শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী নারীর প্রবেশাধিকার আন্দোলন: যুক্তিবাদীরা থাকবেন কি?


  • January 7, 2019
  • (0 Comments)
  • 2244 Views

“আসলে গণ আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলনের দেশে কালে কোনো বাঁধাধরা গৎ নেই। হাতে কলমে বিপ্লব সংগঠিত করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার জোরে লেনিন ফাউস্ত নাটকে সংযোজিত হ্বোলফগাং ফন গ্যোঠের যে কথাটা বারংবার বলতেন, এখানেও সেটাই আর একবার উচ্চারণ করতে ইচ্ছে করছে—“Theorie ist grau, meine Fruend, aber grün ist der ewige Baum des Lebens” (তত্ত্ব বরং পাংশুটে, ওহে বন্ধু, তাই চিরহরিৎ জীবন বৃক্ষকেই দেখ!) বাস্তব জীবনের নাটক আমাদের অনেক সময়ই বইয়ের সিলেবাসের বাইরে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তখন অন্য ভাবে ভাবতে হয়।” লিখছেন অশোক মুখোপাধ্যায়

 

[১]

কেরালার শবরীমালা মন্দিরে ১০-৫০ বছর বয়সী ঋতুমতী নারীদের ক্ষেত্রে মন্দির কর্তৃপক্ষের প্রবেশ নিষেধের উপর দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা, তার বিরুদ্ধে বিজেপি-কংগ্রেসের প্রায় সম্মিলিত প্রতিরোধ এবং পাশাপাশি রাজ্যের শাসকদল সিপিএম সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের উদ্যোগে সমস্ত বয়সের নারীদের অবাধ প্রবেশ সুনিশ্চিতি আন্দোলনের ফলে বিভিন্ন মহলে কিছু নতুন চিন্তাভাবনা বিতর্কের জন্ম হয়েছে।

সমস্ত বয়সের নারী কোনো মন্দিরে ঢোকার অধিকার পেলে কি তাদের বিরাট কোনো সুবিধা হবে?

তাদের এবং তাদের পরিবারের রুটিরুজির সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?

নারীর শিক্ষা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা স্বাধিকার সাম্য যাপন-চয়ন ইত্যাদির অধিকার সুনিশ্চিত হবে?

জন জীবনের বিভিন্ন জ্বলন্ত সমস্যার কি সমাধান হয়ে যাবে?

যে কোনো ধর্মীয় দাবিতে আন্দোলনরত মানুষদের পাশে দাঁড়ানোটা কি যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক ও মার্ক্সবাদীদের পক্ষে আদৌ শ্রেয় বা উচিত?

এতে কি ধর্মকেই প্রকারান্তরে খানিকটা সমর্থন জানিয়ে বসা হচ্ছে না?

এর ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যান্য জরুরি সমস্যা নিয়ে আন্দোলন কি খানিকটা হলেও আড়ালে চলে যাচ্ছে না? ইত্যাদি, ইত্যাদি।

 

না, এই প্রশ্নগুলোর কোনোটাতেই এক কথায় ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা যাবে না। তথাপি, শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশাধিকার অবাধ করে দেবার জন্য সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে আমি সমর্থন করি, সমর্থন যোগ্য মনে করি এবং কেরালায় সিপিআই (এম) পরিচালিত রাজ্য সরকার এই রায়কে কার্যকর করার জন্য যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তাকেও স্বাগত জানাচ্ছি। অর্থাৎ, ১৭৬টি গণ সংগঠন মিলিতভাবে যে উদ্দিষ্ট আইয়াপ্পা মন্দিরের রাস্তায় ১ জানুয়ারি ২০১৯ প্রায় ৬৪০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের “নারী প্রাচীর” গড়ে তুলে যে মহিলারা মন্দিরে যেতে চায় তাদের মদত দিচ্ছে, তাদের সেই প্রয়াসকে আমি মনে করি সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরই সমর্থন জানানো উচিত।

 

কেন?

প্রথমত, সকলেই জানেন, বর্তমান ভারতীয় জনসমাজে এই ধরনের বুর্জোয়া স্বতঃঅধিকারগুলিও এখনও অস্বীকৃত। জাতপাত ধর্ম লিঙ্গ ভাষাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহু রকম বিভাজন ও বৈষম্য বিদ্যমান। বিশাল আয়তনের ভারতীয় সংবিধানে যে একই সঙ্গে এক একটা অধিকার এক জায়গায় প্রদত্ত ও অন্যত্র প্রত্যাহৃত, তা অনেকেই জানেন না। মৌলিক অধিকার বলে পরিচিত কিছু কিছু অধিকারের উপরও নানা রকম “তবে”, “যদিও”, ইত্যাদি অব্যয় প্রয়োগে প্রাপ্তি সীমা কমিয়ে রাখা হয়েছে। তাকেও ঠিকঠাক সংশোধন করে সামঞ্জস্যপূর্ণ জায়গায় আনতে হলে এরকম নানা আন্দোলন খুবই জরুরি। কেন না, তবেই অসামঞ্জস্যগুলি ধীরে ধীরে সামনে আসবে। বৈদ্যায়তনিক সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং/অথবা রাজনৈতিক নেতাদের মাথায় এসব প্রশ্ন ধাক্কা দেবার সম্ভাবনা খুব কম। কেন না, তাঁদের বেশির ভাগই এটিকেও পরম পবিত্র শ্রীশ্রীগীতারই বিকল্প মনে করেন (শুধু আদালতে সাক্ষীর শপথ বাক্য পাঠের সময় নয়, বাইরেও সর্বক্ষণ)।

 

এই মন্দিরে ঢোকার দাবিতে আন্দোলনে যদি দলিত ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষরা যোগদান করে তাতে আরও ভালো। যারা দেব দেবী ও মন্দিরকে আদিম সামন্ততান্ত্রিক ঘেরাটোপে বন্ধ করে রাখতে চাইছে, ঐতিহ্যের নামে আদালতের রায়কেও অগ্রাহ্য করছে, তারা যে অধিকাংশ মানুষের সমর্থন হারিয়েছে এটা তাদের এবং অন্যদেরও দেখা দরকার। বিপরীত দিকে যারা একটা রক্ষণশীল সিদ্ধান্তকে বিরোধিতা করে রাস্তায় নেমে এসেছে, তাদেরও আজ স্বচক্ষে দেখার সুযোগ ঘটছে, কারা, কোন ধরনের সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ, তাদের অধিকারের দাবির সপক্ষে, আর কারা তার বিরোধী।
ইতিহাস বলে, মার্ক্সবাদী যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তি ও দল/সংগঠনের কাছে এমনিতে ধর্মীয় মুদ্দার বা তাকে কেন্দ্র করে জমায়েত আন্দোলন ইত্যাদির খুব একটা গুরুত্ব নেই। তারা জানে, দেবতা এবং মন্দিরের দিন ঘনিয়ে আসছে। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই। তার উপর ব্রহ্মচারী দেবতারও ঋতুমতী যুবতী নারী দেখলে “যৌন-লিপ্সা” জেগে ওঠে জানার পর আর এ নিয়ে চিন্তা করার কিছুই নেই! দেবতার কল্পনাও যে শেষ পর্যন্ত মানবিক সীমারেখার বাইরে যেতে পারে না, কল্পিত দেবতারাও যে মানুষিক ক্ষমতা দুর্বলতার ঊর্ধ্বে নয় – এ সত্য একবার জানার পর আর কাউকে খুব একটা বেশি কিছু বোঝাতেই হবে না। কথাটা অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও সত্য। আল্লাহ্ গড ইয়াহভে প্রমুখ এবং তাদের ঘাঁটিগুলিও ইতিমধ্যেই যাদুঘর অভিমুখে রওনা দিয়েছে। রাস্তা ভালো নয় বলে পৌঁছতে সময় লাগছে।

 

শুধু তাই নয়, ৪০০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ি বন জঙ্গলের রাস্তা পায়ে ঠেলে মন্দিরে পৌঁছে দেব ভক্ত মানুষ যখন পরিষ্কার দেখতে পাবে, নারী পুরুষ ছাগল বা নারকেলের দড়ি – কোনো কিছু দেখলেই পাথরের “ব্রহ্মচারী” দেবতার কিছু মাত্র নড়াচড়া হয় না – সেও এক ধাপ সেই শেষ দিনটার দিকে এগিয়ে যাবে। খুব একটা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের বোধ করি আর দরকারই হবে না।

ছবি: দ্য ওয়্যার

[২]

কিন্তু অনেক প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠে গেছে।

যেমন, এক, কেরালার শাসক দল হিসাবে সিপিআই (এম) কি এটা আন্তরিক ভাবে মন্দির দর্শনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার সপক্ষে সংগঠিত করছে, নাকি পরবর্তী কালে রাজ্য ও লোকসভা নির্বাচনে কিঞ্চিত বাড়তি সুবিধা পাওয়ার জন্য করছে? বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে সিপিআই (এম) দলটি এবং তার সুবাদে ‘৩৪’ সংখ্যাটি অতীতে এতটাই সুনাম অর্জন করেছিল যে তারা কোনো ভালো কাজ করতে পারে – এটা এমনকি তাদের দলেরও অনেকে সহসা বিশ্বাস করে উঠতে পারে না। ফলে সন্দেহ হয় বৈকি!

না, আপাতত শবরীমালা প্রশ্নে আমাদের এতটা সন্দেহ বাতিক গ্রস্ত হওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। কোনো সুদূর রহস্য আছে কিনা জানার দরকারও নেই। ধরে নিই না কেন, আছে। আমার কথা হল, নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার জন্য যদি ওরা একটা ভালো কাজ করে ফেলে, কিংবা বিকল্পে, একটা ভালো কাজ করে যদি নির্বাচনে ওরা সুবিধা কিছু পায়ও, আমাদের তাতে আপত্তি কেন হবে?

তাছাড়া এটাও মনে রাখতে হবে, ধর্মীয় ব্যাপারে প্রাচীন সংস্কারের বিরোধিতা করে এই পবিত্র দেশে বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ একটু কম। উদ্দেশ্য সেরকম হলে বলতেই হবে, বিনিয়োগটা ঠিক সংসারি বুদ্ধিমানের মতো হয়নি।

 

দুই, মার্ক্সবাদী বা বিজ্ঞান মনস্কদের কি এরকম একটা ধর্মীয় লক্ষ্যে পরিচালিত আন্দোলনে নিজেদের সামিল করা, সক্রিয় অংশ গ্রহণ করা উচিত হচ্ছে?
মানতেই হবে, এইখানটায় এসে আমাদের অনেকের মনের ভেতরেই একটা তীব্র খচখচানি হচ্ছে। তুলনা হিসাবে বামপন্থী মার্ক্সবাদীদের পূজা কমিটিতে থাকা, ঈদের আগে মাথায় রুমাল সেঁঁটে ইফতার পার্টিতে হাজিরার বহুল পরিচিত দৃশ্যগুলির ফ্ল্যাশব্যাক মনশ্চক্ষে ভেসে উঠছে। আর ঠিক তখনই আমরা ভুলে যাই একটা কথা। বিচার বিশ্লেষণ নামক হাতিয়ারটির কথা। সাদৃশ্য থাকলেও সব ঘটনাই যে এক জাতীয় নয়, বা হয় না – এই সরল সত্যটি ভুলে যাওয়া অনুচিত।

মগজ ব্যবহারের এই ঋত্বিক ঘটকীয় পরামর্শটি এক্ষেত্রে গ্রহণ করলে আমরা দেখব, বিজ্ঞান আন্দোলনই বলুন, আর সামাজিক ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনই বলুন, তাদের সামনে একটা নতুন ধরনের অচিন্ত্যপূর্ব সুযোগ এসে হাজির হয়েছে।
কীভাবে, দেখা যাক।

 

এই আন্দোলনের লাইনে দাঁড়িয়ে আপনি বলতে পারবেন – “তোমার অধিকারের জন্য আমি লড়ছি। কিন্তু এও বলে রাখছি, দেব দর্শন পেলেও তোমার জীবনের কিছুই সু ঘটবে না!” অন্য সময় যারা এটা শুনতে চাইত না, পাত্তা দিত না, এখন শুনবে এবং গুরুত্ব দেবে। পরে অনেকে মিলিয়ে নেবে।

 

সকলেই জানেন, আমাদের দেশে (আসলে সব দেশেই এবং সমস্ত ধর্মের ক্ষেত্রেই) ধর্মীয় অত্যাচার মেয়েদের উপরই সবচাইতে বেশি হয়, আবার মেয়েরাই ধর্ম চর্চার বৃহত্তর সংখ্যক খুঁটি। পঞ্জিকায় কত যে ব্রত আর উপবাসের দিন ছড়ানো আছে এবং সেগুলো কাদের উদ্দেশ্যে নিবেদিত – তা বোধ করি কাউকে বলে দিতে হবে না। আজকে শবরীমালা উপলক্ষে মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের দাবিতে ব্যাপক সংখ্যায় মহিলারা জড়ো হচ্ছেন এবং তাদের কাছে এটা উপলব্ধি করার একটা সুযোগ উপস্থিত, “যেতে চাইছ চল। কিন্তু দেখতে পাবে, তোমাকে বা তোমার হাতের সাজানো অর্ঘ্য দেখলে মন্দিরের দেবতার কিছু মাত্র নড়নচড়ন হয় না”। তার উপর, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের শামিয়ানা ব্যবহার করে এই কাজটা যদি বামেরা করতে পারে, বুঝে এবং সজ্ঞানে, একটা বড় কাজ হয়ে থাকবে। কেরালা আর বাকি ভারতের জন্য।

 

এমন সুযোগ আমাদের মতো একটা পিছিয়ে পড়া দেশে বারবার আসে না।
আমার ধারণা, আমরা অনেকেই এই নারীর অবাধ প্রবেশ সমর্থনের বিষয়টাকে একটা ধর্মীয় আন্দোলনের প্রতি সমর্থন বলে ভেবে নিচ্ছি। এবং তার থেকেই এর প্রতি বিরূপতা পোষণ করছি। কিন্তু বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, এই প্রথম একটা মুদ্দা সামনে এসেছে, যেটাতে দেশের বিচারব্যবস্থা অনুকূল রায় দিয়েছে, বিপুল সংখ্যক নারী একে একটা হারানো অধিকার ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন হিসাবে দেখছেন, তাদের এক বিশাল সংখ্যায় অংশ গ্রহণের স্পষ্ট লক্ষণ দেখা দিচ্ছে, পাশাপাশি দলিত ও প্রান্তিক বর্গের নারীপুরুষও এতে সামিল হচ্ছেন। ব্রাহ্মণ্যবাদ ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটা বড় মাত্রায় প্রতিবাদী স্বর উচ্চারিত হতে চলেছে। আর যে কারণেই হোক, রাজ্য সরকার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ফলে যারা সত্যিই ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মানুষকে এবং মেয়েদেরও মুক্ত করতে চান, তাদের কাছে এ এক অভূতপূর্ব সুযোগ। এই আন্দোলনের লাইনে দাঁড়িয়ে আপনি বলতে পারবেন – “তোমার অধিকারের জন্য আমি লড়ছি। কিন্তু এও বলে রাখছি, দেব দর্শন পেলেও তোমার জীবনের কিছুই সু ঘটবে না!” অন্য সময় যারা এটা শুনতে চাইত না, পাত্তা দিত না, এখন শুনবে এবং গুরুত্ব দেবে। পরে অনেকে মিলিয়ে নেবে। নিজেরাই দেখতে পাবে, দেব মাহাত্ম্য নিয়ে যাই বলা হয়ে থাকুক না কেন, নারী পুরুষ ছাগল বা নারকেলের দড়ি – কোনো কিছু দেখালেই যাকে তারা জিতেন্দ্রিয় দেবতা বলে ভাবছে সেই প্রস্তর খণ্ডের সামান্যতমও ভাবান্তর হবে না। এই সব কথা বলবার মতো একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

 

আজকে শবরীমালা উপলক্ষে মন্দিরে প্রবেশের অধিকারের দাবিতে ব্যাপক সংখ্যায় মহিলারা জড়ো হচ্ছেন এবং তাদের কাছে এটা উপলব্ধি করার একটা সুযোগ উপস্থিত, “যেতে চাইছ চল। কিন্তু দেখতে পাবে, তোমাকে বা তোমার হাতের সাজানো অর্ঘ্য দেখলে মন্দিরের দেবতার কিছু মাত্র নড়নচড়ন হয় না”।

 

এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া দরকার। আমরা যখন কোনো মানুষের বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ধর্ম চর্চার স্বাধীনতার পক্ষে বলি বা দাঁড়াই, তখন আমরা তাদের ধর্মের পক্ষে দাঁড়াই না, অসচেতন মানুষের একটা অধিকারের সপক্ষে মুখ খুলি মাত্র। এও তেমনই। আমরা যখন গোরক্ষা নিয়ে বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবারের হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রচার করি, তখন আমরা দলে দলে লোক ডেকে গোমাংস খেতে বলি না। বা রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে খবরের কাগজে টিভি চ্যানেলে প্রচার করে নিজেরা গোমাংস খাই না (সাধারণত)। কিন্তু যারা খেতে চায়, তাদের সেই চাওয়াটাকে সমর্থন করি। আমরা যে মহিলাদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকারকে সমর্থন করি, সেটা এই জন্য নয় যে বিয়ে করেই মহিলারা বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবে। আবার আমরা যখন তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে মত পোষণ করি বা কথা বলি, তার কারণও এটা নয় যে আমরা মুসলিম সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের বিরুদ্ধে।
এই পার্থক্যগুলো যুক্তিশীল এবং মার্ক্সবাদী মানুষেরা ভুলে গেলে খুবই দুঃখের কথা।

 

সব চাইতে বড় কথা হচ্ছে, এখন ধর্ম নিয়ে আমাদের বক্তব্য প্রচারের একটা বিরাট সুযোগ এসেছে। যা – বিজেপি ও কংগ্রেসকে ধন্যবাদ – নিতান্তই কালেভদ্রে আসে। ধর্ম যে সকলের সব রকম অধিকারের পক্ষে নয়, আমরা যারা ধর্ম বিযুক্ত ও বিরোধী তারাই যে একমাত্র সমস্ত অধিকারের পক্ষে, এই কথাটা বলার একটা মঞ্চ যেন সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের সামনে। এই দিক থেকে দেখতে হবে, দেখাটা শিখতে হবে।

 

আর বিজেপি এবং কংগ্রেস কেন এই প্রশ্নে নারীদের এই অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলছে, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। ঐতিহ্য রক্ষার নামে আসলে ওরা সেই সনাতন ধর্মীয় সংস্কার, ব্রাহ্মণ্যবাদ, পিতৃতন্ত্র, নারীকে অবদমিত রাখার যে দীর্ঘকালের পরম্পরা – তাকেই আরও একবার গৌরবের কথা হিসাবে তুলে আনতে চাইছে। নারীর ঋতুকালীন অশুচিতার ধারণা সম্বলিত হাজার হাজার বছরের এক অবমাননাকর কুসংস্কারকে রক্ষা করতে চাইছে। এই একটি ধারণা যে একজন সচেতন শিক্ষিত সুসংস্কৃত মহিলার পক্ষে আধুনিক সভ্যতার কালে কত বড় অসম্মান – তা কজন সচেতন যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মনস্ক বামপন্থী পুরুষ এখনও অনুভব করতে পারে? পারছে না বলেই বোধ হয় বারবার তাদের সামনে মন্দির আর দেবতার পাথরের টুকরোটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। নারীর পক্ষে একটা জ্বলন্ত অসম্মান লাঞ্ছনা তাদের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাচ্ছে।

 

[৩]

আর একটা প্রশ্ন এসেছে, যা মার্ক্সবাদী প্রচার পত্রে প্রায়শই দেখা যায়। আসল সমস্যাকে পাশ কাটানোর বা আড়াল করার প্রশ্ন। এটার গুরুত্ব এবং আবেদন অনেক বেশি। বহুলাংশে সত্যও বটে। ফলে অনেক সময়ই মার্ক্সবাদীরা বিচার করতে ভুলে যান, বহু মানেই সব নয়। অনেক জায়গায় সত্য মানেই সব জায়গায় সত্য নাও হতে পারে। যেখানে এটা খাটে না, সেখানে একে প্রয়োগ করলে আসলে মার্ক্সবাদীদের বিরুদ্ধেই এক ধরনের শঙ্কু-নজরের অভিযোগ উঠে যেতে পারে। যেমন মাছ বা হাঙরের হয়। জলের তলায় থাকে বলে উপরের একটা ত্রিমাত্রিক শঙ্কুর মধ্যেই জলতলের উপরের সমগ্র জগতটাকে দেখে। সবই তখন কেমন যেন বাঁকা বাঁকা লাগে। দোষটা জগতের নয়, আমার নিজের অবস্থান ভুলে থাকাটারই পরিণাম এটা।

 

নারীর ঋতুকালীন অশুচিতার ধারণা সম্বলিত হাজার হাজার বছরের এক অবমাননাকর কুসংস্কারকে [ওরা] রক্ষা করতে চাইছে। এই একটি ধারণা যে একজন সচেতন শিক্ষিত সুসংস্কৃত মহিলার পক্ষে আধুনিক সভ্যতার কালে কত বড় অসম্মান – তা কজন সচেতন যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মনস্ক বামপন্থী পুরুষ এখনও অনুভব করতে পারে? পারছে না বলেই বোধ হয় বারবার তাদের সামনে মন্দির আর দেবতার পাথরের টুকরোটাই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।

 

এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার সাথে অন্যান্য মুদ্দায় গণ আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিরোধ নেই বা থাকার কথা নয়। বরং এই দুটোর মধ্যে মেল বন্ধনের সুযোগ আছে। বাস্তবে, এক মুদ্দা নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে অন্য সমস্ত মুদ্দা থেকে কাদের নজর সরে যায়? যারা সরাতেই চায়। না হলে, একই সঙ্গে শ্রমিক চাষির দাবিতে আন্দোলন করতে করতে গোরক্ষকদের নৃশংসতার বিরুদ্ধেও আওয়াজ তোলা যায়, ব্যাঙ্ক লুটের বিরুদ্ধেও প্রচার করা যায়, আমার ধারণা, শবরীমালা মন্দির নিয়েও আন্দোলন করা যায়। পাঠকরা দেখবেন লক্ষ্য ক’রে, যারা আন্দোলন করছে না, তারা কোনো সমস্যা নিয়েই রাস্তায় নেই। আর যারা আছে, ভুল হোক, ঠিক হোক, তারা বহু সমস্যা নিয়েই রাস্তায় আছে। যারা রাস্তায় নামতে চাইছে না, তারা আসলে কিছু ভুয়ো বা গুরুত্বহীন মূলত শহুরে মধ্যবিত্তদের নিরাপদ দাবি নিয়ে হই হই করে ভাবছে, বিরাট কাজ করছে। জঙ্গলমহলের শবর সদস্য বা চা বাগানের শ্রমিক না খেতে পেয়ে মারা গেলে তারা মিছিল বা প্রতিবাদসভা করে না। তাদের অনেকেরই এও মনে হতে থাকে যে শবরীমালা কোনো ইস্যুই নয়। তারা বুঝতেই পারে না, এই কথা বলে তারা আসলে নারীজাতির একটা অসম্মানকেই না জেনে না বুঝে ন্যায্যায়িত করে দিচ্ছে। মন্দির পাথরখণ্ড বা পূজাপাঠের দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় একটা সামাজিক সংস্কারের প্রতি তারা উদাসীন থেকে যাচ্ছে। তাই তারা বুঝতেই পারছে না, দক্ষিণ ভারতের নানা জায়গায় এই মুদ্দা নিয়ে কেন এত ব্যাপক তোলপাড় চলছে।

 

এদিকে কেরালার অন্যতম বাম শক্তি এসইউসিআই (সি)-র রাজ্য কমিটি শবরীমালা আন্দোলনের বিরোধিতা করতে গিয়ে একটা খুব অদ্ভুত কথা বলেছে। কেরালায় রেনেসাঁর মূল সুরটি ছিল জনসাধারণকে ধর্ম ও জাতপাত থেকে বের করে আনার দিকে। আর এই আন্দোলন করতে গিয়ে সিপিআই (এম) আবার আম জনতাকে নাকি সেই ধর্মের প্রভাব এবং অন্ধতার কোলেই ঠেলে দিচ্ছে। “Beginning with the famous declaration of Narayana Guru “we have no religion or caste”, the Renaissance movement in Kerala went ahead further to the extent of stating “man needs no religion, no caste and no god”. The neo-renaissance in the name of entry of women in Sabarimala will only help to strengthen what the Renaissance movement once rejected. From this angle if we view, the ‘Women’s wall’ does not promote scientific outlook, but blindness.”

 

সত্যি কথা বলতে গেলে, কেরালার রেনেসাঁ আন্দোলন কীভাবে হয়েছিল, কত দূর এগিয়েছিল, সে সম্পর্কে আমার খুব একটা ভালো ধারণা নেই। কিন্তু বাংলার অভিজ্ঞতা, ভারতীয় রেনেসাঁর অন্যান্য অঞ্চলের (যথা, পশ্চিম ভারতের) নব জাগরণের খবরাখবর থেকে যতটকু বুঝেছি, তাতে মনে হয়, এমনকি কেরালাতেও রেনেসাঁর একটাই ধারা বা বৈশিষ্ট্য, একটাই মাত্র সুর বা ধ্বনি, ছিল না। ধর্মীয় প্রভাব থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টাটাই তার মধ্যে প্রধান ধারা ছিল কিনা তাও বলা মুশকিল। আর এটা বোঝার জন্য এক শবরীমালা মন্দিরের বিদ্যমান ফতোয়াটাই তো যথেষ্ট। পুরনো সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান ধারণা থেকে আধুনিক গণতান্ত্রিক মানবতান্ত্রিক চেতনার দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রেরণা এবং কর্মোদ্যোগ অবশ্যই ছিল। কেউ কেউ – যেমন নারায়ণ গুরু – ধর্মীয় চেতনা থেকে শুরু করেও জীবনের শেষ দিকে ধর্মকে অতিক্রম করার দিকে অনেকখানি এগিয়ে গেছেন। আবার অনেকেই ব্রাহ্মণ্যবাদ জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বলেও শেষ অবধি ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যেই থেকে গেছেন। সুতরাং একথা নিঃসংশয়ে বলা যায়, কোন একজন নারায়ণ গুরু বা অন্য কারও থেকে দুটো ধর্ম বিরোধী উদ্ধৃতি দিলে আর একজন সুব্রাহ্মনিয়াম ভারতী বা অন্য আর একজনের রচনা থেকে পাঁচটা ভিন্ন ধর্মপন্থী ঈশ্বরপৃক্ত উদ্ধৃতি দিয়ে বলবে – আচ্ছা কমরেড, এটাই বা কেরালার রেনেসাঁর মূল সুর নয় কেন? রেনেসাঁ থেকে শিক্ষা নিতে গিয়ে আমরা যদি এই শেষোক্তদের কথা অনুযায়ী চলি, তাতেই বা আপনার আপত্তি করার কী অধিকার আছে?

 

তখন তাঁদেরও বলতে হবে, যে ধারণাগুলো আধুনিক জীবন দর্শনের সঙ্গে মেলে, গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের সাথে খাপ খায়, আমরা তাকেই নেব।
অর্থাৎ, সেই আজকের সমস্যার প্রেক্ষাপটে এসে দাঁড়াতে হবে। তখন তাঁদেরও নারীর ধর্মাচরণের অধিকার, যেটকু ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তাকে ফিরিয়ে দেবার আন্দোলনে সদলবলে সামিল হতে হবে। নারীর পর্যায়ক্রমিক অশুচিতা নিয়ে কুসংস্কারের যে গহন অন্ধকার আছে তাকে কাটানোর উপায় খুঁজতে হবে। এসইউসিআই (সি)-র রাজ্য কমিটির সেই বৃহদায়তন বিবৃতিতে যে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা উত্থাপিতই হয়নি, সম্পূর্ণ নিরুচ্চার থেকে গেছে, এটাকে মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করলেই, সকলে না হলেও তাঁদের কেউ কেউ বুঝতে পারবেন, সময়ের নিরিখে তাঁরা কতটা পেছনে কোথায় কাদের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন।

 

গণ আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলনের দেশে কালে কোনো বাঁধাধরা গৎ নেই। এক একটা জনপ্রিয় আন্দোলনে নানা শক্তি আসে, থাকে, কাজ করে, প্রভাব খাটায়, যে যার নিজস্ব ভাবধারা প্রচার করে – এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এই অবস্থায় যারা নিজেদের যথার্থ বিপ্লবী, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, ইত্যাদি মনে করে, তারা কী করবে? পালিয়ে যাবে, না, ভেতরে ঢুকে নিজের সঠিক কথাগুলো বলবে?

 

এই কুসংস্কারটা ভাঙার একটা সুযোগ এসেছে। ধর্মীয় প্রেক্ষিতের একটা বাস্তব দ্বন্দ্বই এই সুযোগ আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। এর গায়ে আঘাত করতে গেলেই যুক্তিবাদী বিজ্ঞান মনস্ক এবং মার্ক্সবাদীরা আবিষ্কার করবেন, ধর্মের বহুকালিক একটা ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে হাতুড়ির ঘা পড়তে শুরু করেছে। বিজেপি-কংগ্রেসের মরিয়া প্রচেষ্টাই সেই কথা বুঝিয়ে বলে দিচ্ছে। শুধু তো সিপিআই (এম) নয়, এ রাজ্যে এই এসইউসিআই (সি) দলেরও পত্রপত্রিকা, বিভিন্ন পুস্তিকায় এবং নানা রকম প্রচারে যে কোনো প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ নিয়ে কত সপ্রশংস উচ্ছ্বাস থাকে। বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতির কক্ষতলে ধর্মনিস্পৃহ মানবতাবাদী ঈশ্বর সংশয়ী বিদ্যাসাগরের সুতীক্ষ্ণ উপস্থিতি সত্ত্বেও। এবং বিদ্যাসাগরের স্মৃতি তর্পণ করতে করতেও। তার মানে কিন্তু এটা মনে হয় না যে তাঁরা নিশ্চয়ই বিবেকানন্দের ভাববাদী বেদান্ত দর্শনের সমর্থন করেন। তেমনই কেরালায় শবরীমালা মন্দির সংক্রান্ত এই আন্দোলনের সমর্থনে রাস্তায় নামলে তাও ধর্মের পক্ষে নেমে যাওয়া বোঝায় না! সিপিআই (এম) যদি এই আন্দোলনকে “ঈশ্বর বিভেদ করেন না” বলে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় এবং তার দ্বারাই বিজেপি-কংগ্রেসকে ঠেকাবে বলে ভাবে, আমাকেও সেটাই বলতে হবে – এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে? আমি আমার কথাটাই বলব, অধিকারের সপক্ষে কথা তুলব এবং ঋতুকালীন অশুচিতার অসভ্য কুসংস্কারটাকে নির্মমভাবে আঘাত করে যাব। তাতে তো আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অন্তত এই মুহূর্তে।

 

আসলে গণ আন্দোলন, সামাজিক আন্দোলনের দেশে কালে কোনো বাঁধাধরা গৎ নেই। হাতে কলমে বিপ্লব সংগঠিত করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার জোরে লেনিন ফাউস্ত নাটকে সংযোজিত হ্বোলফগাং ফন গ্যোঠের যে কথাটা বারংবার বলতেন, এখানেও সেটাই আর একবার উচ্চারণ করতে ইচ্ছে করছে – “Theorie ist grau, meine Fruend, aber grün ist der ewige Baum des Lebens” (তত্ত্ব বরং পাংশুটে, ওহে বন্ধু, তাই চিরহরিৎ জীবন বৃক্ষকেই দেখ!) বাস্তব জীবনের নাটক আমাদের অনেক সময়ই বইয়ের সিলেবাসের বাইরে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তখন অন্য ভাবে ভাবতে হয়।
এক একটা জনপ্রিয় আন্দোলনে নানা শক্তি আসে, থাকে, কাজ করে, প্রভাব খাটায়, যে যার নিজস্ব ভাবধারা প্রচার করে – এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। সিপিআই (এম) সেখানে একটা বড় শক্তি, এই মুহূর্তে রাজ্যের সরকারি ক্ষমতায় আছে। তার প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা ও সুযোগ অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। এই অবস্থায় যারা নিজেদের যথার্থ বিপ্লবী, যুক্তিবাদী, বিজ্ঞানমনস্ক, ইত্যাদি মনে করে, তারা কী করবে? পালিয়ে যাবে, না, ভেতরে ঢুকে নিজের সঠিক কথাগুলো বলবে? এই দিক থেকে বিষয়টাকে ভাবতে হবে। সিপিআই (এম) সম্পর্কে ধারণার প্রেরণায় কি তারা পিছিয়ে যাবে, নাকি এর মধ্যে থেকে, মানুষের মধ্যে ঢুকে কাজ করে নিজেদের জরুরি কথাটা বলবার সুযোগটা নেবে, প্রশ্ন এটাই।

 

[৪]

অতএব।
হ্যাঁ, অতএব আমরা না হয় আপাতত দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে পাশ থেকেই দেখতে থাকি। অঙ্ক কষতে থাকি। আর যারা লড়াই করছে, তাদের উদ্দেশে দু’একবার না হয় উৎসাহ জানিয়ে হাত নাড়ি। বলা যায় না, বিশ পঁচিশ বছর পরে আপনার সন্তান হয়ত শুধু এটুকুর জন্যই আপনাকে শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ বলে গণ্য করতে সক্ষম হবে।

 

 

লেখক ‘সেস্টাস’ নামে বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক। বিজ্ঞান ও মার্কসবাদের আলোয় বিজ্ঞানের ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব ও দর্শন বিষয়ে লোকপ্রিয় প্রবন্ধকার।

 

এই লেখাতে ব্যক্ত মতামত লেখকের নিজস্ব। গ্রাউন্ডজিরো থেকে আমরা পাঠকদের এই বিষয়ে মতামত ও লেখা দেবার আহ্বান জানাচ্ছি।

Share this
Leave a Comment