আওরঙ্গাবাদে পরিকল্পিত দাঙ্গা বিষয়ক তথ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন


  • June 4, 2018
  • (0 Comments)
  • 3251 Views

“এটা কোনো দাঙ্গা ছিল না। ছিল একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর এক পূর্বপরিকল্পিত হামলা এবং পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এ হামলায় অংশ নিয়েছিল”: ভীমা কোরেগাঁও শৌর্য দিন প্রেরণা অভিযান-এর করা অনুসন্ধান।

আওরঙ্গাবাদ হাঙ্গামার কারণ ও প্রেক্ষাপট জানতে,  মহারাষ্ট্র ভীমা কোরেগাঁও শৌর্য দিন প্রেরণা অভিযান এক তথ্য অনুসন্ধানী কমিটি গঠন করে। ১৯ ও ২০ মে তারিখে কমিটি সেখানে যায় এবং দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে ও যাঁরা স্বচক্ষে ঘটনা ঘটতে দেখেছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করে। তাছাড়াও তারা দেখা করে স্থানীয় অধিবাসী, পুলিশ, প্রশাসক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজকর্মীদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে কমিটি নীচের পর্যবেক্ষণগুলোয় পৌঁছায়।

১. দাঙ্গা শুরু হয় ১১মে ২০১৮, শুক্রবার মধ্যরাতে। কিন্তু মোতি-করঞ্জা, শাহগঞ্জ, নওয়াবপুরা, রাজাবাজার ও গুলমন্ডির লোকেদের কথায় মনে হয় যে, এ দাঙ্গার প্রস্তুতি চলছিল প্রায় গোটা মাস জুড়ে।
দাঙ্গায় ব্যবহারের জন্য পেট্রল, কেরোসিন, পাথরের টুকরো, গুলতি বহু আগে থেকেই সংগ্রহ করে জমিয়ে রাখা হয়েছিল বহুতল বাড়িগুলির ছাদে। শাহগঞ্জ ব্যাপারী সঙ্ঘের প্রায় ২১ জন হিন্দু ও মুসলিম দোকানদার ৭ মে, শহরের পুলিশ চৌকিতে, লাচ্চু পালোয়ান ও তার চ্যালা চামুণ্ডাদের বিরুদ্ধে মারধোর, ভয় দেখানো ও সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন। লাচ্চু ও তার দলবলের হাত থেকে নিরাপত্তার দাবিও তাঁরা জানান। যদিও এসবকিছুর পরও লাচ্চু বা তার শাগরেদদের আচরণে কিছুমাত্র পরিবর্তন ঘটে না। অতঃপর ৮ ও ৯ মে তাঁরা এস.পি কোডেকার এবং পি.ও. কদম-এর কাছে বিচার চাইতে যান এবং একটা লিখিত স্মারকলিপিও দেন। এরপর ১১ মে তারিখে বহু মানুষ এই এস.পি কোডেকার এবং পি.ও. কদমকে লাচ্চুর সঙ্গেই অকুস্থল থেকে হেঁটে আসতে লক্ষ করেন। এবং এ-ও দাঙ্গার পূর্বপরিকল্পনারই প্রমাণ বলে তাঁরা মনে করেন।

২. ঘটনার দিন রাত ১০ টায় মোতি-করঞ্জার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও দাঙ্গা চলাকালীন অন্যান্য অনেক জায়গাতেও বিদ্যুৎ ছিল না। অনেক ট্রান্সফরমার নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোও আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সবকিছুই দাঙ্গাকারীদের আগাম প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত বহন করে।

৩. দাঙ্গার অঞ্চলে কিছু সশস্ত্র রাজনৈতিক নেতাকে পুলিশের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এঁরা সবাই শিবসেনা দলের। স্থানীয় সাংসদ চন্দ্রকান্ত খাইরেকে একাধিক ভিডিও ক্লিপেই দেখা গেছে। তিনি সাংবাদিকদের কাছে খোলাখুলি বলেন যে, শিবসেনা সদস্য রাজেন্দ্র জঞ্জাল ও তাঁর ছেলে এবং প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ জয়সওয়ালের ছেলেকে অকুস্থল থেকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন। অর্থাৎ অনেক শিবসেনা নেতাদের ছেলেপুলেরাই দাঙ্গায় সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। পুলিশ এবং স্থানীয় শিবসেনা নেতৃত্বের মধ্যে আঁতাত দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

৪. বেআইনি জলের সংযোগ বন্ধ করতে গিয়েই এ দাঙ্গার সূত্রপাত–এমনটাই খবর ছড়িয়েছে। কিন্তু এলাকার লোকেদের মতে দাঙ্গার পিছনে আদৌ এরকম কোনো কারণ ছিল না। ক্রান্তি চক থেকে শাহগঞ্জের মধ্যে ৩৫,০০০এর বেশি বেআইনি জলসংযোগ আছে। গোটা শহরে ১ লাখ ২০ হাজারের মতো। কিন্তু ৯ মে সকালে পৌরসভা ক্রান্তিচক বা শাহগঞ্জে না গিয়ে মোতি-করঞ্জা চকে গিয়ে কোনোরকম নিয়মকানুন ছাড়াই জলের সংযোগ ভাঙতে আরম্ভ করে। মাত্র ৪টে সংযোগ তারা ভাঙে, যেগুলোর প্রত্যেকটারই মালিকেরা মুসলিম। আবার, এ অঞ্চলেরই বাসিন্দা ফরিদ ইকবাল ও তার সহকর্মী অনেকদিন আগেই বেআইনি জলসংযোগ বন্ধ করতে বলে পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। সোজা কথায়, বেআইনি জলসংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সাথে দাঙ্গার কোনো সম্বন্ধই ছিল না।

৫. আম কেনার ঘটনাকে এ দাঙ্গার আরেক উৎস বলে দাবি করা হয়েছে, যে দাবিও ভিত্তিহীন।  আম কিনতে গিয়ে, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে একটা গোলমাল হয় যা অচিরেই মিটে গিয়েছিল এবং তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলিঙ্গনও বিনিময় করেন । কিন্তু তার পরে পরেই লাচ্চু পেহলওয়ানের ভাইপো ৮-১০ জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আম বিক্রেতাকে মারধোর করতে শুরু করে। লোকজন জড়ো হয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ও তারা লাচ্চুর ভাইপোকে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করে। এরপর লাচ্চু এসে দোকান জ্বালিয়ে দেবার প্রকাশ্য হুমকি দেয় এবং ১১মে সে সত্যিই তার কথা রাখে, দোকানগুলি পুড়ে ছাই হয়।

৬. পুরসভার মেয়র নিজে শিবসেনার সদস্য। লাচ্চুর মেয়েও একজন শিবসেনাকর্মী, কিন্তু আসল ক্ষমতা লাচ্চুর হাতে। ঠিক একমাস আগে সে দলে যোগ দেয় এবং শাহগঞ্জ ও মীনাবাজার এলাকাকে দখল ও হকারমুক্ত করবার দাবি জানায়। ৯ মে পুরসভা দখলবিরোধী এক বাহিনী গঠন করে। এই বাহিনী শাহগঞ্জ চককে হকারমুক্ত করে–যাদের বেশিরভাগই মুসলিম দোকানদার। এরপর সিন্ধী দোকানের দখলদারি ভাঙতে শুরু করে তারা। এমন সময় বিজেপি জেলা সভাপতি কিষানচন্দ তানওয়ানির থেকে একটা ফোন আসে এবং তাদের অভিযানে সেখানেই ইতি পড়ে। অর্থাৎ, পুরসভার কাজকর্মের মধ্যেও পক্ষপাত স্পষ্ট।

৭. প্রত্যেক রমজানের সময় শাহগঞ্জ অঞ্চলে মীনা বাজার নামে একটা হাট বসে। ১২ বছর আগে পর্যন্ত  ভাজি মার্কেটেই এ বাজার বসত। কিন্তু পুন:সংস্কারের জন্য ভাজি মার্কেট ভাঙা পড়ে এবং দোকানদারেরা সবাই রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। রাস্তাতেই বিক্রিবাটা চলতে থাকে। দু বছর আগে পুরসভা মীনা বাজারের জন্য আমখাস ময়দান ধার্য করলেও পরবর্তী বছরগুলোয় তার জন্য কোনো বন্দোবস্তই করতে দেখা যায় না। ফলত, সব দোকানদারেরাই শাহগঞ্জ রোড ধরে তাদের বেচাকেনা জারি রাখে। সম্প্রতি শিবসেনা মীনা বাজারের স্থানচ্যুতি দাবি করলে, দোকানদারেরা হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্ট জানায় যে তাদের জীবনযাপনের অধিকারের মধ্যেই পড়ে এই দোকানপাট, ফলে সে সব ভাঙা চলবে না। ফলে, ১১ মে লাচ্চু পেহলওয়ান অভিসন্ধিমূলকভাবেই দোকানগুলোয় আগুন লাগায়।

৮. ঘটনা যেখানে ঘটে, গোটাটাই এক মুসলিমপ্রধান অঞ্চল, যেখানে লাচ্চু তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছিল। লাচ্চু এ অঞ্চল থেকে প্রচুর টাকাপয়সা তুলত এবং অনিচ্ছুকদের মারধোর পর্যন্ত করত। সবাই রীতিমত ভয় পেত তাকে। ৮ মে আম বিক্রির ঘটনায় ভাইপোকে জোর করে বের করে দেওয়ার ফলে লাচ্চু চটে ছিল। হকার ও দাঙ্গায়-ক্ষতিগ্রস্তদের বয়ান অনুযায়ী, বেছে বেছে সেইসব দোকানগুলোই শুধু ভাঙা হয়েছিল, যাদের মালিকরা লাচ্চুর হকার-উচ্ছেদের পরিকল্পনার সমর্থনে ছিল না।
লক্ষ করার বিষয়, ১১ মে দোকান জ্বালানো চলাকালীন, মুসলিম প্রধান এলাকায় অবস্থিত হিন্দু দোকানিদের দোকান বা বাড়িঘর একটিও পোড়ানো হয়নি। এতে করে মনে হয় যে, বাসিন্দারা দাঙ্গা প্রতিরোধ করেছিল এবং মুখোমুখি দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের দাঙ্গা সেদিন আদপেই ঘটেনি। শাহগঞ্জ, নওয়াবপুরা ও মোতি-করঞ্জার দোকানদারদের কাছ থেকেও একই কথা শোনা যায়।
হাঙ্গামাকারীরা শাহগঞ্জ-রাজাবাজার চকে একশো বছরের পুরনো একটা বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, যার একমাত্র কারণ এর মালিক ছিলেন মুসলিম। এ বাড়িতে এক হিন্দু পরিবারেরও বাস ছিল আর ছিল আরো প্রায় গোটা তিনেক দোকান। সবাই ভাড়াটে। কোনো সরকারি প্রতিনিধি তাঁদের সঙ্গে দেখাও করেন নি, সাহায্য তো দূরের কথা। বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দু ভাড়াটিয়াদের আর্থিক সাহায্য দিয়েছে, মুসলিমদের কাউকেই নয়।

৯. পুলিশের চরম মুসলিমবিদ্বেষ দেখা যায় হ্যারিস কাদরির ঘটনায়। শুক্রবার মাঝরাতে তিনি তাঁর ছোটভাইয়ের খোঁজে বাড়ি থেকে বেরোন। প্রায় আড়াইটে নাগাদ তার পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন যে তিনি আহত। তাঁরা তাঁকে ফিরিয়ে আনেন এবং তখনো জীবিত বুলেটবিদ্ধ হ্যারিসকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তিনি মারা যান। পরেরদিন বেলা ১১টা নাগাদ এসআরপি জওয়ানেরা হ্যারিসের বাড়ির দরজা ভাঙে। তিনতলা বাড়ির ছাদে উঠে তারা হ্যারিসের কাকাকে মারধোর করে। তাঁদের হিন্দু প্রতিবেশীরা হ্যারিসের পরিবারের ওপর জুলুম না চালানোর অনুরোধ জানান জওয়ানদের কাছে, হ্যারিসের ভয়ানক আঘাতের কথাও জানান তাঁরা। কিন্তু জওয়ানরা মহিলা সদস্যদেরকেও নির্যাতিত করতে থাকে। নওয়াবপুরা, বাইজিপুরা, কিরাদপুরা, চেলিপুরা, রামান্সপুরা, গিন্সি, রোশনগেট প্রভৃতি মুসলিমপ্রধান এলাকার মুসলিম পরিবারের বাড়িগুলিতে জওয়ানেরা চিরুনি তল্লাশি চালায় এবং এ তল্লাশি এখনো চলছে। কালেক্টর, পুলিশ প্রশাসক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী–কেউ এসে এদের কারো সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করেননি।

১০. পুলিশের গুলিতে বেশ কিছু মুসলমান মানুষ আহত হয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁরা চিকিৎসাধীন। রাজ্য, পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ তাঁদের সঙ্গে দেখাও করেননি। পুলিশ তাদের আঘাত লক্ষ করেনি এবং এমনকি এফআইআরও নথিভুক্ত করেনি। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল যে পুলিশ এসব ঘটনার কোনো প্রমাণ রাখতে চাইছে না, যাতে করে হিংসার তীব্রতাকে কমিয়ে দেখানো যায় এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো চিহ্ন না থাকে।

১১. দাঙ্গা চলাকালীন এক জনগোষ্ঠীর মানুষের গায়েই শুধু পুলিশের গুলি লাগে। চিরুনিতল্লাশের লক্ষ্যও শুধু মুসলিমরাই। আহতের সংখ্যাও তাদের মধ্যেই অনেক বেশি। আবার গ্রেপ্তার হয়েছেন যাঁরা তাঁদেরও বেশিরভাগ মুসলমান। হিন্দুদের মধ্যে এসবকিছুরই সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে কম। ফলে যে প্রশ্নটা আবারও উঠে আসে যে এটা কি দাঙ্গা? নাকি পরিকল্পিত হামলা?

১২. ১১ মে জনতা লড়তে শুরু করার পর তারা লাচ্চুর দলবলকে তাড়া করে। তখন লাচ্চুর লোকেরা গান্ধীনগরের হনুমান মন্দিরের কাছে জড়ো হয় এবং মোতি করঞ্জা চকের দিকে ঢিল ছুঁড়তে থাকে। মুসলিম অধিবাসীরাও মোতি করঞ্জা চকের কাছে একজোট হয়ে পাথর ছুঁড়তে থাকে। তখন পাথরের বৃষ্টির মধ্যে লাচ্চুর দলবল মুসলিম এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করছে। এই গোলমালের সুযোগে কিছু হামলাকারী অন্য পথে শাহগঞ্জ, রাজাবাজার প্রভৃতি মুসলমানপ্রধান অঞ্চলগুলোয় ঢুকে পড়ে। হামলারই এ আরেক কায়দামাত্র।

১৩. এম.পি. খাইরে বলেন যে তাঁকে হিন্দুদের বাঁচাতেই হত। সংসদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধির পক্ষে এর চাইতে বেশি অসাংবিধানিক বিবৃতি আর কিছু হতে পারে কি? হিন্দুদের মধ্যে সুকৌশলে মিথ্যে নিরাপত্তাহীনতা ছড়ানো হয়েছে: মুসলিম জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, তারা হিন্দুদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধায় ভাগ বসাচ্ছে ইত্যাদি। শিবসেনা হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে  মুসলিমবিরোধী ভাবধারা চারিয়ে দিয়ে তাদের মেরুকৃত করতে চাইছে।

১৪. গোটা ঘটনা যখন ঘটছে, শিবসেনা নেতারা পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। পুলিশের গুলিতে হত কিশোরটির বাড়িতে পুলিশ চিরুনিতল্লাশি চালায়। সরকারের চেহারা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে এর প্রতিটি ঘটনায়। স্থানীয় এইসব খুনে গুন্ডা বা নেতাদের চাইতে রাষ্ট্র ঢের বড় প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র চাইলে এ সমস্ত।খুনজখমকে দ্রুত বন্ধ করতে পারত, কিন্তু সে তো আসলে চাইছিল এসব ঘটুক। আর তাই ঘটনাস্থলে পুলিশ আর শিবসেনা নেতাদের সবসময়ই একসঙ্গে দেখা যাচ্ছিল।

সিদ্ধান্ত:

বিভিন্ন সাক্ষ্যপ্রমাণ, সংবাদপত্রের প্রতিবেদন, ভিডিও, এবং দাঙ্গাবিধ্বস্ত মানুষ, প্রত্যক্ষ সাক্ষী,  স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ও সমাজকর্মীদের সাথে কমিটির কথাবার্তার ওপর ভিত্তি করে, তথ্য অনুসন্ধান কমিটি নীচের সিদ্ধান্তগুলিতে পৌঁছেছে:

১. এটা কোনো দাঙ্গা ছিল না। ছিল একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর এক পূর্বপরিকল্পিত হামলা এবং পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতারা এ হামলায় অংশ নিয়েছিল।

২. প্রাক্তন আইএএস হর্ষ মান্দারের মতে চার ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা যে কোনো দাঙ্গাই আসলে রাষ্ট্রপ্রণোদিত। আওরঙ্গবাদে রাত ১০ টা থেকে সকাল সাতটা অবধি দাঙ্গা চলেছিল। ফলে, রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনোভাবেই এ দাঙ্গা বাঁধতও না, এতক্ষণ ধরে চলতেও পারত না।

৩. এ দাঙ্গা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক হামলা।  শিবসেনা এমপি চন্দ্রশেখর খৈরে নিজে এ হামলায় সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। এক জনগোষ্ঠীর প্রতি ভয় ও ঘৃণার নির্মাণের মাধ্যমে অন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভোটকে মেরুকৃত করার অপচেষ্টা ছাড়া একে আর কিছুই বলা যায় না।

৪. দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকার লোকেরা লাচ্চুর উৎপীড়ন বা মুক্তিপণের বিরোধী।  শিবসেনার গুন্ডা লাচ্চু পুলিশের সহায়তায় মুসলমান বাসিন্দাদের এবং তার কথা মানতে নারাজ সব লোকেদের ওপর উপদ্রব চালায়। তার লক্ষ্য ছিল বিরোধীদের উচিত শিক্ষা দেওয়া এবং মুসলিম অধিবাসীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলা।

দাবি :

১. ঘটনার আসল মাথা চন্দ্রকান্ত খৈরেকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

২. যে সব পুলিশ অফিসার গুলি ছুঁড়েছিলেন, তাঁদের গ্রেপ্তার করতে হবে।

৩. মহারাষ্টে সরকার শুধু যে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয়, গত পাঁচ মাসে চারটে দাঙ্গা বেঁধেছে সেখানে, যেগুলোর প্রত্যেকটাতেই পুলিশ হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজদের হয়ে  পক্ষপাত দেখিয়েছে। অতএব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফডনবিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কারণ এসব ঘটনার দায় তাঁকেই নিতে হবে।

৪. সন্দেহজনক কর্মপদ্ধতি গ্রহণের জন্য পুরসভা অফিসারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

৫. এই মুহূর্তে চিরুনিতল্লাশ বন্ধ করতে হবে এবং সব নির্দোষ বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

৬. যে দুটি পরিবার তাঁদের সদস্যদেরকে দাঙ্গায় হারিয়েছেন তাঁদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পুলিশের গুলিতে আহতদের দিতে হবে ৫ লক্ষ এবং অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের ২ লক্ষ করে। দাঙ্গায় সম্পত্তির ক্ষতি যাঁদের হয়েছে, তাঁদের জন্যও উপযুক্ত সাহায্য দিতে হবে।

৭. হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্ত করাতে হবে।

কমিটির সদস্যেরা হলেন:

১.এডভোকেট রামেশভাই খান্ডাগালে
২.ভীরা সথিদার
৩.রবি গাইকোয়ার
৪.গৌতম কাম্বলে
৫.প্রমোদ মাণ্ডাদে
৬.সুধীর ধাভলে
৭.সাদিক কুরেশি
৮.রাষ্ট্রপাল গাভাই
৯.ইউসুফ খান
১০.প্রতীক নন্দগাঁওকর
১১.দীভেশ কুমার

তারিখ: ২০/৫/২০১৮

রিপোর্টটি ইংরাজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিদ্ধার্থ বসু। মূল ইংরাজি রিপোর্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

Share this
Leave a Comment