মেটিয়াবুরুজের মেয়ে কোথায়? তথ্যের খোঁজে নাগরিক উদ্যোগ


  • April 20, 2018
  • (0 Comments)
  • 4258 Views

নিজস্ব সংবাদদাতা: মেটিয়াবুরুজের এক নাবালিকা মেয়েকে ‘অপহরণ ও ধর্ষণ’ করার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে জল ঘোলা কিছু কম হচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে হাজির করা হচ্ছে দৈনিক সংবাদপত্রের রিপোর্ট এমনকি আদালতে পেশ করা কাগজ পত্রের নির্বাচিত নমুনা। যা অবশ্য পাঠযোগ্য নয়। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও স্থানীয় থানা অভিযুক্ত মুসলিম যুবকের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে কিংবা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে অস্বীকার করেছে। ‘লাভ-জিহাদ’-এর আওয়াজ না উঠলেও দেখা গিয়েছে বর্তমান সাম্প্রদায়িক বাতাবরণে ‘হিন্দু নাবালিকাকে মুসলিম যুবকের অপহরণ’-এর কিস্যা আরও বেশি করে ঘৃণা ও বিদ্বেষের পরিবেশ তৈরি করছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত “ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট: মেটিয়াবুরুজে নাবালিকা অপহরণ মামলা” শীর্ষক একটি তদন্তমূলক প্রতিবেদন আমাদের কাছে এসেছে। অনুসন্ধানকারীদের পক্ষ থেকে সলমন শাহজি গ্রাউন্ডজিরোকে জানান, “ব্যক্তিগত উদ্যোগে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সত্য উদঘাটনের জন্য তথ্যানুসন্ধান করা হয়েছে।”

‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, নাবালিকার অন্তর্ধান বা নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে নানা অর্ধসত্য ও নির্জলা মিথ্যা প্রচার করা হয়। এই প্রচারের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে বা ব্যবহার করা হয়েছে (এক) সংবাদমাধ্যম; (দুই) কলকাতা হাইকোর্টে পেশ করা রিট পিটিশন এবং কলকাতা হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের নির্বাচিত অংশ; (তিন) মেটিয়াবুরুজ-গার্ডেনরিচের মুসলমান প্রধান অঞ্চল বিষয়ে বাঙালি মনে দীর্ঘকালব্যাপী পুষে রাখা এক একপেশে ছকে ফেলা ধারণা।

সরজমিনে তদন্ত, গার্ডেনরিচ থানায় দায়ের করা এফআইআর, কলকাতা হাইকোর্টে সাবমিট করা রিট পিটিশন, আদালতের অন্তর্বতী আদেশ, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট ও পোস্ট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রস্তুত এই রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৭ সালের ৭ জুন, কলকাতা পুরসভার সাফাই কর্মী বিনোদ দাসের নাবালিকা মেয়ে তার মাসির গার্ডেনরিচের বাড়ি থেকে নিঁখোজ হন। বিনোদ দাস গার্ডেনরিচ থানায় অভিযোগ দায়ের করে জানান, তাঁর মেয়ে মেটিয়াবুরুজের রাজাবাগানের বাসিন্দা মিন্টু আলির সঙ্গে চলে গিয়েছে। পুলিশ এর পর মিন্টু আলির বাড়িতে তল্লাশি চালালেও নাবালিকা মেয়ে বা মিন্টু আলির খোঁজ পায়নি।

৮ জুন মিন্টুর পরিবারের লোকেরা দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা থেকে ওই দুজনকে উদ্ধার করে থানায় হাজির করে। এবং থানায় উপস্থিত বাবা বিনোদ দাসের হাতে মেয়েকে তুলে দেয়। পালিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনুসন্ধানকারীদের মত, মিন্টু ও মেয়েটির মধ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’ ছিল। সে কথা জানতে পেরে বিনোদ দাস মেয়ের অন্যত্র বিয়ের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু, পড়াশোনা বন্ধ করে বিয়ে করতে রাজি হয়নি নাবালিকা। এ নিয়ে বাড়িতে অশান্তি হওয়ায় সে মিন্টুর সঙ্গে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ৬ জুন মেয়েটির বয়স ছিল ১৬ এবং মিন্টু আলির বয়স ছিল ২০ বছর।

ঘটনাটি আর এখানে থেমে থাকল না। দুদিন পর বিনোদ দাসের মেয়ে ফের নিখোঁজ হয়। ১০ জুন গার্ডেনরিচ থানায় প্রথমে জেনারেল ডায়েরি করেন বিনোদ। ওই জিডি’র ভিত্তিতে একই দিনে এফআইআরও হয়। জিডি ও এফআইআর-এ তিনি এবার অভিযোগ করেন ‘অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা অপহরণ’ করেছে। বর্তমানে আলিপুর আদালতে এই ফৌজদারি মামলাটি চলছে। ১০ জুন পুলিশ বিনোদ দাসকে সঙ্গে নিয়ে রাজাবাগানে মিন্টু আলির বাড়িতে ফের হানা দেয়। ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’ জানাচ্ছে, “পুলিশ গিয়ে দেখে, মিন্টুর বাবা অক্সিজেন মাস্ক পরে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। অসুস্থ বাবার পাশে বসে রয়েছেন মিন্টু আলি।” রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, “তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়, এবার নাবালিকা মিন্টুর সাথে পালিয়ে যায়নি।” তথ্যানুসন্ধানীদের দাবি, এর পরও পুলিশ তদন্ত জারি রাখে।

সারা ২০১৭ সাল জুড়ে এই ঘটনা নিয়ে মেইনস্ট্রিম বা সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনও হইচই লক্ষ করা যায়নি। আরও একটি নিখোঁজ কিংবা অপহরণের মামলা হিসাবেই ছিল। ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি বিনোদ দাস কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশনে মূলত পুলিশ ও প্রশাসনকেই বিবাদী পক্ষভুক্ত করা হয়।
রেসপনডেন্টের তালিকায় রয়েছে রাজ্য সরকার ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছাড়া আরও চার পুলিশ কর্তা। ছয় নম্বরে রয়েছেন সোভান ওরফে মিন্টু আলি। ওই লিখিত আবেদনের দশম পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, মিন্টু আলি একজন ‘সমাজবিরোধী’ এবং তাঁর পিতা কোরবান আলি একজন ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি। আবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, নাবালিকাকে অপহরণ করে মিন্টু ও কোরবান আলির রাজাবাগানের বাড়িতে আট মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে। মূলত পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে আবেদন জানানোর অন্যতম উদ্দেশ্য (পিটিশন গ্রাউন্ড) হিসাবে জানানো হয়, নিখোঁজ নাবালিকা কোথায় রয়েছে তা আবেদনকারী বাবা জানতে পারেননি। এমনকি নির্দিষ্ট ভাবে পুলিশকে তথ্য দেওয়ার পরও নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়নি। এর পর এক ইন্টারিম বা অন্তর্বতীকালীন আদেশে বিচারপতি দেবাংশু বসাক অন্যতম রেসপনডেন্ট যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন)-কে নাবালিকাকে উদ্ধার করার নির্দেশ দেন।

২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার অন্যতম প্রধান দৈনিক ‘সংবাদ প্রতিদিন’- এর একটি প্রতিবেদন সামগ্রিক ভাবে এই ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক মোচড় দেয় বলে অভিযোগ। সাংবাদিক শুভঙ্কর বসু’র প্রতিবেদনটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’-এ উল্লেখ করা হয়েছে। অংশটিতে ‘নাকি’ অব্যয় যোগে ভাষার মারপ্যাঁচ সত্ত্বেও ‘বিদ্বেষ’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ ভাব পরিপূর্ণ ভাবে প্রকাশিত পেয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিবেদক লিখছেন, “‘সড়ক’ ছবিতে মহারানির ডেরার কথা মনে আছে? সেখানে নাকি ঢুকতেও পা কাঁপত পুলিশেরও। কলকাতা শহরেও নাকি আছে এমনই এক ডেরা! আর সেখানে ঢুকতে নাকি সত্যিই পা কাঁপে পুলিশের। এই ডেরার বাদশা ‘মিন্টু’। এক নাবালিকাকে জোর করে তুলে এনে সে নাকি আটকে রেখেছে নিজের ডেরায়। আর পুলিশ সেখানে যেতেই ভয় পাচ্ছে।”
‘রিপোর্ট’ আরও জানাচ্ছে, সংবাদ প্রতিদিন-এ আরও বলা হয়েছে, আবেদনকারীর আইনজীবী উদয়চন্দ্র ঝা-এর অভিযোগ, ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ জানিয়েছে ওই এলাকায় রেইড করা যাবে না।

খবরটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ভাইরাল’ হয় এবং ‘১০ হাজার’ বার শেয়ার হয় বলে অনুসন্ধানকারীদের দাবি। অনুসন্ধানী রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের প্রধান ক্ষোভ ছিল পুলিশ-প্রশাসন, মুসলমান, মেটিয়াবুরুজ, আর মিন্টু আলির বিরুদ্ধে। প্রশ্ন ছিল কেন মিন্টু আলির ‘ডেরা’য় পুলিশ হানা দিচ্ছে না। জানা গিয়েছে, ওই সময় পুলিশ বেশ কিছু ব্যক্তিকে লালবাজারে ডেকে পাঠিয়ে আপত্তিকর পোস্ট মুছে ফেলতে বাধ্য করে।

এর পর প্রায় দেড়মাস এই বিষয়ে কোনও সাড়াশব্দ ছিল না। অনুসন্ধানকারীদের দাবি, ১২ এপ্রিল এই বিষয়ে  আনন্দবাজারে ‘দশ মাসেও উদ্ধার হল না নিখোঁজ কিশোরী’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন ‘মেটিয়াবুরুজ কাণ্ড’-কে ফের চর্চায় নিয়ে আসে। চর্চাকারীদের একাংশ রাস্তায় নেমে আন্দোলনের হুমকি দেয় এবং মিন্টু ও কোরবান আলিকে গ্রেফতারের দাবি তোলে। উল্লেখযোগ্য যে, দুই সংবাদপত্রের প্রতিনিধিই অভিযোগকারীর আইনজীবী উদয়চন্দ্র ঝা এবং অভিযোগকারী বিনোদ দাসের বক্তব্যের উপর তাদের প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। অভিযুক্ত মিন্টু আলি, তাঁর পরিবার কিংবা তাঁদের আইনজীবীর কোনও বক্তব্যই নেওয়া হয়নি। নেই তদন্তকারী পুলিশের ভাষ্য কিংবা আদালতে পেশ করা পুলিশের বক্তব্য। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, রিট পিটিশন পেশ, সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘হিন্দু একতা মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক ই-মেইল মারফত কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) ও পোর্ট ডিভিশনের যুগ্ম কমিশনারকে একটি অভিযোগ পত্র লেখেন। বিনোদ দাসের রিট পিটিশনে তা উল্লেখও করা হয়েছে। এই দুই যুগ্ম কমিশনার হাইকোর্টে আবেদনের রেসপনডেন্টের তালিকায় ক্রমান্বয়ে তিন ও চার নম্বর।

সংবাদমাধ্যমে ও পিটিশনে উল্লিখিত বয়ানের বিরোধিতা করে আলোচ্য অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্ট জানাচ্ছে, (এক) রাজাবাগানের বাসিন্দা ‘প্রভাবশালী’ কোরবান আলি (৫৪) আসলে এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ভ্যানরিক্সা চালক। বর্তমানে তিনি লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁর পুত্র সোভান ওরফে মন্টু আলি পেশায় সেলাই দর্জি। কোরবান আলির স্ত্রী গৃহবধূ। মিন্টুর একটি বোনও রয়েছে। মেটিয়াবুরুজের ‘বাদশা’ ও ভয়াবহ ‘সমাজবিরোধী’ মিন্টু আলির ‘ডেরা’টি ‘দশ ফুট বাই দশ ফুট’ও নয়, একটি দশ বাই আটের ভাড়ার ঘর।অভিযুক্তের পরিবার তদন্তকারীদের জানায়, হাইকোর্টের ইন্টারিম অর্ডারের আগে ও পরে গার্ডেনরিচ, রাজাবাগান থানা ও লালবাজার প্রায় ২০ বার তাদের বাড়িতে গিয়েছে, তল্লাশি করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদও চালিয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েকবারই মিন্টু আলিকে থানায় হাজিরা দিতে হয়েছে। এই তথ্য উল্লেখ করে সংবাদপত্র ও রিট পিটিশনে মিন্টু আলি ও কোরবান আলির যে পরিচয় তুলে ধরা হয়েছ তাকে ‘নিখাদ’ ও ‘চরম মিথ্যাচার’ বলে বর্ণনা করেছে অনুসন্ধানকারীরা।

মিন্টু আলির আইনজীবী জানিয়েছেন, হাইকোর্টে দুই থানার কেস ডায়েরি জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে তারিখ ও সময় দিয়ে জানানো হয়েছে, কবে কবে, কোথায় কোথায়, কতবার নাবালিকার খোঁজে রেইড করা হয়েছে। কবে কবে মিন্টু ও তার পরিবারকে থানায় ডাকা হয়েছে। অভিযুক্তের স্থানীয় আইনজীবী শাহিদ আনসারি তদন্তকারীদের আরও বলেন, হাইকোর্টকে মিন্টুর আইনজীবী পিনাকী ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, প্রথমবার মেয়েটি মিন্টুর সঙ্গে গিয়েছিল। পুলিশ এবং পরিবারের উদ্যোগেই উদ্ধার করে থানায় ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয়। কিন্তু, দ্বিতীয়বার সে মিন্টুর সঙ্গে যায়নি।

এই পরিস্থিতিতে ১৭ এপ্রিল কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) একটি ট্যুইট বার্তায় জানান, “বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়িয়েছে যে এক নাবালিকাকে মেটিয়াবুরুজে আটকে রাখা হয়েছে ও পুলিশ সেখানে তল্লাশি চালাতে ভয় পাচ্ছে। যে গুজব সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে পারে।” ট্যুইটে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘কড়া ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি আবেদনকারী বিনোদ দাসের আইনজীবীরা। তারা বিনোদবাবুকে পাশে বসিয়ে পুলিশ ও ট্যুইটের বক্তব্যর বিরুদ্ধে কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনও করে। তথ্যানুসন্ধানী দল আবেদনকারীর মুখ্য আইনজীবীর সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়েরও খোঁজ নেয়। জানা যায়, আইনজীবী উদয়চন্দ্র ঝা ২০১৫ সালে পুরসভা নির্বাচনে ৯০ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি’র প্রার্থী ছিলেন। তাঁর ফেসবুকে পরিচিতির স্থানে লেখা রয়েছে, “ওয়ার্কড এট ভারতীয় জনতা পার্টি যুব মোর্চা।”

প্রশ্ন উঠেছে মেটিয়াবুরুজ-কাণ্ড নিয়ে হইচইয়ের পিছনে কোনও রহস্য আছে কি না? তথ্যানুসন্ধানকারীদের মতে আসানসোলের ইমাম ইমদাদুল্লাহ’র সম্প্রীতি বার্তার জের, কাঠুয়ার আসিফা-কাণ্ডে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউয়ে ”হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি পুরোপুরি কোণঠাসা” হয়ে পড়ে। এমন সময় সংবাদপত্রের প্রতিবেদনকে ”হাতিয়ার করে নতুন ভাবে অক্সিজেন ফিরে পেতে, হিন্দুত্ববাদী শক্তি মাঠে নেমে পড়েছে।”

এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, কলকাতা পুলিশও অনেকটা এমনই মনে করছে। ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা’ থেকে তৈরি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট’-এ ‘সংবাদ প্রতিদিন’ দৈনিকের রিপোর্টের কঠোর সমালোচনা, ১৭ এপ্রিল কলকাতা পুলিশের ট্যুইটের পর, ১৯ এপ্রিল ওই দৈনিকে “মেটিয়াবুরুজে নিখোঁজ কিশোরীকে নিয়ে গুজবে কান না দেওয়ার নির্দেশ” শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “পুলিশের মতে, কাশ্মীরের কাঠুয়ার ঘটনার পর কেউ ফের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই গুজব ছড়াতে শুরু করেছে। পুলিশ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।” প্রতিবেদনটি যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) প্রবীণ ত্রিপাঠী’র বক্তব্যের ভিত্তিতেই লেখা হয়েছে। যা, পূর্বে উল্লেখিত এবং ওই একই পত্রিকায় প্রকাশিত মেটিয়াবুরুজে নাবালিকা নিখোঁজ-কাণ্ডের
প্রতিবেদনটিকে কার্যত নসাৎ করে। পাশাপাশি, “ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট: মেটিয়াবুরুজে নাবালিকা অপহরণ মামলা” শীর্ষক রিপোর্টির মূল প্রতিপাদ্যকে এক রকম সমর্থনই জানায়।

Share this
Leave a Comment