গ্রাউন্ড জিরো : প্রায় একযোগে সাতসকালে হানা দিয়ে মুম্বাই, পুনে, নাগপুর, দিল্লি থেকে আইনজীবী, অধ্যাপক, পত্রিকা সম্পাদক, দলিত ও উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ও সক্রিয় কর্মীদের গ্রেফতার করল মহারাষ্ট্র পুলিশ। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাল দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলি। পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল), মহারাষ্ট্র এই গ্রেফতারকে প্রতিহিংসামূলক ও স্বৈরাচারী বলে বর্ণনা করেছে। পিপলস ইউনিয়ন ফর ডেমোক্র্যাটিক রাইটস (পিইউডিআর), মহারাষ্ট্র মনে করে, আইনকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে বিজেপি সরকারের এই গ্রেফতারি, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নগ্ন প্রদর্শনী। দুটি সংগঠনই ধৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
৬ জুন ভোররাত থেকে চার শহরে একই সঙ্গে ধৃতদের বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুনে পুলিশ। ভোর ৬টা নাগাদ তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদিন-ই ট্র্যানজিট রিম্যান্ডে পুনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ধৃত আইনজীবী নাগপুরের সুরেন্দ্র গ্যাডলিং ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন অভ পিপলস লইয়ার্স-এর সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক সোমা সেন নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান, সুধীর ধাওয়ালে মুম্বাই থেকে প্রকাশিত বিদ্রোহী পত্রিকার সম্পাদক, রোনা উইলসন কমিটি ফর দ্য রিলিজ অভ পলিটিক্যাল প্রিজনার্স-এর জনসংযোগ সম্পাদক, মহেশ রাউথ ভারত জন আন্দোলন-এর উচ্ছেদ বিরোধী কর্মী। এদের সকলকেই ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিভিন্ন গণ আন্দোলন বিশেষ করে দলিত ও প্রান্তিক মানুষের আইনি এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এই ব্যক্তিদের গ্রেফতারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে পিইউসিএল-এর মহারাষ্ট্র রাজ্য শাখার আহ্বায়ক মিহির দেশাই এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “বিভিন্ন রাজ্য এবং দক্ষিণপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলির নামিয়ে আনা অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে এঁরা প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একযোগে তাঁদের এই গ্রেফতারে মধ্যে পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পিত আক্রমণের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।” মানবাধিকার সংগঠনটি মনে করে, এই গ্রেফতার মতপ্রকাশ ও মতবিরোধিতার মতো নাগরিক অধিকারের নির্লজ্জ লঙ্ঘন। এমনকি, সমাজের প্রান্তিক মানুষের অধিকারের জন্য যে সমস্ত ব্যক্তি কাজ করে চলেছেন, তাঁদের নিশানা করার অর্থ হল, প্রতিবাদী বিরুদ্ধ মতবাদীদের মধ্যে আতঙ্কের শিহরণ সৃষ্টি করা।
Utterly illegal & malafide to arrest Dalit activists, lawyers, academics in the Bhima Koregaon case, while main perpetrators of the Carnage are allowed Scot free. Modi govt will have to pay heavily for this fascist assault https://t.co/4vPK3BcrbH
— Prashant Bhushan (@pbhushan1) June 6, 2018
২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভীমা-কোরেগাঁও শৌর্য দিন প্রেরণা অভিযান এলগার পরিষদ পালন করেছিল। পরদিন ১ জানুয়ারি ২০১৮, মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। ৮ জানুয়ারি ধৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুনে বিশ্রাম বাউগ থানায় জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। মার্চ মাসে এর সঙ্গে যোগ করা হয় ষড়যন্ত্রের মামলাও। এবার ইউএপিএ ধারা যোগ করা হল। মানবাধিকার সংগঠনগুলি মনে করে, ১ জানুয়ারির ভীমা-কোরেগাঁওয়ে হিংসাত্মক ঘটনার জন্য দায়ী সঙ্ঘ পরিবার এবং তাদের নেতা শম্ভাজি ভিদে ও মিলিন্দ একবোতে। তাদের গ্রেফতারের জন্য এই ব্যক্তিরা ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মানবাধিকার সংগঠন, প্রেরণা অভিযান সোচ্চার। এই অপরাধেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন দুটির অভিযোগ, মহরাষ্ট্রের ফড়নবিশ সরকার, হিংসার জন্য প্রকৃতপক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের আড়াল করছে। পাশাপাশি, এলগার পরিষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে এবং প্রেরণা অভিযানের পিছনে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক মদত রয়েছে বলে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আরও অভিযোগ, শম্ভাজি ভিদে ও মিলিন্দ একবোতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পড়েছে, এমনকি এফআইআর করা হয়েছে। ভীমা-কোরেগাঁও ছাড়াও এই দুজনের বিরুদ্ধে একাধিকবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানো এবং পুনেতে বিশিষ্ট দলিত ব্যক্তিদের মূর্তির অবমাননার অভিযোগও রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই দুই ব্যক্তির আগাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। তবু, সরকার তাদের গ্রেফতার করেনি। শুধু যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি তাই নয়, বিভিন্ন সময় সাম্ভাজি (মনোহর) ভিদে এবং মিলিন্দ একবোতেকে বিজেপি-র সভামঞ্চে এবং ফাড়নাভিস বা মোদীর মতো শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত ওঠাবসা করতে দেখা গেছে। মহারাষ্ট্রে রায়গঢে ২০১৪ নির্বাচনের সভামঞ্চ থেকে ভিদে সম্পর্কে নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমি ভিদে গুরুজির কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ উনি আমাকে নিমন্ত্রণ করেননি, উনি আমাকে হুকুম দিয়েছেন। আপনারা সবাই ওনার হুকুম শুনতে ও মানতে অভ্যস্ত। আমি অনেক বছর ধরে ভিদে গুরুজিকে চিনি। আমাদের যখন জনসেবা শেখানো হত, তখন ভিদে গুরুজির উদাহরণ দেওয়া হত।”
Peaceful Leader of State & messiah of peace with Sambhaji Bhide responsible for violence. Not to my surprise like Godse, Bhide also ex RSS man… time for everything to Rest In Peace ?? pic.twitter.com/DT8Xfw0kWe
— Sarcasm™ (@SarcasticRofl) January 3, 2018
#BhimaKoregaonViolence
FIR against Milind Ekbote & Sambhaji Bhide. Right-wing outfit 'Samasta Hindu Aghadi' is headed by Milind Ekbote and 'Shivpratishthan' is headed by Manohar Bhide. Both claim to be Marathas. But they are not. pic.twitter.com/YwqhDmtl8p— Unofficial Sususwamy (@swamv39) January 2, 2018
পিইউডিআর প্রেরণা অভিযানকে মাওবাদী প্রভাবিত বলে মানতে রাজি নয়।সংগঠনের মহারাষ্ট্র রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক আনন্দ তেলতুমদের মতে, ভীমা-কোরেগাঁও শৌর্য দিন প্রেরণা অভিযান ২৫০টি গণ সংগঠনের একটি যুগ্ম মঞ্চ। মঞ্চের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি পি বি সাওয়ান্ত। এছাড়াও বহুজন রিপাব্লিক পার্টির নেতা প্রকাশ আমবেদকার, প্রাক্তন বিচারপতি কোলসে পাটিল এই মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত। পেশোয়ার রাজত্বের অবসানকারী ভীমা-কোরেগাঁও যুদ্ধের দুশো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৩১ ডিসেম্বর প্রেরণা অভিযান পুনের ঐতিহাসিক শনিওয়ারওয়াদাতে জনসভার আয়োজন করে। ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল নব্য-পেশোয়ারিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই এই এলগার পরিষদ আয়োজিত হয়েছে। পর দিনই সভায় অংশগ্রহণকারী দলিত এবং অন্যান্য উপর সংগঠিত আক্রমণ নামিয়ে আনে সঙ্ঘ পরিবার। যার নেতৃত্বে ছিল ভিদে ও একবোতে।
পিইউসিএল-এর ক্ষোভ, মহারাষ্ট্র সরকার সাধারণ মানুষকে স্থায়ী ও ধারাবাহিক হিংসাত্মক ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ। আবার ভিদে ও একবোতের মতো হিন্দুত্ববাদী জাতিবাদী সংগঠক, যারা এই হিংসাত্মক ঘটনায় অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে না। অথচ, যে সমস্ত ব্যক্তি এই হিংসার বিরুদ্ধে এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য লড়াই করে চলেছে তাদের দমন করতে তৎপর। পিইউডিআর মনে করে, গ্রেফতারের পুরো ঘটনাটি রাজ্য সরকারের নিপুণ পরিচালনার অঙ্গ। উদ্দেশ্য, প্রথমত, ভীমা-কোরেগাঁওয়ের ঘটনায় হিন্দুত্ববাদীদের হাতে আক্রান্ত এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার ব্যক্তিরা যাতে অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি জে এন প্যাটেলের নেতৃত্বে গঠিত বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সামনে যাতে তাদের বক্তব্য সঠিক ভাবে তুলে ধরতে না পারে; দ্বিতীয়ত, সামনের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দলিত-বহুজন ভোট মেরুকরণের চেষ্টা।
পিইউডিআর ধৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে। একই দাবি জানিয়েছে পিইউসিএল। পাশাপাশি তারা সঙ্ঘ পরিবারের নেতা-সংগঠক ভিদে ও একবোতেকে গ্রেফতার এবং ভীমা-কোরেগাঁওয়ে আক্রান্তদের সুবিচারের দাবিও জানায়।
Shame for Msnkind Humanity as well as Democrracy