গ্রাউন্ডজিরো টিম: গত দেড় বছর ধরে যশোর রোডের চার/পাঁচশ বছরেরও প্রাচীন গাছগুলিকে ‘উন্নয়ন’-এর নামে কেটে ফেলার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন, সেখানকার সাধারণ মানুষ ও ছাত্র-ছাত্রীরা। শাসক দল, কাঠ মাফিয়াদের হুমকি উপেক্ষা করেই প্রচুর মানুষ বছ খানেক আগে রাস্তায় নেমে পড়েন শতাব্দীপ্রাচীন এই গাছগুলিকে রক্ষা করতে। তৈরি হয়, “যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি”। আন্দোলনের ধারাবাহিকতাতেই গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি-র পক্ষ থেকে মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা চলছে। গত ১১ই মে বিচারপতি অরিজিৎ ব্যানার্জী ও জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ আগামী ১৫ই জুন পর্যন্ত গাছগুলি না কাটার নির্দেশ দেন।
যশোর রোড প্রায় ৬০ কিলোমিটার চওড়া, বলাই বাহুল্য এই বিরাট পরিসরে প্রতিটি গাছের উপর লক্ষ্য রাখা সম্ভব নয়, তবুও আন্দোলনকারীরা সাধ্যমত নজরদারী চালিয়ে আসছিলেন। এতদিন ধরে চলা আন্দোলন, এবং কোর্টের স্থগিতাদেশের কারণেই সরকারের তরফে গাছ কাটার বরাত পাওয়া কাঠমাফিয়ারা অধৈর্য্য হয়ে উঠেছে। গত কয়েকদিন ধরেই যশোর রোড ও মিলিটারি রোডের সংযোগস্থলের একটি গাছ কাটার আয়োজন চলছিল, আদালতের রায়কে উপেক্ষা করেই, প্রকাশ্যে দিনের আলোয়, প্রশাসনের নাকের ডগায়। আন্দোলনকারীদের তরফে অর্পিতা সাহা বারবার ফেসবুকে জানায় একথা, প্রশাসনকেও জানানো হয়। তাদের তরফে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপের আশ্বাসটুকুও পাওয়া যায়নি। আজ (৭ই জুন, ২০১৮) সকালে গাছকাটা শুরু হয়, বলাবাহুল্য প্রশাসনকে জানানো হলে তারা কোনও উদ্যোগ নেয়নি, বরং জানানো হয় যদি কেউ মনে করেন আদালত অবমাননা হচ্ছে বলে হয় তাহলে তারা যেন পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অনির্বান দাস, অর্পিতা সাহা, জয়ব্রত দত্ত তৎক্ষণাত ঘটনাস্থলে পৌঁছান, দেখা যায় পুলিশ দাঁড়িয়ে গোটা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে। অনির্বান গোটা ঘটনার ভিডিও করতে গেলেই পুলিশ তাকে আচমকাই তুলে নিয়ে যায়। কেড়ে নেওয়া হয় অর্পিতা সাহার ফোন। পুলিশ চলে যেতেই ছুটে আসে স্থানীয় তৃনমূল কর্মীরা, ছিড়ে ফেলা হয় সমস্ত পোস্টার, ব্যাপক মারধোর করা হয় জয়ব্রতকে।
পুলিশ অনির্বাণকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে জেরা করতে থাকে। কোন রকম অসঙ্গতিপূর্ণ কিছু না পেয়ে, স্বীকার করে নিতে বলা হয় ভিডিয়ো তুলে সে অন্যায় করেছে। কিন্তু তা অস্বীকার করায়, পুলিশ হুমকি দেয়, বয়ান না দিলে জামিন অযোগ্য ধারায় সরকারি কাজে বাধা দেওয়া সংক্রান্ত মামলাইয় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে একথা জানানো হয়। কিন্তু তার পরও পিছু না হটলে, মোবাইলের IMEI address লিখে রাখে, ও তার সাথে আন্দোলনকারীদের সম্পূর্ণ ডিটেলস নিয়ে রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যে গোটা ঘটনা স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে, এবং মিডিয়া এবং অনেকেই বনগাঁ থানা চত্বরে জমা হলে, চাপে পড়েই অনির্বানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
কাঠমাফিয়াদের এই গাছকাটা সংক্রান্ত একটি FIR করা হয়, ও আন্দোলনকারী জয়ব্রত ও অর্পিতার ওপর যে আক্রমণ নেমে এসেছিল, তার নেপথ্যে থাকা দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির দাবীতে একটি জেনারেল ডায়েরি করা হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে ও আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে আগামী রবিবার বনগাঁ থানা ঘেরাও-এর কথা ঘোষণা করেছে যশোর রোড গাছ বাঁচাও কমিটি। আগামী কাল কোর্টের পরবর্তী শুনানি।