্রকল্পটিকে মোটেও খারিজ করেনি। খারিজ করেছে প্রকল্পটি স্থাপনে যে প্রক্রিয়াগত অস্বচ্ছতা হয়েছিল সেইগুলিকে। তার ফলেই আপাতত প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। কিন্তু, যাঁরা এখানে বা এই জাতীয় হাজারো প্রকল্পে পুঁজি-বিনিয়োগ করেছেন বা করছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকবেন না। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে আরো বিপুল শক্তি সঞ্চয় করেই ফিরে আসবে ঠুড়গার প্রকৃতি এবং জীবনঘাতী প্রজেক্ট—এ প্রায় চোখ বন্ধ করেও বলে দেওয়া যায়। সেই আঘাত আসার আগে যতটুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে ততটুকুতে নিজেদের আরো ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, প্রস্তুত হতে হবে। সে সব কথায় যাওয়ার আগে আসুন অল্প কথায় দেখেনি ঠুড়গা-সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ের দিকগুলি।

 

গত বছর সেপ্টেম্বরে যখন কলকাতা উচ্চবিচারালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সত্তরোর্ধ রবি বেসরা, বছর কুড়ির সুশীল মুর্মু, মুনিরাম টুডুরা। সেই সময় ঠুড়গা নদী আর তার জঙ্গল রক্ষার আন্দোলন সামাজিকভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এমন আভাস দূরতর কল্পনাতেও তাঁদের কাছে ছিল না। তবে আদালতে আসার আগে অযোধ্যার অধিবাসীদের আন্দোলনের সংহতিতে যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা পরিবেশ ছাড়পত্র বা এফ-সি এবং এনভাইরনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট বা ইআইএ-এর বিশ্লেষণ ক’রে ভূরি ভূরি মিথ্যা এবং অস্বচ্ছতাগুলি শনাক্ত করেছিলেন। আইনি লড়াইতে এই অস্বচ্ছতাগুলি যে বড় হাতিয়ার হতে পারে, এ-কথা তাঁদের মাথায় ছিল। এছাড়াও তাঁদের মাথায় ছিল যে, জাতীয় সবুজ বিচারসভা বা এনজিটি -তে আপিল করা যেতে পারে অযোধ্যাবাসী না-হলেও। করা যেতে পারে জনস্বার্থ মামলা বা পিআইএল। কিন্তু এই সবের মাঝে যাঁদের সব যাবে, যাঁদের উচ্ছেদ হয়ে যেতে হবে উন্নয়নের নামে এই আন্দোলনের মূল শক্তিই তাঁরা, সেই অযোধ্যাবাসীরা। ফলত এই লড়াই প্রথমত ও মূলত তাঁদেরই লড়াই। তাঁদের ভূমিকা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়েই যাবতীয় নীতি-প্রকরণ নির্ধারিত হতে হবে। এই প্রশ্নে আইন-গ্রাহ্য দৃষ্টান্ত বলতে ছিল উত্তরবঙ্গে সেবক-রংপো রেলপথের জন্য উচ্ছেদ হতে চলা মানুষ ও প্রকৃতির অধিকার রক্ষা আন্দোলনে বনাধিকার আইন ২০০৬-এর ভূমিকা। আরও সামনে ছিল ওডিশায় বেদান্ত ও পসকো বিরোধী আন্দোলনে বনাধিকার আইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আন্দোলনের সংহতিতে থাকা প্রকৃতি-পরিবেশকর্মীদের অতীতে হাওড়া বর্ধমান মেন লাইনের স্টেশন চত্বরের গাছ রক্ষা আন্দোলনের কিছু অভিজ্ঞতা ছিল। সে সময় এনজিটি-তে আইনজীবী শান্তনু চক্রবর্তী সওয়াল করেন এবং রায় আন্দোলনের পক্ষে যায়। ঠুড়গা নিয়ে শান্তনু চক্রবর্তীর মত অনুযায়ী আন্দোলনকারীরা রিট পিটিশনের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

 

আইনি লড়াই এই দিকে এগোনোর জমি প্রস্তুতই ছিল। কারণ হঠকারী সরকারি আমলারা যেভাবে বনাধিকার আইন ২০০৬-কে ভূলুণ্ঠিত করেছেন অযোধ্যায় তার প্রামাণিক উপস্থিতি ছিল ভূরি।ভূরি। মাত্র ২৪ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি সম্মতিপত্র সরকার দাখিল করেছিল প্রথম ধাপের পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য। এটি ছিল অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের জন্য। যখন কিনা অযোধ্যা গ্রামপঞ্চায়েতে ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা এক হাজার ছ’শোরও বেশি। এফআরএ অনুযায়ী অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষের সম্মতি নেওয়ার কথা, যার মধ্যে অন্তত ১/৩ ভাগ মহিলা থাকতেই হবে। এই সম্মতি নিতে হত গ্রামসভার মাধ্যমে। এটি কিন্তু নির্বাচিত পঞ্চায়েতের গ্রামসভা নয়। বরং প্রতিটি বনগ্রাম হচ্ছে একেকটি গ্রামসভা। অর্থাৎ অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতে বহু গ্রামসভা থাকবে। এবং তাদের প্রত্যেকের থেকেই আলাদা ক’রে সম্মতি নিতে হবে। কিন্তু সরকারি আমলারা সেসব করার প্রয়োজন মনে করেননি।এমনকী সরকারি নথিও পরস্পর-বিরোধী নানা তথ্যে পূর্ণ ছিল। কোথাও দাবি করা হয়েছে প্রজেক্টের জমিতে কোনও পাট্টা-জমি নেই, আবার কোথাও বলা আছে চার জনের পাট্টা পাওয়া জমি আছে, আরো থাকতে পারে, ইত্যাদি। প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত নথিপত্রগুলি অসংখ্য অস্বচ্ছতা এবং গোঁজামিলে পূর্ণ। ফলত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে তিনজন রিট পিটিশন দাখিল করেন।একই সাথে ‘প্রকল্প চাই না এবং কেন চাইনা’, তা জানিয়ে ৯টি বনগ্রাম থেকে জেলাশাসকের কাছে পিটিশন জমা দেন গ্রামবাসীরা।পিটিশনে মোট স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা সরকার প্রদত্ত স্বাক্ষরকারীর সংখ্যার তুলনায় বহুগুণ বেশি ছিল।

 

এরই মধ্যে আদালতে মামলা চলাকালীন ২০১৯ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বন দফতরের কর্মীরা প্রোজেক্ট এলাকায় গাছ কাটা শুরু করে দেয়। প্রথমে তা গ্রামবাসীদের নজরে আসেনি। কিন্তু দ্বিতীয় দিন গরু বাগালদের নজরে গাছকাটার ঘটনা এলে রাঙ্গা, বারেলহর গ্রামের মানুষের সমবেত প্রতিরোধে গাছ কাটা বন্ধ হয়। কিন্তু ততক্ষণে আনুমানিক প্রায় ৫০০ গাছ কাটা পড়েছিল। এরপর কাটা গাছের ভৌগোলিক-অবস্থান সম্বলিত ছবি প্রমাণ হিসেবে দাখিল করলে বিচারপতি জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি দেন। শুনানিতে সরকার পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন কোনো গাছ কাটা হয়নি। অথচ গাছ কাটার প্রমাণ আগে থেকেই গ্রামবাসীদের কাছে ছিল। ১৬ জানুয়ারি ২০১৯’র শুনানিতে বিচারপতি গাছ কাটার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন ৩১ মার্চ ২০১৯ অবধি। এই ঘটনায় অযোধ্যা পাহাড় জুড়ে যেমন আন্দোলনের পক্ষে গ্রামবাসীদের মনোবল বাড়ে তেমনি বাড়ে শাসকের তরফে ভয় ও লোভ দেখানোর প্রচেষ্টা। কখনো সিভিক পুলিশ, কখনো খোদ পুলিশ অফিসার তো কখনো স্থানীয় নেতা বারংবার ভয় এবং লোভের খেলা চালাতে থাকে বলে গ্রামবাসীদের তরফে অভিযোগ। কিন্তু, এত প্রচেষ্টাতেও গ্রামবাসীরা এবং সবথেকে বড়ো কথা মামলার আবেদনকারীরা তাঁদের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। এর পর মামলা বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাস থেকে চলে যায় বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে। সেখানে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন আসলে পিটিশনাররা অযোধ্যাবাসীই নন। প্রোজেক্টের ফলে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। পিটিশনারদের ‘লোকাস স্ট্যান্ডাই’ প্রমাণ করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি।  সেই মতন ‘লোকাস স্ট্যান্ডাই’-এর প্রমাণ দাখিল করা হয়। এমনকী রবি বেসরার পাট্টা-জমি যে প্রজেক্ট এলাকাতেই রয়েছে, সে প্রমাণও দাখিল করা হয়। এরপর পুনরায় স্থগিতাদেশ জারি হয় ৩১ অগস্ট ২০১৯ অবধি। ইতোমধ্যে পাহাড়ে আন্দোলনকারী জনতা আন্দোলনগত ও ঐক্যবদ্ধ বোঝাপড়ার ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন ‘প্রকৃতি বাঁচাও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চ’। পাশাপাশি সমতলে এবং রাজধানী কলকাতা ও শহরতলীতেও আন্দোলনের সংহতিতে মানুষ জড়ো হতে থাকেন। এপ্রিলে পরিবেশকর্মী, অধিকার আন্দোলন কর্মী, ছাত্রছাত্রী, গবেষক, বিজ্ঞানী সহ সমাজের বিভিন্ন বর্গের মানুষেরা ‘আযোধিয়া বুরু বাঁচাও আন্দোলন সংহতি মঞ্চ’ গড়ে তোলেন। আন্দোলনের প্রাথমিক মঞ্চ পাহাড়ে সংগঠিত করার যে কাজ করে চলছিল সে কাজেও প্রতিপদে তাদের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে পার্টি-শাসক-প্রশাসনের তরফে। খুনের হুমকি, মামলার হুমকি, রাতবিরেতে পিটিশনারদের বাড়িতে পার্টির নেতার চড়াও হওয়া, পুলিশি-হয়রানি, আন্দোলনের আর্থিক সাহায্য সংগ্রহে বাধা দেওয়া — যা যা এই ধরণের আন্দোলনকে সহ্য করতে হয়, তার সব কিছুই চলেছে পূর্ণমাত্রায়। তবুও আন্দোলন থামেনি বরং বেড়েছে। আদিবাসী সামাজিক সংগঠনগুলি অযোধ্যা পাহাড় বাঁচানোর আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ‘ভারত জাকাত মাঝি পরগনা জুয়ান মহল’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে পুরুলিয়ায় আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে। এমতাবস্থায় আবারও শুনানি শুরু হয়। গত ১ জুলাই ২০১৯’এর শুনানিতে সরকারি আইনজীবী গরহাজির ছিলেন। ২ জুলাই আবারও শুনানি হয় এবং শুনানিতে পিটিশনারদের আপিলের পক্ষে রায় দেন বিচারপতি বসাক (কেস নং-W.P.20576(w)of 2018; Rabi besar&other vs state of w.B &other)। অনেকগুলি সহায়ক হলফনামা জমা দেবার পর প্রমাণিত হল যে, অরণ্যের অধিকার আইন ২০০৬ মোতাবেক আবেদনকারীরা সত্যি সত্যি জঙ্গলে বসবাসকারী ক্ষতিগ্রস্ত তফসিলভুক্ত আদিবাসী। অযোধ্যা পাহাড়ে প্রস্তাবিত ঠুড়গা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্প সংক্রান্ত এই মামলায় কলকাতা উচ্চন্যায়ালয় বাড়েলহর গ্রামের কয়েকজন সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীর রিট পিটিশন গ্রহণ করেছেন।

 

মামলায় আবেদনকারীদের আইনজীবীরা তুলে ধরেন কীভাবে পুরুলিয়ার জেলাশাসক একটি মিথ্যা, বিকৃত ও মনগড়া শংসাপত্র দিয়েছেন, যাতে দাবি করা হয়েছে যে, প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ বাসিন্দাদের সম্মতি গ্রামসভায় নেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন ওঠে, কীভাবে এই প্রকল্পে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক নীতিগত সম্মতি দিয়েছে! এখানে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, জেলাশাসক ও পুরুলিয়ার জেলা অরণ্য আধিকারিকের তরফে কোনোরূপ হলফনামা আদালতে জমা পড়েনি। আবেদনকারীদের তরফের বক্তব্য শোনার পর মাননীয় বিচারপতি পুরুলিয়া জেলাশাসক প্রদত্ত শংসাপত্র বাতিল করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে দুটি গ্রাম সভার তথাকথিত ‘সম্মতি’ ও কেন্দ্রীয়   সরকারের পরিবেশ, বন ও আবহাওয়া পরিবর্তন মন্ত্রকের জারি করা নীতিগত সম্মতিপত্র।ঠুড়গা পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পের ছাড়পত্র ও অধিবাসীদের সম্মতির নথি রূপায়ন প্রক্রিয়াটি যেভাবে হয়েছে, আদালতের মতে তা ‘বনাধিকার আইন ২০০৬’এর পরিপন্থী। সেই বিচারেই উচ্চ ন্যায়ালয় ওই নথিগুলিকে বাতিল করেছে। আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী অম্বর মজুমদার ও শান্তনু চক্রবর্তী পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও মামলা পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের অনুরোধ করলেও আদালত এই অনুরোধ খারিজ ক’রে দেয়।

 

আইনি জয় প্রাথমিক এবং প্রাথমিকই। আন্দোলনই শেষ কথা বলবে। ‘মানুষ’-এর ঐক্যবদ্ধ প্রকৃতি-সংবেদী যাপন-সংস্কৃতিই বন-পাহাড়-জল-জঙ্গল আর প্রাণের প্রকৃত সংরক্ষণ করবে।

 

 

লেখক সৌরভ প্রকৃতিবাদীনন্দন মিত্র পরিবেশক আন্দোলনের কর্মী।

 

 

Share this
Leave a Comment