ভাইরাল ভিডিওর দাবি – ‘মহম্মদ ইলিয়াস’ নামের একজনকে কঠুয়া কান্ডে গ্রেফতার করা হয়েছে; সত্যটা কি?


  • April 29, 2018
  • (0 Comments)
  • 2703 Views

খবরের সূত্র: অল্ট‌ নিউজ

সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি লোককে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিওটির দাবি – মহম্মদ ইলিয়াস নামের এই লোকটিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং গত জানুয়ারি মাসে জম্মুর কঠুয়া জেলাতে ঘটে যাওয়া আট বছরের মেয়েটির ধর্ষণ এবং হত্যাকান্ডে ইনি একজন অভিযুক্ত।

উপরে পোস্ট করা ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে – লোকটিকে পুলিশ-পাহারা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাস্তায় জড়ো হওয়া কিছু লোক তাঁর মুখে কালি মাখিয়ে দিচ্ছেন এবং মহিলারা তাকে চড় মারছেন।

 সত্যটা কি?

Alt News এই দাবির তথ্য সন্ধান করেছে এবং পেয়েছে যে, এটি কঠুয়া ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার সাথে সম্পর্কিত না। নিচে পোস্ট করা ভিডিওটি ৫ এপ্রিল, ২০১৮-তে News Nation ‘আপলোড’ করেছে এবং বলছে, এটি উত্তরপ্রদেশের ঘটনা, যেখানে একটি তের বছরের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে এই যুবককে পুলিশ বাহিনীর সামনে মারধর করা হয়।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল দৈনিক ভাস্কর(হিন্দি)’-র একটি খবরে ঘটনাটির উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে ‘Union Territory’ বিভাগে, চণ্ডীগড়ের প্রসঙ্গে। সেখানে খবরের শিরোনাম ছিল, “ধর্ষণে অভিযুক্তর মুখ কালা, চপ্পল পেটা, ভিডিও ভাইরাল”(অনূদিত)।

দুটি খবরের উৎস এবং ভিডিওটির দুটি ভিন্ন অবস্থানের নিরিখে তাই আমরা আরো তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে যে, ভিডিওটি সম্ভবত মধ্যপ্রদেশের। দুটি সূত্র – পুলিশ ইউনিফর্মের পরিচয়চিহ্ন এবং পুলিশের গাড়ির নম্বর প্লেট – এ থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছই। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের কাঁধের উপর পরিচয়চিহ্নতে ‘MP Police’ লেখা আছে। গাড়ির নম্বর হচ্ছে ‘MP 02 3431’।

আমরা ভিডিওতে সাইনবোর্ডগুলি লক্ষ্য করি। তার মধ্যে একটিতে সম্ভবত লেখা আছে ‘আরশি কেন্দ্র(থানা)  হনুমানগড় বা (হনুমানগঞ্জ)’। আরেকটি সাইনবোর্ডে সম্ভবত লেখা আছে ‘ফানি ট্রেডিং কোম্পানি’।

তবে উপরে পাওয়া তথ্য থেকে ভিডিওটির সঠিক সময় এবং যথাযথ স্থান নির্ধারণ করা মুস্কিল ছিল। আমরা ভিডিওটির গতি কমিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করি এবং জনসাধারণের থেকে ভিডিওটির উৎপত্তি সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাই। কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান যে, ঘটনাটি ভোপাল-এর হনুমানগঞ্জ এলাকার।

এই সূত্রের ভিত্তিতে আমরা ভিডিওর উৎপত্তি ভোপাল বলে নির্ধারণ করি। এই ঘটনাটি শহরের হনুমানগঞ্জ এলাকাতে ঘটছে। Alt News ভোপালের হনুমানগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের টাউন ইন্সপেক্টর(SHO)  সুদেশ তিওয়ারির সাথে কথা বলে। তিনি নিশ্চিত করেন, “এ ভিডিওটি এখান থেকেই এসেছে। ছেলেটি  তের বছরের একটি মেয়ের ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত। আমরা তাকে আদালতে নিয়ে যাচ্ছিলাম, সেই সময় জনতা তার মুখ কালো করে দেয় এবং মহিলারা গণপিটুনির মাধ্যমে রাগ প্রকাশ করেন। তের বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করার মামলায় অভিযুক্ত বলে জনগণ তার উপর হামলা চালায়।”

পরে আমরা সন্ধান পাই যে, ৬ এপ্রিল ২০১৮-তে www.eenaduindia.com-এ ঘটনাটির সঠিক প্রতিবেদন করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে অভিযুক্ত উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা।

এই ভিডিওটি ফেসবুক-এ ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে, অনেকগুলি জনপ্রিয় ‘পেজ’-এ আপলোড করা হয়েছে। অনেক ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীরাও ফেসবুকে এই ভিডিও শেয়ার করেছেন একই বিবরণসহ।  এই ভিডিওটি WhatsApp-দ্বারাও প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওটি अगर आप राजपूत है तो join कीजिये ये ग्रुप, देखते हैं FBपर कितने राजपूत है (আগর আপ রাজপুত হ্যায় তো জয়েন কিজিয়ে ইয়ে গ্রুপ, দেখতে হ্যায় এফবি-পর কিতনে রাজপুত হ্যায়)–নামক একটি ‘গ্রুপ’ থেকে শেয়ার করা হয়েছে, যার ১৬,০০,০০০ সদস্য আছে আর যেখানে এটি ২০০০ বার শেয়ার করা হয়েছে। গোবিন্দ দাস নামে একজন এই ভিডিও শেয়ার করেন এবং তাঁর ‘পোস্ট’-টা ১৯০০০ বারেরও বেশি শেয়ার করা হয়েছে।

কঠুয়া ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড এবং তার পরিণামে যে সামগ্রিক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তার ফলস্বরূপই সোশ্যাল মিডিয়া এই ঘটনা-সংক্রান্ত ভুয়ো খবরে(fake news) ছেয়ে গেছে। মধ্যপ্রদেশের একটি ভিডিওকে কঠুয়া ধর্ষণকান্ড প্রসঙ্গে চালানো হচ্ছিল। ভিডিওটি কয়েক হাজার বার শেয়ার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ‘প্লাটফর্ম’-গুলিতে এখনো এই খবর রটানো হচ্ছে।

লেখাটি প্রাথমিকভাবে অল্ট নিউজ-প্রকাশ পায়, আমরা তার বঙ্গানুবাদ করলাম।

Share this
Leave a Comment