আর্ন্তজাতিক ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি দিবস – সুস্থ ঋতুকালের অধিকার প্রত্যেকের


  • May 27, 2018
  • (0 Comments)
  • 3761 Views

সুদর্শনা চক্রবর্তী

যা কিছু ব্যক্তিগত, তাই রাজনৈতিক। হ্যাঁ, তাই। ব্যক্তিগতর পরিসীমা ব্যক্তিই নির্ধারণ করবে, কিন্তু ব্যক্তিগতর তকমা লাগিয়ে যদি শোষন করা হয়, যদি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, যদি অপমান করা হয়, যদি ক্রমাগত লজ্জা আর অস্বস্তির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়, তাহলে তা ক্রমশই রাজনৈতিক হয়ে যায় বইকি। সেইসঙ্গে যদি এইসব কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে লিঙ্গ পরিচিতিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বৈষম্য, তাহলে তো ব্যক্তিগত আর রাজনীতির বিষয়টি আরও-ই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। মহিলাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে তৈরি হওয়া আলোচনা আর তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বহু যুগের গোপনীয়তা, অস্বস্তিকে রক্ষা করতে চাওয়ার মানসিকতা – এই দুই-ই প্রসঙ্গটির গুরুত্ব সামনে নিয়ে আসে।

আন্তর্জাতিক ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি দিবস উদ্‌যাপন করা হয় সারা বিশ্ব জুড়ে ২৮ মে তারিখটিতে। একজন নারীর জীবনে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যে আজীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং তার সঙ্গে সংস্কারের যে কোনও সম্পর্ক নেই, এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের সমস্ত দেশেই এখন সচেতনতা প্রসারের কাজটি চলছে। অবশ্যই বাদ নেই আমাদের দেশও। তাতে কাজও হচ্ছে। বহু দিনের জড়তা, আড়ষ্টতা ভেঙে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মহিলারা ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলছেন, নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন, কীভাবে তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবেন, সামনে আসছে। আশার কথা বিষয়টি শুধু ‘মহিলাদের বিষয়’ বলে তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। পুরুষরাও এই নিয়ে কাজ করছেন। বাদ পড়ছে না রূপান্তরকামী নারীদের প্রসঙ্গও।

ছবিঃ গ্রাউন্ডজিরো

ঋতুস্রাব বিষয়টি তো নারী অস্তিত্বের সঙ্গে যুগযুগান্ত ধরে জড়িত, এই সাম্প্রতিক আলোচনা, সচেতনতা শুরু হওয়ার প্রেক্ষিতটি তবে কী? অবশ্যই নারী অধিকার আন্দোলনের এত বছরের পথচলা আজ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে সামনে নিয়ে এসেছে। কেন স্যানিটারি ন্যাপকিন কালো প্যাকেটে মুড়ে বিক্রি হবে দোকানে বা কেন তার বিজ্ঞাপনে লাল রক্তের জায়গায় নীল জল দেখানো হবে সেসব প্রশ্ন উঠে আসছে। সরকারি তরফে স্বল্প মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির ব্যবস্থা করে, স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসিয়ে – ঋতুস্রাবের দিনগুলিতে নানা বয়সের মেয়েদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। সব শ্রেণির মেয়ে, মহিলারাই যাতে এর আওতাভুক্ত হন, নজর রাখা হচ্ছে সেদিকেই। কোনও বিভাজন যেন না থাকে, দৃষ্টি সেদিকেই।

অথচ একটু নজর করলেই দেখা যাবে এই আন্দোলন, আলোচনা কী ভীষণ শহর কেন্দ্রিক। কারণ, অধিকাংশ আন্দোলনেরই শহরমুখী হয়ে যাওয়ার, অতিরিক্ত নজরে পড়ার প্রবণতা থাকেই। সেখানে মফস্বল, গ্রামের মানুষদের, খেটে খাওয়া শহর, গ্রামের মানুষদের শুধু দলে টেনে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ যেটা ভাবছেন, সেটাই যেন সকলেই ভাববেন বা মেনে নেবেন। ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আলোচনা, আন্দোলনেও এই ছবি কিছুটা হলেও চোখে পড়ে। বছর দুই আগে #প্যাডসএগেইনস্টপেট্রিয়ার্কি যখন হয়, তখন কিন্তু শহর সংলগ্ন মফস্বল, গ্রামে কিশোরী মেয়েদের নিজেদের যাবতীয় কুণ্ঠা সরিয়ে রেখে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলা, পারফর্ম করা, অসঙ্কোচে প্রশ্ন রাখা সবেতেই এগিয়ে এসেছে। তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়তো তুফান তুলতে হয়নি, কিন্তু নিজেদের পরিসরে তারাই ‘চেঞ্জ মেকার’।

বিজ্ঞাপনের কথাই যদি বলা হয়, তাহলে প্রশ্নটা শুধুই নীল জল আর লাল রক্তের সম্ভবত নয়। যে মেয়েদের, মহিলাদের বিজ্ঞাপনের মুখ হিসাবেও দেখানো হয়, তারাই অত্যন্ত নাগরিক মুখ, নাগরিক পরিবেশের প্রতিনিধি। মেয়েদের সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বোঝানোর জন্য ফুটবল দলে মাসিক চলাকালীন খেলতে যাওয়া দেখানো হচ্ছে হয়তো, কিন্তু সেই মেয়েরা কোথায় যারা গ্রাম থেকে রোজ ভোরে উঠে প্রথম লোকাল ট্রেনটি ধরে আসেন গৃহশ্রমিক হিসাবে কিংবা সকাল থেকে নানা অসংগঠিত ক্ষেত্রে দৈনিক মজুরিতে কাজ করতে? সবজি বা মাছ বাজারের বিক্রেতারা-ই বা কোথায় আর সেই কিশোরীরা, যারা জেদ সর্বস্ব হয়ে হেঁটে বা সাইকেলে স্কুলে যায় ‘ঐ পাঁচ দিনও’! এই মুখগুলি সম্ভবত বিজ্ঞাপনের জন্য যথেষ্ঠ গ্ল্যামারাস নয়। বা ধরে নেওয়া হয় বিজ্ঞাপনের মুখগুলি এদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ও তারাও তৎপরতার সঙ্গে বহুজাতিক সংস্থার তৈরি দামি ন্যাপকিনটি কিনতে পৌঁছে যাবেন দোকানে। ঐ ৩০, ৪০ টাকাও যে অনেক নারীর কাছেই অনেকটা দামি সেটা বোঝা প্রয়োজন, সঙ্গে এটাও যে কেন তারা কাপড়ের বদলে ন্যাপকিন ব্যবহার করবেন, তা বোঝানোটাই প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

গৃহশ্রমিক প্রতিমা হালদারের বয়স ৩৭ বছর, এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ২০ বছর। প্রথম দিনটায় পেটের যন্ত্রণায় খুবই কষ্ট পান। বিয়ের পর থেকে ন্যাপকিন ব্যবহার করছেন। কিন্তু ঋতুস্রাব চলাকালীন ছুটির কথা ভাবতেও পারেন না। “বাসন মাজা,কাপড় কাচা করতে খুব অসুবিধা হয়। দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে পায়ের দুপাশ’টা ছুলে যায়। নিজের বাড়ির কাজও করতে ইচ্ছে করে না। মনে হয় একটু শুয়ে থাকতে পারলে ভালো হত। ওসব সময় কোনও বাড়িতে ছুটি দেয় না। আমিও বলি না। কোনও বউদি জানতে পারলে হয়তো বলে, ঠিক আছে একটু কম কাজ করলেও হবে। তবে সে খুবই কম।’’ বলছিলেন প্রতিমা।

বছর ৩৩-এর অঞ্জনা হালদার শুরু থেকেই ন্যাপকিন ব্যবহার করেন। বিভিন্ন বাড়িতে মূলত রান্নার কাজ করেন তিনি। না, কুসংস্কারে পড়ে কোনও বাড়িতে তাকে মাসিকের দিনগুলিতে রান্নাঘরে ঢুকতে বাধা দেয় না। মাসিকের সময়ে অঞ্জনার বিশেষ শারীরিক অসুবিধাও হয় না। “না গো আমার খুব একটা সমস্যা হয় না কাজ করতে। আর এখন তো সবাই অনেক জানে, বোঝে। আমি নিজেও অত মানামানি করি না। শুধু, না নিজের বাড়িতে, না কাজের বাড়িতে – আমি ঠাকুরের বাসন ধরি না, ঠাকুরঘর আলাদা হলে যাই না।” স্পষ্ট জানালেন অঞ্জনা।

বেবি নস্করের বয়স ৪০ বছর, গৃহপরিচারিকার কাজ করছেন ১২-১৩ বছর ধরে। স্বীকার করলেন, ঋতুস্রাবের সময়ে শরীরে বেশ সমস্যা হয়, বিশেষ করে গরমের দিনগুলিতে অস্বস্তি আরও বাড়ে। বসে ঘর মোছা, উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নামা, বাসন মাজতে কষ্ট হয়। বেবি বলছিলেন, “পেটে ব্যথা হয়। খুব যেদিন শরীর খারাপ লাগে সেদিন বলে ছুটি নিই। ছুটি তো কোনও বাড়িতে দেবেই না, আর সমস্ত কাজ করিয়ে নিয়েই ছাড়ে। কোনও বাড়িতে হয়তো বউদি বা মাসিমা নেই, বাইরে গেছেন। দাদা যাতে না বোঝেন তার জন্য আরও সতর্ক থাকি। না হলে তো আরও লজ্জায় পড়ে যাব। মাসিক হলে শুধু পুজোর বাসনটা মাজতে দেয় না।” এমন হয়েছে কখনও যে হঠাৎ মাসিক শুরু হয়ে গেছে, প্যাড নিতে হয়েছে কাজের জায়গায়? “ও বাবা, প্যাড তো দেবেই না। হয়তো ছেঁড়া কাপড়-টাপড় দিয়েছে।” রাখঢাক না করেই বললেন বেবি।

প্রতিমা আর বেবি দুজনে ‘দুর্বার দিশা’ নামে গৃহ- পরিচারিকাদের একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাদের নানা অধিকার নিয়ে লড়াই করছেন। এই বছর আজকের দিনে ২৮ মে তাঁরাও আর্ন্তজাতিক ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি দিবস পালন করছেন। সচেতনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া তাদের ও পরবর্তী প্রজন্মকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করছে অনেকটা। সেই প্রক্রিয়ায় তাঁরাও যুক্ত থাকতে চান। চান দাবির মধ্যে থাকুক শুধু মাসে চার দিনের ছুটি নয়, মাসিকের সময়ে একটি দিনের ছুটিও।

ছবিঃ গ্রাউন্ডজিরো

ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা হচ্ছে অথচ আলোচনার বৃত্তের সম্পূর্ণ বাইরে রয়ে যাচ্ছেন তাঁরা – যৌনকর্মী মহিলারা। তাঁদের মধ্যেই কয়েক জন জানালেন নিজেদের অভিজ্ঞতা, জীবনের কথা। চামেলি সাহা বলছিলেন, “দেখুন, যাদের টাকার দরকার তারা ঐ দিনগুলিতেও বাধ্য হয়ে কাজ করে। যারা একটু স্বচ্ছল পাঁচ দিন কাজ না করলেও চালাতে পারে, তারা ঐ ক’দিন বসে যায়। তাছাড়া অনেক ক্লায়েন্ট-ও বিষয়টাকে নোংরা মনে করে মাসিকের সময়ে আসে না। ঐ ক’দিন শারীরিক সমস্যা তো থাকেই। আমার যেমন পেটে ব্যথা হয়, ওষুধ খাই। তবে ঐ ক’টা দিন কাজ করি না।” শেফালি দাশ বললেন, যখন তিনি কাজ করতে শুরু করেছিলেন, তখন ন্যাপকিনের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি এই বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতেন না। যথেষ্ঠ অসুবিধা ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছেন। আজ তার বয়স ৪৫-৫০ বছর। চারপাশে মেয়েদের দেখছেন অনেক সচেতন, তিনি নিজেও হয়েছেন, যা একদিকে বেশ ভালো। মাসিকের দিনগুলিতে পেশা সামলান কীভাবে? “আসলে সেটা ক্লায়েন্ট-এর সঙ্গে কীরকম সম্পর্ক তার উপরে নির্ভর করে। কারওর সঙ্গে যেমন স্বামী-স্ত্রী’র মতো সম্পর্ক বা ভালো সম্পর্ক। তারা এসে বসে, নেশা করে চলে যায়। কেউ হয়তো বলে অন্য কারওর কাছে নিয়ে চলো। কিন্তু সবটাই সম্পর্কের উপরে। পরে কিন্তু সে আমার কাছেই আসবে।” কাজল বোস নিজের অভিজ্ঞতার সূত্রে বললেন, এই সময়ে অধিকাংশ যৌনকর্মীই কাজ করেন না। “অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, নাড়িতে টান লাগতে পারে। কাস্টমার আসেন। চেনা, ভালো সম্পর্কের সূত্রে তারা বসেন, গল্প করেন, নেশা করেন – কিছু টাকা দিয়ে চলে যান। আমাদের সচেতনতা এখন অনেক বেড়েছে। রোজগারের থেকেও নিজের শরীর নিয়ে আমরা অনেক সতর্ক, সচেতন।” তাঁরা ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি’র সদস্য। যৌনকর্মীদের অধিকার আন্দোলনে তাদের দাবিতে ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধির প্রসঙ্গ আসা প্রয়োজন মনে করেন। সেই জন্যই গত কয়েক বছরের মতো আজও তাদের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আছে। যেখানে আলোচনার অন্যতম মূল বিষয় স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর বসানো জিএসটি প্রত্যাহার করে, তা সুলভে সকল মহিলার কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া।

এই প্রসঙ্গে মনে আসে হাওড়ার প্রত্যন্ত খাসখামার এলাকায় এক স্বনির্ভর দলের ন্যাপকিন তৈরির ইউনিট-এর কথা। অনেক বছর ধরেই তারা ১১ জন মিলে এই ইউনিটটি তৈরি করে ‘ফ্রিডম’ নামে সুলভ মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করছেন। গ্রামে তৈরি হওয়া কিশোরী দলের সদস্যদের, গ্রামের মহিলাদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে পৌঁছে যাচ্ছে ন্যাপকিন। গুণমান আরও উন্নত করা প্রয়োজন হয়তো, কিন্তু তার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দরকার, তার কথাও ভাবতে হচ্ছে। ‘নারী ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এই উদ্যোগের মতো আরও কিছু কাজ হচ্ছে নানা জেলায়। কিংবা ধরা যাক খাস কলকাতায় তৈরি হওয়া ‘পদক্ষেপ’ দলটির কথা। স্নাতক স্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহ্‌ রেজা আলমের হাত ধরে তৈরি হওয়া এই দলটি মূলত পথশিশুদের নিয়ে কাজ করেন। আর্ন্তজাতিক শ্রমজীবী নারীদিবসে গত ৮ মার্চ তারা একটি নতুন উদ্যোগ নেয়। সুন্দরবনের মিনাখাঁ ব্লকের এক গ্রামে পৌঁছে যায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে। শাহ রেজা বলছিলেন, “ওখানকার মা, মাসি, দিদি, বোনেদের মধ্যে প্রথম দিকে ভীষণ অস্বস্তি ছিল। স্যানিটারি ন্যপকিন বিষয়টা তারা প্রায় জানেইনি না। আমরা যখন দিচ্ছিলাম, বিশেষত ছেলেরাও ছিলাম,ওঁরা তাতে খুবই লজ্জা পাচ্ছিলেন, শাড়ির আঁচলে লুকিয়ে নিচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে কিছুটা সহজ হন। আমাদের দলের দিদিরা যখন স্বাস্থ্যের দিকটা বোঝাচ্ছিলেন তাতে ওঁরা অংশ নিচ্ছিলেন। কিশোরী মেয়েরাও পরে এসেছে। মা এসেছেন মেয়েকে নিয়ে। আমরা প্রতি মাসেই যাব। আপাতত দু’মাস গেছি। পঞ্চায়েত ভোটের জন্য মে মাসে যাওয়ার অনুমতি পাইনি। আবার যেতে শুরু করব।” বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পেশার মানুষদের দল ‘পদক্ষেপ’ আপাতত ১৪০-১৬০ জন মহিলাকে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিচ্ছে। আরও নানা জায়গায় উদ্যোগ পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবছে তারা।

মনে পড়ছে আমার একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের কথা – “সুস্থ ঋতুকাল আমার অধিকার”। সেখানে আলোর দিশা কিশোরী দলের মেয়েরা অসঙ্কোচে ক্যামেরার সামনে নিজেদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানা জড়তা কাটিয়ে সচেতন হয়ে ওঠার কথা বলেন। বলেন কেমন করে তাদের আচার খেতে, ধর্মাচারণ পালনে, খেলতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। মা-মাসিদের বোঝানোর থেকেও কঠিন ঠাকুমা, দিদিমাকে বোঝানো, সমাজের চোখ রাঙানিকে বোঝানো। তবে একবার কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে তারা যে কোনও মঞ্চে এখন ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কথা বলছেন, কুসংস্কার দূরে ঠেলে সুস্থ থাকার প্রচার করছেন, বলছেন তাদের থেকে যারা ছোট তাদের আরও মুক্ত এক পরিবেশ দেওয়ার জন্যই তাদের লড়াই।

আসলে একটা দিন উদ্‌যাপনের গুরুত্ব যেমন রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই থাকে, তেমনি প্রতিদিনের জীবনে সেই লড়াইটা যাতে সুবিধা পাওয়া থেকে সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছায় সেটা দেখাও জরুরি। যেমন স্কুলে ন্যপাকিন ভেন্ডিং মেশিন থাকাই নয়, পরিষ্কার ব্যবহারযোগ্য শৌচালয় থাকাটাও প্রয়োজন। ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি তাই নারীদের কোনও একক বিষয় নয়, তার সঙ্গে নারী আন্দোলনের বিবিধ বিষয়গুলি জুড়ে নিয়ে দেখাটাই সময়ের দাবি।

সুদর্শনা চক্রবর্তী স্বাধীন সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা।

Share this
Leave a Comment